Ajker Patrika

বাড়িতেই বুফে

হেলেনা পারভীন রুমা
বাড়িতেই বুফে

ভোজনপ্রিয় আর অতিথিপরায়ণ জাতি হিসেবে বাঙালির খানিক খ্যাতি আছে। ঘরে আসা অতিথি আপ্যায়নে এই জাতির চেষ্টার কোনো কমতি থাকে না। ঝাল-ঝোল-কষা-ভাজা-ভুনা—কোনো কিছুই বাদ যায় না অতিথি আপ্যায়নের তালিকা থেকে।

শুধু তিথির বাইরের স্বজনেরাই-বা কেন? তিথি বানিয়ে ঘটা করে বাড়িতেও আজকাল নানা অনুষ্ঠান করে অনেকেই। সেই সব অনুষ্ঠানের খাবারদাবারের তালিকাও নেহাত ছোট নয়। কালিয়া-দোপিয়াজা-বিরিয়ানি কিংবা বোরহানি তো থাকেই। হালে শুরু হয়েছে বুফে খাবার। জিনিসটা বিদেশি হলেও বুফে বিষয়কে এ দেশের মানুষ লুফে নিয়েছে বেশ। পাড়ার রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে ফাইভ স্টার—সবাই এখন বুফের আয়োজন করে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে। ফলে শহুরে মানুষের অন্দরেও এটা ঢুকে পড়েছে খাদ্য বিনোদনের অংশ হিসেবে।

বুফের সুবিধা
অনুষ্ঠানে বুফের আয়োজন থাকলে অতিথি ও আয়োজক দুই পক্ষেরই বেশ সুবিধা হয়। রান্নাবান্নায় ব্যস্ত না থেকে বা কম ব্যস্ত থেকে নিজেদের সময় দেওয়া যায় বেশ খানিকটা। তবে বাড়িতে অনুষ্ঠান করে অনেকে অতিথিদের নিজ হাতে বেড়ে খাওয়াতে পছন্দ করেন। এতে অবশ্য কিছু অসুবিধাও আছে। নতুন কোনো অতিথি হয়তো না চাইলেও লজ্জায় বারণ করতে পারবেন না। আবার একসঙ্গে সবার পাতে খাবার বেড়ে দেওয়াটাও আয়োজকের জন্য বেশ ঝামেলার। তার চেয়ে সাজানো থাকল খাবার, অতিথি তাঁর পাতে পছন্দমতো তুলে নিলেন। আড্ডা ও খাওয়া দুটোই চলতে থাকল একসঙ্গে। অতিথি আপ্যায়নের এই আয়োজনই হচ্ছে বুফে। শুধু রেস্তোরাঁ বা পার্টি সেন্টারগুলোতেই নয়, বাড়িতেও খুব সহজেই বুফের আয়োজন করে ফেলতে পারেন।

অতিথির সংখ্যা বিবেচনায় রাখুন
বুফে আয়োজনে অতিথির সংখ্যা এবং বাড়িতে জায়গার পরিমাণ বিবেচনায় রাখতে হবে। অল্প কয়েকজন অতিথির জন্য বুফে আয়োজন না করে সংখ্যায় বেশি মানুষের জন্য বুফে সুবিধাজনক। বাড়িতে জায়গা কম থাকলে সবাইকে একসঙ্গে খেতে দেওয়া সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে বুফে সুবিধা দিতে পারে। খাবার প্লেট হাতে নিয়ে অতিথিরা বসে, দাঁড়িয়ে আড্ডা দিতে দিতে খাবার উপভোগ করতে পারবেন।

আয়োজনের জিনিসপত্র
এ ব্যবস্থায় সবার জন্য থাকা চাই গ্লাস, প্লেট, ন্যাপকিন ও চামচ। এ ধরনের আয়োজনে মাঝখানের টেবিলে খাবার পরিবেশন না করে লম্বা কোনো সাইড টেবিলে বড় ডিশে করে খাবার পরিবেশন করতে হবে। নানা আকৃতির হট ডিশ পাওয়া যায়। খাবার গরম রাখতে হট ডিশগুলোর নিচে আগুনের শিখা জ্বলতে থাকে। খুব বেশি বড় নয়, এমন মাঝারি আকৃতির ডিশগুলোই বহন করা সুবিধাজনক।

ছবি: লেখকটেবিল সাজাবেন যেভাবে
বুফে আয়োজনে খাবার টেবিল সাজানোর ক্ষেত্রে সবার আগে ঠিক করতে হবে কোন কোন খাবার পরিবেশন করা যায় এবং কোন ধরনের পাত্রে পরিবেশন করা যায়। একই আকারের গোল, চারকোনা বা ওভাল আকারের ডিশ ব্যবহার করা যেতে পারে।

বুফে আয়োজনে এক সারিতে সব খাবার রাখার বেলায় সবার আগে রাখতে পারেন কোনো স্টার্টার বা সালাদ। এরপর যথাক্রমে সবজি, মাছ, মাংস, পোলাও, রুটি বা পরোটা, সবশেষে মিষ্টি-জাতীয় খাবার। হট ডিশের বদলে বাড়িতে থাকা কাচ ও সিরামিকের ডিশ ব্যবহার করলেও ব্যাপারটা মন্দ হয় না। এতে ঘরোয়া আবহ দেওয়া যায়।

পোলাও বড় গোল গামলায়, কাবাব ডিম্বাকৃতির বোলে, রোস্ট স্টেইনলেস স্টিলের ট্রে এবং ঝোলসহ তরকারি গোলাকৃতির বোলে দিলে ভালো দেখাবে। রোস্ট ও ভাজাভুজির পদগুলো তোলার জন্য সঙ্গে চিমটাসহ চামচ রাখতে হবে। গোটা মুরগির রোস্ট বা কোনো স্টেক রাখলে তার সঙ্গে অবশ্যই ছুরি ও কাঁটাচামচ দিতে হবে। আমাদের দেশীয় রান্নাগুলো এমনিতেই এত মসলাদার ও রঙিন যে এগুলো খুব বেশি সাজানোর প্রয়োজন পড়ে না; বরং অনেক সময় অতিরিক্ত সাজানোর ফলে দৃষ্টিকটু লাগে। খুব বেশি হলে ধনেপাতা, লেটুসপাতা, মরিচ এসব দিয়ে সামান্য একটু সাজিয়ে নেওয়া যেতে পারে। যে পাত্রে খাবার বাড়বেন, তা ফয়েল পেপার অথবা কলাপাতা বা পামপাতা দিয়ে মুড়ে নিতে পারেন। এতে পুরো আবহ নান্দনিক হবে। খাবার গরম করতে হতে পারে, তাই ওভেনপ্রুফ বাসন ব্যবহার করলে ঝামেলা কম হবে।

কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে

  • খাবার যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে; বিশেষ করে শিশুদের এ বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া ভালো।
  • চাল ও আটা দিয়ে বানানো খাবার মেনুতে রাখুন। কিন্তু শুধু আটা দিয়ে বানানো খাবার—যেমন তন্দুরি, পরোটা বা শাহি পরোটা, লুচি ইত্যাদি এককভাবে রাখবেন না। এতে অতিথিরা নিজেদের পছন্দমতো খাবার বেছে নিতে পারবেন।
  • পারিবারিক অনুষ্ঠানে রাতের বেলা বুফে আয়োজন করা ভালো। তাতে অতিথিরা অনেকটা সময় পাবেন আড্ডা দেওয়ার বা নিজেদের কুশলবিনিময় করার।

লেখক: এনটিভি ইউরোপ কুকিং কুইন সিজন-৩ চ্যাম্পিয়ন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত