Ajker Patrika

অরণ্যের খোঁজে

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৩, ১৩: ১৪
অরণ্যের খোঁজে

আমার জঙ্গলভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং ও কাপ্তাই, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গল-পাহাড় যে চষে বেড়িয়েছি। যেখানেই গিয়েছি চোখে জ্বালা করেছে, কোণে অজান্তেই জমা হয়েছে জল। কাসালংয়ের মাইনির বন বাংলোয় গিয়ে দেখি চারপাশে বনের ছিটেফোঁটাও নেই। অথচ এনায়েত মাওলা ষাট বছর আগে মাইনির ধারেই চিতা বাঘ ও বাঘ শিকার করেছেন। মধুপুরে গিয়ে মনে পড়েছে, ১৯৫০ সালের আশপাশে এদিকেও ছিল বাঘের রাজত্ব। চিতা বাঘ ছিল আরও অনেক দিন। সত্যি বলতে, এখনো আমি মাঝে মাঝে দিবাস্বপ্ন দেখি, একটা-দুটো চিতা কি এখনো লুকিয়ে রেখেছে মধুপুর তার অন্তঃপুরে?

সিলেটের বনগুলোতে গিয়েও মন খারাপ হতো পুরোনো দিনের কথা ভেবে। আবদুর রহমান চৌধুরী সুনামগঞ্জের লাউর, খাসিয়া পাহাড়ে বাঘ-হাতির যে রাজ্যের কথা বলে গেছেন, সেটা কোথায় হারাল! নানির মুখে শোনা হবিগঞ্জের মাধবপুরে গোয়াল থেকে বাঘে গরু নিয়ে যাওয়ার গল্প কিংবা নানাবাড়ির কাছে দুই ভাইয়ের খালি হাতে বাঘ মারা, সাতছড়িতে গাড়ির কাচে চিতা বাঘের থাবা চালানো—এমনই সব ঘটনা শুনে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ-অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ত শরীরে।

টেকনাফে গেলে আবার মনে পড়ে ধীরাজ ভট্টাচার্যের ‘যখন পুলিশ ছিলাম’-এর সেই গহিন অরণ্যে ভরপুর, বাঘ ডাকা টেকনাফের কথা। আমার দাদিও ওসি বাবার পোস্টিং সূত্রে নব্বই বছর আগে ছিলেন কক্সবাজার, টেকনাফ, হ্নীলার মতো জায়গাগুলোতে। বাঘের ডাক শুনতে পেতেন রাতে। কোয়ার্টার ঘেরা ছিল উঁচু পাঁচিলে। তবে এখন মাঝে মাঝে চিন্তা হয়, পুরোনো দিনের অরণ্য আর বন্যপ্রাণীর কথা ভেবে কী হবে, যা বন আছে সেগুলোই বা কত দিন থাকবে? 

কাপ্তাই মুখ খালের জঙ্গলআজ বিশ্ব বন দিবস। এই দিনে আর মন খারাপ করা কথা বলতে চাই না, বরং চলুন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চারটি বনের সঙ্গে পরিচিত হই। বন নিয়ে ধারাবাহিক এই লেখার পরের পর্বগুলোয় আরও কিছু বনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।

লতা বাঘের কাপ্তাই
কাপ্তাইয়ের জঙ্গল সব সময়ই আমার প্রিয় অরণ্যগুলোর একটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গলগুলোর মধ্যে এখানেই সবচেয়ে বেশি গিয়েছি। আপনি যদি অরণ্যপ্রেমী হন এবং এখনো না গিয়ে থাকেন, তবে এই অরণ্যে একটিবার অন্তত যাওয়া আপনার জন্য অবশ্যকর্তব্য। পাহাড়, অরণ্য, বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি কর্ণফুলী নদী আর কাপ্তাই হ্রদেও মজে যাবেন।

কর্ণফুলীর দুই পাশে সীতা আর রাম পাহাড়ের অরণ্য চোখ ছানাবড়া করে দেবে আপনার। অনেক বড় এলাকা নিয়ে কাপ্তাইয়ের জঙ্গল, তবে জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্কের আয়তন ৫৪ বর্গকিলোমিটারের মতো।

ঝড়ের আগে কাপ্তাইয়ের সেগুন বনেকর্ণফুলী নদীর তীরেই বন বিভাগের রাম পাহাড় বিট অফিস। সেখানেই বনকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা। সেখান থেকে কর্ণফুলীর তীর থেকেই উঠে যাওয়া অদ্ভুত সুন্দর পাহাড়টা দেখে রোমাঞ্চিত হবেন। উঁচু, সবুজ এক পাহাড়। শরীরে গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বড়-ছোট, হরেক জাতের গাছপালা। অবশ্য শুধু বন বিভাগের বিট অফিস থেকে নয়, আশপাশের নদীপাড়ের বড় একটা জায়গা থেকেই জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়টির দেখা পাবেন। দূর থেকে চোখ বুলিয়েও বুঝতে অসুবিধা হবে না, কোনো কোনো গাছ শতবর্ষের সীমানা পেরিয়েছে বহু আগে। গাছের গা থেকে বেরিয়ে আসা অজস্র লতা ও ঝুরি পাহাড়ি জঙ্গলটিকে করে তুলেছে আরও দুর্ভেদ্য। এটা সীতা পাহাড়। এলাকার কোনো বয়স্ক ব্যক্তির দেখা পেয়ে গেলে তিনি হয়তো আপনাকে বলবেন, একসময় আরও গভীর ছিল এই অরণ্য, আদিম সব গাছপালায় ঠাসা ছিল। কালের চক্রে, মানুষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে এ দেশের আরও অনেক বনের মতোই জৌলুশ হারিয়েছে জঙ্গলটা।

রাম পাহাড় বিটে একটা সার্চলাইট আছে। রাতে পাহারাদার বনকর্মী এটার আলো ফেলে নদীর জলে, চোরাই কাঠ বোঝাই করে নৌকা যাচ্ছে নাকি এর খোঁজে। আমিও ঠায় বসে ছিলাম এখানে কয়েক রাত, যদি এর আলোয় পানি খেতে আসা কোনো বন্যপ্রাণী ধরা দেয়! তো শেষমেশ ধৈর্যের ফল মিলল। সার্চলাইটের আলোয় তৃতীয় রাতে আবিষ্কার করলাম নদীর ওপারে, সীতা পাহাড়ের দিকটায় জ্বলজ্বলে এক জোড়া চোখ। আলোটা স্থির করতেই অন্ধকারের রাজ্যে আবছাভাবে দেখা গেল শরীরটা। পরমুহূর্তেই ওটা হাওয়া। তবে ততক্ষণে পরিচয় জানা হয়ে গেছে, মেছো বিড়াল। হয় পানি খেতে, নতুবা মাছ শিকারে বেরিয়েছিল। 

সীতা পাহাড়ের চূড়ায়ওপাশের রাম পাহাড়ের জঙ্গলেও ঘুরে বেড়াতে পারবেন। সেখানে হয়তো কোনো কাঠুরে কিংবা পাহাড়ের পাড়ায় বাস করা মারমা তরুণ আপনাকে বলবে গাছে গাছে চলে বেড়ানো লতা বাঘের গল্প। গাছ থেকেই যারা অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাটির শিকারের ওপর। সত্যি, এখনো এই লতা বাঘ আছে কাপ্তাইয়ের বন-পাহাড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ও তাঁর সঙ্গীরা ক্যামেরা ট্র্যাপে বন্দী করেছেন একে। তবে লতা বাঘ স্থানীয় নাম, বইয়ের নাম ক্লাউড্যাড ল্যাপার্ড বা মেঘলা চিতা। কেউ কেউ আবার ডাকেন গেছো বাঘ নামে। আমাদের অবশ্য একদল কাঠুরে বড় বাঘ দেখার গল্পও বলেছিলেন। যদিও নিজেকে বড় মাপের বাঘপ্রেমী দাবি করা এই আমারও এ তথ্য বিশ্বাস করতে মন সায় দেয়নি।

নদী ধরে চলে যেতে পারেন কাপ্তাই মুখ খালের জঙ্গলেই। কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে এই অরণ্য এক কথায় অসাধারণ। তারপর আবার এখানে হাতির দেখা মেলার সম্ভাবনা আট আনা। কর্ণফুলী নদীতে এখানে এসে পড়েছে কাপ্তাই মুখ খাল, তাই অরণ্যটিরও এই নাম। বেশ কয়েক বছর আগে আমি যখন গিয়েছিলাম, শুনেছিলাম দুঃখী এক চিতা বাঘের গল্, সঙ্গীর মৃত্যুতে একাকী ঘুরে বেড়াত যে কাপ্তাই মুখের বনে। তবে পরে একসময় আর জঙ্গলে দেখা যায়নি তাকেও। হয়তো অন্য কোনো জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল। অনেক খুঁজেও সেবার চিতা বাঘের তাজা কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারিনি।

কাপ্তাইয়ের জঙ্গলে উল্লুক, মায়া হরিণ, বুনো কুকুর, চিতা বিড়াল, ভালুক, বুনো শূকরসহ আছে নানা জাতের বন্যপ্রাণী। সেরো আর বিশাল আকারের হরিণ সাম্বারের গল্পও বলেন কেউ কেউ।  
লাঠিটিলার জঙ্গলের ভেতরে পর্যটকেরাগহিন অরণ্য লাঠিটিলা
সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় মৌলভীবাজারের জুড়ির লাঠিটিলার জঙ্গল। কুলাউড়া কিংবা জুড়ি থেকে রওনা দিয়ে বনটিতে পৌঁছাবার আগেই চা-বাগান ঘেরা আশ্চর্য সুন্দর এক জায়গায় চলে আসবেন। রাস্তা চলে গেছে সেতু হয়ে ছড়ার ওপর দিয়ে। গাড়িটা ওখানে দাঁড় করাবেন। সবুজ টিলায় চা-বাগান, সমতলের ধানি জমি, মাঝখানের এই রাস্তা—সব মিলিয়ে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়বেন সৌন্দর্যে।

আরও কয়েকটা সুন্দর চা-বাগান পেরিয়ে পৌঁছাবেন লাঠিটিলা বিট অফিসে। ওখান থেকে দিলখুশা চা-বাগানকে পাশ কাটিয়ে বাজারে। পথে এক ছড়ার পাড়ে দূর থেকে তিনটি আজব প্রাণীকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছিলাম প্রথমবার যখন লাঠিটিলায় গিয়েছিলাম। বেজির সঙ্গে মিল আছে, তবে গায়ে-গতরে বড়। চোখের পাশ থেকে সাদা দাগ নেমে গেছে নিচে। পরে অবশ্য নিশ্চিত হই ওগুলো বেজিরই একটি জাত, কাঁকড়াভূক বেজি। এ ধরনের বেজির কেবল গভীর বনাঞ্চলেই দেখা মেলে।

মূল জঙ্গলে ঢোকার পর ছড়া ধরেও যেতে পারেন। তবে বর্ষার সময় হলে জোকের আক্রমণ থেকে সাবধান। আবার ডাঙার পথ ধরেও চলতে পারবেন। গাছের ডাল দিয়ে বানানো এক সেতু ধরে ছড়া পেরিয়ে আমরা যেমন ঢুকেছিলাম গর্জনসহ বড় গাছের বনে। হঠাৎ বাঁয়ে একটু দূরে গাছের ডালে নড়াচড়া! কাছে যেতেই আবিষ্কার করি চশমা হনুমান।

ছড়াপথে হেঁটে যাওয়া

চলতে চলতে একসময় গভীর বনানীতে চলে আসবেন। পথ হয়ে উঠবে আরও সরু, দুর্গম। এই উঠছে, তো পরমুহূর্তেই নামছে। ডানে অরণ্য, বায়ে খাদ। জংলি গাছের জঙ্গল পথের ওপর এসে জড়িয়ে ধরতে চাইবে পা। সঙ্গে যে গাইড থাকবে, তার থেকে জানবেন মায়া হরিণ, বাঘডাস, শজারু, শিয়ালরা বনে আছে বিস্তর।

ঢালু একটা সরু পথ ধরে একসময় ঢুকবেন ন্যাচারাল ফরেস্টে, মানে আমরা এভাবে ঢুকেছিলাম। প্রাকৃতিক গাছগাছালি বেশি থাকায় জায়গাটি এই নামে পরিচিত। চারদিকে পাহাড়, গহিন আদিম অরণ্য। সব গাছ ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ি গর্জন। খাঁড়া পাথুরে টিলা বেয়ে নেমে আসছে স্বচ্ছ জলের ঝরনা। সেখানে নিচে পানি জমে তৈরি হয়েছে ছোট্ট এক জলাধার। তিন দিকে পাহাড়। সবুজ পাহাড়ের শরীরে চাপালিশ, বনাকসহ হরেক চেনা-অচেনা গাছের জঙ্গল, বিভিন্ন গাছ থেকে নেমে আসা লতা, অদ্ভুত আলো-আঁধারি, গাছপালা ভিজিয়ে বয়ে চলা ঝরনা, ছোট্ট লেক—সব মিলিয়ে প্রকৃতির আশ্চর্য এক রূপ দেখে চমকে উঠবেন। আমি যেমন চমকেছিলাম।

এগোতে চাইলে যে পাথুরে পাহাড় বেয়ে ঝরনা নামছে, সেটায় উঠতে হবে। কোনোমতে উঠতে পারলেও ওপরের জঙ্গল বড় দুর্ভেদ্য। কিন্তু ওখানকার মায়াবী রূপ যেন আপনাকে জাদু করে ফেলবে! ঘন গাছপালার ফাঁক গলে নিচে এসে পড়া ফালি ফালি সূর্যরশ্মি বাড়িয়েছে সৌন্দর্য।

লাঠিটিলায় বুনো ফুলএরপর পাহাড়ে ওঠার সেই অর্থে রাস্তা নেই। টহলের সময় বনকর্মীদের কদাচিৎ ব্যবহার করার ফলে খাঁড়া, সরু একটা পথের মতো তৈরি হয়েছে। হাত-পা ব্যবহার করে দুর্গম সেই পথে ওপরে উঠে পড়তে পারবেন। দুপাশে আশ্চর্য গভীর বনানী, মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে ঝরনা। ওই হিমশীতল পানিপথেই এগোতে গিয়ে হয়তো পেয়ে যাবেন ছোট্ট এক টুকরো নরম মাটিতে মায়া হরিণের পায়ের ছাপ। লাঠিটিলার জঙ্গলে ঘুরতে পারতেন ডাঙা কিংবা ছড়ার বিভিন্ন পথেই। যত ভেতরে ঢুকবেন বন তত দুর্গম।

লাঠিটিলায় কখনো কখনো খবর মেলে চিতা বাঘ আর বুনো কুকুরদের। এমনিতে জঙ্গলটির আয়তন ২০ বর্গকিলোমিটার বা ৫ হাজার একরের কিছু বেশি। তবে লাঠিটিলার জঙ্গল ধরে এমনকি চলে যাওয়া যায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পেছনের জঙ্গলে। তেমনি লাঠিটিলার ওপাশে ভারতের জঙ্গলও পাবেন। বলা চলে, মিলিয়ে-ঝিলিয়ে বড় এলাকায় থাকে বুনো প্রাণীরা।এমনকি বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির ছোট একটি পালও। এখন সিলেট বিভাগের কেবল লাঠিটিলায় দেখা মেলে বুনো হাতির। এমনকি ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে একাধিকবার রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার খবরও মিলেছিল লাঠিটিলা থেকে।

লাঠিটিলায় হতে চলেছে দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক। এটা নিয়ে মনে একটা দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধছে, মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেলে অরণ্য আর বুনো প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো? 

দুধপুকুরিয়ার ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া পাহাড়ি ছড়াদুধপুকুরিয়া একটি বনের নাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ভাইয়ের মুখে দুধপুকুরিয়া নামটা শোনার পরেই গেঁথে গিয়েছিল মনে। এমন সুন্দর নামের যে কোনো বন আছে বাংলাদেশে, এটাই জানতাম না। অনেকটা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বিভিন্ন জায়গা যেমন কুঞ্জপুকুর, দুধসয়ার দ্বীপ—এসবের কথা মাথায় চলে আসছিল। ভেবেছিলাম সময়-সুযোগ পেলে যেতে হবে। হাতিও নাকি বেশ সহজে দেখা মেলে ওখানে। রাঙামাটি-বান্দরবান রাস্তায় বাঙ্গালহালিয়া পেরিয়ে আরও অনেকটা গিয়ে জঙ্গলটা, তবে দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পড়েছে চট্টগ্রামের সীমানায়। কাপ্তাইয়ে বেড়াতে গেলে সেখান থেকে এক সকালে হাজির হয়ে যাই দুধপুকুরিয়ায়।

চারপাশে গাছপালার মাঝখানে এঁকেবেঁকে চলে গেছে পাকা সড়ক। ছড়ার ওপর সুন্দর এক সেতু পাবেন। জায়গাটিকে অনেকে চেনে ডাকবাংলার মোড় নামে। এখানে বন বিভাগের পুরোনো, অব্যবহৃত একটা বাংলো দেখেছিলাম। আমার ধারণা, সেখান থেকেই এই নাম। স্থানীয় দুই কিশোরকে সঙ্গী করে আমি ঢুকেছিলাম অরণ্যে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারবেন অরণ্যটি থেকে।

দুধপুকুরিয়ার অরণ্যেদুধপুকুরিয়ার অরণ্যে ঢুকতেই গাছপালার ছায়ারা আপনাকে ঘিরে ফেলল। কেমন একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব অনুভব করবেন। শিমুল গাছ দেখবেন, গর্জন দেখবেন। হঠাৎ বালুর ওপরে কোনো প্রাণীর পায়ের ছাপ পাবেন, ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবেন এটা মায়া হরিণ কিংবা বুনো শূকরের পায়ের ছাপ।

স্থানীয় কোনো বৃদ্ধের সঙ্গে জঙ্গলপথে দেখা হয়ে গেলে হয়তো স্মৃতি হাতড়ে বলবেন বড় বাঘের গল্প। গরু ঘাড়ে কামড়ে ধরে নিয়ে যেত পাহাড়ের আস্তানায়।

বড় গাছের পাশাপাশি ছোট গাছ, ঝোপ-জঙ্গল নজর কাড়বে। অর্কিডও দেখবেন। তবে চলাফেরা করতে হবে সাবধানে। দুধপুকুরিয়ায় এখন দাপুটে জন্তুর মধ্যে কেবল টিকে আছে হাতিই। আশপাশের বেশ কয়েকটি জঙ্গল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির পাল। তাই দেখা পাবেন এমন গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না।

দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের আয়তন ৪৭ বর্গকিলোমিটারের মতো। বসন্তবাউরি, টিয়া, কাঠঠোকরা, লম্বা লেজের ভিমরাজের দেখা পেতে পারেন। কাঠবিড়ালি, বানর আছে বিস্তর। ছড়ার শীতল জলে নেমে পা ডুবিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলভ্রমণ শেষ করে মূল রাস্তায় বের হয়ে আসতে পারবেন। 

জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ট্রেন যায়

সবার পরিচিত লাউয়াছড়া
ঢাকা থেকে সিলেটে যাচ্ছি আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেসে। পথেই পড়ে আমার নানাবাড়ির স্টেশন হরষপুর। ওই স্টেশন পেরিয়ে আরও অন্তত ঘণ্টা দেড়েক চলার পর হঠাৎ একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল ট্রেন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম বাইরে, ট্রেন ভ্রমণে এই কাজটাই সবচেয়ে আনন্দ নিয়ে করি। চমকে উঠলাম, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে চলে এসেছি। এই অচেনা রাজ্যে ঘন গাছপালার ঠাসবুনন। হাত দশেক দূরে একটা গাছ ভেঙে কাত হয়ে আছে আরেকটার ওপর। এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে যাচ্ছে পাখি। ওদের সঙ্গে সমান তালে ডাকছে পোকামাকড়। এ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। নেই লোকজনের বিরক্তিকর কোলাহল। যতটা সময় ট্রেনটা দাঁড়িয়ে ছিল, মোহাচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। তারপর আবার যেমন হঠাৎ থেমেছিল, তেমনি আচমকা ছেড়ে দিল, তখনই বাস্তবে ফিরলাম। ঘটনাটা বহু বছর আগের। ঢাকায় ফিরে আসার পর জানতে পারি ওটাই লাউয়াছড়া।

লাউয়াছড়া আমার খুব পছন্দের একটি বন। আমার মনে হয় সুন্দরবনের পর এ দেশের পর্যটকেরা সবচেয়ে বেশি চেনে এই বনকেই। তবে এর জনপ্রিয়তা যতটা, সেই তুলনায় অরণ্যটি খুব একটা বড় নয়। এমনিতে মাত্র ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় উদ্যানটি। তবে অরণ্য এলাকা আরও বেশি। বনটির জন্মও প্রাকৃতিকভাবে নয়। যদ্দুর জানি, ব্রিটিশ সরকার উড়োজাহাজ থেকে বীজ ছিটিয়ে এই বন পত্তনের সূচনা করে। কালক্রমে সেটাই পরিণত হয় গহিন অরণ্যে। একসময় কিন্তু দেখার মতো এক বন ছিল লাউয়াছড়া। বিশাল সব মহিরুহের কারণে দিনের বেলাতেই নেমে আসত আঁধার। তখন বাংলাদেশের আরও অনেক বনের মতো লাউয়াছড়ায় বাঘেরা মহাদর্পে ঘুরে বেড়াত।

গাছের ওপর একাকী বসে কে?

প্রকৃতিবিদ নওয়াজেশ আহমদ লাউয়াছড়ায় বাঘ দেখার বর্ণনা দিয়েছেন। রাতে জিপে ভ্রমণের সময় বাঘটা দেখেন তিনি, সেটা বিংশ শতকের ষাটের দশকের ঘটনা। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই পড়ে জেনেছি, ১৯৬২ সালে লাউয়াছড়ায় বাঘ মারেন এক পাকিস্তানি জেনারেল। মাচায় বসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাঘটি মারেন ভদ্রলোক। নওয়াজেশ আহমদের দেখা ওই বাঘটাই মারা পড়েছিল কি না, বলতে পারব না। এখন বাঘ দূরে থাক, এমনকি চা-বাগান এবং ছোট অরণ্যগুলোতেও একসময় ঘুরে বেড়ানো চিতা বাঘের টিকিটাও দেখবেন না এই বনে। তবে খুব ভোরে বের হলে জঙ্গলের ভেতরকার ঘেসো জমিতে মায়া হরিণ দেখতে পাবেন। বুনো শূকর আর অজগরও আছে। আছে উল্লুক, বাঁশভল্লুক, লজ্জাবতী বানরসহ হরেক জাতের বন্যপ্রাণী।

লাউয়াছড়া কেটে চলে গেছে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। এ কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে বেশ কিছু বুনো প্রাণ ঝরে যায় প্রতি বছর। তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে চলাচল করা ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার রাখার অনুরোধ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার পর, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি চিঠি দেয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বন্যপ্রাণী চলাচলের ঝুঁকি কমবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে আগামী ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।

বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মোট ১৪টি দেশের প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতাদের উপস্থিতিতে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই জলবায়ু অধিকারভিত্তিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

সম্মেলনের আগে আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমাবেশের ঘোষণা দেন অ্যাসেম্বলি কমিটির সদস্যসচিব শরীফ জামিল।

‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর লক্ষ্য, প্রস্তুতি, অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি অতিথিসহ দুই দিনের সেশন পরিকল্পনা, র‌্যালি এবং অন্যান্য আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই দিনব্যাপী এই সমাবেশের প্রথম দিন ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ক্লাইমেট র‌্যালিতে অংশগ্রহণ এবং র‌্যালি শেষে ক্লাইমেট জাস্টিজ এসেম্বলি ২০২৫ উদ্বোধন করবেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও ধরার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এই উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

দিনব্যাপী প্রোগ্রামে ৩টি প্লান্যারি সেশন থাকবে। বাংলাদেশে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে আসা ভুক্তভোগীরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেবেন।

দ্বিতীয় দিনে ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় সমাবেশের প্রথম দিনের আলোচনার সারসংক্ষেপ, সুপারিশ ও করণীয় নিয়ে উপস্থাপন করা হবে ‘ড্রাফট অ্যাসেম্বলি ডিক্লারেশন’।

শরীফ জামিল বলেন, ‘প্রান্তিক এবং অপ্রান্তিক সকল মানুষের সচেতনতার মধ্য দিয়েই রূপান্তরের বাস্তবতার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যে এই জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫।’

ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘পরিবেশ ও জলবায়ু বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে, ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের পরিবেশকর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে; যা একটি মহৎ কাজ। কোনো কিছুর বিনিময়ে এ কাজের মূল্যায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু এই ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়ন প্রয়োজন। আমার যে জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ করতে যাচ্ছি, তাতে অনেক সহযোগীর সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে, তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সঠিক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায্যতার ন্যায্য প্রতিফলন পাওয়া সম্ভব।

এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কো-কনভেনর, ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর কো-কনভেনর এম এস সিদ্দিকি, সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক, শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিলা আজিজ এবং জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫ এর সমন্বয়ক এবং সহযোগী সমন্বয়কেরা।

জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫-এর আয়োজক ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা)। সহযোগী আয়োজক সিপিআরডি, কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিসেস, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, মিশনগ্রিন বাংলাদেশ, ব্রাইটার্স, ওএবি ফাউন্ডেশন, এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেবট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অলটারনেটিভ ল কালেকটিভ, আর্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক, ফসিল ফুয়েল নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভ, ফসিল ফ্রি জাপান, গ্রিন কাউন্সিল, জাপান সেন্টার ফর আ সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি, এলডিসি ওয়াচ, মাইনস, মিনারেলস অ্যান্ড পিপল, নেটজভের্ক এনার্জিভেন্ডে, ফিলিপাইন মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট ফর ইকুটেবল ডেভেলপমেন্ট, রিভারফক্স, সিডব্লিউটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল উত্তর-পূর্ব জাপান, সুনামি সতর্কতা জারি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরে। মূল কম্পনের পর বেশ কয়েকটি ছোট আফটারশকও অনুভূত হয়েছে।

ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্য সতর্কতা হিসেবে ‘সুনামি অ্যাডভাইজরি’ জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া সংস্থা সতর্ক করে জানিয়েছে, ঢেউগুলো প্রায় এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে, তাই উপকূলবাসীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে একই অঞ্চলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এতে বহু বাসিন্দা আহত হয়েছেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, দিল্লির অবস্থা বিপজ্জনক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি।

আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। আর শীর্ষে থাকা দিল্লির বায়ুমান ৩৮৫, যা বিপজ্জনক বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভিয়েতনামের হ্যানয়, ভারতের কলকাতা, কুয়েতের কুয়েত সিটি ও পাকিস্তানের লাহোর। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৫৫, ২৪৬, ২১৭ ও ২১১।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় জেঁকে বসেছে শীত, তাপমাত্রা ১৫.৫

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় গত কয়েক দিন ধরেই তাপমাত্রা কমছিল। তবে আজ শুক্রবার শীত বেশ ভালোভাবেই জেঁকে বসেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সকালে সেটি কমে হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাস থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১৩ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ৩৩ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত