Ajker Patrika

খাগড়াছড়ির আগাম আনারস যাচ্ছে সমতলে

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২২, ১০: ৪৩
Thumbnail image

খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে আগাম জাতের আনারস তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার চাষিরা। এ বছর উপজেলার ২০০ একর টিলা জমিতে এই আনারস চাষ হয়েছে। খেতের ফল তুলে বাজারজাত শুরু করেছেন কৃষকেরা। রমজান ও চৈত্রের ভ্যাপসা গরমে চাহিদা থাকায় প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত ট্রাক আনারস সমতলে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারেরা।

সাধারণত জুন-জুলাই আনারস চাষের মৌসুম। তবে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় অসময়েও পাহাড়ে আনারস চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরম ও রোজায় রসাল ফল হিসেবে চাহিদা থাকায় আগাম আনারস বাজারজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় ও কৃষক সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ের রসাল ফল আনারসের সমতলে চাহিদা বেশি। সেই চাহিদা মাথায় রেখে উপজেলার প্রায় ২০০ একর টিলায় এবার আনারস চাষ করেছেন অর্ধশত প্রান্তিক কৃষক। অনাবৃষ্টির এই সময়েও উঁচু টিলায় আনারস লাগিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির জৈব সার, পোলট্রি শিল্পের বর্জ্য ও ওষুধ (হরমোন) ব্যবহারে খেতে সারা বছর ফল পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। রোজা শুরু ও চৈত্রের গরমে রসাল ফল হিসেবে আনারস বাজারজাত শুরু হয়েছে।

প্রতি একর জমিতে পৌনে ২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০ হাজার ৩৫ হাজারটি আনারস উৎপাদন সম্ভব। প্রতিটি আনারস ১০-১২ টাকা দরে বিক্রি করলেও ৩ লাখ টাকা বিক্রি হবে। পাইকারদের এই আনারস সংগ্রহের পর বাজারজাত করতে গাড়ি ভাড়া, টোল ও অন্যান্য খবর মিলে প্রতিটিতে ব্যয় হয় ৪ টাকা। এ ছাড়া পচনশীল হওয়ায় গড়ে আনারস নষ্ট হয় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। পাহাড়ে কৃষকের কাছ থেকে ১০-১২ টাকা দরে কেনা আনারস সমতলে বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।

উপজেলার উদ্যোক্তা ও শিক্ষক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি কৃষকের সন্তান। শিক্ষকতার পাশাপাশি গত বছর ৬ একর জায়গায় ২ লাখ আনারসের চারা রোপণ করেছিলাম। একরপ্রতি পৌনে ২ লাখ টাকা ব্যয় করে আনারস উৎপাদন হবে ৩০ থেকে ৩৫ হাজারটি। এতে আয় প্রায় ২ লাখ টাকা।’

লুৎফর রহমান বলেন, ‘এ বছর সব গাছে আনারস এসেছে। ফলনও ভালো হয়েছে। ফলে পাইকারের কাছে প্রতিটি আনারস ১৩ টাকা হারে মোট ২৬ লাখ টাকায় বাগান বিক্রি করে দিয়েছি। রমজানের শুরু থেকে আনারস ঢাকার বাজারে চড়া দামে বিক্রি শুরু হয়েছে।’

ওসমানপল্লীর রাজনীতিক ও চাষি মো. নূর আলম বলেন, ‘আমি প্রায় ২৫ একর টিলায় আনারস চাষ করেছি। এর মধ্যে ১৮ থেকে ২০ একর জমিতে ফল এসেছে। এই এলাকায় আমার মতো আরও অন্তত ৫০ জন আনারস চাষে জড়িত। পাইকারেরা বাগান থেকে প্রতিটি আনারস ১০-১২ টাকায় কিনে নিয়ে যান।’

নূর আলম জানান, বর্তমানে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও মধুপুরের আনারসে ঢাকার বাজার সয়লাব। পচনশীল রসাল আনারস আড়তে বেশি সময় রাখার সুযোগ নেই। ফলে বাজার ওঠা-নামায় পাইকারেরা আশানুরূপ মুনাফা করতে পারেন না। তবে খাগড়াছড়ির আনারস রসপূর্ণ ও সুমিষ্ট হওয়ায় কদর বেশি।

হাতিমুড়া বাজারের শ্রমিক লেবার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল আহম্মদ বলেন, ‘সমতলে এখানকার আনারসের চাহিদা আছে। তবে পচনশীল ফল হওয়ায় লাভ-লোকসানের মধ্যেই পাইকারদের পুঁজি তুলতে হয়। প্রতিদিন ৪৫-৫০ ট্রাক আনারস এই এলাকা থেকে সমতলে নেওয়া হয়।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসিনুর রহমান বলেন, ‘পাহাড়ের মাটি আসলে খুবই উর্বর। উপজেলার প্রায় ২০০ একর টিলা জমিতে চাষ করা আনারস এখন পাকা শুরু হয়েছে। অনাবৃষ্টিতে এই ফল কিছুটা আকারে ছোট হলেও মিষ্টি বা রস কম হবে না। রমজান ও চৈত্রের ভ্যাপসা গরমে সমতলে আনারসের চাহিদা বাড়বে। এতে বাজার চাহিদা মিটিয়ে কৃষকদের বেশ লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আধুনিক কৃষিবিপ্লবের ছোঁয়া ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে এ অঞ্চলের কৃষকেরা চাষাবাদে সাফল্য দেখাচ্ছেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা গাছে হরমোন ইথোফেন ব্যবহারে এখন বারো মাস আনারস ফলাতে চান কৃষকেরা।

আনারস সম্পর্কিত পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত