Ajker Patrika

হিমালয়ের নিচে মৃত্যুপুরী

হিমালয়ের নিচে মৃত্যুপুরী

পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে সবচেয়ে বেশি হিমবাহ আছে। চারদিকে মহাসাগর থাকায় এসব হিমবাহ ধসের প্রভাব তাৎক্ষণিক ভাবে বোঝা যায় না। তবে হিমালয়ের বিষয়টি কিছুটা আলাদা।

হিমবাহের সংখ্যা হিসেবে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর পরই হিমালয়ের অবস্থান। ইতিমধ্যেই এ পর্বতমালার শত কোটি টন বরফ গলেছেন। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বরফ গলার পরিমাণ নিয়মিত বাড়ছে।

সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডে হিমবাহ ধসে বন্যা হলে ১৮ জন মারা যায়। নিখোঁজ থাকা প্রায় ২০০ জনকেও পরে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এ বিষয়ে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক জেফরি কারজেল ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, ‘উত্তরাখণ্ডের মত বিপর্যয় ঘটলেই আমরা নড়েচড়ে বসি। অধিকাংশ অঞ্চল পর্যবেক্ষণের আওতায় না থাকায় বিপর্যয়ের মাত্রা আন্দাজ করা যাচ্ছে না।’ হিমালয়ে কি পরিমাণ বরফ গলছে তাও কেউ নিশ্চিত নয় বলেও উল্লেখ করেন ভূতাত্ত্বিক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশাল আকারের বরফ খণ্ড পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকলে বা সরু হয়ে এলে তা যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। এতে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা জনপদের বাসিন্দাদের হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে। বরফ গললে হিমবাহের পাশাপাশি পাথরও ধসতে পারে। এতে নদীর প্রবাহ বদলে যেতে পারে। বন্ধ হতে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থা। কোন কোন জনপদ এ ধরণের ঝুঁকিতে রয়েছে তাও অজানা।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)’র গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত হিমালয়ে ১২৭টি ভূমি ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে হিমালয়ের নিচের অঞ্চলকে মৃত্যুপুরী বললে অত্যুক্তি হবে না।

সবচেয়ে বড় ঝুঁকি তৈরি করছে হিমবাহগুলো। পাহাড়ের পাথরের সঙ্গে এই হিমবাহগুলো আর আগের মতো যুক্ত না থাকায় এগুলো ধসে বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এ বিষয়ে নাসার হাইড্রোলজিক্যাল সায়েন্স ল্যাবের প্রধান ডালিয়া ক্রিসবাম বিবিসিকে বলেন, আগে পাহাড়ের পাথরের সঙ্গে হিমবাহগুলোর বরফ লেপটে থাকত। এখন হিমবাহ ধসের পর পাথরগুলো পাহাড়ের গায়ে আলগাভাবে ঝুলে থাকে।

গত কয়েক দশক ধরে বাড়তে থাকা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে এ অঞ্চল। দুই বছর আগে ভারতের টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্যারিস জলবায়ু চুক্তি মেনে চললেও চলতি শতকের মধ্যে এই অঞ্চলে সঞ্চিত হিমবাহের প্রায় ৪০ শতাংশই গলে যাবে।

এ ছাড়া হ্রদের বরফ গলেও বন্যা হতে পারে। এ বিষয় নিয়ে তেমন কোন গবেষণাও হচ্ছে না বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব ইউটার ভূগোলের অধ্যাপক সামার র‍্যাপার।

হিমালয়ের হ্রদের কারণে বন্যা হওয়ার ইতিহাস অনেক পুরনো। এর পরেও এ বিষয়ে আগাম কোন সতর্কবার্তা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্টের বিশেষজ্ঞরা।

হিমালয় ও হিন্দু কুশ অঞ্চলে ৫০ হাজারের বেশি হিমবাহ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০টি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। হিমালয় পর্বতমালা দুর্গম হওয়ায় বাকিগুলো সঠিক ভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাচ্ছে না। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ভূতাত্ত্বিক মোহাম্মদ ফারুক আজম এ মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে ১৫টি নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পর্বতমালাগুলোর মধ্যে হিমালয়ের বয়স সবচেয়ে কম। এখানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল হিসেবে তুষারপাত ও বৃষ্টির ধরনও বদলেছে। এর ওপর হিমবাহ ধসের ঝুঁকি হিমালয়কে করে তুলেছে চরম বিপজ্জনক।

এদিকে ভারত সরকার বিষয়টি নিয়ে উদাসীন। ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অব হিমালয়ান জিওলজির সাবেক ভূতাত্ত্বিক ড. ডি পি দোভাল বলেন,‘২০০৯ সালে হিমবাহ নিয়ে গবেষণার জন্য ইন্ডিয়াস ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব গ্ল্যাসিয়ার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন হয়নি।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, হিমালয়ের ভারতীয় অংশের সঙ্গে সীমান্ত থাকায় চীন ও পাকিস্তানকেও এ নিয়ে ভাবতে হবে। তিন দেশকেই হিমবাহ–সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় করতে হবে। এ ছাড়া ঝুঁকি পর্যবেক্ষণের কোন উপায় নেই বলে মত তাঁদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত