Ajker Patrika

ব্যয় লাখ টাকা, ফল নেই

মধুপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২১, ২০: ৩৫
ব্যয় লাখ টাকা, ফল নেই

গ্রামের কিশোর-কিশোরীদের বিকাশ ও সংস্কৃতি মনস্ক করে গড়ে তুলতে নেওয়া সরকারি উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। মহিলা অধিদপ্তর পরিচালিত কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রকল্প। এই প্রকল্পে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা বরাদ্দ থাকলেও ফলাফল শূন্যের কোঠায়। ক্লাবের ব্যয়ে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগও উঠেছে। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা করোনাকে দায়ী করে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহিলা অধিদপ্তরের অধীনে মধুপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ১২টি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই ক্লাবগুলোতে ১১ থেকে ১৯ বছর বয়সী ২০ জন কিশোরী ও ১০ জন কিশোর নিয়ে গঠন করার কথা রয়েছে। তাঁদের আবৃত্তি ও সংগীত চর্চা করার জন্য দুজন শিক্ষক এবং তদারকির জন্য তিনজন মডারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের সব কর্মযজ্ঞ তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা মহিলা অধিদপ্তরকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহিলা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের কাছাকাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে। মধুপুরের কেন্দ্রগুলো হলো চাড়ালজানি, বানরগাছি, কাকরাইদ, শোলাকুড়ী, ফুলবাগচালা, মহিষমারা, আলোকদিয়া, মজিদচালা, বোকারবাইদ, বেরিবাইদ ও কুড়াগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ক্লাবগুলোতে লুডু, দাবা, কেরাম ছাড়া কোন কিছু এখনো সরবরাহ করা হয়নি। আবৃত্তি চর্চার জন্য কোন উপকরণ দেওয়া হয়নি। সংস্কৃতি চর্চার জন্য হারমনিয়াম, তবলা কেনার বরাদ্দ থাকলেও এখনো কোনো সরঞ্জামাদি কেন্দ্রে পৌঁছেনি।

এ ছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই ক্লাবের কোনো খোঁজ নেন না। ক্লাবের জন্য প্রতি মাসে ১ লাখ ৮০০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও সে টাকা নয়ছয় হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওযা গেছে। ক্লাবগুলোতে সপ্তাহে দুই দিন বৃহস্পতি ও শুক্র অথবা শুক্র ও শনিবার ক্লাস হওয়ার কথা। কিন্তু নেই কোনো কার্যক্রমই। কিন্তু মাসিক ব্যয়, শিক্ষকের বেতন সবই ঠিকমতো চলছে।

দ্বিতীয় শ্রেণির তাইয়েবা, পঞ্চম শ্রেণির খাইয়রুল ইসলাম, মীম ও হাসিসহ স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল লতিফ জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে কখনো কবিতা আবৃত্তি, গান শেখানো হয় না।

আলোকদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহীদা খাতুন জানান, ‘মহিলা অধিদপ্তরের অধীনে কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠার কথা আমার জানা নেই।’

কাকরাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুমা লায়লা জানান, ‘আমার বিদ্যালয়ে মহিলা অধিদপ্তর সংস্কৃতি চর্চার জন্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন কিন্তু কিশোর-কিশোরী না থাকায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’

মহিষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে একই অবস্থা। চলমান প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিজন কিশোর-কিশোরীর জন্য ৩০ টাকা নাশতার বরাদ্দ থাকলেও যৎসামান্য টাকায় সামাল দেওয়া হচ্ছে। আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের নাশতার টাকা ৩ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা এলেও তা কাগজে কলমে ব্যয় দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে শিক্ষক বা মডারেটরগণ এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ। অর্থনৈতিক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত বলে জানান কেউ কেউ।

এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমিনা বেগম জানান, এই প্রকল্প চালু হওয়ার পর পরই করোনা শুরু হওয়ায় কার্যক্রম বাধা গ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে পরীক্ষার কারণে বিভিন্ন সময়ে ক্লাস চালু রাখা হয়েছে। হারমোনিয়াম, তবলা খুব শিগগিরই প্রত্যেক কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে লুডু, কেরাম ও দাবা সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়াও অন্যান্য ব্যয় যথা নিয়মেই করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত