Ajker Patrika

ধারণার চেয়ে দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে পৃথিবী, কারণটা এখন জানেন বিজ্ঞানীরা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪: ৪৪
বিজ্ঞানীরা বলছেন বিশ্বের অস্বাভাবিক উষ্ণ হয়ে ওঠার পেছনে মেঘের একটা ভূমিকা আছে। ছবি: এএফপি
বিজ্ঞানীরা বলছেন বিশ্বের অস্বাভাবিক উষ্ণ হয়ে ওঠার পেছনে মেঘের একটা ভূমিকা আছে। ছবি: এএফপি

গত বছর ছিল বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর। মহাসাগরের পানির তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে, হিমবাহগুলো বিপজ্জনক গতিতে গলছে। এসব ঘটনা বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করে তুলেছিল।

তাঁরা জানেন, অস্বাভাবিক এই উষ্ণতার পেছনে কয়েকটি নিয়ামক কাজ করছে। এর মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস দূষণ এবং প্রাকৃতিক জলবায়ুতে এল নিনোর প্রভাব বিস্তার অন্যতম। তবে শুধু এই কারণগুলো এই অস্বাভাবিক দ্রুত তাপমাত্রা বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দিতে পারছিল না।

গত বৃহস্পতিবার সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলেছেন, তারা ধাঁধার হারিয়ে যাওয়া ওই টুকরোটি খুঁজে পেয়েছেন, সেটা মেঘ।

গবেষণা অনুযায়ী, সাম্প্রতিক তাপমাত্রা বাড়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে সমুদ্রের ওপর নিম্নস্তরের মেঘের অভাব। আর এই অনুসন্ধান ভবিষ্যতের উষ্ণায়নের জন্য উদ্বেগজনক বার্তাই দিচ্ছে।

জার্মানির আলফ্রেড ভেগনা ইনস্টিটিউটের জলবায়ু পদার্থবিজ্ঞানী এবং প্রতিবেদনটির একজন লেখক হেলগে গসলিন বলেন, সহজ ভাষায় নিম্ন স্তরের কম উজ্জ্বল মেঘের উপস্থিতি পৃথিবীকে ‘অন্ধকার’ করে তোলে, যা একে বেশি সূর্যের আলো শোষণের সুযোগ করে দিচ্ছে।

এ ঘটনা ‘অ্যালবেডো’ নামে পরিচিত। এটি সেই প্রক্রিয়াকে বোঝায় যেখানে পৃথিবীর পৃষ্ঠ সূর্যের শক্তিকে মহাকাশে প্রতিফলিত করে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৭০-এর দশক থেকে পৃথিবীর অ্যালবেডো ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। এর একটি বড় কারণ হলো উজ্জ্বল বরফ এবং হালকা রঙের তুষার গলে যাওয়া, যা গাঢ় রঙের ভূমি ও জল উন্মোচন করছে। এগুলো সূর্যের বেশি শক্তি শোষণ করে, ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে।

নিম্নস্তরের মেঘও এই প্রভাবকে বাড়িয়ে তোলে, কারণ এগুলো সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে মহাকাশে ফেরত পাঠানোর কাজ করে। অর্থাৎ, এ ধরনের মেঘ কমে যাওয়াও ‘অ্যালবেডো’ কমিয়ে দিচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা নাসার স্যাটেলাইট ডেটা, আবহাওয়ার তথ্য এবং জলবায়ু মডেল পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, নিম্নস্তরের মেঘের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে গত বছর পৃথিবীর অ্যালবেডো (সূর্যের আলো প্রতিফলিত করার ক্ষমতা) রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছিল। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশেষ করে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের কিছু অংশে মেঘের এই পরিমাণে বড় ধস নেমেছে।

সিএনএনকে গবেষক হেলগে গসলিন বলেন, গত বছরের এ ঘটনা নিম্ন স্তরের মেঘের এক দশক ধরে চলা পতনের একটি অংশ।

গবেষণা এখনো নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না কেন এটা ঘটছে। গসলিন বলেন, ‘এটি অত্যন্ত জটিল একটি বিষয় এবং এর কারণগুলো আলাদা করা খুব কঠিন।’

গবেষণা বলছে, সাম্প্রতিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা সমুদ্রের ওপরে নিম্নস্তরের মেঘের অভাব। ছবি: এএফপি
গবেষণা বলছে, সাম্প্রতিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা সমুদ্রের ওপরে নিম্নস্তরের মেঘের অভাব। ছবি: এএফপি

তিনি মনে করেন, এটি সম্ভবত বিভিন্ন কারণে মিলিত প্রভাব। এর একটি হতে পারে পরিবহনশিল্পে সালফার নির্গমন কমানোর জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ। এগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও এর আগে এ ধরনের দূষণ মেঘকে উজ্জ্বল করত এবং পৃথিবীকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করত।

প্রাকৃতিক জলবায়ু বৈচিত্র্য, যেমন মহাসাগরের পরিবর্তিত অবস্থা এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে হেলগে গসলিন আরও একটি উদ্বেগজনক কারণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, তা হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিজেই।

নিম্নস্তরের মেঘগুলো সাধারণত ঠান্ডা এবং আর্দ্র নিম্ন বায়ুমণ্ডলে ভালোভাবে টিকে থাকে। কিন্তু পৃথিবীর পৃষ্ঠ যখন উষ্ণ হতে থাকে, তখন এই মেঘগুলো পাতলা হয়ে যেতে পারে বা পুরোপুরি বিলীন হয়ে যেতে পারে। এতে একটি জটিল প্রতিক্রিয়া চক্র তৈরি হয়, যেখানে উষ্ণায়নের কারণে মেঘ কমে যায়, আর মেঘের এই অভাব আবার উষ্ণায়নকে ত্বরান্বিত করে।

যদি এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে বিশ্বের উষ্ণ হয়ে ওঠার যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, পরিস্থিতি তাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে। গসলিং বলছেন, ‘আমাদের আরও তীব্র উষ্ণায়নের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।’

লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানী মার্ক জালিঙ্কা, যিনি এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন না, বলেন, ‘মেঘের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মেঘ মূলত পৃথিবীর জন্য সানস্ক্রিনের মতো কাজ করে।’

তিনি সিএনএনকে বলেন, মেঘ আচ্ছাদনে ছোট কোনো পরিবর্তনও পৃথিবীর ‘অ্যালবেডো’তে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী টাপিও স্নাইডার বলেন, এই গবেষণার সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিকটি হলো, যদি মেঘের পরিমাণ কমে যাওয়ার বড় কারণ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হয়, তাহলে ভবিষ্যতে উষ্ণায়ন পূর্বাভাসের চেয়ে আরও বেশি হতে পারে।

মেঘ দেখতে সহজ আর সাধারণ মনে হলেও এগুলো অত্যন্ত জটিল। বিজ্ঞানীরা এখনো মেঘের আচরণ পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। গসলিন এটিকে জলবায়ু বিজ্ঞানের অন্যতম ‘বড় মাথাব্যথা’ বলে উল্লেখ করেছেন।

তবে মেঘ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ, জালিঙ্কা বলেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এটি আসলে নির্ধারণ করে যে ভবিষ্যতে উষ্ণায়নের মাত্রা কতটা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নয়াদিল্লিতে নতুন হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ, ৩ মাস সময় নিল ভারত

খেজুরে অতি মুনাফা, হতাশ ক্রেতা

চাপে পড়ে ৫টি বাস রিকুইজিশন দিয়েছেন পিরোজপুরের ডিসি, সরকারের হস্তক্ষেপ নেই: প্রেস সচিব

কলাবাগানে সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের মরদেহ উদ্ধার

রাতে স্বামীর জন্মদিন উদ্‌যাপন, সকালে নদীতে মিলল নববধূর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত