ইশতিয়াক হাসান
আমার জঙ্গলভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং ও কাপ্তাই, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গল-পাহাড় যে চষে বেড়িয়েছি। যেখানেই গিয়েছি চোখে জ্বালা করেছে, কোণে অজান্তেই জমা হয়েছে জল। কাসালংয়ের মাইনির বন বাংলোয় গিয়ে দেখি চারপাশে বনের ছিটেফোঁটাও নেই। অথচ এনায়েত মাওলা ষাট বছর আগে মাইনির ধারেই চিতা বাঘ ও বাঘ শিকার করেছেন। মধুপুরে গিয়ে মনে পড়েছে, ১৯৫০ সালের আশপাশে এদিকেও ছিল বাঘের রাজত্ব। চিতা বাঘ ছিল আরও অনেক দিন। সত্যি বলতে, এখনো আমি মাঝে মাঝে দিবাস্বপ্ন দেখি, একটা-দুটো চিতা কি এখনো লুকিয়ে রেখেছে মধুপুর তার অন্তঃপুরে?
সিলেটের বনগুলোতে গিয়েও মন খারাপ হতো পুরোনো দিনের কথা ভেবে। আবদুর রহমান চৌধুরী সুনামগঞ্জের লাউর, খাসিয়া পাহাড়ে বাঘ-হাতির যে রাজ্যের কথা বলে গেছেন, সেটা কোথায় হারাল! নানির মুখে শোনা হবিগঞ্জের মাধবপুরে গোয়াল থেকে বাঘে গরু নিয়ে যাওয়ার গল্প কিংবা নানাবাড়ির কাছে দুই ভাইয়ের খালি হাতে বাঘ মারা, সাতছড়িতে গাড়ির কাচে চিতা বাঘের থাবা চালানো—এমনই সব ঘটনা শুনে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ-অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ত শরীরে।
টেকনাফে গেলে আবার মনে পড়ে ধীরাজ ভট্টাচার্যের ‘যখন পুলিশ ছিলাম’-এর সেই গহিন অরণ্যে ভরপুর, বাঘ ডাকা টেকনাফের কথা। আমার দাদিও ওসি বাবার পোস্টিং সূত্রে নব্বই বছর আগে ছিলেন কক্সবাজার, টেকনাফ, হ্নীলার মতো জায়গাগুলোতে। বাঘের ডাক শুনতে পেতেন রাতে। কোয়ার্টার ঘেরা ছিল উঁচু পাঁচিলে। তবে এখন মাঝে মাঝে চিন্তা হয়, পুরোনো দিনের অরণ্য আর বন্যপ্রাণীর কথা ভেবে কী হবে, যা বন আছে সেগুলোই বা কত দিন থাকবে?
আজ বিশ্ব বন দিবস। এই দিনে আর মন খারাপ করা কথা বলতে চাই না, বরং চলুন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চারটি বনের সঙ্গে পরিচিত হই। বন নিয়ে ধারাবাহিক এই লেখার পরের পর্বগুলোয় আরও কিছু বনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।
লতা বাঘের কাপ্তাই
কাপ্তাইয়ের জঙ্গল সব সময়ই আমার প্রিয় অরণ্যগুলোর একটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গলগুলোর মধ্যে এখানেই সবচেয়ে বেশি গিয়েছি। আপনি যদি অরণ্যপ্রেমী হন এবং এখনো না গিয়ে থাকেন, তবে এই অরণ্যে একটিবার অন্তত যাওয়া আপনার জন্য অবশ্যকর্তব্য। পাহাড়, অরণ্য, বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি কর্ণফুলী নদী আর কাপ্তাই হ্রদেও মজে যাবেন।
কর্ণফুলীর দুই পাশে সীতা আর রাম পাহাড়ের অরণ্য চোখ ছানাবড়া করে দেবে আপনার। অনেক বড় এলাকা নিয়ে কাপ্তাইয়ের জঙ্গল, তবে জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্কের আয়তন ৫৪ বর্গকিলোমিটারের মতো।
কর্ণফুলী নদীর তীরেই বন বিভাগের রাম পাহাড় বিট অফিস। সেখানেই বনকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা। সেখান থেকে কর্ণফুলীর তীর থেকেই উঠে যাওয়া অদ্ভুত সুন্দর পাহাড়টা দেখে রোমাঞ্চিত হবেন। উঁচু, সবুজ এক পাহাড়। শরীরে গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বড়-ছোট, হরেক জাতের গাছপালা। অবশ্য শুধু বন বিভাগের বিট অফিস থেকে নয়, আশপাশের নদীপাড়ের বড় একটা জায়গা থেকেই জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়টির দেখা পাবেন। দূর থেকে চোখ বুলিয়েও বুঝতে অসুবিধা হবে না, কোনো কোনো গাছ শতবর্ষের সীমানা পেরিয়েছে বহু আগে। গাছের গা থেকে বেরিয়ে আসা অজস্র লতা ও ঝুরি পাহাড়ি জঙ্গলটিকে করে তুলেছে আরও দুর্ভেদ্য। এটা সীতা পাহাড়। এলাকার কোনো বয়স্ক ব্যক্তির দেখা পেয়ে গেলে তিনি হয়তো আপনাকে বলবেন, একসময় আরও গভীর ছিল এই অরণ্য, আদিম সব গাছপালায় ঠাসা ছিল। কালের চক্রে, মানুষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে এ দেশের আরও অনেক বনের মতোই জৌলুশ হারিয়েছে জঙ্গলটা।
রাম পাহাড় বিটে একটা সার্চলাইট আছে। রাতে পাহারাদার বনকর্মী এটার আলো ফেলে নদীর জলে, চোরাই কাঠ বোঝাই করে নৌকা যাচ্ছে নাকি এর খোঁজে। আমিও ঠায় বসে ছিলাম এখানে কয়েক রাত, যদি এর আলোয় পানি খেতে আসা কোনো বন্যপ্রাণী ধরা দেয়! তো শেষমেশ ধৈর্যের ফল মিলল। সার্চলাইটের আলোয় তৃতীয় রাতে আবিষ্কার করলাম নদীর ওপারে, সীতা পাহাড়ের দিকটায় জ্বলজ্বলে এক জোড়া চোখ। আলোটা স্থির করতেই অন্ধকারের রাজ্যে আবছাভাবে দেখা গেল শরীরটা। পরমুহূর্তেই ওটা হাওয়া। তবে ততক্ষণে পরিচয় জানা হয়ে গেছে, মেছো বিড়াল। হয় পানি খেতে, নতুবা মাছ শিকারে বেরিয়েছিল।
ওপাশের রাম পাহাড়ের জঙ্গলেও ঘুরে বেড়াতে পারবেন। সেখানে হয়তো কোনো কাঠুরে কিংবা পাহাড়ের পাড়ায় বাস করা মারমা তরুণ আপনাকে বলবে গাছে গাছে চলে বেড়ানো লতা বাঘের গল্প। গাছ থেকেই যারা অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাটির শিকারের ওপর। সত্যি, এখনো এই লতা বাঘ আছে কাপ্তাইয়ের বন-পাহাড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ও তাঁর সঙ্গীরা ক্যামেরা ট্র্যাপে বন্দী করেছেন একে। তবে লতা বাঘ স্থানীয় নাম, বইয়ের নাম ক্লাউড্যাড ল্যাপার্ড বা মেঘলা চিতা। কেউ কেউ আবার ডাকেন গেছো বাঘ নামে। আমাদের অবশ্য একদল কাঠুরে বড় বাঘ দেখার গল্পও বলেছিলেন। যদিও নিজেকে বড় মাপের বাঘপ্রেমী দাবি করা এই আমারও এ তথ্য বিশ্বাস করতে মন সায় দেয়নি।
নদী ধরে চলে যেতে পারেন কাপ্তাই মুখ খালের জঙ্গলেই। কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে এই অরণ্য এক কথায় অসাধারণ। তারপর আবার এখানে হাতির দেখা মেলার সম্ভাবনা আট আনা। কর্ণফুলী নদীতে এখানে এসে পড়েছে কাপ্তাই মুখ খাল, তাই অরণ্যটিরও এই নাম। বেশ কয়েক বছর আগে আমি যখন গিয়েছিলাম, শুনেছিলাম দুঃখী এক চিতা বাঘের গল্, সঙ্গীর মৃত্যুতে একাকী ঘুরে বেড়াত যে কাপ্তাই মুখের বনে। তবে পরে একসময় আর জঙ্গলে দেখা যায়নি তাকেও। হয়তো অন্য কোনো জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল। অনেক খুঁজেও সেবার চিতা বাঘের তাজা কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারিনি।
কাপ্তাইয়ের জঙ্গলে উল্লুক, মায়া হরিণ, বুনো কুকুর, চিতা বিড়াল, ভালুক, বুনো শূকরসহ আছে নানা জাতের বন্যপ্রাণী। সেরো আর বিশাল আকারের হরিণ সাম্বারের গল্পও বলেন কেউ কেউ। গহিন অরণ্য লাঠিটিলা
সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় মৌলভীবাজারের জুড়ির লাঠিটিলার জঙ্গল। কুলাউড়া কিংবা জুড়ি থেকে রওনা দিয়ে বনটিতে পৌঁছাবার আগেই চা-বাগান ঘেরা আশ্চর্য সুন্দর এক জায়গায় চলে আসবেন। রাস্তা চলে গেছে সেতু হয়ে ছড়ার ওপর দিয়ে। গাড়িটা ওখানে দাঁড় করাবেন। সবুজ টিলায় চা-বাগান, সমতলের ধানি জমি, মাঝখানের এই রাস্তা—সব মিলিয়ে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়বেন সৌন্দর্যে।
আরও কয়েকটা সুন্দর চা-বাগান পেরিয়ে পৌঁছাবেন লাঠিটিলা বিট অফিসে। ওখান থেকে দিলখুশা চা-বাগানকে পাশ কাটিয়ে বাজারে। পথে এক ছড়ার পাড়ে দূর থেকে তিনটি আজব প্রাণীকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছিলাম প্রথমবার যখন লাঠিটিলায় গিয়েছিলাম। বেজির সঙ্গে মিল আছে, তবে গায়ে-গতরে বড়। চোখের পাশ থেকে সাদা দাগ নেমে গেছে নিচে। পরে অবশ্য নিশ্চিত হই ওগুলো বেজিরই একটি জাত, কাঁকড়াভূক বেজি। এ ধরনের বেজির কেবল গভীর বনাঞ্চলেই দেখা মেলে।
মূল জঙ্গলে ঢোকার পর ছড়া ধরেও যেতে পারেন। তবে বর্ষার সময় হলে জোকের আক্রমণ থেকে সাবধান। আবার ডাঙার পথ ধরেও চলতে পারবেন। গাছের ডাল দিয়ে বানানো এক সেতু ধরে ছড়া পেরিয়ে আমরা যেমন ঢুকেছিলাম গর্জনসহ বড় গাছের বনে। হঠাৎ বাঁয়ে একটু দূরে গাছের ডালে নড়াচড়া! কাছে যেতেই আবিষ্কার করি চশমা হনুমান।
চলতে চলতে একসময় গভীর বনানীতে চলে আসবেন। পথ হয়ে উঠবে আরও সরু, দুর্গম। এই উঠছে, তো পরমুহূর্তেই নামছে। ডানে অরণ্য, বায়ে খাদ। জংলি গাছের জঙ্গল পথের ওপর এসে জড়িয়ে ধরতে চাইবে পা। সঙ্গে যে গাইড থাকবে, তার থেকে জানবেন মায়া হরিণ, বাঘডাস, শজারু, শিয়ালরা বনে আছে বিস্তর।
ঢালু একটা সরু পথ ধরে একসময় ঢুকবেন ন্যাচারাল ফরেস্টে, মানে আমরা এভাবে ঢুকেছিলাম। প্রাকৃতিক গাছগাছালি বেশি থাকায় জায়গাটি এই নামে পরিচিত। চারদিকে পাহাড়, গহিন আদিম অরণ্য। সব গাছ ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ি গর্জন। খাঁড়া পাথুরে টিলা বেয়ে নেমে আসছে স্বচ্ছ জলের ঝরনা। সেখানে নিচে পানি জমে তৈরি হয়েছে ছোট্ট এক জলাধার। তিন দিকে পাহাড়। সবুজ পাহাড়ের শরীরে চাপালিশ, বনাকসহ হরেক চেনা-অচেনা গাছের জঙ্গল, বিভিন্ন গাছ থেকে নেমে আসা লতা, অদ্ভুত আলো-আঁধারি, গাছপালা ভিজিয়ে বয়ে চলা ঝরনা, ছোট্ট লেক—সব মিলিয়ে প্রকৃতির আশ্চর্য এক রূপ দেখে চমকে উঠবেন। আমি যেমন চমকেছিলাম।
এগোতে চাইলে যে পাথুরে পাহাড় বেয়ে ঝরনা নামছে, সেটায় উঠতে হবে। কোনোমতে উঠতে পারলেও ওপরের জঙ্গল বড় দুর্ভেদ্য। কিন্তু ওখানকার মায়াবী রূপ যেন আপনাকে জাদু করে ফেলবে! ঘন গাছপালার ফাঁক গলে নিচে এসে পড়া ফালি ফালি সূর্যরশ্মি বাড়িয়েছে সৌন্দর্য।
এরপর পাহাড়ে ওঠার সেই অর্থে রাস্তা নেই। টহলের সময় বনকর্মীদের কদাচিৎ ব্যবহার করার ফলে খাঁড়া, সরু একটা পথের মতো তৈরি হয়েছে। হাত-পা ব্যবহার করে দুর্গম সেই পথে ওপরে উঠে পড়তে পারবেন। দুপাশে আশ্চর্য গভীর বনানী, মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে ঝরনা। ওই হিমশীতল পানিপথেই এগোতে গিয়ে হয়তো পেয়ে যাবেন ছোট্ট এক টুকরো নরম মাটিতে মায়া হরিণের পায়ের ছাপ। লাঠিটিলার জঙ্গলে ঘুরতে পারতেন ডাঙা কিংবা ছড়ার বিভিন্ন পথেই। যত ভেতরে ঢুকবেন বন তত দুর্গম।
লাঠিটিলায় কখনো কখনো খবর মেলে চিতা বাঘ আর বুনো কুকুরদের। এমনিতে জঙ্গলটির আয়তন ২০ বর্গকিলোমিটার বা ৫ হাজার একরের কিছু বেশি। তবে লাঠিটিলার জঙ্গল ধরে এমনকি চলে যাওয়া যায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পেছনের জঙ্গলে। তেমনি লাঠিটিলার ওপাশে ভারতের জঙ্গলও পাবেন। বলা চলে, মিলিয়ে-ঝিলিয়ে বড় এলাকায় থাকে বুনো প্রাণীরা।এমনকি বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির ছোট একটি পালও। এখন সিলেট বিভাগের কেবল লাঠিটিলায় দেখা মেলে বুনো হাতির। এমনকি ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে একাধিকবার রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার খবরও মিলেছিল লাঠিটিলা থেকে।
লাঠিটিলায় হতে চলেছে দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক। এটা নিয়ে মনে একটা দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধছে, মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেলে অরণ্য আর বুনো প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো?
দুধপুকুরিয়া একটি বনের নাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ভাইয়ের মুখে দুধপুকুরিয়া নামটা শোনার পরেই গেঁথে গিয়েছিল মনে। এমন সুন্দর নামের যে কোনো বন আছে বাংলাদেশে, এটাই জানতাম না। অনেকটা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বিভিন্ন জায়গা যেমন কুঞ্জপুকুর, দুধসয়ার দ্বীপ—এসবের কথা মাথায় চলে আসছিল। ভেবেছিলাম সময়-সুযোগ পেলে যেতে হবে। হাতিও নাকি বেশ সহজে দেখা মেলে ওখানে। রাঙামাটি-বান্দরবান রাস্তায় বাঙ্গালহালিয়া পেরিয়ে আরও অনেকটা গিয়ে জঙ্গলটা, তবে দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পড়েছে চট্টগ্রামের সীমানায়। কাপ্তাইয়ে বেড়াতে গেলে সেখান থেকে এক সকালে হাজির হয়ে যাই দুধপুকুরিয়ায়।
চারপাশে গাছপালার মাঝখানে এঁকেবেঁকে চলে গেছে পাকা সড়ক। ছড়ার ওপর সুন্দর এক সেতু পাবেন। জায়গাটিকে অনেকে চেনে ডাকবাংলার মোড় নামে। এখানে বন বিভাগের পুরোনো, অব্যবহৃত একটা বাংলো দেখেছিলাম। আমার ধারণা, সেখান থেকেই এই নাম। স্থানীয় দুই কিশোরকে সঙ্গী করে আমি ঢুকেছিলাম অরণ্যে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারবেন অরণ্যটি থেকে।
দুধপুকুরিয়ার অরণ্যে ঢুকতেই গাছপালার ছায়ারা আপনাকে ঘিরে ফেলল। কেমন একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব অনুভব করবেন। শিমুল গাছ দেখবেন, গর্জন দেখবেন। হঠাৎ বালুর ওপরে কোনো প্রাণীর পায়ের ছাপ পাবেন, ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবেন এটা মায়া হরিণ কিংবা বুনো শূকরের পায়ের ছাপ।
স্থানীয় কোনো বৃদ্ধের সঙ্গে জঙ্গলপথে দেখা হয়ে গেলে হয়তো স্মৃতি হাতড়ে বলবেন বড় বাঘের গল্প। গরু ঘাড়ে কামড়ে ধরে নিয়ে যেত পাহাড়ের আস্তানায়।
বড় গাছের পাশাপাশি ছোট গাছ, ঝোপ-জঙ্গল নজর কাড়বে। অর্কিডও দেখবেন। তবে চলাফেরা করতে হবে সাবধানে। দুধপুকুরিয়ায় এখন দাপুটে জন্তুর মধ্যে কেবল টিকে আছে হাতিই। আশপাশের বেশ কয়েকটি জঙ্গল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির পাল। তাই দেখা পাবেন এমন গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না।
দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের আয়তন ৪৭ বর্গকিলোমিটারের মতো। বসন্তবাউরি, টিয়া, কাঠঠোকরা, লম্বা লেজের ভিমরাজের দেখা পেতে পারেন। কাঠবিড়ালি, বানর আছে বিস্তর। ছড়ার শীতল জলে নেমে পা ডুবিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলভ্রমণ শেষ করে মূল রাস্তায় বের হয়ে আসতে পারবেন।
সবার পরিচিত লাউয়াছড়া
ঢাকা থেকে সিলেটে যাচ্ছি আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেসে। পথেই পড়ে আমার নানাবাড়ির স্টেশন হরষপুর। ওই স্টেশন পেরিয়ে আরও অন্তত ঘণ্টা দেড়েক চলার পর হঠাৎ একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল ট্রেন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম বাইরে, ট্রেন ভ্রমণে এই কাজটাই সবচেয়ে আনন্দ নিয়ে করি। চমকে উঠলাম, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে চলে এসেছি। এই অচেনা রাজ্যে ঘন গাছপালার ঠাসবুনন। হাত দশেক দূরে একটা গাছ ভেঙে কাত হয়ে আছে আরেকটার ওপর। এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে যাচ্ছে পাখি। ওদের সঙ্গে সমান তালে ডাকছে পোকামাকড়। এ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। নেই লোকজনের বিরক্তিকর কোলাহল। যতটা সময় ট্রেনটা দাঁড়িয়ে ছিল, মোহাচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। তারপর আবার যেমন হঠাৎ থেমেছিল, তেমনি আচমকা ছেড়ে দিল, তখনই বাস্তবে ফিরলাম। ঘটনাটা বহু বছর আগের। ঢাকায় ফিরে আসার পর জানতে পারি ওটাই লাউয়াছড়া।
লাউয়াছড়া আমার খুব পছন্দের একটি বন। আমার মনে হয় সুন্দরবনের পর এ দেশের পর্যটকেরা সবচেয়ে বেশি চেনে এই বনকেই। তবে এর জনপ্রিয়তা যতটা, সেই তুলনায় অরণ্যটি খুব একটা বড় নয়। এমনিতে মাত্র ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় উদ্যানটি। তবে অরণ্য এলাকা আরও বেশি। বনটির জন্মও প্রাকৃতিকভাবে নয়। যদ্দুর জানি, ব্রিটিশ সরকার উড়োজাহাজ থেকে বীজ ছিটিয়ে এই বন পত্তনের সূচনা করে। কালক্রমে সেটাই পরিণত হয় গহিন অরণ্যে। একসময় কিন্তু দেখার মতো এক বন ছিল লাউয়াছড়া। বিশাল সব মহিরুহের কারণে দিনের বেলাতেই নেমে আসত আঁধার। তখন বাংলাদেশের আরও অনেক বনের মতো লাউয়াছড়ায় বাঘেরা মহাদর্পে ঘুরে বেড়াত।
প্রকৃতিবিদ নওয়াজেশ আহমদ লাউয়াছড়ায় বাঘ দেখার বর্ণনা দিয়েছেন। রাতে জিপে ভ্রমণের সময় বাঘটা দেখেন তিনি, সেটা বিংশ শতকের ষাটের দশকের ঘটনা। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই পড়ে জেনেছি, ১৯৬২ সালে লাউয়াছড়ায় বাঘ মারেন এক পাকিস্তানি জেনারেল। মাচায় বসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাঘটি মারেন ভদ্রলোক। নওয়াজেশ আহমদের দেখা ওই বাঘটাই মারা পড়েছিল কি না, বলতে পারব না। এখন বাঘ দূরে থাক, এমনকি চা-বাগান এবং ছোট অরণ্যগুলোতেও একসময় ঘুরে বেড়ানো চিতা বাঘের টিকিটাও দেখবেন না এই বনে। তবে খুব ভোরে বের হলে জঙ্গলের ভেতরকার ঘেসো জমিতে মায়া হরিণ দেখতে পাবেন। বুনো শূকর আর অজগরও আছে। আছে উল্লুক, বাঁশভল্লুক, লজ্জাবতী বানরসহ হরেক জাতের বন্যপ্রাণী।
লাউয়াছড়া কেটে চলে গেছে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। এ কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে বেশ কিছু বুনো প্রাণ ঝরে যায় প্রতি বছর। তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে চলাচল করা ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার রাখার অনুরোধ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার পর, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি চিঠি দেয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বন্যপ্রাণী চলাচলের ঝুঁকি কমবে।
আমার জঙ্গলভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং ও কাপ্তাই, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গল-পাহাড় যে চষে বেড়িয়েছি। যেখানেই গিয়েছি চোখে জ্বালা করেছে, কোণে অজান্তেই জমা হয়েছে জল। কাসালংয়ের মাইনির বন বাংলোয় গিয়ে দেখি চারপাশে বনের ছিটেফোঁটাও নেই। অথচ এনায়েত মাওলা ষাট বছর আগে মাইনির ধারেই চিতা বাঘ ও বাঘ শিকার করেছেন। মধুপুরে গিয়ে মনে পড়েছে, ১৯৫০ সালের আশপাশে এদিকেও ছিল বাঘের রাজত্ব। চিতা বাঘ ছিল আরও অনেক দিন। সত্যি বলতে, এখনো আমি মাঝে মাঝে দিবাস্বপ্ন দেখি, একটা-দুটো চিতা কি এখনো লুকিয়ে রেখেছে মধুপুর তার অন্তঃপুরে?
সিলেটের বনগুলোতে গিয়েও মন খারাপ হতো পুরোনো দিনের কথা ভেবে। আবদুর রহমান চৌধুরী সুনামগঞ্জের লাউর, খাসিয়া পাহাড়ে বাঘ-হাতির যে রাজ্যের কথা বলে গেছেন, সেটা কোথায় হারাল! নানির মুখে শোনা হবিগঞ্জের মাধবপুরে গোয়াল থেকে বাঘে গরু নিয়ে যাওয়ার গল্প কিংবা নানাবাড়ির কাছে দুই ভাইয়ের খালি হাতে বাঘ মারা, সাতছড়িতে গাড়ির কাচে চিতা বাঘের থাবা চালানো—এমনই সব ঘটনা শুনে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ-অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ত শরীরে।
টেকনাফে গেলে আবার মনে পড়ে ধীরাজ ভট্টাচার্যের ‘যখন পুলিশ ছিলাম’-এর সেই গহিন অরণ্যে ভরপুর, বাঘ ডাকা টেকনাফের কথা। আমার দাদিও ওসি বাবার পোস্টিং সূত্রে নব্বই বছর আগে ছিলেন কক্সবাজার, টেকনাফ, হ্নীলার মতো জায়গাগুলোতে। বাঘের ডাক শুনতে পেতেন রাতে। কোয়ার্টার ঘেরা ছিল উঁচু পাঁচিলে। তবে এখন মাঝে মাঝে চিন্তা হয়, পুরোনো দিনের অরণ্য আর বন্যপ্রাণীর কথা ভেবে কী হবে, যা বন আছে সেগুলোই বা কত দিন থাকবে?
আজ বিশ্ব বন দিবস। এই দিনে আর মন খারাপ করা কথা বলতে চাই না, বরং চলুন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চারটি বনের সঙ্গে পরিচিত হই। বন নিয়ে ধারাবাহিক এই লেখার পরের পর্বগুলোয় আরও কিছু বনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।
লতা বাঘের কাপ্তাই
কাপ্তাইয়ের জঙ্গল সব সময়ই আমার প্রিয় অরণ্যগুলোর একটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গলগুলোর মধ্যে এখানেই সবচেয়ে বেশি গিয়েছি। আপনি যদি অরণ্যপ্রেমী হন এবং এখনো না গিয়ে থাকেন, তবে এই অরণ্যে একটিবার অন্তত যাওয়া আপনার জন্য অবশ্যকর্তব্য। পাহাড়, অরণ্য, বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি কর্ণফুলী নদী আর কাপ্তাই হ্রদেও মজে যাবেন।
কর্ণফুলীর দুই পাশে সীতা আর রাম পাহাড়ের অরণ্য চোখ ছানাবড়া করে দেবে আপনার। অনেক বড় এলাকা নিয়ে কাপ্তাইয়ের জঙ্গল, তবে জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্কের আয়তন ৫৪ বর্গকিলোমিটারের মতো।
কর্ণফুলী নদীর তীরেই বন বিভাগের রাম পাহাড় বিট অফিস। সেখানেই বনকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা। সেখান থেকে কর্ণফুলীর তীর থেকেই উঠে যাওয়া অদ্ভুত সুন্দর পাহাড়টা দেখে রোমাঞ্চিত হবেন। উঁচু, সবুজ এক পাহাড়। শরীরে গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বড়-ছোট, হরেক জাতের গাছপালা। অবশ্য শুধু বন বিভাগের বিট অফিস থেকে নয়, আশপাশের নদীপাড়ের বড় একটা জায়গা থেকেই জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়টির দেখা পাবেন। দূর থেকে চোখ বুলিয়েও বুঝতে অসুবিধা হবে না, কোনো কোনো গাছ শতবর্ষের সীমানা পেরিয়েছে বহু আগে। গাছের গা থেকে বেরিয়ে আসা অজস্র লতা ও ঝুরি পাহাড়ি জঙ্গলটিকে করে তুলেছে আরও দুর্ভেদ্য। এটা সীতা পাহাড়। এলাকার কোনো বয়স্ক ব্যক্তির দেখা পেয়ে গেলে তিনি হয়তো আপনাকে বলবেন, একসময় আরও গভীর ছিল এই অরণ্য, আদিম সব গাছপালায় ঠাসা ছিল। কালের চক্রে, মানুষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে এ দেশের আরও অনেক বনের মতোই জৌলুশ হারিয়েছে জঙ্গলটা।
রাম পাহাড় বিটে একটা সার্চলাইট আছে। রাতে পাহারাদার বনকর্মী এটার আলো ফেলে নদীর জলে, চোরাই কাঠ বোঝাই করে নৌকা যাচ্ছে নাকি এর খোঁজে। আমিও ঠায় বসে ছিলাম এখানে কয়েক রাত, যদি এর আলোয় পানি খেতে আসা কোনো বন্যপ্রাণী ধরা দেয়! তো শেষমেশ ধৈর্যের ফল মিলল। সার্চলাইটের আলোয় তৃতীয় রাতে আবিষ্কার করলাম নদীর ওপারে, সীতা পাহাড়ের দিকটায় জ্বলজ্বলে এক জোড়া চোখ। আলোটা স্থির করতেই অন্ধকারের রাজ্যে আবছাভাবে দেখা গেল শরীরটা। পরমুহূর্তেই ওটা হাওয়া। তবে ততক্ষণে পরিচয় জানা হয়ে গেছে, মেছো বিড়াল। হয় পানি খেতে, নতুবা মাছ শিকারে বেরিয়েছিল।
ওপাশের রাম পাহাড়ের জঙ্গলেও ঘুরে বেড়াতে পারবেন। সেখানে হয়তো কোনো কাঠুরে কিংবা পাহাড়ের পাড়ায় বাস করা মারমা তরুণ আপনাকে বলবে গাছে গাছে চলে বেড়ানো লতা বাঘের গল্প। গাছ থেকেই যারা অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাটির শিকারের ওপর। সত্যি, এখনো এই লতা বাঘ আছে কাপ্তাইয়ের বন-পাহাড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ও তাঁর সঙ্গীরা ক্যামেরা ট্র্যাপে বন্দী করেছেন একে। তবে লতা বাঘ স্থানীয় নাম, বইয়ের নাম ক্লাউড্যাড ল্যাপার্ড বা মেঘলা চিতা। কেউ কেউ আবার ডাকেন গেছো বাঘ নামে। আমাদের অবশ্য একদল কাঠুরে বড় বাঘ দেখার গল্পও বলেছিলেন। যদিও নিজেকে বড় মাপের বাঘপ্রেমী দাবি করা এই আমারও এ তথ্য বিশ্বাস করতে মন সায় দেয়নি।
নদী ধরে চলে যেতে পারেন কাপ্তাই মুখ খালের জঙ্গলেই। কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে এই অরণ্য এক কথায় অসাধারণ। তারপর আবার এখানে হাতির দেখা মেলার সম্ভাবনা আট আনা। কর্ণফুলী নদীতে এখানে এসে পড়েছে কাপ্তাই মুখ খাল, তাই অরণ্যটিরও এই নাম। বেশ কয়েক বছর আগে আমি যখন গিয়েছিলাম, শুনেছিলাম দুঃখী এক চিতা বাঘের গল্, সঙ্গীর মৃত্যুতে একাকী ঘুরে বেড়াত যে কাপ্তাই মুখের বনে। তবে পরে একসময় আর জঙ্গলে দেখা যায়নি তাকেও। হয়তো অন্য কোনো জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল। অনেক খুঁজেও সেবার চিতা বাঘের তাজা কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারিনি।
কাপ্তাইয়ের জঙ্গলে উল্লুক, মায়া হরিণ, বুনো কুকুর, চিতা বিড়াল, ভালুক, বুনো শূকরসহ আছে নানা জাতের বন্যপ্রাণী। সেরো আর বিশাল আকারের হরিণ সাম্বারের গল্পও বলেন কেউ কেউ। গহিন অরণ্য লাঠিটিলা
সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় মৌলভীবাজারের জুড়ির লাঠিটিলার জঙ্গল। কুলাউড়া কিংবা জুড়ি থেকে রওনা দিয়ে বনটিতে পৌঁছাবার আগেই চা-বাগান ঘেরা আশ্চর্য সুন্দর এক জায়গায় চলে আসবেন। রাস্তা চলে গেছে সেতু হয়ে ছড়ার ওপর দিয়ে। গাড়িটা ওখানে দাঁড় করাবেন। সবুজ টিলায় চা-বাগান, সমতলের ধানি জমি, মাঝখানের এই রাস্তা—সব মিলিয়ে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়বেন সৌন্দর্যে।
আরও কয়েকটা সুন্দর চা-বাগান পেরিয়ে পৌঁছাবেন লাঠিটিলা বিট অফিসে। ওখান থেকে দিলখুশা চা-বাগানকে পাশ কাটিয়ে বাজারে। পথে এক ছড়ার পাড়ে দূর থেকে তিনটি আজব প্রাণীকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছিলাম প্রথমবার যখন লাঠিটিলায় গিয়েছিলাম। বেজির সঙ্গে মিল আছে, তবে গায়ে-গতরে বড়। চোখের পাশ থেকে সাদা দাগ নেমে গেছে নিচে। পরে অবশ্য নিশ্চিত হই ওগুলো বেজিরই একটি জাত, কাঁকড়াভূক বেজি। এ ধরনের বেজির কেবল গভীর বনাঞ্চলেই দেখা মেলে।
মূল জঙ্গলে ঢোকার পর ছড়া ধরেও যেতে পারেন। তবে বর্ষার সময় হলে জোকের আক্রমণ থেকে সাবধান। আবার ডাঙার পথ ধরেও চলতে পারবেন। গাছের ডাল দিয়ে বানানো এক সেতু ধরে ছড়া পেরিয়ে আমরা যেমন ঢুকেছিলাম গর্জনসহ বড় গাছের বনে। হঠাৎ বাঁয়ে একটু দূরে গাছের ডালে নড়াচড়া! কাছে যেতেই আবিষ্কার করি চশমা হনুমান।
চলতে চলতে একসময় গভীর বনানীতে চলে আসবেন। পথ হয়ে উঠবে আরও সরু, দুর্গম। এই উঠছে, তো পরমুহূর্তেই নামছে। ডানে অরণ্য, বায়ে খাদ। জংলি গাছের জঙ্গল পথের ওপর এসে জড়িয়ে ধরতে চাইবে পা। সঙ্গে যে গাইড থাকবে, তার থেকে জানবেন মায়া হরিণ, বাঘডাস, শজারু, শিয়ালরা বনে আছে বিস্তর।
ঢালু একটা সরু পথ ধরে একসময় ঢুকবেন ন্যাচারাল ফরেস্টে, মানে আমরা এভাবে ঢুকেছিলাম। প্রাকৃতিক গাছগাছালি বেশি থাকায় জায়গাটি এই নামে পরিচিত। চারদিকে পাহাড়, গহিন আদিম অরণ্য। সব গাছ ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ি গর্জন। খাঁড়া পাথুরে টিলা বেয়ে নেমে আসছে স্বচ্ছ জলের ঝরনা। সেখানে নিচে পানি জমে তৈরি হয়েছে ছোট্ট এক জলাধার। তিন দিকে পাহাড়। সবুজ পাহাড়ের শরীরে চাপালিশ, বনাকসহ হরেক চেনা-অচেনা গাছের জঙ্গল, বিভিন্ন গাছ থেকে নেমে আসা লতা, অদ্ভুত আলো-আঁধারি, গাছপালা ভিজিয়ে বয়ে চলা ঝরনা, ছোট্ট লেক—সব মিলিয়ে প্রকৃতির আশ্চর্য এক রূপ দেখে চমকে উঠবেন। আমি যেমন চমকেছিলাম।
এগোতে চাইলে যে পাথুরে পাহাড় বেয়ে ঝরনা নামছে, সেটায় উঠতে হবে। কোনোমতে উঠতে পারলেও ওপরের জঙ্গল বড় দুর্ভেদ্য। কিন্তু ওখানকার মায়াবী রূপ যেন আপনাকে জাদু করে ফেলবে! ঘন গাছপালার ফাঁক গলে নিচে এসে পড়া ফালি ফালি সূর্যরশ্মি বাড়িয়েছে সৌন্দর্য।
এরপর পাহাড়ে ওঠার সেই অর্থে রাস্তা নেই। টহলের সময় বনকর্মীদের কদাচিৎ ব্যবহার করার ফলে খাঁড়া, সরু একটা পথের মতো তৈরি হয়েছে। হাত-পা ব্যবহার করে দুর্গম সেই পথে ওপরে উঠে পড়তে পারবেন। দুপাশে আশ্চর্য গভীর বনানী, মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে ঝরনা। ওই হিমশীতল পানিপথেই এগোতে গিয়ে হয়তো পেয়ে যাবেন ছোট্ট এক টুকরো নরম মাটিতে মায়া হরিণের পায়ের ছাপ। লাঠিটিলার জঙ্গলে ঘুরতে পারতেন ডাঙা কিংবা ছড়ার বিভিন্ন পথেই। যত ভেতরে ঢুকবেন বন তত দুর্গম।
লাঠিটিলায় কখনো কখনো খবর মেলে চিতা বাঘ আর বুনো কুকুরদের। এমনিতে জঙ্গলটির আয়তন ২০ বর্গকিলোমিটার বা ৫ হাজার একরের কিছু বেশি। তবে লাঠিটিলার জঙ্গল ধরে এমনকি চলে যাওয়া যায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পেছনের জঙ্গলে। তেমনি লাঠিটিলার ওপাশে ভারতের জঙ্গলও পাবেন। বলা চলে, মিলিয়ে-ঝিলিয়ে বড় এলাকায় থাকে বুনো প্রাণীরা।এমনকি বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির ছোট একটি পালও। এখন সিলেট বিভাগের কেবল লাঠিটিলায় দেখা মেলে বুনো হাতির। এমনকি ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে একাধিকবার রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার খবরও মিলেছিল লাঠিটিলা থেকে।
লাঠিটিলায় হতে চলেছে দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক। এটা নিয়ে মনে একটা দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধছে, মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেলে অরণ্য আর বুনো প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো?
দুধপুকুরিয়া একটি বনের নাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ভাইয়ের মুখে দুধপুকুরিয়া নামটা শোনার পরেই গেঁথে গিয়েছিল মনে। এমন সুন্দর নামের যে কোনো বন আছে বাংলাদেশে, এটাই জানতাম না। অনেকটা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বিভিন্ন জায়গা যেমন কুঞ্জপুকুর, দুধসয়ার দ্বীপ—এসবের কথা মাথায় চলে আসছিল। ভেবেছিলাম সময়-সুযোগ পেলে যেতে হবে। হাতিও নাকি বেশ সহজে দেখা মেলে ওখানে। রাঙামাটি-বান্দরবান রাস্তায় বাঙ্গালহালিয়া পেরিয়ে আরও অনেকটা গিয়ে জঙ্গলটা, তবে দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পড়েছে চট্টগ্রামের সীমানায়। কাপ্তাইয়ে বেড়াতে গেলে সেখান থেকে এক সকালে হাজির হয়ে যাই দুধপুকুরিয়ায়।
চারপাশে গাছপালার মাঝখানে এঁকেবেঁকে চলে গেছে পাকা সড়ক। ছড়ার ওপর সুন্দর এক সেতু পাবেন। জায়গাটিকে অনেকে চেনে ডাকবাংলার মোড় নামে। এখানে বন বিভাগের পুরোনো, অব্যবহৃত একটা বাংলো দেখেছিলাম। আমার ধারণা, সেখান থেকেই এই নাম। স্থানীয় দুই কিশোরকে সঙ্গী করে আমি ঢুকেছিলাম অরণ্যে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারবেন অরণ্যটি থেকে।
দুধপুকুরিয়ার অরণ্যে ঢুকতেই গাছপালার ছায়ারা আপনাকে ঘিরে ফেলল। কেমন একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব অনুভব করবেন। শিমুল গাছ দেখবেন, গর্জন দেখবেন। হঠাৎ বালুর ওপরে কোনো প্রাণীর পায়ের ছাপ পাবেন, ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবেন এটা মায়া হরিণ কিংবা বুনো শূকরের পায়ের ছাপ।
স্থানীয় কোনো বৃদ্ধের সঙ্গে জঙ্গলপথে দেখা হয়ে গেলে হয়তো স্মৃতি হাতড়ে বলবেন বড় বাঘের গল্প। গরু ঘাড়ে কামড়ে ধরে নিয়ে যেত পাহাড়ের আস্তানায়।
বড় গাছের পাশাপাশি ছোট গাছ, ঝোপ-জঙ্গল নজর কাড়বে। অর্কিডও দেখবেন। তবে চলাফেরা করতে হবে সাবধানে। দুধপুকুরিয়ায় এখন দাপুটে জন্তুর মধ্যে কেবল টিকে আছে হাতিই। আশপাশের বেশ কয়েকটি জঙ্গল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির পাল। তাই দেখা পাবেন এমন গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না।
দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের আয়তন ৪৭ বর্গকিলোমিটারের মতো। বসন্তবাউরি, টিয়া, কাঠঠোকরা, লম্বা লেজের ভিমরাজের দেখা পেতে পারেন। কাঠবিড়ালি, বানর আছে বিস্তর। ছড়ার শীতল জলে নেমে পা ডুবিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলভ্রমণ শেষ করে মূল রাস্তায় বের হয়ে আসতে পারবেন।
সবার পরিচিত লাউয়াছড়া
ঢাকা থেকে সিলেটে যাচ্ছি আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেসে। পথেই পড়ে আমার নানাবাড়ির স্টেশন হরষপুর। ওই স্টেশন পেরিয়ে আরও অন্তত ঘণ্টা দেড়েক চলার পর হঠাৎ একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল ট্রেন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম বাইরে, ট্রেন ভ্রমণে এই কাজটাই সবচেয়ে আনন্দ নিয়ে করি। চমকে উঠলাম, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে চলে এসেছি। এই অচেনা রাজ্যে ঘন গাছপালার ঠাসবুনন। হাত দশেক দূরে একটা গাছ ভেঙে কাত হয়ে আছে আরেকটার ওপর। এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে যাচ্ছে পাখি। ওদের সঙ্গে সমান তালে ডাকছে পোকামাকড়। এ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। নেই লোকজনের বিরক্তিকর কোলাহল। যতটা সময় ট্রেনটা দাঁড়িয়ে ছিল, মোহাচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। তারপর আবার যেমন হঠাৎ থেমেছিল, তেমনি আচমকা ছেড়ে দিল, তখনই বাস্তবে ফিরলাম। ঘটনাটা বহু বছর আগের। ঢাকায় ফিরে আসার পর জানতে পারি ওটাই লাউয়াছড়া।
লাউয়াছড়া আমার খুব পছন্দের একটি বন। আমার মনে হয় সুন্দরবনের পর এ দেশের পর্যটকেরা সবচেয়ে বেশি চেনে এই বনকেই। তবে এর জনপ্রিয়তা যতটা, সেই তুলনায় অরণ্যটি খুব একটা বড় নয়। এমনিতে মাত্র ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় উদ্যানটি। তবে অরণ্য এলাকা আরও বেশি। বনটির জন্মও প্রাকৃতিকভাবে নয়। যদ্দুর জানি, ব্রিটিশ সরকার উড়োজাহাজ থেকে বীজ ছিটিয়ে এই বন পত্তনের সূচনা করে। কালক্রমে সেটাই পরিণত হয় গহিন অরণ্যে। একসময় কিন্তু দেখার মতো এক বন ছিল লাউয়াছড়া। বিশাল সব মহিরুহের কারণে দিনের বেলাতেই নেমে আসত আঁধার। তখন বাংলাদেশের আরও অনেক বনের মতো লাউয়াছড়ায় বাঘেরা মহাদর্পে ঘুরে বেড়াত।
প্রকৃতিবিদ নওয়াজেশ আহমদ লাউয়াছড়ায় বাঘ দেখার বর্ণনা দিয়েছেন। রাতে জিপে ভ্রমণের সময় বাঘটা দেখেন তিনি, সেটা বিংশ শতকের ষাটের দশকের ঘটনা। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই পড়ে জেনেছি, ১৯৬২ সালে লাউয়াছড়ায় বাঘ মারেন এক পাকিস্তানি জেনারেল। মাচায় বসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাঘটি মারেন ভদ্রলোক। নওয়াজেশ আহমদের দেখা ওই বাঘটাই মারা পড়েছিল কি না, বলতে পারব না। এখন বাঘ দূরে থাক, এমনকি চা-বাগান এবং ছোট অরণ্যগুলোতেও একসময় ঘুরে বেড়ানো চিতা বাঘের টিকিটাও দেখবেন না এই বনে। তবে খুব ভোরে বের হলে জঙ্গলের ভেতরকার ঘেসো জমিতে মায়া হরিণ দেখতে পাবেন। বুনো শূকর আর অজগরও আছে। আছে উল্লুক, বাঁশভল্লুক, লজ্জাবতী বানরসহ হরেক জাতের বন্যপ্রাণী।
লাউয়াছড়া কেটে চলে গেছে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। এ কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে বেশ কিছু বুনো প্রাণ ঝরে যায় প্রতি বছর। তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে চলাচল করা ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার রাখার অনুরোধ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার পর, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি চিঠি দেয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বন্যপ্রাণী চলাচলের ঝুঁকি কমবে।
ইশতিয়াক হাসান
আমার জঙ্গলভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং ও কাপ্তাই, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গল-পাহাড় যে চষে বেড়িয়েছি। যেখানেই গিয়েছি চোখে জ্বালা করেছে, কোণে অজান্তেই জমা হয়েছে জল। কাসালংয়ের মাইনির বন বাংলোয় গিয়ে দেখি চারপাশে বনের ছিটেফোঁটাও নেই। অথচ এনায়েত মাওলা ষাট বছর আগে মাইনির ধারেই চিতা বাঘ ও বাঘ শিকার করেছেন। মধুপুরে গিয়ে মনে পড়েছে, ১৯৫০ সালের আশপাশে এদিকেও ছিল বাঘের রাজত্ব। চিতা বাঘ ছিল আরও অনেক দিন। সত্যি বলতে, এখনো আমি মাঝে মাঝে দিবাস্বপ্ন দেখি, একটা-দুটো চিতা কি এখনো লুকিয়ে রেখেছে মধুপুর তার অন্তঃপুরে?
সিলেটের বনগুলোতে গিয়েও মন খারাপ হতো পুরোনো দিনের কথা ভেবে। আবদুর রহমান চৌধুরী সুনামগঞ্জের লাউর, খাসিয়া পাহাড়ে বাঘ-হাতির যে রাজ্যের কথা বলে গেছেন, সেটা কোথায় হারাল! নানির মুখে শোনা হবিগঞ্জের মাধবপুরে গোয়াল থেকে বাঘে গরু নিয়ে যাওয়ার গল্প কিংবা নানাবাড়ির কাছে দুই ভাইয়ের খালি হাতে বাঘ মারা, সাতছড়িতে গাড়ির কাচে চিতা বাঘের থাবা চালানো—এমনই সব ঘটনা শুনে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ-অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ত শরীরে।
টেকনাফে গেলে আবার মনে পড়ে ধীরাজ ভট্টাচার্যের ‘যখন পুলিশ ছিলাম’-এর সেই গহিন অরণ্যে ভরপুর, বাঘ ডাকা টেকনাফের কথা। আমার দাদিও ওসি বাবার পোস্টিং সূত্রে নব্বই বছর আগে ছিলেন কক্সবাজার, টেকনাফ, হ্নীলার মতো জায়গাগুলোতে। বাঘের ডাক শুনতে পেতেন রাতে। কোয়ার্টার ঘেরা ছিল উঁচু পাঁচিলে। তবে এখন মাঝে মাঝে চিন্তা হয়, পুরোনো দিনের অরণ্য আর বন্যপ্রাণীর কথা ভেবে কী হবে, যা বন আছে সেগুলোই বা কত দিন থাকবে?
আজ বিশ্ব বন দিবস। এই দিনে আর মন খারাপ করা কথা বলতে চাই না, বরং চলুন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চারটি বনের সঙ্গে পরিচিত হই। বন নিয়ে ধারাবাহিক এই লেখার পরের পর্বগুলোয় আরও কিছু বনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।
লতা বাঘের কাপ্তাই
কাপ্তাইয়ের জঙ্গল সব সময়ই আমার প্রিয় অরণ্যগুলোর একটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গলগুলোর মধ্যে এখানেই সবচেয়ে বেশি গিয়েছি। আপনি যদি অরণ্যপ্রেমী হন এবং এখনো না গিয়ে থাকেন, তবে এই অরণ্যে একটিবার অন্তত যাওয়া আপনার জন্য অবশ্যকর্তব্য। পাহাড়, অরণ্য, বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি কর্ণফুলী নদী আর কাপ্তাই হ্রদেও মজে যাবেন।
কর্ণফুলীর দুই পাশে সীতা আর রাম পাহাড়ের অরণ্য চোখ ছানাবড়া করে দেবে আপনার। অনেক বড় এলাকা নিয়ে কাপ্তাইয়ের জঙ্গল, তবে জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্কের আয়তন ৫৪ বর্গকিলোমিটারের মতো।
কর্ণফুলী নদীর তীরেই বন বিভাগের রাম পাহাড় বিট অফিস। সেখানেই বনকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা। সেখান থেকে কর্ণফুলীর তীর থেকেই উঠে যাওয়া অদ্ভুত সুন্দর পাহাড়টা দেখে রোমাঞ্চিত হবেন। উঁচু, সবুজ এক পাহাড়। শরীরে গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বড়-ছোট, হরেক জাতের গাছপালা। অবশ্য শুধু বন বিভাগের বিট অফিস থেকে নয়, আশপাশের নদীপাড়ের বড় একটা জায়গা থেকেই জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়টির দেখা পাবেন। দূর থেকে চোখ বুলিয়েও বুঝতে অসুবিধা হবে না, কোনো কোনো গাছ শতবর্ষের সীমানা পেরিয়েছে বহু আগে। গাছের গা থেকে বেরিয়ে আসা অজস্র লতা ও ঝুরি পাহাড়ি জঙ্গলটিকে করে তুলেছে আরও দুর্ভেদ্য। এটা সীতা পাহাড়। এলাকার কোনো বয়স্ক ব্যক্তির দেখা পেয়ে গেলে তিনি হয়তো আপনাকে বলবেন, একসময় আরও গভীর ছিল এই অরণ্য, আদিম সব গাছপালায় ঠাসা ছিল। কালের চক্রে, মানুষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে এ দেশের আরও অনেক বনের মতোই জৌলুশ হারিয়েছে জঙ্গলটা।
রাম পাহাড় বিটে একটা সার্চলাইট আছে। রাতে পাহারাদার বনকর্মী এটার আলো ফেলে নদীর জলে, চোরাই কাঠ বোঝাই করে নৌকা যাচ্ছে নাকি এর খোঁজে। আমিও ঠায় বসে ছিলাম এখানে কয়েক রাত, যদি এর আলোয় পানি খেতে আসা কোনো বন্যপ্রাণী ধরা দেয়! তো শেষমেশ ধৈর্যের ফল মিলল। সার্চলাইটের আলোয় তৃতীয় রাতে আবিষ্কার করলাম নদীর ওপারে, সীতা পাহাড়ের দিকটায় জ্বলজ্বলে এক জোড়া চোখ। আলোটা স্থির করতেই অন্ধকারের রাজ্যে আবছাভাবে দেখা গেল শরীরটা। পরমুহূর্তেই ওটা হাওয়া। তবে ততক্ষণে পরিচয় জানা হয়ে গেছে, মেছো বিড়াল। হয় পানি খেতে, নতুবা মাছ শিকারে বেরিয়েছিল।
ওপাশের রাম পাহাড়ের জঙ্গলেও ঘুরে বেড়াতে পারবেন। সেখানে হয়তো কোনো কাঠুরে কিংবা পাহাড়ের পাড়ায় বাস করা মারমা তরুণ আপনাকে বলবে গাছে গাছে চলে বেড়ানো লতা বাঘের গল্প। গাছ থেকেই যারা অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাটির শিকারের ওপর। সত্যি, এখনো এই লতা বাঘ আছে কাপ্তাইয়ের বন-পাহাড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ও তাঁর সঙ্গীরা ক্যামেরা ট্র্যাপে বন্দী করেছেন একে। তবে লতা বাঘ স্থানীয় নাম, বইয়ের নাম ক্লাউড্যাড ল্যাপার্ড বা মেঘলা চিতা। কেউ কেউ আবার ডাকেন গেছো বাঘ নামে। আমাদের অবশ্য একদল কাঠুরে বড় বাঘ দেখার গল্পও বলেছিলেন। যদিও নিজেকে বড় মাপের বাঘপ্রেমী দাবি করা এই আমারও এ তথ্য বিশ্বাস করতে মন সায় দেয়নি।
নদী ধরে চলে যেতে পারেন কাপ্তাই মুখ খালের জঙ্গলেই। কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে এই অরণ্য এক কথায় অসাধারণ। তারপর আবার এখানে হাতির দেখা মেলার সম্ভাবনা আট আনা। কর্ণফুলী নদীতে এখানে এসে পড়েছে কাপ্তাই মুখ খাল, তাই অরণ্যটিরও এই নাম। বেশ কয়েক বছর আগে আমি যখন গিয়েছিলাম, শুনেছিলাম দুঃখী এক চিতা বাঘের গল্, সঙ্গীর মৃত্যুতে একাকী ঘুরে বেড়াত যে কাপ্তাই মুখের বনে। তবে পরে একসময় আর জঙ্গলে দেখা যায়নি তাকেও। হয়তো অন্য কোনো জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল। অনেক খুঁজেও সেবার চিতা বাঘের তাজা কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারিনি।
কাপ্তাইয়ের জঙ্গলে উল্লুক, মায়া হরিণ, বুনো কুকুর, চিতা বিড়াল, ভালুক, বুনো শূকরসহ আছে নানা জাতের বন্যপ্রাণী। সেরো আর বিশাল আকারের হরিণ সাম্বারের গল্পও বলেন কেউ কেউ। গহিন অরণ্য লাঠিটিলা
সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় মৌলভীবাজারের জুড়ির লাঠিটিলার জঙ্গল। কুলাউড়া কিংবা জুড়ি থেকে রওনা দিয়ে বনটিতে পৌঁছাবার আগেই চা-বাগান ঘেরা আশ্চর্য সুন্দর এক জায়গায় চলে আসবেন। রাস্তা চলে গেছে সেতু হয়ে ছড়ার ওপর দিয়ে। গাড়িটা ওখানে দাঁড় করাবেন। সবুজ টিলায় চা-বাগান, সমতলের ধানি জমি, মাঝখানের এই রাস্তা—সব মিলিয়ে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়বেন সৌন্দর্যে।
আরও কয়েকটা সুন্দর চা-বাগান পেরিয়ে পৌঁছাবেন লাঠিটিলা বিট অফিসে। ওখান থেকে দিলখুশা চা-বাগানকে পাশ কাটিয়ে বাজারে। পথে এক ছড়ার পাড়ে দূর থেকে তিনটি আজব প্রাণীকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছিলাম প্রথমবার যখন লাঠিটিলায় গিয়েছিলাম। বেজির সঙ্গে মিল আছে, তবে গায়ে-গতরে বড়। চোখের পাশ থেকে সাদা দাগ নেমে গেছে নিচে। পরে অবশ্য নিশ্চিত হই ওগুলো বেজিরই একটি জাত, কাঁকড়াভূক বেজি। এ ধরনের বেজির কেবল গভীর বনাঞ্চলেই দেখা মেলে।
মূল জঙ্গলে ঢোকার পর ছড়া ধরেও যেতে পারেন। তবে বর্ষার সময় হলে জোকের আক্রমণ থেকে সাবধান। আবার ডাঙার পথ ধরেও চলতে পারবেন। গাছের ডাল দিয়ে বানানো এক সেতু ধরে ছড়া পেরিয়ে আমরা যেমন ঢুকেছিলাম গর্জনসহ বড় গাছের বনে। হঠাৎ বাঁয়ে একটু দূরে গাছের ডালে নড়াচড়া! কাছে যেতেই আবিষ্কার করি চশমা হনুমান।
চলতে চলতে একসময় গভীর বনানীতে চলে আসবেন। পথ হয়ে উঠবে আরও সরু, দুর্গম। এই উঠছে, তো পরমুহূর্তেই নামছে। ডানে অরণ্য, বায়ে খাদ। জংলি গাছের জঙ্গল পথের ওপর এসে জড়িয়ে ধরতে চাইবে পা। সঙ্গে যে গাইড থাকবে, তার থেকে জানবেন মায়া হরিণ, বাঘডাস, শজারু, শিয়ালরা বনে আছে বিস্তর।
ঢালু একটা সরু পথ ধরে একসময় ঢুকবেন ন্যাচারাল ফরেস্টে, মানে আমরা এভাবে ঢুকেছিলাম। প্রাকৃতিক গাছগাছালি বেশি থাকায় জায়গাটি এই নামে পরিচিত। চারদিকে পাহাড়, গহিন আদিম অরণ্য। সব গাছ ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ি গর্জন। খাঁড়া পাথুরে টিলা বেয়ে নেমে আসছে স্বচ্ছ জলের ঝরনা। সেখানে নিচে পানি জমে তৈরি হয়েছে ছোট্ট এক জলাধার। তিন দিকে পাহাড়। সবুজ পাহাড়ের শরীরে চাপালিশ, বনাকসহ হরেক চেনা-অচেনা গাছের জঙ্গল, বিভিন্ন গাছ থেকে নেমে আসা লতা, অদ্ভুত আলো-আঁধারি, গাছপালা ভিজিয়ে বয়ে চলা ঝরনা, ছোট্ট লেক—সব মিলিয়ে প্রকৃতির আশ্চর্য এক রূপ দেখে চমকে উঠবেন। আমি যেমন চমকেছিলাম।
এগোতে চাইলে যে পাথুরে পাহাড় বেয়ে ঝরনা নামছে, সেটায় উঠতে হবে। কোনোমতে উঠতে পারলেও ওপরের জঙ্গল বড় দুর্ভেদ্য। কিন্তু ওখানকার মায়াবী রূপ যেন আপনাকে জাদু করে ফেলবে! ঘন গাছপালার ফাঁক গলে নিচে এসে পড়া ফালি ফালি সূর্যরশ্মি বাড়িয়েছে সৌন্দর্য।
এরপর পাহাড়ে ওঠার সেই অর্থে রাস্তা নেই। টহলের সময় বনকর্মীদের কদাচিৎ ব্যবহার করার ফলে খাঁড়া, সরু একটা পথের মতো তৈরি হয়েছে। হাত-পা ব্যবহার করে দুর্গম সেই পথে ওপরে উঠে পড়তে পারবেন। দুপাশে আশ্চর্য গভীর বনানী, মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে ঝরনা। ওই হিমশীতল পানিপথেই এগোতে গিয়ে হয়তো পেয়ে যাবেন ছোট্ট এক টুকরো নরম মাটিতে মায়া হরিণের পায়ের ছাপ। লাঠিটিলার জঙ্গলে ঘুরতে পারতেন ডাঙা কিংবা ছড়ার বিভিন্ন পথেই। যত ভেতরে ঢুকবেন বন তত দুর্গম।
লাঠিটিলায় কখনো কখনো খবর মেলে চিতা বাঘ আর বুনো কুকুরদের। এমনিতে জঙ্গলটির আয়তন ২০ বর্গকিলোমিটার বা ৫ হাজার একরের কিছু বেশি। তবে লাঠিটিলার জঙ্গল ধরে এমনকি চলে যাওয়া যায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পেছনের জঙ্গলে। তেমনি লাঠিটিলার ওপাশে ভারতের জঙ্গলও পাবেন। বলা চলে, মিলিয়ে-ঝিলিয়ে বড় এলাকায় থাকে বুনো প্রাণীরা।এমনকি বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির ছোট একটি পালও। এখন সিলেট বিভাগের কেবল লাঠিটিলায় দেখা মেলে বুনো হাতির। এমনকি ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে একাধিকবার রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার খবরও মিলেছিল লাঠিটিলা থেকে।
লাঠিটিলায় হতে চলেছে দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক। এটা নিয়ে মনে একটা দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধছে, মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেলে অরণ্য আর বুনো প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো?
দুধপুকুরিয়া একটি বনের নাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ভাইয়ের মুখে দুধপুকুরিয়া নামটা শোনার পরেই গেঁথে গিয়েছিল মনে। এমন সুন্দর নামের যে কোনো বন আছে বাংলাদেশে, এটাই জানতাম না। অনেকটা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বিভিন্ন জায়গা যেমন কুঞ্জপুকুর, দুধসয়ার দ্বীপ—এসবের কথা মাথায় চলে আসছিল। ভেবেছিলাম সময়-সুযোগ পেলে যেতে হবে। হাতিও নাকি বেশ সহজে দেখা মেলে ওখানে। রাঙামাটি-বান্দরবান রাস্তায় বাঙ্গালহালিয়া পেরিয়ে আরও অনেকটা গিয়ে জঙ্গলটা, তবে দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পড়েছে চট্টগ্রামের সীমানায়। কাপ্তাইয়ে বেড়াতে গেলে সেখান থেকে এক সকালে হাজির হয়ে যাই দুধপুকুরিয়ায়।
চারপাশে গাছপালার মাঝখানে এঁকেবেঁকে চলে গেছে পাকা সড়ক। ছড়ার ওপর সুন্দর এক সেতু পাবেন। জায়গাটিকে অনেকে চেনে ডাকবাংলার মোড় নামে। এখানে বন বিভাগের পুরোনো, অব্যবহৃত একটা বাংলো দেখেছিলাম। আমার ধারণা, সেখান থেকেই এই নাম। স্থানীয় দুই কিশোরকে সঙ্গী করে আমি ঢুকেছিলাম অরণ্যে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারবেন অরণ্যটি থেকে।
দুধপুকুরিয়ার অরণ্যে ঢুকতেই গাছপালার ছায়ারা আপনাকে ঘিরে ফেলল। কেমন একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব অনুভব করবেন। শিমুল গাছ দেখবেন, গর্জন দেখবেন। হঠাৎ বালুর ওপরে কোনো প্রাণীর পায়ের ছাপ পাবেন, ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবেন এটা মায়া হরিণ কিংবা বুনো শূকরের পায়ের ছাপ।
স্থানীয় কোনো বৃদ্ধের সঙ্গে জঙ্গলপথে দেখা হয়ে গেলে হয়তো স্মৃতি হাতড়ে বলবেন বড় বাঘের গল্প। গরু ঘাড়ে কামড়ে ধরে নিয়ে যেত পাহাড়ের আস্তানায়।
বড় গাছের পাশাপাশি ছোট গাছ, ঝোপ-জঙ্গল নজর কাড়বে। অর্কিডও দেখবেন। তবে চলাফেরা করতে হবে সাবধানে। দুধপুকুরিয়ায় এখন দাপুটে জন্তুর মধ্যে কেবল টিকে আছে হাতিই। আশপাশের বেশ কয়েকটি জঙ্গল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির পাল। তাই দেখা পাবেন এমন গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না।
দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের আয়তন ৪৭ বর্গকিলোমিটারের মতো। বসন্তবাউরি, টিয়া, কাঠঠোকরা, লম্বা লেজের ভিমরাজের দেখা পেতে পারেন। কাঠবিড়ালি, বানর আছে বিস্তর। ছড়ার শীতল জলে নেমে পা ডুবিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলভ্রমণ শেষ করে মূল রাস্তায় বের হয়ে আসতে পারবেন।
সবার পরিচিত লাউয়াছড়া
ঢাকা থেকে সিলেটে যাচ্ছি আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেসে। পথেই পড়ে আমার নানাবাড়ির স্টেশন হরষপুর। ওই স্টেশন পেরিয়ে আরও অন্তত ঘণ্টা দেড়েক চলার পর হঠাৎ একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল ট্রেন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম বাইরে, ট্রেন ভ্রমণে এই কাজটাই সবচেয়ে আনন্দ নিয়ে করি। চমকে উঠলাম, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে চলে এসেছি। এই অচেনা রাজ্যে ঘন গাছপালার ঠাসবুনন। হাত দশেক দূরে একটা গাছ ভেঙে কাত হয়ে আছে আরেকটার ওপর। এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে যাচ্ছে পাখি। ওদের সঙ্গে সমান তালে ডাকছে পোকামাকড়। এ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। নেই লোকজনের বিরক্তিকর কোলাহল। যতটা সময় ট্রেনটা দাঁড়িয়ে ছিল, মোহাচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। তারপর আবার যেমন হঠাৎ থেমেছিল, তেমনি আচমকা ছেড়ে দিল, তখনই বাস্তবে ফিরলাম। ঘটনাটা বহু বছর আগের। ঢাকায় ফিরে আসার পর জানতে পারি ওটাই লাউয়াছড়া।
লাউয়াছড়া আমার খুব পছন্দের একটি বন। আমার মনে হয় সুন্দরবনের পর এ দেশের পর্যটকেরা সবচেয়ে বেশি চেনে এই বনকেই। তবে এর জনপ্রিয়তা যতটা, সেই তুলনায় অরণ্যটি খুব একটা বড় নয়। এমনিতে মাত্র ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় উদ্যানটি। তবে অরণ্য এলাকা আরও বেশি। বনটির জন্মও প্রাকৃতিকভাবে নয়। যদ্দুর জানি, ব্রিটিশ সরকার উড়োজাহাজ থেকে বীজ ছিটিয়ে এই বন পত্তনের সূচনা করে। কালক্রমে সেটাই পরিণত হয় গহিন অরণ্যে। একসময় কিন্তু দেখার মতো এক বন ছিল লাউয়াছড়া। বিশাল সব মহিরুহের কারণে দিনের বেলাতেই নেমে আসত আঁধার। তখন বাংলাদেশের আরও অনেক বনের মতো লাউয়াছড়ায় বাঘেরা মহাদর্পে ঘুরে বেড়াত।
প্রকৃতিবিদ নওয়াজেশ আহমদ লাউয়াছড়ায় বাঘ দেখার বর্ণনা দিয়েছেন। রাতে জিপে ভ্রমণের সময় বাঘটা দেখেন তিনি, সেটা বিংশ শতকের ষাটের দশকের ঘটনা। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই পড়ে জেনেছি, ১৯৬২ সালে লাউয়াছড়ায় বাঘ মারেন এক পাকিস্তানি জেনারেল। মাচায় বসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাঘটি মারেন ভদ্রলোক। নওয়াজেশ আহমদের দেখা ওই বাঘটাই মারা পড়েছিল কি না, বলতে পারব না। এখন বাঘ দূরে থাক, এমনকি চা-বাগান এবং ছোট অরণ্যগুলোতেও একসময় ঘুরে বেড়ানো চিতা বাঘের টিকিটাও দেখবেন না এই বনে। তবে খুব ভোরে বের হলে জঙ্গলের ভেতরকার ঘেসো জমিতে মায়া হরিণ দেখতে পাবেন। বুনো শূকর আর অজগরও আছে। আছে উল্লুক, বাঁশভল্লুক, লজ্জাবতী বানরসহ হরেক জাতের বন্যপ্রাণী।
লাউয়াছড়া কেটে চলে গেছে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। এ কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে বেশ কিছু বুনো প্রাণ ঝরে যায় প্রতি বছর। তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে চলাচল করা ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার রাখার অনুরোধ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার পর, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি চিঠি দেয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বন্যপ্রাণী চলাচলের ঝুঁকি কমবে।
আমার জঙ্গলভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং ও কাপ্তাই, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গল-পাহাড় যে চষে বেড়িয়েছি। যেখানেই গিয়েছি চোখে জ্বালা করেছে, কোণে অজান্তেই জমা হয়েছে জল। কাসালংয়ের মাইনির বন বাংলোয় গিয়ে দেখি চারপাশে বনের ছিটেফোঁটাও নেই। অথচ এনায়েত মাওলা ষাট বছর আগে মাইনির ধারেই চিতা বাঘ ও বাঘ শিকার করেছেন। মধুপুরে গিয়ে মনে পড়েছে, ১৯৫০ সালের আশপাশে এদিকেও ছিল বাঘের রাজত্ব। চিতা বাঘ ছিল আরও অনেক দিন। সত্যি বলতে, এখনো আমি মাঝে মাঝে দিবাস্বপ্ন দেখি, একটা-দুটো চিতা কি এখনো লুকিয়ে রেখেছে মধুপুর তার অন্তঃপুরে?
সিলেটের বনগুলোতে গিয়েও মন খারাপ হতো পুরোনো দিনের কথা ভেবে। আবদুর রহমান চৌধুরী সুনামগঞ্জের লাউর, খাসিয়া পাহাড়ে বাঘ-হাতির যে রাজ্যের কথা বলে গেছেন, সেটা কোথায় হারাল! নানির মুখে শোনা হবিগঞ্জের মাধবপুরে গোয়াল থেকে বাঘে গরু নিয়ে যাওয়ার গল্প কিংবা নানাবাড়ির কাছে দুই ভাইয়ের খালি হাতে বাঘ মারা, সাতছড়িতে গাড়ির কাচে চিতা বাঘের থাবা চালানো—এমনই সব ঘটনা শুনে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ-অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ত শরীরে।
টেকনাফে গেলে আবার মনে পড়ে ধীরাজ ভট্টাচার্যের ‘যখন পুলিশ ছিলাম’-এর সেই গহিন অরণ্যে ভরপুর, বাঘ ডাকা টেকনাফের কথা। আমার দাদিও ওসি বাবার পোস্টিং সূত্রে নব্বই বছর আগে ছিলেন কক্সবাজার, টেকনাফ, হ্নীলার মতো জায়গাগুলোতে। বাঘের ডাক শুনতে পেতেন রাতে। কোয়ার্টার ঘেরা ছিল উঁচু পাঁচিলে। তবে এখন মাঝে মাঝে চিন্তা হয়, পুরোনো দিনের অরণ্য আর বন্যপ্রাণীর কথা ভেবে কী হবে, যা বন আছে সেগুলোই বা কত দিন থাকবে?
আজ বিশ্ব বন দিবস। এই দিনে আর মন খারাপ করা কথা বলতে চাই না, বরং চলুন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চারটি বনের সঙ্গে পরিচিত হই। বন নিয়ে ধারাবাহিক এই লেখার পরের পর্বগুলোয় আরও কিছু বনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।
লতা বাঘের কাপ্তাই
কাপ্তাইয়ের জঙ্গল সব সময়ই আমার প্রিয় অরণ্যগুলোর একটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গলগুলোর মধ্যে এখানেই সবচেয়ে বেশি গিয়েছি। আপনি যদি অরণ্যপ্রেমী হন এবং এখনো না গিয়ে থাকেন, তবে এই অরণ্যে একটিবার অন্তত যাওয়া আপনার জন্য অবশ্যকর্তব্য। পাহাড়, অরণ্য, বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি কর্ণফুলী নদী আর কাপ্তাই হ্রদেও মজে যাবেন।
কর্ণফুলীর দুই পাশে সীতা আর রাম পাহাড়ের অরণ্য চোখ ছানাবড়া করে দেবে আপনার। অনেক বড় এলাকা নিয়ে কাপ্তাইয়ের জঙ্গল, তবে জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্কের আয়তন ৫৪ বর্গকিলোমিটারের মতো।
কর্ণফুলী নদীর তীরেই বন বিভাগের রাম পাহাড় বিট অফিস। সেখানেই বনকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা। সেখান থেকে কর্ণফুলীর তীর থেকেই উঠে যাওয়া অদ্ভুত সুন্দর পাহাড়টা দেখে রোমাঞ্চিত হবেন। উঁচু, সবুজ এক পাহাড়। শরীরে গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বড়-ছোট, হরেক জাতের গাছপালা। অবশ্য শুধু বন বিভাগের বিট অফিস থেকে নয়, আশপাশের নদীপাড়ের বড় একটা জায়গা থেকেই জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়টির দেখা পাবেন। দূর থেকে চোখ বুলিয়েও বুঝতে অসুবিধা হবে না, কোনো কোনো গাছ শতবর্ষের সীমানা পেরিয়েছে বহু আগে। গাছের গা থেকে বেরিয়ে আসা অজস্র লতা ও ঝুরি পাহাড়ি জঙ্গলটিকে করে তুলেছে আরও দুর্ভেদ্য। এটা সীতা পাহাড়। এলাকার কোনো বয়স্ক ব্যক্তির দেখা পেয়ে গেলে তিনি হয়তো আপনাকে বলবেন, একসময় আরও গভীর ছিল এই অরণ্য, আদিম সব গাছপালায় ঠাসা ছিল। কালের চক্রে, মানুষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে এ দেশের আরও অনেক বনের মতোই জৌলুশ হারিয়েছে জঙ্গলটা।
রাম পাহাড় বিটে একটা সার্চলাইট আছে। রাতে পাহারাদার বনকর্মী এটার আলো ফেলে নদীর জলে, চোরাই কাঠ বোঝাই করে নৌকা যাচ্ছে নাকি এর খোঁজে। আমিও ঠায় বসে ছিলাম এখানে কয়েক রাত, যদি এর আলোয় পানি খেতে আসা কোনো বন্যপ্রাণী ধরা দেয়! তো শেষমেশ ধৈর্যের ফল মিলল। সার্চলাইটের আলোয় তৃতীয় রাতে আবিষ্কার করলাম নদীর ওপারে, সীতা পাহাড়ের দিকটায় জ্বলজ্বলে এক জোড়া চোখ। আলোটা স্থির করতেই অন্ধকারের রাজ্যে আবছাভাবে দেখা গেল শরীরটা। পরমুহূর্তেই ওটা হাওয়া। তবে ততক্ষণে পরিচয় জানা হয়ে গেছে, মেছো বিড়াল। হয় পানি খেতে, নতুবা মাছ শিকারে বেরিয়েছিল।
ওপাশের রাম পাহাড়ের জঙ্গলেও ঘুরে বেড়াতে পারবেন। সেখানে হয়তো কোনো কাঠুরে কিংবা পাহাড়ের পাড়ায় বাস করা মারমা তরুণ আপনাকে বলবে গাছে গাছে চলে বেড়ানো লতা বাঘের গল্প। গাছ থেকেই যারা অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাটির শিকারের ওপর। সত্যি, এখনো এই লতা বাঘ আছে কাপ্তাইয়ের বন-পাহাড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ও তাঁর সঙ্গীরা ক্যামেরা ট্র্যাপে বন্দী করেছেন একে। তবে লতা বাঘ স্থানীয় নাম, বইয়ের নাম ক্লাউড্যাড ল্যাপার্ড বা মেঘলা চিতা। কেউ কেউ আবার ডাকেন গেছো বাঘ নামে। আমাদের অবশ্য একদল কাঠুরে বড় বাঘ দেখার গল্পও বলেছিলেন। যদিও নিজেকে বড় মাপের বাঘপ্রেমী দাবি করা এই আমারও এ তথ্য বিশ্বাস করতে মন সায় দেয়নি।
নদী ধরে চলে যেতে পারেন কাপ্তাই মুখ খালের জঙ্গলেই। কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে এই অরণ্য এক কথায় অসাধারণ। তারপর আবার এখানে হাতির দেখা মেলার সম্ভাবনা আট আনা। কর্ণফুলী নদীতে এখানে এসে পড়েছে কাপ্তাই মুখ খাল, তাই অরণ্যটিরও এই নাম। বেশ কয়েক বছর আগে আমি যখন গিয়েছিলাম, শুনেছিলাম দুঃখী এক চিতা বাঘের গল্, সঙ্গীর মৃত্যুতে একাকী ঘুরে বেড়াত যে কাপ্তাই মুখের বনে। তবে পরে একসময় আর জঙ্গলে দেখা যায়নি তাকেও। হয়তো অন্য কোনো জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল। অনেক খুঁজেও সেবার চিতা বাঘের তাজা কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারিনি।
কাপ্তাইয়ের জঙ্গলে উল্লুক, মায়া হরিণ, বুনো কুকুর, চিতা বিড়াল, ভালুক, বুনো শূকরসহ আছে নানা জাতের বন্যপ্রাণী। সেরো আর বিশাল আকারের হরিণ সাম্বারের গল্পও বলেন কেউ কেউ। গহিন অরণ্য লাঠিটিলা
সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় মৌলভীবাজারের জুড়ির লাঠিটিলার জঙ্গল। কুলাউড়া কিংবা জুড়ি থেকে রওনা দিয়ে বনটিতে পৌঁছাবার আগেই চা-বাগান ঘেরা আশ্চর্য সুন্দর এক জায়গায় চলে আসবেন। রাস্তা চলে গেছে সেতু হয়ে ছড়ার ওপর দিয়ে। গাড়িটা ওখানে দাঁড় করাবেন। সবুজ টিলায় চা-বাগান, সমতলের ধানি জমি, মাঝখানের এই রাস্তা—সব মিলিয়ে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়বেন সৌন্দর্যে।
আরও কয়েকটা সুন্দর চা-বাগান পেরিয়ে পৌঁছাবেন লাঠিটিলা বিট অফিসে। ওখান থেকে দিলখুশা চা-বাগানকে পাশ কাটিয়ে বাজারে। পথে এক ছড়ার পাড়ে দূর থেকে তিনটি আজব প্রাণীকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছিলাম প্রথমবার যখন লাঠিটিলায় গিয়েছিলাম। বেজির সঙ্গে মিল আছে, তবে গায়ে-গতরে বড়। চোখের পাশ থেকে সাদা দাগ নেমে গেছে নিচে। পরে অবশ্য নিশ্চিত হই ওগুলো বেজিরই একটি জাত, কাঁকড়াভূক বেজি। এ ধরনের বেজির কেবল গভীর বনাঞ্চলেই দেখা মেলে।
মূল জঙ্গলে ঢোকার পর ছড়া ধরেও যেতে পারেন। তবে বর্ষার সময় হলে জোকের আক্রমণ থেকে সাবধান। আবার ডাঙার পথ ধরেও চলতে পারবেন। গাছের ডাল দিয়ে বানানো এক সেতু ধরে ছড়া পেরিয়ে আমরা যেমন ঢুকেছিলাম গর্জনসহ বড় গাছের বনে। হঠাৎ বাঁয়ে একটু দূরে গাছের ডালে নড়াচড়া! কাছে যেতেই আবিষ্কার করি চশমা হনুমান।
চলতে চলতে একসময় গভীর বনানীতে চলে আসবেন। পথ হয়ে উঠবে আরও সরু, দুর্গম। এই উঠছে, তো পরমুহূর্তেই নামছে। ডানে অরণ্য, বায়ে খাদ। জংলি গাছের জঙ্গল পথের ওপর এসে জড়িয়ে ধরতে চাইবে পা। সঙ্গে যে গাইড থাকবে, তার থেকে জানবেন মায়া হরিণ, বাঘডাস, শজারু, শিয়ালরা বনে আছে বিস্তর।
ঢালু একটা সরু পথ ধরে একসময় ঢুকবেন ন্যাচারাল ফরেস্টে, মানে আমরা এভাবে ঢুকেছিলাম। প্রাকৃতিক গাছগাছালি বেশি থাকায় জায়গাটি এই নামে পরিচিত। চারদিকে পাহাড়, গহিন আদিম অরণ্য। সব গাছ ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ি গর্জন। খাঁড়া পাথুরে টিলা বেয়ে নেমে আসছে স্বচ্ছ জলের ঝরনা। সেখানে নিচে পানি জমে তৈরি হয়েছে ছোট্ট এক জলাধার। তিন দিকে পাহাড়। সবুজ পাহাড়ের শরীরে চাপালিশ, বনাকসহ হরেক চেনা-অচেনা গাছের জঙ্গল, বিভিন্ন গাছ থেকে নেমে আসা লতা, অদ্ভুত আলো-আঁধারি, গাছপালা ভিজিয়ে বয়ে চলা ঝরনা, ছোট্ট লেক—সব মিলিয়ে প্রকৃতির আশ্চর্য এক রূপ দেখে চমকে উঠবেন। আমি যেমন চমকেছিলাম।
এগোতে চাইলে যে পাথুরে পাহাড় বেয়ে ঝরনা নামছে, সেটায় উঠতে হবে। কোনোমতে উঠতে পারলেও ওপরের জঙ্গল বড় দুর্ভেদ্য। কিন্তু ওখানকার মায়াবী রূপ যেন আপনাকে জাদু করে ফেলবে! ঘন গাছপালার ফাঁক গলে নিচে এসে পড়া ফালি ফালি সূর্যরশ্মি বাড়িয়েছে সৌন্দর্য।
এরপর পাহাড়ে ওঠার সেই অর্থে রাস্তা নেই। টহলের সময় বনকর্মীদের কদাচিৎ ব্যবহার করার ফলে খাঁড়া, সরু একটা পথের মতো তৈরি হয়েছে। হাত-পা ব্যবহার করে দুর্গম সেই পথে ওপরে উঠে পড়তে পারবেন। দুপাশে আশ্চর্য গভীর বনানী, মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে ঝরনা। ওই হিমশীতল পানিপথেই এগোতে গিয়ে হয়তো পেয়ে যাবেন ছোট্ট এক টুকরো নরম মাটিতে মায়া হরিণের পায়ের ছাপ। লাঠিটিলার জঙ্গলে ঘুরতে পারতেন ডাঙা কিংবা ছড়ার বিভিন্ন পথেই। যত ভেতরে ঢুকবেন বন তত দুর্গম।
লাঠিটিলায় কখনো কখনো খবর মেলে চিতা বাঘ আর বুনো কুকুরদের। এমনিতে জঙ্গলটির আয়তন ২০ বর্গকিলোমিটার বা ৫ হাজার একরের কিছু বেশি। তবে লাঠিটিলার জঙ্গল ধরে এমনকি চলে যাওয়া যায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পেছনের জঙ্গলে। তেমনি লাঠিটিলার ওপাশে ভারতের জঙ্গলও পাবেন। বলা চলে, মিলিয়ে-ঝিলিয়ে বড় এলাকায় থাকে বুনো প্রাণীরা।এমনকি বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির ছোট একটি পালও। এখন সিলেট বিভাগের কেবল লাঠিটিলায় দেখা মেলে বুনো হাতির। এমনকি ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে একাধিকবার রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার খবরও মিলেছিল লাঠিটিলা থেকে।
লাঠিটিলায় হতে চলেছে দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক। এটা নিয়ে মনে একটা দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধছে, মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেলে অরণ্য আর বুনো প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো?
দুধপুকুরিয়া একটি বনের নাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ভাইয়ের মুখে দুধপুকুরিয়া নামটা শোনার পরেই গেঁথে গিয়েছিল মনে। এমন সুন্দর নামের যে কোনো বন আছে বাংলাদেশে, এটাই জানতাম না। অনেকটা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বিভিন্ন জায়গা যেমন কুঞ্জপুকুর, দুধসয়ার দ্বীপ—এসবের কথা মাথায় চলে আসছিল। ভেবেছিলাম সময়-সুযোগ পেলে যেতে হবে। হাতিও নাকি বেশ সহজে দেখা মেলে ওখানে। রাঙামাটি-বান্দরবান রাস্তায় বাঙ্গালহালিয়া পেরিয়ে আরও অনেকটা গিয়ে জঙ্গলটা, তবে দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পড়েছে চট্টগ্রামের সীমানায়। কাপ্তাইয়ে বেড়াতে গেলে সেখান থেকে এক সকালে হাজির হয়ে যাই দুধপুকুরিয়ায়।
চারপাশে গাছপালার মাঝখানে এঁকেবেঁকে চলে গেছে পাকা সড়ক। ছড়ার ওপর সুন্দর এক সেতু পাবেন। জায়গাটিকে অনেকে চেনে ডাকবাংলার মোড় নামে। এখানে বন বিভাগের পুরোনো, অব্যবহৃত একটা বাংলো দেখেছিলাম। আমার ধারণা, সেখান থেকেই এই নাম। স্থানীয় দুই কিশোরকে সঙ্গী করে আমি ঢুকেছিলাম অরণ্যে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারবেন অরণ্যটি থেকে।
দুধপুকুরিয়ার অরণ্যে ঢুকতেই গাছপালার ছায়ারা আপনাকে ঘিরে ফেলল। কেমন একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব অনুভব করবেন। শিমুল গাছ দেখবেন, গর্জন দেখবেন। হঠাৎ বালুর ওপরে কোনো প্রাণীর পায়ের ছাপ পাবেন, ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবেন এটা মায়া হরিণ কিংবা বুনো শূকরের পায়ের ছাপ।
স্থানীয় কোনো বৃদ্ধের সঙ্গে জঙ্গলপথে দেখা হয়ে গেলে হয়তো স্মৃতি হাতড়ে বলবেন বড় বাঘের গল্প। গরু ঘাড়ে কামড়ে ধরে নিয়ে যেত পাহাড়ের আস্তানায়।
বড় গাছের পাশাপাশি ছোট গাছ, ঝোপ-জঙ্গল নজর কাড়বে। অর্কিডও দেখবেন। তবে চলাফেরা করতে হবে সাবধানে। দুধপুকুরিয়ায় এখন দাপুটে জন্তুর মধ্যে কেবল টিকে আছে হাতিই। আশপাশের বেশ কয়েকটি জঙ্গল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির পাল। তাই দেখা পাবেন এমন গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না।
দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের আয়তন ৪৭ বর্গকিলোমিটারের মতো। বসন্তবাউরি, টিয়া, কাঠঠোকরা, লম্বা লেজের ভিমরাজের দেখা পেতে পারেন। কাঠবিড়ালি, বানর আছে বিস্তর। ছড়ার শীতল জলে নেমে পা ডুবিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলভ্রমণ শেষ করে মূল রাস্তায় বের হয়ে আসতে পারবেন।
সবার পরিচিত লাউয়াছড়া
ঢাকা থেকে সিলেটে যাচ্ছি আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেসে। পথেই পড়ে আমার নানাবাড়ির স্টেশন হরষপুর। ওই স্টেশন পেরিয়ে আরও অন্তত ঘণ্টা দেড়েক চলার পর হঠাৎ একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল ট্রেন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম বাইরে, ট্রেন ভ্রমণে এই কাজটাই সবচেয়ে আনন্দ নিয়ে করি। চমকে উঠলাম, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে চলে এসেছি। এই অচেনা রাজ্যে ঘন গাছপালার ঠাসবুনন। হাত দশেক দূরে একটা গাছ ভেঙে কাত হয়ে আছে আরেকটার ওপর। এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে যাচ্ছে পাখি। ওদের সঙ্গে সমান তালে ডাকছে পোকামাকড়। এ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। নেই লোকজনের বিরক্তিকর কোলাহল। যতটা সময় ট্রেনটা দাঁড়িয়ে ছিল, মোহাচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। তারপর আবার যেমন হঠাৎ থেমেছিল, তেমনি আচমকা ছেড়ে দিল, তখনই বাস্তবে ফিরলাম। ঘটনাটা বহু বছর আগের। ঢাকায় ফিরে আসার পর জানতে পারি ওটাই লাউয়াছড়া।
লাউয়াছড়া আমার খুব পছন্দের একটি বন। আমার মনে হয় সুন্দরবনের পর এ দেশের পর্যটকেরা সবচেয়ে বেশি চেনে এই বনকেই। তবে এর জনপ্রিয়তা যতটা, সেই তুলনায় অরণ্যটি খুব একটা বড় নয়। এমনিতে মাত্র ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় উদ্যানটি। তবে অরণ্য এলাকা আরও বেশি। বনটির জন্মও প্রাকৃতিকভাবে নয়। যদ্দুর জানি, ব্রিটিশ সরকার উড়োজাহাজ থেকে বীজ ছিটিয়ে এই বন পত্তনের সূচনা করে। কালক্রমে সেটাই পরিণত হয় গহিন অরণ্যে। একসময় কিন্তু দেখার মতো এক বন ছিল লাউয়াছড়া। বিশাল সব মহিরুহের কারণে দিনের বেলাতেই নেমে আসত আঁধার। তখন বাংলাদেশের আরও অনেক বনের মতো লাউয়াছড়ায় বাঘেরা মহাদর্পে ঘুরে বেড়াত।
প্রকৃতিবিদ নওয়াজেশ আহমদ লাউয়াছড়ায় বাঘ দেখার বর্ণনা দিয়েছেন। রাতে জিপে ভ্রমণের সময় বাঘটা দেখেন তিনি, সেটা বিংশ শতকের ষাটের দশকের ঘটনা। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই পড়ে জেনেছি, ১৯৬২ সালে লাউয়াছড়ায় বাঘ মারেন এক পাকিস্তানি জেনারেল। মাচায় বসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাঘটি মারেন ভদ্রলোক। নওয়াজেশ আহমদের দেখা ওই বাঘটাই মারা পড়েছিল কি না, বলতে পারব না। এখন বাঘ দূরে থাক, এমনকি চা-বাগান এবং ছোট অরণ্যগুলোতেও একসময় ঘুরে বেড়ানো চিতা বাঘের টিকিটাও দেখবেন না এই বনে। তবে খুব ভোরে বের হলে জঙ্গলের ভেতরকার ঘেসো জমিতে মায়া হরিণ দেখতে পাবেন। বুনো শূকর আর অজগরও আছে। আছে উল্লুক, বাঁশভল্লুক, লজ্জাবতী বানরসহ হরেক জাতের বন্যপ্রাণী।
লাউয়াছড়া কেটে চলে গেছে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। এ কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে বেশ কিছু বুনো প্রাণ ঝরে যায় প্রতি বছর। তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে চলাচল করা ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার রাখার অনুরোধ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার পর, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি চিঠি দেয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বন্যপ্রাণী চলাচলের ঝুঁকি কমবে।
আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থেকে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। সারা দিনের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। এ সময় উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
১ দিন আগেপূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৬ শতাংশ। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২ দিন আগেবাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং...
৩ দিন আগেনিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আগে সাগরে বা উপকূলীয় এলাকায় অনেক সময় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে যে গরম পড়েছে, এর সঙ্গে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়া না-হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। তবে এর প্রভাবে আজ দেশের কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই। অবশ্য ঢাকার আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে।
আজ বুধবার সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পরবর্তী ছয় ঘণ্টার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থেকে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। সারা দিনের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। এ সময় উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৩ শতাংশ। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় কোনো বৃষ্টি হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে।
গতকালের পূর্বাভাসে আজকের বৃষ্টি সম্পর্কে জানানো হয়েছিল, চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ না-ও নিতে পারে। এটি নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ভারতের তামিলনাড়ুর দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। তবে সারা দেশে আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। ফলে তাপমাত্রাও খুব একটা কমবে না।
দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। তবে এর প্রভাবে আজ দেশের কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই। অবশ্য ঢাকার আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে।
আজ বুধবার সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পরবর্তী ছয় ঘণ্টার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থেকে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। সারা দিনের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। এ সময় উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৩ শতাংশ। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় কোনো বৃষ্টি হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে।
গতকালের পূর্বাভাসে আজকের বৃষ্টি সম্পর্কে জানানো হয়েছিল, চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ না-ও নিতে পারে। এটি নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ভারতের তামিলনাড়ুর দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। তবে সারা দেশে আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। ফলে তাপমাত্রাও খুব একটা কমবে না।
আমার জঙ্গল ভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গলে-পাহাড় যে চষে বেরিয়েছি। যেখানেই গিয়েছি পুরোনো দিনের গহিন অরণ্য ও বন্যপ্রাণীর গল্প শুন
২১ মার্চ ২০২৩পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৬ শতাংশ। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২ দিন আগেবাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং...
৩ দিন আগেনিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আগে সাগরে বা উপকূলীয় এলাকায় অনেক সময় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে যে গরম পড়েছে, এর সঙ্গে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়া না-হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
কার্তিক মাস আসার পর সারা দেশে বৃষ্টি প্রায় হচ্ছেই না। এর সঙ্গে বেড়েছে গরম। আজ মঙ্গলবারও রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রায় একই রকম থাকতে পারে।
আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পরবর্তী ছয় ঘণ্টার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থেকে মেঘলা আকাশ থাকতে পারে। সারা দিনের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। এ সময় উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৬ শতাংশ। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় কোনো বৃষ্টি হয়নি।
এ ছাড়া সারা দেশে আজকের আবহাওয়াও প্রায় একই রকম শুষ্ক থাকতে পারে। তবে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামে কিছুটা বৃষ্টি হতে পারে। গতকাল সোমবার আবহাওয়া অধিদপ্তরে আজকের সারা দেশের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যত্র আবহাওয়া আংশিক মেঘলা আকাশসহ প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
কার্তিক মাস আসার পর সারা দেশে বৃষ্টি প্রায় হচ্ছেই না। এর সঙ্গে বেড়েছে গরম। আজ মঙ্গলবারও রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রায় একই রকম থাকতে পারে।
আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পরবর্তী ছয় ঘণ্টার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থেকে মেঘলা আকাশ থাকতে পারে। সারা দিনের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। এ সময় উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৬ শতাংশ। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় কোনো বৃষ্টি হয়নি।
এ ছাড়া সারা দেশে আজকের আবহাওয়াও প্রায় একই রকম শুষ্ক থাকতে পারে। তবে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামে কিছুটা বৃষ্টি হতে পারে। গতকাল সোমবার আবহাওয়া অধিদপ্তরে আজকের সারা দেশের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যত্র আবহাওয়া আংশিক মেঘলা আকাশসহ প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আমার জঙ্গল ভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গলে-পাহাড় যে চষে বেরিয়েছি। যেখানেই গিয়েছি পুরোনো দিনের গহিন অরণ্য ও বন্যপ্রাণীর গল্প শুন
২১ মার্চ ২০২৩আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থেকে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। সারা দিনের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। এ সময় উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
১ দিন আগেবাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং...
৩ দিন আগেনিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আগে সাগরে বা উপকূলীয় এলাকায় অনেক সময় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে যে গরম পড়েছে, এর সঙ্গে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়া না-হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে আছে। বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সোমবার সকাল ১০টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ১৫২। গতকাল রোববার সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটেও বায়ুমান একই ছিল।
বায়ুদূষণের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় আজ ৭ম স্থানে রয়েছে ঢাকা। গতকালও একই অবস্থানে ছিল এই রাজধানী শহরটি।
আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি। শহরটির বায়ুমান আজ ৩০৩, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।
শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— পাকিস্তানের লাহোর, ভারতের মুম্বাই, উজবেকিস্তানের তাসখন্দ ও ভারতের কলকাতা। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৯৭, ১৭৭, ১৫৮ ও ১৫৬।
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।
ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে আছে। বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সোমবার সকাল ১০টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ১৫২। গতকাল রোববার সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটেও বায়ুমান একই ছিল।
বায়ুদূষণের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় আজ ৭ম স্থানে রয়েছে ঢাকা। গতকালও একই অবস্থানে ছিল এই রাজধানী শহরটি।
আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি। শহরটির বায়ুমান আজ ৩০৩, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।
শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— পাকিস্তানের লাহোর, ভারতের মুম্বাই, উজবেকিস্তানের তাসখন্দ ও ভারতের কলকাতা। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৯৭, ১৭৭, ১৫৮ ও ১৫৬।
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।
আমার জঙ্গল ভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গলে-পাহাড় যে চষে বেরিয়েছি। যেখানেই গিয়েছি পুরোনো দিনের গহিন অরণ্য ও বন্যপ্রাণীর গল্প শুন
২১ মার্চ ২০২৩আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থেকে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। সারা দিনের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। এ সময় উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
১ দিন আগেপূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৬ শতাংশ। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২ দিন আগেনিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আগে সাগরে বা উপকূলীয় এলাকায় অনেক সময় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে যে গরম পড়েছে, এর সঙ্গে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়া না-হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
বর্ষাকাল বিদায় নিয়েছে। প্রকৃতিতে চলছে এখন হেমন্তকাল। কিন্তু আবহাওয়ার আচরণ অনেকটাই গ্রীষ্মকালের মতো। কয়েক দিন ধরে সকালে সূর্যের তাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা গড়িয়ে দুপুর থেকে বিকেলের আগপর্যন্ত এর তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এটি শক্তিশালী হয়ে পরিণত হতে পারে নিম্নচাপে।
নিম্নচাপ সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ২১ অক্টোবর একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তীতে এটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, মধ্য অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায়ের পর বৃষ্টি কমে গেছে। লঘুচাপ বা নিম্নচাপের প্রভাব কেটে গেলে তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের আমেজ পড়বে সারা দেশে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজ সোমবার সকাল ৭টার পূর্বাভাস অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় সকালে তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গতকাল রোববার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫, আর সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টাঙ্গাইলে ৩৫ দশমিক ৭ সেলসিয়াস। সারা দেশে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
কার্তিক মাসে এই তাপমাত্রা স্বাভাবিক কিনা জানতে চাইলে আজ সোমবার সকালে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন যে ধরনের গরম পড়ছে সেটি বৃষ্টি কমে যাওয়ার জন্য হয়েছে। সাধারণত অক্টোবর মাসের এই সময় মৌসুমি বায়ু বিদায়ের পর বৃষ্টি কম হয়। তখন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়।
লঘুচাপ বা নিম্নচাপ সৃষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আগে সাগরে বা উপকূলীয় এলাকায় অনেক সময় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে যে গরম পড়েছে, এর সঙ্গে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়া না-হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। আপাতত মনে হচ্ছে কালকের (২১ অক্টোবর) মধ্যে উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটি পরে নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের তামিলনাড়ু উপকূলের দিকে যেতে পারে। তবে লঘুচাপটি নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার আগপর্যন্ত এর গতিপথ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। আর নিম্নচাপের প্রভাব কেটে গেলে দেশের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমে শীতের আমেজ পড়বে।
হাফিজুর রহমান আরও বলেন, সূর্যের দক্ষিণায়ন (দক্ষিণ দিকে হেলে পড়া) এখনো পুরোপুরি হয়নি। এই দক্ষিণায়ন হলে দিনের ব্যাপ্তি আরও কমবে, তাপমাত্রা তখন কমে শীতও বাড়বে।
বর্ষাকাল বিদায় নিয়েছে। প্রকৃতিতে চলছে এখন হেমন্তকাল। কিন্তু আবহাওয়ার আচরণ অনেকটাই গ্রীষ্মকালের মতো। কয়েক দিন ধরে সকালে সূর্যের তাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা গড়িয়ে দুপুর থেকে বিকেলের আগপর্যন্ত এর তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এটি শক্তিশালী হয়ে পরিণত হতে পারে নিম্নচাপে।
নিম্নচাপ সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ২১ অক্টোবর একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তীতে এটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, মধ্য অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায়ের পর বৃষ্টি কমে গেছে। লঘুচাপ বা নিম্নচাপের প্রভাব কেটে গেলে তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের আমেজ পড়বে সারা দেশে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজ সোমবার সকাল ৭টার পূর্বাভাস অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় সকালে তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গতকাল রোববার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫, আর সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টাঙ্গাইলে ৩৫ দশমিক ৭ সেলসিয়াস। সারা দেশে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
কার্তিক মাসে এই তাপমাত্রা স্বাভাবিক কিনা জানতে চাইলে আজ সোমবার সকালে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন যে ধরনের গরম পড়ছে সেটি বৃষ্টি কমে যাওয়ার জন্য হয়েছে। সাধারণত অক্টোবর মাসের এই সময় মৌসুমি বায়ু বিদায়ের পর বৃষ্টি কম হয়। তখন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়।
লঘুচাপ বা নিম্নচাপ সৃষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আগে সাগরে বা উপকূলীয় এলাকায় অনেক সময় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে যে গরম পড়েছে, এর সঙ্গে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়া না-হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। আপাতত মনে হচ্ছে কালকের (২১ অক্টোবর) মধ্যে উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটি পরে নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের তামিলনাড়ু উপকূলের দিকে যেতে পারে। তবে লঘুচাপটি নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার আগপর্যন্ত এর গতিপথ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। আর নিম্নচাপের প্রভাব কেটে গেলে দেশের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমে শীতের আমেজ পড়বে।
হাফিজুর রহমান আরও বলেন, সূর্যের দক্ষিণায়ন (দক্ষিণ দিকে হেলে পড়া) এখনো পুরোপুরি হয়নি। এই দক্ষিণায়ন হলে দিনের ব্যাপ্তি আরও কমবে, তাপমাত্রা তখন কমে শীতও বাড়বে।
আমার জঙ্গল ভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গলে-পাহাড় যে চষে বেরিয়েছি। যেখানেই গিয়েছি পুরোনো দিনের গহিন অরণ্য ও বন্যপ্রাণীর গল্প শুন
২১ মার্চ ২০২৩আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থেকে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। সারা দিনের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। এ সময় উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
১ দিন আগেপূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৬ শতাংশ। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২ দিন আগেবাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং...
৩ দিন আগে