Ajker Patrika

উন্নয়নের নামে পান্থকুঞ্জ পার্কের ৪০ প্রজাতির ২ হাজার উদ্ভিদ ধ্বংস করা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত অংশ নির্মাণের প্রকল্প বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। আজ শুক্রবার বিকেলে কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কে। ছবি: সংগৃহীত

উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে র‍্যাম্প নির্মাণ করতে গিয়ে পান্থকুঞ্জ পার্কের প্রায় ৪০ প্রজাতির ২ হাজার উদ্ভিদ ধ্বংস করা হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের একটি র‍্যাম্প পান্থকুঞ্জ পার্কের বুক চিরে কারওয়ান বাজার গোল চত্বরের দিকে নামানো হবে, যেখানে কারওয়ান বাজার মোড়ে বর্তমান পরিস্থিতিতেই অসহনীয় যানজটের মুখোমুখি হতে হয়। আরেকটি সংযোগ সড়ক পান্থকুঞ্জ পার্ক হয়ে পলাশী পর্যন্ত যাবে। এই সড়ক কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত বিদ্যমান রাস্তার উপযোগিতাও নষ্ট করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশ নষ্ট করার পাশাপাশি এ প্রকল্প তার আশপাশের এলাকায় যানজট বাড়াবে।

আজ শুক্রবার রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্কে অনুষ্ঠিত ‘পান্থকুঞ্জ রক্ষায় সাংস্কৃতিক সমাবেশে’ বক্তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশে হাতিরঝিল জলাধার ও পান্থকুঞ্জ পার্ক ধ্বংস করে পলাশী পর্যন্ত চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে র‍্যাম্প নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বাতিল ও পার্কে অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের ওপর নৃশংস হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়।

‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’ এ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার বিধ্বংসী উন্নয়নের বিরুদ্ধে আমাদের বারবার কথা বলতে হয়েছে। ২০১৫-১৬ সালের দিকে যখন সুন্দরবনের রামপালবিরোধী আন্দোলন হচ্ছিল, তখন সরকার কোনো ধরনের কর্ণপাত করেনি। নানা ধরনের কুযুক্তি দিয়ে তাঁরা ওই প্রকল্পকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছিল। খুবই দুঃখজনক, আজ যখন গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটা অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আমাদের এভাবে দাঁড়াতে হয়। তাঁরা কেন এ বিষয়গুলো বোঝে না? যাঁরা গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন, সে মানুষগুলোই সবচেয়ে বেশি অ্যান্টি পিপল (জনবিরোধী) আচরণ করছেন।

অভ্যুত্থান একশ্রেণির মানুষকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, আরেক শ্রেণির মানুষকে কোথাও জায়গা দিচ্ছে না জানিয়ে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘আমাদেরই যাঁরা বন্ধুবান্ধব, আমাদেরই যাঁরা ভাই-ব্রাদার তাঁরাও ক্ষমতায় আছেন। আবার আমাদেরই যাঁরা সহযোদ্ধা, যাঁরা এই অভ্যুত্থানে নানা পেরিফেরির মানুষদের এনগেজ করেছেন, এই অভ্যুত্থানে অংশীদার করিয়েছেন, মিছিল নামিয়েছেন, তাঁদের আজ রাস্তায় বসে আন্দোলন করতে হচ্ছে। এটা কি আয়রনি অব ফেট (ভাগ্যের নির্মম পরিহাস)? কীভাবে একটি অভ্যুত্থান একশ্রেণির মানুষকে আকাশের চূড়ায় নিয়ে যায়, আর আরেক শ্রেণির মানুষকে সে কোথাও জায়গা দেয় না। তাহলে আসলে অভ্যুত্থান সফল হলো কোথায়? আজকে সামান্য একটা পার্ক বাঁচানোর জন্য আমাদের দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত অংশ নির্মাণের প্রকল্প বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। আজ শুক্রবার বিকেলে কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কে। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত অংশ নির্মাণের প্রকল্প বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। আজ শুক্রবার বিকেলে কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কে। ছবি: সংগৃহীত

উমামা ফাতেমা আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে হলে তো বোঝা যেত, কারণ শেখ হাসিনা একজন স্বৈরশাসক ছিল। সে কারও কথাই শুনত না। তার কাজই ছিল, দমনপীড়ন করে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে, ছাত্রলীগ দিয়ে পিটিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে অপমান করে মব চালিয়ে দিয়ে নানাভাবে আন্দোলনগুলোকে অবদমন করা। কিন্তু যখন একটি অন্তর্বর্তী সরকার একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, গত ১৫ বছরে যত ধরনের অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেগুলো সরকারের রিভিউ করা দরকার ছিল। কিন্তু আগের যত ধরনের অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প আছে, সেগুলো বেশির ভাগই বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং নানা ধরনের আপস হয়ে গেছে। তাহলে কীভাবে বুঝতে পারব, এটা একটা অভ্যুত্থানের সরকার।’

উমামা ফাতেমা আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, সরকার আন্দোলনগুলোকে সাবোটাজ করার চেষ্টা না করে আন্দোলনগুলোকে যুক্তি দিয়ে কনভিন্স করবে, জনগণের সঙ্গে কমিউনিকেট করবে। এই অভ্যুত্থানের পেছনে একটা বড় কারণ ছিল, ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা সংকুচিত হয়ে মানুষের মধ্যে চূড়ান্ত বিতৃষ্ণা তৈরি হওয়া। কিন্তু সরকার এ প্রশ্নগুলোকে অ্যাড্রেস করেনি। তাঁরা খুবই গায়েবি কথাবার্তা যেমন মুজিববাদিতা—এসব কথাবার্তা দিয়ে অভ্যুত্থানটাকে জাস্টিফাই করতে চান। কিন্তু অভ্যুত্থানের শরীর যেভাবে করে তৈরি হয়েছে, দিনের পর দিন ঢাকা শহরের মানুষের জীবনটা সংকুচিত হয়ে এসেছে। সেই কথাগুলো অন্তর্বর্তী সরকার অ্যাড্রেস করতে চায় না। দিনের পর দিন মুখে কুলুপ এঁটে রেখে পেছন থেকে সাবোটাজ করার কাজ শেখ হাসিনা করেছে এবং তাকে ভুগতে হয়েছে। আমরা ভবিষ্যতের বাংলাদেশ সাবোটাজের বাংলাদেশ চাই না। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চাই।’

জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৩ প্রাপ্ত আব্দুল ওয়াহিদ সরদার এই সাংস্কৃতিক সমাবেশের উদ্বোধন করেন। সমাবেশে ‘বৃক্ষ সখা’ শীর্ষক নাটক পরিবেশন করেন বটতলার সদস্যরা। গান পরিবেশন করে সমগীত, হাফ হার্টেডস্যুডোস, বেতাল, মায়ানগর। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজীব, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক সৈয়দা রত্না, শিল্পী অমল আকাশ প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত