Ajker Patrika

নানা সংকটে ধুঁকছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

কামরুল হাসান, ধোবাউড়া
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ৪৬
Thumbnail image

ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে চলছে চিকিৎসক ও নার্স সংকট। এতে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার সাধারণ রোগীরা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে চালু হলেও নেই ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনও।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। কাগজে-কলমে চিকিৎসক কর্মরত থাকলেও সবাই উপস্থিত থাকেন না। এ ছাড়া রোগ নির্ণয়ের ভালো কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বাড়তি খরচ করে যেতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির নতুন ভবন ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হয়েছে। এরপর সাত বছর অতিবাহিত হলেও জনবল সংকটে ভবনের কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি। এতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি।

ধোবাউড়া সদর গ্রামের এক রোগীর স্বজন কুদ্রত আলী বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরের পরিবেশ নোংরা। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। চিকিৎসকেরা ওষুধ লিখে দিলে তা বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কোনো ওষুধ দেওয়া হয় না।’

সেবা নিতে আসা অনেক রোগীর অভিযোগ, চিকিৎসকেরা সরকারি সেবার চেয়ে প্রাইভেট চিকিৎসায় বেশি মনোযোগী। পাশের ক্লিনিকগুলোতে টাকার বিনিময়ে রোগী দেখেন তাঁরা। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা।

এদিকে হাসপাতালের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নেই প্রসূতি নারী সার্জন। এতে গর্ভবতী দরিদ্র রোগীরা বিপাকে পড়ছেন। সিজার সেবা না থাকায় প্রাইভেট ক্লিনিকে ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত ফি দিয়ে সিজার করাতে হচ্ছে। কখনো ময়মনসিংহে নিয়ে গিয়ে অধিক অর্থ ব্যয় করতে হয়। অনেককে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যাচ্ছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোগী ও তাঁদের স্বজনদের বেশি সমস্যা পোহাতে হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির জন্য। প্রায়ই ময়লাযুক্ত পানি খেতে হয় তাঁদের। খাবার পানির একটি টিউবওয়েল থাকলেও তা অকেজো হয়ে আছে দীর্ঘদিন।

এ ছাড়া দায়িত্বরত দুই থেকে তিনজন চিকিৎসক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতেও সামাজিক দূরত্ব ছাড়াই চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ভিড় করে চিকিৎসাসেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

মহিলা ওয়ার্ডের রোগী বিলকিস আক্তার বলেন, ‘ওয়ার্ডে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত চাদর ব্যবহার করতে হয় আমাদের।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক রোগী চিকিৎসার জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত এক কর্মচারী বলেন, ‘অনেক চিকিৎসক মাঝেমধ্যে সপ্তাহে দু-একবার আসেন। এসে হাজিরা খাতায় একদিনে সব স্বাক্ষর দিয়েই চলে যান।’

অপরদিকে উপজেলার সাত ইউনিয়নের মাঝে ছয় ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা ছয়জন চিকিৎসা কর্মকর্তার অনেকে মাসে একবারও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে যান না বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে এসব উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু হাসান শাহিন বলেন, ‘এক্স-রে মেশিন চালু করা হয়েছে। পানির সংকট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ তবে পর্যাপ্ত জনবলের অন্যান্য সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত