Ajker Patrika

নির্বাচন কবে

সম্পাদকীয়
নির্বাচন কবে

দেশে এখন ক্ষমতায় আছে একটি অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তী সরকার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টারা শপথ নিয়েছেন সংবিধান অনুযায়ী, কিন্তু সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো বিধান নেই। ফলে এই সরকারের মেয়াদকালও নির্দিষ্ট নয়। সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কত দিন ক্ষমতায় থাকবে, তা স্পষ্ট নয়। বলা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ছাড়বে অন্তর্বর্তী সরকার।

কত দিনে সংস্কার শেষ হবে আর কবে নির্বাচন হবে, তা স্পষ্ট করে বলবেন কে? সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন। তবে পরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ওটা সরকারের কথা নয়। তাহলে সরকারের কথা কোনটি, তা-ও পরিষ্কার করেননি তিনি। সে জন্য নির্বাচনের সময় নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না।

 ১৮ অক্টোবর আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে। এটাও নিশ্চিত নয়, ‘হয়তো’। অবশ্য এক দিন পর নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে আসিফ নজরুল বলেছেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার একমাত্র এখতিয়ার প্রধান উপদেষ্টার। তাহলে প্রশ্ন আসে, এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য অন্যরা দিয়ে কেন মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন?

সংস্কার, নির্বাচন এবং দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে। অবশ্য আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী দল হিসেবে পরিচিত কোনো দলের সঙ্গে বৈঠক হবে না—এটা নিশ্চিত। এমনকি জাতীয় পার্টিও সম্ভবত ডাক পাচ্ছে না। সরকারের সঙ্গে মূলত বৈঠক করছে বিএনপি, জামায়াত এবং এ দুই দলের সঙ্গে যাদের কোনো না কোনোভাবে মৈত্রী বা যোগাযোগ আছে, তারা।

সরকারের সঙ্গে বৈঠক করা সব দল কি একই রকম কথা বলছে? না, কিছু কিছু ভিন্নতা তো আছেই। যেমন বিএনপি চায় দ্রুত নির্বাচন, জামায়াত নির্বাচন চায় সংস্কারের পর। এর বাইরে অন্য ছোট দলগুলোর চাওয়ার মধ্যেও ভিন্নতা আছে। যেমন বাম ঘরানার দলগুলো নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের দাবি করলেও কেউ কেউ আবার এই ব্যবস্থার বিরোধিতা করবে এই যুক্তিতে যে, নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক হলে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। আবার আওয়ামী লীগের মতো বড় দলকে বাইরে রেখে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কীভাবে হবে, সেই প্রশ্নও আছে।

নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থান সফলকারী জনগণের সামনে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সরকারের বক্তব্যের গরমিল জনগণের মনে নানা ধরনের সন্দেহ-সংশয়ের উদ্রেক করে।

জনগণের মন থেকে নির্বাচন নিয়ে সংশয় দূর করতে সরকার কিছু করবে কি? এবং করলে সেটা কবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত