Ajker Patrika

নিরাপদ সড়কের গল্প

সম্পাদকীয়
নিরাপদ সড়কের গল্প

জুডি চেয়েছিল পুলিশ কর্মকর্তা হতে। হয়েও যায়। তবে তাকে দেওয়া হয় যানবাহন পার্কিং ডিউটি, ট্রাফিক পুলিশের মতো আরকি। অথচ সে চাইত রহস্য-রোমাঞ্চ ভরা কোনো ঘটনার তদন্ত-সমাধান করতে। পরে অবশ্য জুডি ওই রকম তদন্তে জড়িয়েও যায়। হলিউডের ‘জুটোপিয়া’ সিনেমাটি এ রকম গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছিল। ২০১৭ সালে অস্কার পাওয়া অ্যানিমেটেড সিনেমাটি হয়তো অনেককে পুলিশে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু জুডি নামের খরগোশটির মতো কয়জন মানুষ সৎ পুলিশ কর্মকর্তা হতে পারে?

আমরা এত দিন অনেক অসৎ পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখেছি, তাঁদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ পেয়েছি। এমনকি তাঁদের দলীয়কৃত হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতেও দেখা গেছে। নানা সময়ের খবরাখবরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার নামে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা শোষণটাই করেছেন। ঘুষ-দুর্নীতি তাঁদের কাছে বাঁ হাতের খেলা যেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশ বাহিনীর নেতিবাচক আচরণের জন্য এখন চরম মূল্য দিতে হচ্ছে তাদের। আমরাও চাই দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি হোক কিন্তু কোনো নিরপরাধীর নয়। জনসাধারণের এ কথা মনে রাখা উচিত যে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যায় না, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। তাই ক্ষোভ থেকে পুলিশের ওপর চড়াও হওয়া কিংবা তাদের গণধোলাই দিয়ে মেরে ফেলাটা কখনোই 
ভালো কোনো ব্যাপার নয়। এই আতঙ্ক থেকেই হয়তো পুলিশ তাদের কাজ ঠিকমতো করতে পারছে না।

৫ আগস্ট বিগত সরকারের পতনের পর পুলিশ তাদের কাজে ফিরেছে অনেক দেরিতে, সংক্ষিপ্ত সেবা নিয়ে। আর সেটা হয়েছে পারিপার্শ্বিক ও সংগত কারণেই। আজকের পত্রিকার একটি খবর থেকে জানা যায়, রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশ সকাল থেকে ডিউটি করলেও হামলার আতঙ্কে সন্ধ্যার পর তারা সড়কে থাকছে না। ফলে বাড়ছে যানজট, ভুগছে সাধারণ মানুষ।

এর আগে তারা কাজে না আসা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরাই সড়ক সামলেছে, যা প্রশংসনীয়। এমনকি ট্রাফিক পুলিশ কাজ শুরু করার পর সংকট মুহূর্তে কিছুদিন তাদের সাহায্যও করেছে তারা। কিন্তু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ তাদের কাজ নয়। তাদের মূল কাজ পড়াশোনা করা। সেটা তারা ইতিমধ্যেই শুরু করেছে।

যেহেতু ট্রাফিক পুলিশের কাজ সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা, সেহেতু তাদেরই তো সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাস্তায় যতক্ষণ যানবাহনের চাপ থাকবে, ততক্ষণ সতর্ক থেকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তাদেরই। কেন তারা এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত সরকারের। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিতে হবে ট্রাফিক পুলিশদের এবং এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে যেন তারা আর নিরাপত্তাহীনতায় না ভুগে জনগণের সেবা করে যেতে পারে।

ট্রাফিক বিভাগেও সংস্কার জরুরি এই কারণে যে, তারা যেন ভবিষ্যতে কোনো সংকটে না পড়ে এবং সুচারুভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত