পাট জাগ নিয়ে ভোগান্তি

রাজবাড়ীতে পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষকেরা। অধিকাংশ খেতেই পাট রোদে পুড়ে লালচে হয়ে যাচ্ছে। অনেক কৃষক উপায় না পেয়ে অপরিষ্কার অল্প পানিতে পাট জাগ দিচ্ছেন। ফলে পাটের রং কালচে হয়ে বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন। কৃষকদের অভিযোগ, এই দুরবস্থায় কৃষি অফিসের কোনো পরামর্শ পাচ্ছেন না তাঁরা।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর রাজবাড়ী জেলার পাঁচ উপজেলায় ৪৯ হাজার ১২২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে, যা গতবারের থেকে প্রায় ১ হাজার ১০২ হেক্টর বেশি। কৃষি কর্মকর্তাদের আশা এ বছর এক লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন পাট উৎপাদন হবে। গত বছর রাজবাড়ী জেলায় ৪৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল।

সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়ন ও চন্দনী ইউনিয়নের গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ কৃষকের পাট মাঠেই রয়েছে। যেসব পাট মাঠে রয়েছে সেগুলো লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। জাগ দেওয়ার পানি না থাকার কারণে কৃষকেরা পাট কাটতে পারছেন না। আবার যাঁরা পাট কেটেছেন, তাঁরা পানির অভাবে জাগ দিতে না পারায় জমিতেই স্তূপ করে রেখেছেন। অনেকেই আবার পুকুরে শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে পাট চাষিদের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।

চন্দনী ইউনিয়নের কৃষক জালাল শেখ বলেন, চার পাকি জমিতে পাটের আবাদ করেন তিনি। এর মধ্যে দুই পাকি জমির পাট কেটেছেন। আর দুই পাকি জমির পাট জমিতেই রয়েছে। যে দুই পাকি জমির পাট কেটেছেন সেটাও জমির এক কোণে ফেলে রেখেছেন। জাগ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি। গ্রামের একজনের পুকুর লিজ নেওয়ার কথা হচ্ছে। তিনি লিজ দিলে তাঁর পুকুরে পাট জাগ দেবেন। তবে পুকুরের অল্প পানিতে পাটের রং কালচে হয়। সেই পাট বিক্রি করতে গেলে দাম পাওয়া যায় না।

আরেক কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, পাট নিয়ে খুবই দুশ্চিতায় আছি। কোথাও পানি নেই, জাগ দিতে পারছি না।

কৃষক এনায়েত হোসেন বলেন, আট বিঘা জমিতে তিনি পাটের আবাদ করেন। ফলও ভালো পেয়েছিলেন। কিন্তু পানি না থাকার কারণে পাট কাটতে পারছেন না। ফলে জমিতে থেকেই পাটগাছ মরে যাচ্ছে। বিকল্প হিসেবে তার বাড়িতে দুই বিঘা জমির ওপর একটি পুকুর ছিল, সেখানে মাছ চাষ করতেন তিনি। ওই পুকুরের মাছ বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন ওই পুকুরেই তিনি পাট জাগ দেবেন।

এনায়েত হোসেন আরও বলেন, তাঁর পুকুর থাকার কারণে তিনি পুকুরে জাগ দিতে পারবেন। কিন্তু যাঁদের পুকুর নেই তাঁদের তো ঘুম হারাম হয়ে গেছে। অনেকেই এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে গিয়ে পুকুরে পাট জাগ দিচ্ছেন।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. বাহাউদ্দিন সেক বলেন, ‘খাল–বিলে পানি না থাকার কারণে রাজবাড়ীর কৃষকেরা পাট কাটায় দেরি করছেন। যে কারণে আমন ধান রোপণেও দেরি হচ্ছে। কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি পাট কেটে যেখানে অল্প পানি রয়েছে সেখানে কলার পাতা বা খড় দিয়ে ঢেকে রাখার। যেন রোদে পাটের কোয়ালিটি নষ্ট না হয়।’