Ajker Patrika

মেডিকেল বর্জ্য ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি

সম্পাদকীয়
মেডিকেল বর্জ্য ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি

রোগ-ব্যাধি হলে মানুষকে সুস্থ হওয়ার আশায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। হাসপাতালে বা অন্য কোনো চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে হয়। সমস্যা গুরুতর হলে হাসপাতালের বেডেও ঠাঁই নিতে হয়। এগুলো স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য যেসব সামগ্রী ব্যবহার করা হয়, তা যখন বর্জ্য হয়ে আবার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে, তখন বিষয়টি আর স্বাভাবিক থাকে কি?

প্রশ্নটি সামনে এল শুক্রবার আজকের পত্রিকায় ‘মেডিকেল বর্জ্যে ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি খবর পড়ে। জানা যায়, রাজধানীতে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ টন মেডিকেল বর্জ্য তৈরি হয়। এই বর্জ্য থেকে মানুষের মধ্যে কিছু রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বলেও জানা যাচ্ছে।

এ নিয়ে আলোচনার শুরুতেই জেনে নেওয়া যাক মেডিকেল বর্জ্য কী। সাধারণভাবে চিকিৎসাপ্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত উপকরণ ফেলে দিলে বা অন্যভাবে যে বর্জ্য তৈরি হয়, তাকে মেডিকেল বর্জ্য বলা হয়। অত্যন্ত স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ মেডিকেল বর্জ্যের তালিকায় রয়েছে ব্যবহৃত সুচ, সিরিঞ্জ, রক্ত ও পুঁজযুক্ত তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, টিউমার, ওষুধের শিশি, রক্তের ব্যাগ, স্যালাইনের ব্যাগ, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদিসহ ক্ষতিকর সামগ্রী। এই বর্জ্যের বেশির ভাগই সংক্রামক, এগুলোর মাধ্যমে রোগের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ে।

বাংলাদেশ মেডিকেল বর্জ্য বিধিমালা-২০০৮-এর আলোকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্য ২০১১ সালে একটি পরিবেশগত সমীক্ষা ও অ্যাকশন প্ল্যান (২০১১-২০১৬) নেওয়া হয়েছিল। ওই অ্যাকশন প্ল্যানেই বেশ কিছু পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেখানে যেমন কেন্দ্রীয়ভাবে মেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য একটি সেন্ট্রাল ফ্যাসিলিটি তৈরির কথা বলা হয়েছিল, তেমনি নিয়মিত এ-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, তদারকি, পরিবীক্ষণ ও তথ্য প্রচারের সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু এর অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়নি।

আজকের পত্রিকার খবরেও বলা হয়েছে, চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারি বিধিমালা থাকলেও তা মানছে না সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ উন্নত বিশ্বে হাসপাতালের বর্জ্য নিরাপদে ইনসিনারেট (বৈজ্ঞানিক উপায়ে পোড়ানো) হয় অথবা অটোক্লেভ (জীবাণুমুক্ত) করে ফেলে দেওয়া হয়।

কিছু জায়গায় হাসপাতালগুলো নিজ উদ্যোগে বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলছে বা মাটিতে পুঁতে ফেলছে। পুড়িয়ে ফেলা বেশ বিপজ্জনক সমাধান। এ জন্য কিছু নিয়ম মানতে হয়, তা না মানলে যেমন রয়েছে কর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, তেমনি আছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। সেই তুলনায় মাটিতে পুঁতে ফেলা বা অন্য কনটেইনমেন্টের (সংরক্ষণ) ব্যবস্থা করা উত্তম। আর যেসব মাস্ক, গ্লাভস বা অন্য কিছু সাধারণ মানুষেরা ব্যবহার করছেন, তার জন্য ব্যাপকভিত্তিক প্রচারণার বিকল্প নেই। তাঁরা যেন কোনোভাবেই এসব জিনিস ড্রেনে বা সাধারণ ডাস্টবিনে না ফেলেন। বাসাবাড়িতে তৈরি হওয়া মেডিকেল বর্জ্য অন্তত বেশ কিছুদিন আবদ্ধ পাত্রে রেখে তারপর বাইরে ফেলা উচিত। আর সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা থেকে এই বিশেষ সময়ের জন্য লাল রং করা ক্লোজড বিন স্থাপন করা যেতে পারে, যাতে শুধু এ ধরনের বর্জ্য ফেলা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত