Ajker Patrika

‘বিচারের বাণী যেন নিভৃতে না কাঁদে’

ঢাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ৩১
‘বিচারের বাণী যেন নিভৃতে না কাঁদে’

শ্বেত-শুভ্র শাঁখা আর লাল টকটকে সিঁদুরের সাজ। ঢাকের তাল আর আলতার রং যেখানে মিলেমিশে একাকার। বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা বলে কথা। উৎসবমুখর পরিবেশে মণ্ডপে চলছে দেবী দুর্গার বন্দনা। ঠিক এমন সময় প্রথমে ১০-১২ জন এসে হামলা করলেন। পরে আরও লোক এসে করলেন অগ্নিসংযোগ, এলোপাতাড়ি ভাঙচুর। মুহূর্তেই লাল টকটকে সিঁদুরের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল লাল তাজা রক্ত। বাঁচার আশায় মণ্ডপ ছেড়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করেছেন সবাই। তা-ও আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি নারী, শিশু, বৃদ্ধ মা-বাবারা।

কুমিল্লা, নোয়াখালী ও রংপুরের পীরগঞ্জসহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার এমন করুণ চিত্রই যেন ফুটিয়ে তুললেন তাঁরা। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘দেখতে কি পাও, পুড়ছে বাংলা...’ শীর্ষক নাট্য পরিবেশনায় এমন শৈল্পিক প্রতিবাদ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

‘গোল হয়ে আসুন সকলে, ঘন হয়ে আসুন সকলে’—এই প্রতিপাদ্য ধারণ করে অনুষ্ঠিত পরিবেশনাটির মুখ্য তত্ত্বাবধায়ক তানভির নাহিদ খান বলেন, ‘ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ নয়, বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। তবে সম্প্রতি দুর্গোৎসব সারা দেশে ঘটে যাওয়া সহিংসতা এই বাংলার হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে হুমকির মুখে ফেলেছে, অসাম্প্রদায়িক এই রাষ্ট্রকে সংকটাপন্ন করেছে।’

একজন মানুষ হিসেবে সবাইকে এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড নিয়ে সচেতন করতে নাটকটি পরিবেশন করা হয়েছে বলে জানান নাহিদ।

বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহমান মৈশান বলেন, ‘এ দেশে একজন মুসলমান ঠিক যতটুকু বাঁচার অধিকার রাখেন, একজন হিন্দুও ততটুকুই অধিকার রাখেন।’ বিভাগের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান লিয়নও বক্তব্য দেন।

এর আগে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘সাম্প্রদায়িকতা রুখে দাঁড়াও, সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ো’ শীর্ষক মানববন্ধন করেছে ঢাবি শিক্ষক সমিতি। সেখানে বক্তব্যকালে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘দেশে কোনো অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক, তা আমরা কখনোই চাই না।’

ঢাবি উপাচার্য সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘যা কিছু ঘটছে, তা একটি অশনিসংকেত। শর্ষের মধ্যে ভূত রয়েছে। এই শর্ষে হচ্ছে রাজনীতি ও অর্থনীতি। এ ঘটনার পর এখনো কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। এ ঘটনার দ্রুত বিচার করতে হবে; বিচারের বাণী যেন নিভৃতে না কাঁদে।’

শিক্ষক সমিতির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ড. লুৎফর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমাদের এমন ঘটনার প্রতিবাদে দাঁড়াতে হচ্ছে, যা মেনে নেওয়াও কষ্টকর। এই ব্যর্থতার দায় যাঁদের ওপর বর্তায়, তাঁরা এসব এড়াতে পারেন না।’

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ঢাবি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা ও প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ আরও অনেকে। এদিকে ভাঙচুরের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতি।

বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদান ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মৌন মিছিল করেছে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

‘তেলের ক্রেতা’ হিসেবে ভারতকে আর পাবে না রাশিয়া, জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান: ভারতীয় দুই কোম্পানির ব্যাংক গ্যারান্টি প্রত্যাহার করল বাংলাদেশ

রাবির অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

মহিলা মাদ্রাসা থেকে দুই শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত