Ajker Patrika

কমিউনিটি সেন্টারগুলোর অবস্থা!

সম্পাদকীয়
কমিউনিটি সেন্টারগুলোর অবস্থা!

আগে জানা ছিল কমিউনিটি সেন্টারগুলো তৈরি করা হয় সামাজিক উৎসব পালনের জন্য। একটি বড় উৎসবে সবাই মিলিত হবেন, আনন্দ করবেন, খাবেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবেন—এ রকম নানা সুবিধা দেওয়ার জন্য থাকে কমিউনিটি সেন্টারগুলো।

সেখানে নাগরিকদের সভা, স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম, পার্টি, বিয়ে, স্থানীয় বেসরকারি কার্যক্রম পরিচালনা ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু যখন দেখা যায় সেগুলো সব বেদখল হয়ে গেছে, তখন সত্যিই বোঝা যায় সামাজিক উৎসবের প্রতি আমাদের রাষ্ট্রের কোনো দায় নেই।  অথবা কথাটা এভাবে বলা যায়, রাষ্ট্র তার দায়ের কথা বেমালুম ভুলে গেছে।

রাষ্ট্র তো নিজে থেকে কিছু করে না, যাদের হাতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা দেওয়া হয়, তারাই সময়ে সময়ে এই ধ্বংসাত্মক কাজগুলো করতে থাকে। একসময় দেখা যায়, মানুষের মিলনক্ষেত্রগুলো বিলীন হয়ে গেছে।

আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরে বেহাল কমিউনিটি সেন্টারগুলোর কথা উঠে এসেছে। সহজেই বোঝা যাচ্ছে, কেন এই সেন্টারগুলো তৈরি হয়েছিল, সে কথা জানুন বা না জানুন, সেগুলো বেহাত হওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন অনেকেই। যে ছবিটি আজকের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে সেটি দেখলে কষ্ট হয়। বিভিন্ন উৎসবে যে জায়গা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে বর্ণাঢ্য হয়ে ওঠার কথা, সে জায়গায় ঝুলছে লুঙ্গি, মশারি। খাট-পালঙ্কসহ সে এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! তিনতলাবিশিষ্ট একটি কমিউনিটি সেন্টারের শুধু দ্বিতীয় তলাটাই স্বনামে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে বটে, কিন্তু বাকি দুটোর একটি দখল করেছে ওয়ার্ড সচিব, কাউন্সিলর ইত্যাদির কার্যালয়। আর তৃতীয় তলা পরিণত হয়েছে পুলিশ সদস্যদের মেসে। আর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা? বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে আর দেয়াল গেছে ভেঙে।

অদ্ভুত একটা খবর জানা গেল। ডিএনসিসির ১৪টি কমিউনিটি সেন্টারের মধ্যে পাঁচটিতেই হয় সরকারি সংস্থার কাজ। আর ডিএসসিসির ৩৭টি কমিউনিটি সেন্টারের মধ্যে বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার-উপযোগী রয়েছে মাত্র ১৩টি কমিউনিটি সেন্টার।

সামাজিক অনুষ্ঠান কিংবা সামাজিক নানা সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে উৎসব কিংবা আলোচনা করতে যেখানে আসবে মানুষ, সেখানে কি সত্যিই সে রকম পরিবেশ আছে? এই বিষয়ে ঢাকার উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আদৌ কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, জানা দরকার। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আর সবকিছুতে স্মার্ট হলেও জনসেবার ক্ষেত্রে তাদের স্মার্টনেস থাকে না। অথচ সেটাই তাদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত ছিল।

পরিকল্পনা থাকা ভালো কিন্তু সেই পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে এই ধরনের কমিউনিটি সেন্টারগুলো জনজীবনে কোনো ইতিবাচক কাজের প্রতিফলন রাখতে পারে না। আমরা যেন ভুলেই গেছি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জনসেবার জন্যই কাজ করে। উল্টে জনগণই সরকারকে সেবা দেবে—এ রকম এক আহাম্মকি ব্যবস্থা কি আমরা তৈরি করে ফেললাম?

কমিউনিটি সেন্টারগুলো যে কারণে তৈরি হয়েছে, সে কাজগুলোই যেন সেখানে হয়, তা-ই দেখতে চাই আমরা। সেখানে লুঙ্গি, মশারি আর ঘুমানোর খাট দেখতে চাই না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত