Ajker Patrika

হাজারে কামিয়ে কোটিতে খরচ!

সম্পাদকীয়
হাজারে কামিয়ে কোটিতে খরচ!

গণমাধ্যমে অনেক খবর দেখা যায় আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার। তেমনই একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে সোমবারের আজকের পত্রিকার প্রথম পাতায়। নিশ্চয়ই এ ধরনের খবর নতুন নয়। খবরগুলোর শুধু মোড়ক বদলায়, ভেতরের ঘটনা থাকে একই রকম—দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের মালিক হওয়া। 

একের পর এক বড় কর্মকর্তা এমনকি ড্রাইভার, পিয়নের দুর্নীতির খবর যখন নজরে আসছে, তখন ‘মাঝারি’ পদের কর্মচারীরাই-বা বাদ যাবেন কেন? এবার জানা গেল এক তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। মো. ইয়াকুব রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী। সেই সঙ্গে শ্রমিক লীগ নেতা। ১৫ বছর ধরে সামলাচ্ছেন সিবিএর সাধারণ সম্পাদক ও গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিবের দায়িত্বও। 

জ্যেষ্ঠ সহকারী হিসেবে মো. ইয়াকুবের বেতন মাসে ৩৪ হাজার টাকা। কিন্তু তাঁর স্যালারি অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি টাকা! এই টাকার উৎস কী, জানে না ব্যাংক। তাই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁর হিসাবটিকে সন্দেহজনক অস্বাভাবিক লেনদেন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। 
অভিযোগ রয়েছে, ইয়াকুব প্রায়ই বিদেশ ভ্রমণ করেন, যেখানে বিমানে যাওয়া সম্ভব সেখানে অন্য কোনো যাতায়াতমাধ্যম ব্যবহার করেন না। থাকেন ৪ হাজার ৩০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটে, যেটির মূল্য ২ কোটি ৫৮ লাখ টাকার বেশি! এ ছাড়া তাঁর রয়েছে দামি গাড়ি, জমিসহ বহু সম্পত্তি। শুধু তা-ই নয়, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, অর্থ আত্মসাৎ ও বিভিন্ন খাতে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইয়াকুবের বিরুদ্ধে। তাঁর দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তিনি অনেককেই বদলি করাসহ নানা রকম শাস্তি দিয়েছেন। 

২০১৪ সালে একবার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ইয়াকুবের অপকর্মের তদন্ত শুরু করেছিল। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে 
সেই তদন্ত থেমে যায়। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায়ের মৌখিক অভিযোগ পেয়ে এবার দুদক অনুসন্ধান করছে কীভাবে তিনি এত অবৈধ সম্পদ অর্জন করলেন। আশা করি, দুদকের এই তদন্ত হুট করে থেমে যাবে না, একটা ফলাফল প্রকাশিত হবে, আর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

কোনো কোনো সিনেমায় প্রথমে ছোটখাটো কোনো খলনায়কের আবির্ভাব হয়। অথচ তার পেছন থেকে মদদদাতা রুই-কাতলাগোছের খলনায়ক থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। ইয়াকুবের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটছে না তো? দুদককে সেই ব্যাপারেও সতর্ক থেকে খুঁজে বের করতে হবে কার বা কাদের প্ররোচনায় কিংবা ছত্রছায়ায় ইয়াকুব একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও এত অর্থ-বিত্তের মালিক হলেন। ইতিমধ্যে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশেই চলত তাঁর দুর্নীতি-অনিয়ম। 

ইয়াকুব কোথায় আছেন, জানা যায়নি। তাঁর মতো হাজার কামিয়ে কোটি খরচ করা অনেক দুর্নীতিবাজই এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটা প্রচণ্ড মাথাব্যথার কারণ। শিগগিরই তারা এর ‘দাওয়াই’ খুঁজে পাবে বলে আমরা আশা করছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত