Ajker Patrika

মিজির আনারসে মধুপুর হাসে

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, মধুপুর (টাঙ্গাইল) 
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯: ২০
Thumbnail image

আনারসের মৌসুম প্রায় শেষের পথে। তবু টাঙ্গাইলের মধুপুরের বাজারগুলোতে এখনো সকাল থেকেই সাইকেল, ভ্যান, রিকশা, ইজিবাইকভর্তি আনারস নিয়ে সারি বেঁধে দাঁড়াচ্ছেন কৃষকেরা। রংধরা আনারসগুলো সুন্দর করে সাজানো। সে দৃশ্য বড়ই মনোরম। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারেরা সেই আনারস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

মধুপুরে এবার আনারসের ফলন ভালো হয়েছে। দাম যা পাওয়া যাচ্ছে, তাতেও খুশি কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে আনারস বিক্রি করে প্রায় পৌনে পাঁচ শ কোটি টাকা ঘরে তুলতে পারবেন মধুপুরের চাষিরা। এই তথ্য স্থানীয় কৃষি বিভাগের।

মধুপুর উপজেলার উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে মধুপুরে ৫৪ হাজার ১৯১ বিঘা জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ৩ হাজার হিসেবে ১৬ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজার চারা রোপণ করেছেন চাষিরা। ওই সব চারার শীর্ষভাগে শোভা পাচ্ছে পরিপক্ব আনারস। প্রতিটি আনারসের গড় মূল্য ৩০ টাকা হিসেবে বাজারমূল্য ৪৮৭ কোটি ৭১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। হঠাৎ কোনো বিপর্যয় না ঘটলে চলতি মৌসুমেই কৃষকেরা এই টাকা ঘরে তুলবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও স্থানীয় নথিপত্র অনুযায়ী, মূলত দক্ষিণ আমেরিকা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে অঞ্চলের ফসল আনারস। ১৫৪৮ সালে ভারত উপমহাদেশে আগমন ঘটে রসাল এই ফলটি। বাংলাদেশের এই এলাকায় পৌঁছায় ১৯৪২ সালে। মধুপুরের ইদিলপুর গ্রামের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা গারো সম্প্রদায়ের মিজি দয়াময়ী সাংমা প্রথম আনারস চাষ শুরু করেন। তিনি মেঘালয় থেকে ৭৫০টি চারা এনে তাঁর বাড়ির আঙিনায় আনারস আবাদ শুরু করেন। মধুপুরে হানিকুইন, জায়ান্টকিউ চাষ হয়ে থাকে। বর্তমানে ফিলিপাইন থেকে আমদানি করা এমডি-২ জাতের আনারস চাষ পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে।

ইদিলপুর আনারসচাষি বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. ফজলুল হক জানান, অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে কর্দমাক্ত রাস্তার ভোগান্তি আর বাজারের দালাল ও ফড়িয়াদের কাছে আনারসচাষিরা একসময় অসহায় ছিলেন। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এবং আনারসের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকেরাই এখন মহাজনে পরিণত হয়েছেন।

মধুপুরে উৎপাদিত আনারস জলছত্র কৃষিবাজার, মোটের বাজার, গারোবাজার, সাগরদীঘি ও আশ্রা বাজারে ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। এখন আনারস মৌসুমের শেষ সময়েও কৃষকেরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সকাল থেকেই সাইকেল, ভ্যান, রিকশা, ইজিবাইক-ভর্তি আনারস নিয়ে কৃষকেরা ক্রেতার অপেক্ষায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আনারস বিক্রি করে থাকেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতারা সেই আনারস কিনে নিয়ে যান। কৃষক সোলায়মান, আফছার আলী, ইসমাইল হোসেনসহ অনেকেই বলেন, চলতি মৌসুমে আনারসচাষিদের ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। দাম ভালো পাওয়া গেছে।

হবিগঞ্জের আনারস ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক জানান, মধুপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় ঢাকা, কুষ্টিয়া, বগুড়া, সিলেট, নাটোর, রাজশাহী, খুলনা, হবিগঞ্জ, নীলফামারী, গাইবান্ধা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুরসহ সারা দেশেই আনারস সরবরাহ হয়। আনারসভেদে ২০ থেকে ৫০ পর্যন্ত কিনে থাকেন তাঁরা।

বাংলাদেশ ট্রাক ড্রাইভার্স ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হিরা মিয়া জানান, আনারস মধুপুরের অর্থনীতি ও পরিবহন ব্যবসা সচল রেখেছে। চালক, হেলপার, কুলি-মজদুরসহ প্রায় ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, মধুপুর ছাড়াও গড় এলাকার ঘাটাইল, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ও মুক্তাগাছা এবং জামালপুর সদরে আনারস চাষ হচ্ছে। হানি কুইন ও জায়ান্টকিউর পাশাপাশি এমডি-২ জাতের আনারস চাষ শুরু হয়েছে। বর্তমানে কৃষকেরা বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার থেকে সরে এসেছেন। ভালো দামও পাচ্ছেন। বর্তমানে আনারস প্রক্রিয়াজাতকরণ করে রপ্তানির বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত