Ajker Patrika

চরমভাবাপন্ন এশিয়ার আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ ও বন্যা হচ্ছে একই সময়ে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১২: ১৯
চরম আবহাওয়া এশিয়ার বেশ কিছু অংশে কেড়ে নিয়েছে কয়েক শতাধিক প্রাণ। ছবি: জাতিসংঘ
চরম আবহাওয়া এশিয়ার বেশ কিছু অংশে কেড়ে নিয়েছে কয়েক শতাধিক প্রাণ। ছবি: জাতিসংঘ

প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত চীন, পাকিস্তান ও ভারত। একই সময় এশিয়ার অন্য দুই দেশ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে। আবহাওয়ার এই চরম রূপ এরই মধ্যে এশিয়ার বেশ কিছু অংশে কেড়ে নিয়েছে কয়েক শতাধিক প্রাণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন চরম আবহাওয়ার মাত্রা আরও ভয়াবহ ও নিয়মিত হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির তুলনায় এশিয়া দ্বিগুণ গতিতে উষ্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জলবায়ু ঝুঁকি সূচক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন দশকে বন্যা, তাপপ্রবাহ ও খরার মতো চরম আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে এশিয়া অঞ্চলের আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার (১.৫ ট্রিলিয়ন পাউন্ড)।

গত মঙ্গলবার জাপানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে গুনমা প্রদেশের ইসেসাকি শহরে। তাপমাত্রা উঠেছে ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৭ ফারেনহাইট)।

চলতি বছরের জুন ও জুলাই মাসেও সর্বকালের সর্বোচ্চ গরমে বিপর্যস্ত হয়েছে দেশটি।

টোকিওর মেডিকেল এক্সামিনার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত তাপপ্রবাহজনিত কারণে অন্তত ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তাপের তীব্রতায় রেললাইন বিকৃত হওয়ার আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ কিছু ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাপানের এক অফিসকর্মী বলেন, ‘আমি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সত্যিই উদ্বিগ্ন। কিন্তু এসি ছাড়া টিকতে পারি না। আমি আসলে জানি না, কী করা উচিত। কোনোভাবে দিন পার করছি।’

গত মাস থেকে জাপানের জরুরি সেবা বিভাগে গরমে অসুস্থ হয়ে সহায়তা চেয়ে ফোনকল আসা বেড়ে গেছে। চরম গরমের কারণে সরকারি দপ্তর ও বিভিন্ন কর্মস্থলে ড্রেস কোড শিথিল করা হয়েছে, যাতে কর্মীরা স্বস্তিতে কাজ করতে পারেন এবং এসির ওপর নির্ভরশীলতা কিছুটা কমানো যায়।

তবে আসছে দিনগুলোতে তীব্র এই গরম কিছুটা কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশটির কিছু অঞ্চলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৃষ্টি এবং অল্প কিছুটা ঠান্ডা বাতাস মানুষকে তীব্র গরম থেকে সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় জুলাই মাসে টানা ২২টি রাত তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকার রেকর্ড হয়েছে, যেগুলোকে ‘ট্রপিকাল নাইট’ বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এশিয়ার অন্যান্য দেশও তীব্র গরমে পুড়ছে। ভিয়েতনামের কিছু অংশে দেখা যাচ্ছে নজিরবিহীন গরম। হ্যানয়ে এই আগস্টে প্রথমবারের মতো তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। এএফপিকে ভিয়েতনামের একজন নির্মাণ শ্রমিক নাম জানান, ‘গত কয়েক দিন ধরে রাজধানী শহরটা যেন আগুনে পোড়া একটা তাওয়া।’

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় যখন তীব্র গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করছে, তখন চীনের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সাংহাই থেকে বেইজিং পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ।

টানা ভারী বৃষ্টিপাতে দক্ষিণ চীনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গুয়াংডং প্রদেশের রাজধানী গুয়াংজুতে শত শত ফ্লাইট বাতিল কিংবা বিলম্বিত হয়েছে।

গতকাল বুধবার ভূমিধস ও নতুন বন্যার আশঙ্কায় এলাকায় ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কারে হিমশিম খাচ্ছিলেন জরুরি সেবাকর্মীরা।

ইতিমধ্যে প্রদেশটির সড়কগুলোর জলাবদ্ধতা মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি করছে।

বছরের এই সময় দক্ষিণ চীনে এমন বৃষ্টিপাত প্রায়শই হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ঘন ঘন ট্রপিক্যাল স্টর্ম বা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বেড়েছে।

মাত্র গত সপ্তাহেই পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে একসঙ্গে তিনটি ঘূর্ণিঝড় সক্রিয় ছিল। অথচ জুন মাসের আগ পর্যন্ত এ ধরনের ঝড়ের কার্যকলাপ ছিল প্রায় নেই বললেই চলে।

গত মাসের শেষ দিকে বেইজিংয়ের পার্বত্য এলাকা ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়। এতে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটে। একটি বৃদ্ধাশ্রমের ৩১ বাসিন্দাও এতে মারা যান।

পাহাড়ি এলাকা ভূমিধসের ঝুঁকি থাকায় ভারী বৃষ্টি সেখানে বিশেষভাবে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। আর জনবহুল নগর অঞ্চলে হঠাৎ আসা ফ্ল্যাশ ফ্লাড বা আকস্মিক বন্যা স্থানীয়দের সম্পূর্ণ প্রস্তুতিহীন অবস্থায় ফেলে দেয়। বাড়িয়ে তোলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা।

ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখণ্ডে হঠাৎ ভয়াবহ ফ্ল্যাশ ফ্লাড সৃষ্টি হয়। এতে এখন পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।

পাকিস্তানেও বৃষ্টিজনিত ঘটনায় জুন মাস থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে শতাধিক শিশু রয়েছে। প্রবল বর্ষণে দেশটির বহু ঘরবাড়ি এবং স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, পাঞ্জাব প্রদেশে স্কুলগুলোর অন্তত এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার হংকংয়ে ৩৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা শহরটির ইতিহাসে ১৮৮৪ সালের পর আগস্ট মাসে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। হংকংয়ে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ২ হাজার ৪০০ মিলিমিটার, যার বেশিরভাগই জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাসের মধ্যে হয়ে থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত