Ajker Patrika

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাঁচাতে হবে নদীকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাঁচাতে হবে নদীকে

জীবন-জীবিকার সঙ্গে নদী ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। মানুষের জীবন এবং একই সঙ্গে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদীকে বাঁচিয়ে রাখা অত্যন্ত জরুরি। আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস-২০২২ উদ্‌যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত এক কর্মসূচিতে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। এ সময় ৩০টি নদী ও পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের অংশগ্রহণে বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতীকী কাগজের নৌকা ও কলার ভেলা ভাসানো হয়। 

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। তিনি বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য নদীগুলো রয়েছে। কিন্তু দেশের ৩৫ হাজার কিলোমিটার নদী পথের এখন মাত্র ২ হাজার ৮শ কিলোমিটার অবশিষ্ট রয়েছে। এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে এই অবশিষ্ট পথও বিলীন হয়ে যাবে।

মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, দেশে নদী রক্ষার অনেক আইন আছে, কিন্তু তা বাস্তবায়নের ঘাটতি রয়েছে। নদী কমিশনকে নির্বাহী ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। দেশের নদী উন্নয়নের প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না, সে জন্য সরকারের পাশাপাশি বাপাসহ দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে কাজ করতে হবে। আমরা শিল্পায়ন চাই কিন্তু শিল্পায়ন করতে গিয়ে দেশের নদ-নদী ও পরিবেশকে ধ্বংস করা হবে এ ধরনের শিল্পায়ন কখনই চাই না। 

গুটিকয়েক লোকের স্বার্থে দেশের নদী ও পরিবেশ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের ক্রিমিনাল অ্যাক্টের আওতায় এনে শাস্তির বিধান চালুর দাবি করেন তিনি। ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে অসমাপ্ত উচ্ছেদ কর্মকাণ্ড আবার চালু, পানি আইন দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে সৎ ও যোগ্য জনবল নিয়োগ দিয়ে নির্বিঘ্নে কাজের পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানান জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান। 

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘নদীমাতৃক এই দেশের নদী সংরক্ষণ ও উন্নয়ন দেশের টিকে থাকা ও অগ্রগতির প্রধানতম পূর্বশর্ত। আজ একটি ব-দ্বীপ অঞ্চলের নদী হিসাবে আমাদের একেকটি নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছোট নদী, খাল, প্লাবন অঞ্চল ও অন্যান্য জলাশয়সমূহ সম্পূর্ণরূপে বিলীন হতে চলেছে। সঠিকভাবে নদীর সীমানা চিহ্নিত না করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করার মাধ্যমে দখলদারদের বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদী ও নদীসমূহের সঙ্গে সম্পৃক্ত খাল, প্লাবন অঞ্চল ও জলাশয় সমূহ বেপরোয়াভাবে ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। পানিতে শীতকালে কোন দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকে না, তাই কোন প্রাণের অস্তিত্বও থাকে না।’ 

এ সময় তিনি নদী রক্ষায় আইনসম্মত, সমন্বিত ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। 

নদী রক্ষার এ কর্মসূচিতে আরও সংহতি জানান বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক মিহির বিশ্বাস, গ্রীন ভয়েসের মুখ্য সমন্বয়ক আলমগীর কবির, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, ক্লিন রিভার বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সোহাগ মহাজন, নদী অধিকার মঞ্চের নির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, বারোগ্রাম উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসাইন, বছিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, নিরাপদ চিকিৎসা চাই-এর মহাসচিব উম্মে সালমা, শিশুদের মুক্ত বায়ু সেবন সংস্থার সহসম্পাদক সেলিম হোসেন, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কোষাধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। 

এ ছাড়া দিবসটি উদ্‌যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আঞ্চলিক শাখার উদ্যোগে সোমবার বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাটমোহর, পাবনা, ডিমলা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ভালুকা, যশোর, নড়াইল, খুলনা, বরিশাল, কক্সবাজার, মোংলা ও মহেশখালীতে ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত