Ajker Patrika

আর কত প্রাণ ঝরলে প্রতিকার

সম্পাদকীয়
আর কত প্রাণ ঝরলে প্রতিকার

সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের প্রতিদিনের ঘটনা। কেন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, কী কী ব্যবস্থা নিলে এই দুর্ঘটনা কমতে পারে, তা কারও অজানা নয়। কিন্তু জেনেশুনেও প্রতিকারের উদ্যোগ না নেওয়াই এখন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনসহ আরও অনেকেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে সচেতনতা বাড়ানো এবং সরকারকে আইনি ব্যবস্থা নিতে অনেক বছর ধরেই আন্দোলন করছেন, প্রচারণা চালাচ্ছেন। সহপাঠীর করুণ মৃত্যুর পর ঢাকায় শিক্ষার্থীরা সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে কমপক্ষে দুই দফায় বড় আন্দোলন করার পরও পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সড়ক দুর্ঘটনাসংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সাড়ে ৫ বছরে ৫ হাজার ৬১৯ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এ সময়ে নানা সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৪ হাজার ৪৭৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সে বিবেচনায় শিক্ষার্থী নিহতের হার ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে ২ হাজার ৯৭৮ জন (৫৩ শতাংশ)। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় রোববার একটি খবর ছাপা হয়েছে।

২০১১ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে যায়। ওই ট্রাকে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শেষে বাড়ি ফিরছিল ৪২ শিক্ষার্থী। সেই দুর্ঘটনায় তাদের সঙ্গে নিহত হয় আরও তিনজন। ওই দুর্ঘটনার ১৩তম বার্ষিকীতে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে শনিবার।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাড়ে ৫ বছরে ১ হাজার ৫৩৪ শিক্ষার্থী যানবাহনের ধাক্কা বা চাপায় নিহত হয়েছে। তারা সবাই পথচারী ছিল। মোটরসাইকেলচালক বা আরোহী শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে ২ হাজার ৭৮৩ জন।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকা; শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর মানসিকতা এবং ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতাকে চিহ্নিত করেছে।

সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করার ব্যাপারে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। মালিকেরা যেকোনো প্রক্রিয়ায় তাঁদের আয় বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালালে চালকের ওপর মানসিক চাপ পড়ে। তখন চালক বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে বেশি ট্রিপ দিতে চান। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণে ত্রুটি এবং দুর্বল সড়ক ব্যবস্থাপনাও অন্যতম কারণ। সরু ও দ্বিমুখী সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি থাকে। একই রাস্তায় বৈধ ও অবৈধ এবং দ্রুত ও শ্লথ গতির যানবাহন, সড়কে বাজার, দোকানপাট ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ।

দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে হলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের বিধিবিধান প্রতিপালনে সচেতন হতে হবে। নাগরিকদের মধ্যে আইন ও শৃঙ্খলা মানার সংস্কৃতি এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কঠোর হতে হবে। নাগরিক সমাজ ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ-সংস্থার যৌথ উদ্যোগে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত