Ajker Patrika

ইনবক্স বিড়ম্বনা

রিক্তা রিচি
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ০৬
ইনবক্স বিড়ম্বনা

রাত দুটো কি তিনটে। পৌষের রাতে কম্বলের উষ্ণতা নিয়ে পুরো শহর ঘুমিয়ে আছে। এমন সময় যদি মেসেঞ্জারে কিংবা মোবাইল ফোনে কল আসে, তাহলে বিষয়টি আতঙ্কের। প্রথমত, মাথায় প্রশ্ন খেলে—‘কী হয়েছে’, ‘খারাপ কিছু কি না’, ‘আকস্মিক কোনো বিপদ কি না’ ইত্যাদি। পরিচিত মহল কিংবা পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকে কল এলে ক্ষেত্রবিশেষে তাকে খারাপভাবে কিংবা বিরক্তিকর কল হিসেবে নেওয়ার কিছু নেই। কিন্তু কল যখন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষ দেয়, বিষয়টি কতটা যন্ত্রণার, তা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন।

আমরা সবাই এখন প্রযুক্তিনির্ভর। বিশেষ করে আমাদের দিন-রাতের অধিকাংশ সময় কাটে মোবাইলের সঙ্গে। আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের সঙ্গে। বালিশের পাশে মোবাইলটা রেখে, মোবাইলের ওয়াই-ফাই অন করে আমরা গভীর ঘুমে মত্ত হয়ে যাই। আর এরই মধ্যে পৃথিবীতে অনেক কিছু ঘটে যায়, যা হয়তো আমরা জানি না। মেসেঞ্জারের নীল বাতি জ্বলজ্বল করে জ্বললেই অনেকে ভাবেন, যার মেসেঞ্জারের নীল আলোটি জ্বলছে তিনি হয়তো অনলাইনে অ্যাকটিভ আছেন। দিন-রাত বিবেচনা না করেই মেসেজ দেন। কল করেন। বিষয়টা যদি কোনো কাজের প্রয়োজনে হতো, তাহলেও হয়তো মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু এই মেসেজ কিংবা কলের উদ্দেশ্য হলো একজন ব্যক্তিকে জ্বালাতন করা।

বেশ কয়েক মাস আগের ঘটনা। একজন লেখকবন্ধুর সঙ্গে আলাপ চলছিল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম, আমার সেই লেখকবন্ধুটির বন্ধুতালিকায় থাকা কিছু বন্ধু তার অন্য বন্ধুকে ইনবক্সে নক দেয়। বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। চা-কফির দাওয়াত দেয় ইত্যাদি। আমার সেই নারী লেখকবন্ধু বিষয়গুলো নিয়ে রীতিমতো বিব্রত। এমন ঘটনা ঘটেছে আমার আরেক বন্ধুর বেলায়ও। ফেসবুকে কিছু মানুষ আমাকে ফলো করে। সংখ্যায় খুব সামান্য। আবার কিছু মানুষ আমার বন্ধুতালিকায়ও আছে। সবাই নয়, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমার কাছের এক বন্ধুকে বিভিন্নভাবে জ্বালাতন করে। রাত-বিরাতে ভিডিও কল দিয়ে বসে। আবার কেউ কেউ তাকে নক দিয়ে জানতে চায় আমাকে চেনে কি না, আমার সঙ্গে দেখা করতে চায় ইত্যাদি। বিষয়গুলো নিয়ে আমার বন্ধুও খুব বিরক্ত।

একজন মানুষের সঙ্গে মানুষের কথা-গল্প-আড্ডা হতেই পারে। কাজের প্রয়োজনে দীর্ঘ আলাপও হতে পারে। তা হতে হবে অবশ্যই মার্জিত ও রুচিসম্মত। অযাচিতভাবে ফোনকিংবা মেসেজ দিয়ে জ্বালাতন করাটা কতটা যৌক্তিক।

নারীরা যেসব ফালতু বিষয়ে ইনবক্স বিড়ম্বনার শিকার হন, তার কিছু নমুনা: আপনি কেমন আছেন? কোথায় আছেন? আপনার সঙ্গে কথা বলা যাবে কি না? আপনাকে বিয়ে করতে চাই। আপনাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আপনি খেয়েছেন? আপনি ঘুমিয়েছেন? আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে? আপনার সঙ্গে কফি খাওয়া যাবে কি না?

মেসেঞ্জারে স্প্যাম ও আদার মেসেজগুলো ভুলক্রমে যদি কোনো দিন চেক করা হয়, তাহলে বোঝা যায় মানুষের রুচিবোধ কোথায় নেমেছে।

ইনবক্স বা স্প্যাম মেসেজ চেক করলে ভালো মেসেজের পাশাপাশি এমন সব মেসেজ/ছবি চোখে পড়ে, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। একজন অপরিচিত নারীকে পর্ন সাইটের খারাপ ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে তারা কী আনন্দ পায়, আমার মাথায় আসে না!!

সমাজের উঁচুস্তরে বাস করা ব্যক্তি কিংবা লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত আছেন এমন কেউ কেউ মেসেঞ্জারে অযাচিতভাবে বিরক্ত করেন। তাঁরা চান সামাজিক দায়বদ্ধতার বাইরে একজন/একাধিক নারীর সঙ্গে গোপন প্রেম করতে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে তুলতে। সেই প্রেম শুধু তিনি এবং ওই নারীই জানবেন আর কেউ নন। বিভিন্নভাবে যৌনতার কথা উল্লেখ করেন। অথচ তার ঘরসংসার-সন্তান সবই আছে। তারপরও অন্য মেয়েদের ইনবক্সে ইনিয়ে-বিনিয়েনানান কথা লেখেন।

প্রশ্ন হলো, একজন নারীকে কেন এ ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে এ রকম অসামাজিক কর্মকাণ্ডের জায়গা করে তুললে রুচি, নৈতিকতা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? প্রশ্নটা রেখে গেলাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

‘তেলের ক্রেতা’ হিসেবে ভারতকে আর পাবে না রাশিয়া, জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান: ভারতীয় দুই কোম্পানির ব্যাংক গ্যারান্টি প্রত্যাহার করল বাংলাদেশ

মহিলা মাদ্রাসা থেকে দুই শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

রাবির অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত