ইশতিয়াক হাসান

সাঙ্গু নদী ধরে চলেছে নৌকা। আন্ধারমানিকের কাছে হঠাৎ নদীর পাশে ঝোপের মধ্যে দেখা গেল অতিদুর্লভ, বিষধর একটি সাপ। শরীরের বেশির ভাগ সবুজ, তবে চোখ আর লেজ লাল। পোপস পিট ভাইপার। সরীসৃপটিকে শান্তিতে থাকতে দিয়ে কিছুটা এগোনোর পর নৌকার ওপরে তাকাতেই আঁতকে উঠলেন। পাহাড়ের ঢালে নদীর দিকে হেলে পড়া এক গাছের ডালে পেঁচিয়ে আছে বিশালাকায় একটা গোলবাহার অজগর বা রেটিকুলেটেড পাইথন। পেটটা ভুলে আছে বেঢপভাবে। কিছুক্ষণ আগেই হয়তো শিকার ধরে খেয়েছে।
রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খানের। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে রোমাঞ্চের নেশায়, ঝরনা দেখতে ঘুরে বেড়ান অনেক তরুণই। তবে দুই যুগ ধরে এই শিক্ষক পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়ানোর বড় কারণ বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান, অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। আর তাঁর সেই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাণবৈচিত্র্যের সন্ধানে’ নামে দুই মলাটের মধ্যে বন্দী করেছে প্রথমা প্রকাশন। বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪৫০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন মাহবুব রহমান।
কখনো রাঙামাটির দুর্গম কাসালং সংরক্ষিত অরণ্যে কিংবা কাপ্তাইয়ের সীতা পাহাড়, রাম পাহাড়, কখনো আবার বান্দরবানের সাঙ্গু-মাতামুহুরী বা কিরস তংয়ের গহিন অরণ্যে চষে বেড়িয়েছেন। পাহাড়ি দুরারোহ পথে ১০-১২ ঘণ্টা হাঁটতে হয়েছে বড় কোনো যাত্রাবিরতি ছাড়াই। দেশের জন্য নতুন এমন বেশ কয়েকটি প্রাণীও আবিষ্কার করেছেন পাহাড়ের গহিনের এসব রোমাঞ্চকর অভিযানের সময়। ২০০৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই যুগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে ১০টি অধ্যায়ে ভাগ করে বর্ণনা করেছেন লেখক। পাঠকদের জন্য বাড়তি পাওনা অরণ্য-পাহাড় আর বন্যপ্রাণীর চমৎকার কিছু ছবি।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ ফরেস্ট। ১ হাজার ৬৪৫ বর্গকিলোমিটারে বনটির বর্তমানে ৪০০ বর্গকিলোমিটার ভালো বন অবশিষ্ট আছে বলে জানিয়েছেন লেখক মনিরুল খান। কাসালং বনে লেখক গিয়েছেন মোটমাট চারবার। আর এই বনে রোমাঞ্চকর অভিযানের বর্ণনা পাবেন ‘কাসালংয়ের অজানা অরণ্যে’ অধ্যায়টিতে। এর মধ্যে বনের গভীরে ঢুকতে পেরেছেন দুবার। প্রথম এখানকার গহিন অরণ্যে প্রবেশ করতে পারেন মনিরুল খান ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। ঢাকা থেকে সঙ্গে ছিল তাঁর ছাত্র আশিকুর রহমান। পরে অবশ্য মাসালং থেকে গাইড হিসেবে যোগ দেন আরও দুজন।
জলপথে যাওয়া সহজ হলেও সেবার কাসালংয়ের অরণ্যে তাঁদের যাত্রাটা হয় পায়ে হেঁটে। লেখকের বর্ণনায় দেখি মান্দিরছড়ার পরে ঘন বনের শুরু। দুর্গম যাত্রায় কখনো পাহাড় বেয়ে উঠতে হয়, কখনো আবার চলতে হয় ছড়া ধরে। এভাবে চলতে চলতেই তাঁরা পৌঁছান লালু-কালু এলাকার পূর্ব দিকে। এখান থেকে পশ্চিমে দেখতে পাচ্ছিলেন এই এলাকার সবচেয়ে বড় ও গভীর বনানীর পাহাড় ভুলংতলি। বইটি পড়ার সময় মনে হবে আপনিও গহিন কোনো অরণ্যপথে হাঁটছেন লেখকদের ছোট দলটির একজন সদস্য হয়ে। গাইডদের বাঁশ কেটে তৈরি করা চোঙে মাছ আর পাহাড়ি কন্দ যোগ করে রান্না করে বুনো স্বাদের সেই তরকারির স্বাদ পাচ্ছেন। পথে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা হলে যখন তাঁরা বলে দুই বছর আগে (২০০৯) নাবা এলাকায় বাঘ দেখেছে, তখন শিহরিত হবেন আপনিও।
সেই ভ্রমণে ফিরতি যাত্রা ছিল বেশ মজার। মাসালং নদীর একটি শাখায় বাঁশের চালি ভাসিয়ে আনা হচ্ছিল। এতে উঠে তাঁরা চলে আসেন মাসালং বাজারে।
পরের সফরটি এক দশক পরে, ২০২১ সালে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ের খণ্ড বনগুলো করিডরের মাধ্যমে জোড়া লাগানোর বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করে বন বিভাগ। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইইউসিএনকে। এ সমীক্ষার অংশ হিসেবেই অন্য গবেষক, বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যান মনিরুল খান। চারটি নৌকায় চেপে, সঙ্গে প্রয়োজনীয় চাল-ডাল নিয়ে কাসালং নদী ধরে মাসালং বাজার থেকে রওনা দেন তাঁরা। একপর্যায়ে লালু পৌঁছান তারা। লেখকের ভাষায়, এখান থেকেই গহিন বনের শুরু, যেটা উজানের দিকে চলে গেছে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
লেখক বলেছেন, কাসালংয়ের গহিন বনে কোনো পাড়া নেই। তবে মানুষের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ছাউনি আছে। নৌকা থেকে নেমে গহিন এক ছড়া ধরে যাওয়ার সময় আপনিও মনে মনে সঙ্গী হয়ে যাবেন অভিযাত্রীদের। আচমকা আপনার দেখা হয়ে যাবে ভালুকের সঙ্গে চেহারার মিল আছে এমন একধরনের গাছ খাটাশ, বিন্টুরং বা বাঁশ ভালুকের। ছড়া থেকে ফিরে এসে লেখক আরও দুজনের সঙ্গে রাত কাটিয়েছিলেন একটি নৌকায়। রাতে প্রবল বৃষ্টিতে দেখা গেল নৌকা জলে ভরে যাচ্ছে। তাঁরা লেগে গেলেন পানি সেচতে। এমনই নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয় এই ভ্রমণে। ফেরার পথে আবিষ্কার করে বসেন বাংলাদেশের জন্য ময়নার এক নতুন প্রজাতি গোল্ডেন ক্রেস্টেড বা সোনাঝুঁটি ময়না।
মজার ঘটনা, কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যেতে হলে সাজেক যাওয়ার পথেই নামতে হবে আপনাকে। আর এই অধ্যায়টিতে সাজেক ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেছেন। পুরোনো সেই বুনো সাজেক আর এখনকার কংক্রিটের অট্টালিকায় ভরা সাজেক দুটোর তুলনা করতে গিয়ে লেখককে অনেকটাই দিশেহারা মনে হয়েছে। তিনি আফসোস করেন, এখন সাজেকে সবাই সুখী, তবে দুঃখী শুধু সেই হারিয়ে যাওয়া নির্মল সবুজ পাহাড়, কংক্রিট আর আবর্জনায় ঢাকা পড়ছে যেটি।
‘বন্য হাতির মুখোমুখি’ অধ্যায়ে আবার হাতির মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার একাধিক রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। ২০০২ সালে যেমন রাঙিপাড়ায় গিয়েছিলেন। তিন দিকে জলবেষ্টিত একটি পাহাড়ে উঠেছিলেন। ভেতরে ঢোকার পথ কেবল একটি। ঝোপ-জঙ্গলে ঠাসা পাহাড়টিতে হঠাৎ হাতির কাছে চলে গিয়ে বিপদে পড়ার আশঙ্কা বারো আনা। একপর্যায়ে হাতির ডাল ভাঙার শব্দ শুনলেন। একটু পরেই গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা পেলেন বিশালদেহী ঐরাবতদের—একটি-দুটি নয়, সাতটি। একপর্যায়ে আবিষ্কার করলেন, লতা-পাতা খেতে খেতে তাদের বেরোনোর পথটাই আটকে দাঁড়িয়েছে হাতির পাল। একপর্যায়ে হাতিগুলো বনের ভেতরে ঢুকে গেল, তাদের শব্দও থেমে গেল।
একটু অপেক্ষা করে যাওয়া নিরাপদ মনে করে সরু পথটা ধরে একজনের পেছনে আরেকজন লাইন ধরে এগোলেন। এই জায়গায় পথ ৯০ ডিগ্রি বাঁক নিয়েছে। বাঁক ঘুরেই আঁতকে উঠলেন। ঠিক সামনে পাঁচ মিটার দূরে পথের ওপর দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড এক হাতি। হাতিটা বিরক্ত হয়ে জোরে একটা শ্বাস নিতেই অন্য হাতিদের শব্দে জেগে উঠল বনানী। তাঁরা ঘুরে দিলেন দৌড়। পেছনে জঙ্গল ভেঙে ছুটে আসছে হাতির পাল। তারপর কী ঘটল জানার জন্য বইটি পড়তে হবে আপনাকে।
বান্দরবানের দুর্গমে মিয়ানমার সীমান্তে সাঙ্গু-মাতামুহুরী বন। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে বড় মোদকের দিকের এক অভিযানের কাহিনি পড়ে বনটির প্রতি আগ্রহ চূড়ায় গিয়ে ঠেকে মনিরুল খানের। এনায়েত মাওলাদের অভিযানটি ছিল ১৯৫৭ সালের। মনিরুল খান ২০০৫ সালে প্রথম যান সাঙ্গুর গহিনে। তারপর ২০০৮ ও ২০২১ সালে সাঙ্গু-মাতামুহুরীর দিকে আবার অভিযানে যান। আর পাঠক যেন লেখকের সঙ্গে চলে যাবেন অন্য এক পৃথিবীতে। ওই যে লেখার শুরুতে সাঙ্গু নদীর ধারে গোলবাহার অজগর দেখার যে বর্ণনা দিয়েছিলাম, সেটা কিন্তু প্রথমবার সাঙ্গু রিজার্ভ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে এই ভ্রমণ রোমাঞ্চ ও বনপ্রেমী পাঠকদের মন কেড়ে নেবে।
কখনো নদীর দুই পাড়ের ঘন পাহাড়ি বন, উঁচু ট্রি-ফার্ন ও লতানো বাঁশসহ নানা উদ্ভিদ লেখকের সঙ্গে আপনাকেও যেন হারানো পৃথিবীর কথা মনে করিয়ে দেবে। একপর্যায়ে চমকে গিয়ে আবিষ্কার করবেন লেখকও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে গাইডের সঙ্গে উচ্চিংড়া নামে একধরনের পোকার ভাজি ও কুমড়াপাতা সিদ্ধ দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। সাঙ্গু নদীর উজানে শেষ গ্রামটি পেরিয়ে লেখকের সঙ্গে রওনা দেবেন লিক্রি পাহাড়ের গহিন অরণ্যের দিকে, যেখানে বন্যপ্রাণীদের আড্ডাখানা। চন্দইপাড়ার গ্রামপ্রধান যখন বলবেন ওই পাহাড়ে আগের বছর (২০০৪) রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও কালো চিতার মুখোমুখি হয়েছেন, তখন রোমাঞ্চে গা কাঁটা দেবে আপনার। তারপর লিক্রি পাহাড় ও ইয়ামবং পাহাড় পেরিয়ে দশ-এগারো ঘণ্টার এক যাত্রা করেন লেখক এবং তাঁর সঙ্গীরা পাহাড়ের অন্য পাশে অর্থাৎ আলীকদমের দিকে পৌঁছাতে।
বইটির অন্যান্য অধ্যায়গুলো কম রোমাঞ্চকর নয়। কখনো লেখক বন্যপ্রাণী সন্ধানে চলে যান দেশে সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলো যেমন সাকা হাকং, কেওক্রাডং কিংবা তাজিংডংয়ের দিকে। কখনো আবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার-ভারতের সীমানা চিহ্নিত করা তিন মাথা পিলার এলাকায়। কখনো আবার লেখকের সঙ্গে দুঃখ ভারাক্রান্ত হবে আপনার মন। যেমন কেওক্রাডং পাহাড় পেরিয়ে জাদিপাই ঝরনায় যাওয়ার আগে জাদিপাই গ্রামে গিয়ে দেখেন ছোট্ট এক মেয়ে শিশুর মৃতদেহ কফিনে ভরার প্রস্তুতি চলছে। বেশ কিছুদিন ম্যালেরিয়ায় ভুগে মৃত্যু হয়েছে মেয়েটির।
কখনো কখনো লেখকের সঙ্গে দেশের জন্য নতুন কোনো প্রাণী আবিষ্কারের আনন্দ পাবেন। ক্যাপিটাল হিল পেরিয়ে একটি বনে গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়াতে দেখেন খুব ছোট এক ধরনের কাঠবিড়ালিকে। সাধারণত দেখা যাওয়া বাদামি কাঠবিড়ালির অর্ধেক, নাম হিমালয়ান স্ট্রাইপড স্কুইরেল। বাংলাদেশ এই কাঠবিড়ালি দেখা যাওয়ার এটাই প্রথম রেকর্ড।
এ ছাড়া ‘কিরস তং যেন হারানো পৃথিবী’তে কিরস তং বনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তুলনা করেছেন স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের বিখ্যাত বই লস্ট ওয়ার্ল্ডের সেই হারানো পৃথিবীর সঙ্গে। চিম্বুক পাহাড়শ্রেণীর মাঝামাঝি অবস্থিত কিরস তংয়ের শত শত বছরের পুরোনো বনের আবহ পেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন লেখক। বারবার ছুটে গিয়েছেন সেখানে। তবে মানুষের লোভের কারণে আদিম এই অরণ্য আর কত দিন টিকে থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এখানে ২০১৯ সালে চিতা বাঘের তাজা পায়ের ছাপ পান লেখক। বনটি তাঁর এত প্রিয় যে অধ্যায়ের শেষ করেন এভাবে, যত দিন আমি টিকে আছি এই ধরনীতে, তত দিন বারবার ফিরে যাব কিরস তংয়ের কোলে।
এ ছাড়াও অন্যান্য অধ্যায়গুলোতে কখনো মনিরুল খানকে দেখা যায় দেও হাঁসের খোঁজে পাবলাখালী-রাঙিপাড়ার পাহাড়ের চষে বেড়াতে, কখনো ফ্রান্সিস বুকাননের পথ ধরে রাঙামাটির কাপ্তাই কিংবা বরকলের গহিন অরণ্যে চলে যেতে। স্কটিশ জরিপকারী বুকানন এসব এলাকা ভ্রমণ করেছিলেন সোয়া দুই শ বছর আগে, ১৭৮৩ সালে। আবার বগা লেকের পাশে অ্যালেংথং পাহাড়ে বাদুড়ের গুহায় ভ্রমণ কিংবা রাইংক্ষিয়ং রিজার্ভ ফরেস্টে তাঁর রোমাঞ্চকর অভিযানও মুগ্ধ করবে পাঠককে।
বইটি পড়তে পড়তে বন্যপ্রাণীপ্রেমীরা কখনো চমকিত হবেন লেখকের সঙ্গে নিকট অতীতে পাহাড়ি বনে বাঘ দেখা যাওয়ার খবর শুনে। কখনো আবার মন কেঁদে উঠবে বাঘ-হরিণ কিংবা অন্য কোনো বিপন্ন বন্যপ্রাণী শিকারের খবর শুনে, অরণ্য ধ্বংসের বৃত্তান্ত পড়ে।
সবকিছু মিলিয়ে তাই বলা যায় শুধুমাত্র বন্যপ্রাণীপ্রেমী নয় পাহাড়ে-জঙ্গল-ঝরনা যাদের পছন্দ সেসব অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদেরও ভালো লাগবে বইটি। আর যেসব পাহাড়-অরণ্যপ্রেমী নানা ব্যস্ততায় সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণে যেতে পারছেন না তাঁরাও কয়েকটা ঘণ্টার জন্য হারিয়ে যেতে পারবেন রাঙামাটি-বান্দরবানের গহিনে, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে।

সাঙ্গু নদী ধরে চলেছে নৌকা। আন্ধারমানিকের কাছে হঠাৎ নদীর পাশে ঝোপের মধ্যে দেখা গেল অতিদুর্লভ, বিষধর একটি সাপ। শরীরের বেশির ভাগ সবুজ, তবে চোখ আর লেজ লাল। পোপস পিট ভাইপার। সরীসৃপটিকে শান্তিতে থাকতে দিয়ে কিছুটা এগোনোর পর নৌকার ওপরে তাকাতেই আঁতকে উঠলেন। পাহাড়ের ঢালে নদীর দিকে হেলে পড়া এক গাছের ডালে পেঁচিয়ে আছে বিশালাকায় একটা গোলবাহার অজগর বা রেটিকুলেটেড পাইথন। পেটটা ভুলে আছে বেঢপভাবে। কিছুক্ষণ আগেই হয়তো শিকার ধরে খেয়েছে।
রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খানের। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে রোমাঞ্চের নেশায়, ঝরনা দেখতে ঘুরে বেড়ান অনেক তরুণই। তবে দুই যুগ ধরে এই শিক্ষক পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়ানোর বড় কারণ বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান, অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। আর তাঁর সেই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাণবৈচিত্র্যের সন্ধানে’ নামে দুই মলাটের মধ্যে বন্দী করেছে প্রথমা প্রকাশন। বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪৫০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন মাহবুব রহমান।
কখনো রাঙামাটির দুর্গম কাসালং সংরক্ষিত অরণ্যে কিংবা কাপ্তাইয়ের সীতা পাহাড়, রাম পাহাড়, কখনো আবার বান্দরবানের সাঙ্গু-মাতামুহুরী বা কিরস তংয়ের গহিন অরণ্যে চষে বেড়িয়েছেন। পাহাড়ি দুরারোহ পথে ১০-১২ ঘণ্টা হাঁটতে হয়েছে বড় কোনো যাত্রাবিরতি ছাড়াই। দেশের জন্য নতুন এমন বেশ কয়েকটি প্রাণীও আবিষ্কার করেছেন পাহাড়ের গহিনের এসব রোমাঞ্চকর অভিযানের সময়। ২০০৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই যুগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে ১০টি অধ্যায়ে ভাগ করে বর্ণনা করেছেন লেখক। পাঠকদের জন্য বাড়তি পাওনা অরণ্য-পাহাড় আর বন্যপ্রাণীর চমৎকার কিছু ছবি।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ ফরেস্ট। ১ হাজার ৬৪৫ বর্গকিলোমিটারে বনটির বর্তমানে ৪০০ বর্গকিলোমিটার ভালো বন অবশিষ্ট আছে বলে জানিয়েছেন লেখক মনিরুল খান। কাসালং বনে লেখক গিয়েছেন মোটমাট চারবার। আর এই বনে রোমাঞ্চকর অভিযানের বর্ণনা পাবেন ‘কাসালংয়ের অজানা অরণ্যে’ অধ্যায়টিতে। এর মধ্যে বনের গভীরে ঢুকতে পেরেছেন দুবার। প্রথম এখানকার গহিন অরণ্যে প্রবেশ করতে পারেন মনিরুল খান ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। ঢাকা থেকে সঙ্গে ছিল তাঁর ছাত্র আশিকুর রহমান। পরে অবশ্য মাসালং থেকে গাইড হিসেবে যোগ দেন আরও দুজন।
জলপথে যাওয়া সহজ হলেও সেবার কাসালংয়ের অরণ্যে তাঁদের যাত্রাটা হয় পায়ে হেঁটে। লেখকের বর্ণনায় দেখি মান্দিরছড়ার পরে ঘন বনের শুরু। দুর্গম যাত্রায় কখনো পাহাড় বেয়ে উঠতে হয়, কখনো আবার চলতে হয় ছড়া ধরে। এভাবে চলতে চলতেই তাঁরা পৌঁছান লালু-কালু এলাকার পূর্ব দিকে। এখান থেকে পশ্চিমে দেখতে পাচ্ছিলেন এই এলাকার সবচেয়ে বড় ও গভীর বনানীর পাহাড় ভুলংতলি। বইটি পড়ার সময় মনে হবে আপনিও গহিন কোনো অরণ্যপথে হাঁটছেন লেখকদের ছোট দলটির একজন সদস্য হয়ে। গাইডদের বাঁশ কেটে তৈরি করা চোঙে মাছ আর পাহাড়ি কন্দ যোগ করে রান্না করে বুনো স্বাদের সেই তরকারির স্বাদ পাচ্ছেন। পথে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা হলে যখন তাঁরা বলে দুই বছর আগে (২০০৯) নাবা এলাকায় বাঘ দেখেছে, তখন শিহরিত হবেন আপনিও।
সেই ভ্রমণে ফিরতি যাত্রা ছিল বেশ মজার। মাসালং নদীর একটি শাখায় বাঁশের চালি ভাসিয়ে আনা হচ্ছিল। এতে উঠে তাঁরা চলে আসেন মাসালং বাজারে।
পরের সফরটি এক দশক পরে, ২০২১ সালে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ের খণ্ড বনগুলো করিডরের মাধ্যমে জোড়া লাগানোর বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করে বন বিভাগ। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইইউসিএনকে। এ সমীক্ষার অংশ হিসেবেই অন্য গবেষক, বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যান মনিরুল খান। চারটি নৌকায় চেপে, সঙ্গে প্রয়োজনীয় চাল-ডাল নিয়ে কাসালং নদী ধরে মাসালং বাজার থেকে রওনা দেন তাঁরা। একপর্যায়ে লালু পৌঁছান তারা। লেখকের ভাষায়, এখান থেকেই গহিন বনের শুরু, যেটা উজানের দিকে চলে গেছে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
লেখক বলেছেন, কাসালংয়ের গহিন বনে কোনো পাড়া নেই। তবে মানুষের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ছাউনি আছে। নৌকা থেকে নেমে গহিন এক ছড়া ধরে যাওয়ার সময় আপনিও মনে মনে সঙ্গী হয়ে যাবেন অভিযাত্রীদের। আচমকা আপনার দেখা হয়ে যাবে ভালুকের সঙ্গে চেহারার মিল আছে এমন একধরনের গাছ খাটাশ, বিন্টুরং বা বাঁশ ভালুকের। ছড়া থেকে ফিরে এসে লেখক আরও দুজনের সঙ্গে রাত কাটিয়েছিলেন একটি নৌকায়। রাতে প্রবল বৃষ্টিতে দেখা গেল নৌকা জলে ভরে যাচ্ছে। তাঁরা লেগে গেলেন পানি সেচতে। এমনই নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয় এই ভ্রমণে। ফেরার পথে আবিষ্কার করে বসেন বাংলাদেশের জন্য ময়নার এক নতুন প্রজাতি গোল্ডেন ক্রেস্টেড বা সোনাঝুঁটি ময়না।
মজার ঘটনা, কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যেতে হলে সাজেক যাওয়ার পথেই নামতে হবে আপনাকে। আর এই অধ্যায়টিতে সাজেক ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেছেন। পুরোনো সেই বুনো সাজেক আর এখনকার কংক্রিটের অট্টালিকায় ভরা সাজেক দুটোর তুলনা করতে গিয়ে লেখককে অনেকটাই দিশেহারা মনে হয়েছে। তিনি আফসোস করেন, এখন সাজেকে সবাই সুখী, তবে দুঃখী শুধু সেই হারিয়ে যাওয়া নির্মল সবুজ পাহাড়, কংক্রিট আর আবর্জনায় ঢাকা পড়ছে যেটি।
‘বন্য হাতির মুখোমুখি’ অধ্যায়ে আবার হাতির মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার একাধিক রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। ২০০২ সালে যেমন রাঙিপাড়ায় গিয়েছিলেন। তিন দিকে জলবেষ্টিত একটি পাহাড়ে উঠেছিলেন। ভেতরে ঢোকার পথ কেবল একটি। ঝোপ-জঙ্গলে ঠাসা পাহাড়টিতে হঠাৎ হাতির কাছে চলে গিয়ে বিপদে পড়ার আশঙ্কা বারো আনা। একপর্যায়ে হাতির ডাল ভাঙার শব্দ শুনলেন। একটু পরেই গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা পেলেন বিশালদেহী ঐরাবতদের—একটি-দুটি নয়, সাতটি। একপর্যায়ে আবিষ্কার করলেন, লতা-পাতা খেতে খেতে তাদের বেরোনোর পথটাই আটকে দাঁড়িয়েছে হাতির পাল। একপর্যায়ে হাতিগুলো বনের ভেতরে ঢুকে গেল, তাদের শব্দও থেমে গেল।
একটু অপেক্ষা করে যাওয়া নিরাপদ মনে করে সরু পথটা ধরে একজনের পেছনে আরেকজন লাইন ধরে এগোলেন। এই জায়গায় পথ ৯০ ডিগ্রি বাঁক নিয়েছে। বাঁক ঘুরেই আঁতকে উঠলেন। ঠিক সামনে পাঁচ মিটার দূরে পথের ওপর দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড এক হাতি। হাতিটা বিরক্ত হয়ে জোরে একটা শ্বাস নিতেই অন্য হাতিদের শব্দে জেগে উঠল বনানী। তাঁরা ঘুরে দিলেন দৌড়। পেছনে জঙ্গল ভেঙে ছুটে আসছে হাতির পাল। তারপর কী ঘটল জানার জন্য বইটি পড়তে হবে আপনাকে।
বান্দরবানের দুর্গমে মিয়ানমার সীমান্তে সাঙ্গু-মাতামুহুরী বন। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে বড় মোদকের দিকের এক অভিযানের কাহিনি পড়ে বনটির প্রতি আগ্রহ চূড়ায় গিয়ে ঠেকে মনিরুল খানের। এনায়েত মাওলাদের অভিযানটি ছিল ১৯৫৭ সালের। মনিরুল খান ২০০৫ সালে প্রথম যান সাঙ্গুর গহিনে। তারপর ২০০৮ ও ২০২১ সালে সাঙ্গু-মাতামুহুরীর দিকে আবার অভিযানে যান। আর পাঠক যেন লেখকের সঙ্গে চলে যাবেন অন্য এক পৃথিবীতে। ওই যে লেখার শুরুতে সাঙ্গু নদীর ধারে গোলবাহার অজগর দেখার যে বর্ণনা দিয়েছিলাম, সেটা কিন্তু প্রথমবার সাঙ্গু রিজার্ভ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে এই ভ্রমণ রোমাঞ্চ ও বনপ্রেমী পাঠকদের মন কেড়ে নেবে।
কখনো নদীর দুই পাড়ের ঘন পাহাড়ি বন, উঁচু ট্রি-ফার্ন ও লতানো বাঁশসহ নানা উদ্ভিদ লেখকের সঙ্গে আপনাকেও যেন হারানো পৃথিবীর কথা মনে করিয়ে দেবে। একপর্যায়ে চমকে গিয়ে আবিষ্কার করবেন লেখকও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে গাইডের সঙ্গে উচ্চিংড়া নামে একধরনের পোকার ভাজি ও কুমড়াপাতা সিদ্ধ দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। সাঙ্গু নদীর উজানে শেষ গ্রামটি পেরিয়ে লেখকের সঙ্গে রওনা দেবেন লিক্রি পাহাড়ের গহিন অরণ্যের দিকে, যেখানে বন্যপ্রাণীদের আড্ডাখানা। চন্দইপাড়ার গ্রামপ্রধান যখন বলবেন ওই পাহাড়ে আগের বছর (২০০৪) রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও কালো চিতার মুখোমুখি হয়েছেন, তখন রোমাঞ্চে গা কাঁটা দেবে আপনার। তারপর লিক্রি পাহাড় ও ইয়ামবং পাহাড় পেরিয়ে দশ-এগারো ঘণ্টার এক যাত্রা করেন লেখক এবং তাঁর সঙ্গীরা পাহাড়ের অন্য পাশে অর্থাৎ আলীকদমের দিকে পৌঁছাতে।
বইটির অন্যান্য অধ্যায়গুলো কম রোমাঞ্চকর নয়। কখনো লেখক বন্যপ্রাণী সন্ধানে চলে যান দেশে সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলো যেমন সাকা হাকং, কেওক্রাডং কিংবা তাজিংডংয়ের দিকে। কখনো আবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার-ভারতের সীমানা চিহ্নিত করা তিন মাথা পিলার এলাকায়। কখনো আবার লেখকের সঙ্গে দুঃখ ভারাক্রান্ত হবে আপনার মন। যেমন কেওক্রাডং পাহাড় পেরিয়ে জাদিপাই ঝরনায় যাওয়ার আগে জাদিপাই গ্রামে গিয়ে দেখেন ছোট্ট এক মেয়ে শিশুর মৃতদেহ কফিনে ভরার প্রস্তুতি চলছে। বেশ কিছুদিন ম্যালেরিয়ায় ভুগে মৃত্যু হয়েছে মেয়েটির।
কখনো কখনো লেখকের সঙ্গে দেশের জন্য নতুন কোনো প্রাণী আবিষ্কারের আনন্দ পাবেন। ক্যাপিটাল হিল পেরিয়ে একটি বনে গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়াতে দেখেন খুব ছোট এক ধরনের কাঠবিড়ালিকে। সাধারণত দেখা যাওয়া বাদামি কাঠবিড়ালির অর্ধেক, নাম হিমালয়ান স্ট্রাইপড স্কুইরেল। বাংলাদেশ এই কাঠবিড়ালি দেখা যাওয়ার এটাই প্রথম রেকর্ড।
এ ছাড়া ‘কিরস তং যেন হারানো পৃথিবী’তে কিরস তং বনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তুলনা করেছেন স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের বিখ্যাত বই লস্ট ওয়ার্ল্ডের সেই হারানো পৃথিবীর সঙ্গে। চিম্বুক পাহাড়শ্রেণীর মাঝামাঝি অবস্থিত কিরস তংয়ের শত শত বছরের পুরোনো বনের আবহ পেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন লেখক। বারবার ছুটে গিয়েছেন সেখানে। তবে মানুষের লোভের কারণে আদিম এই অরণ্য আর কত দিন টিকে থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এখানে ২০১৯ সালে চিতা বাঘের তাজা পায়ের ছাপ পান লেখক। বনটি তাঁর এত প্রিয় যে অধ্যায়ের শেষ করেন এভাবে, যত দিন আমি টিকে আছি এই ধরনীতে, তত দিন বারবার ফিরে যাব কিরস তংয়ের কোলে।
এ ছাড়াও অন্যান্য অধ্যায়গুলোতে কখনো মনিরুল খানকে দেখা যায় দেও হাঁসের খোঁজে পাবলাখালী-রাঙিপাড়ার পাহাড়ের চষে বেড়াতে, কখনো ফ্রান্সিস বুকাননের পথ ধরে রাঙামাটির কাপ্তাই কিংবা বরকলের গহিন অরণ্যে চলে যেতে। স্কটিশ জরিপকারী বুকানন এসব এলাকা ভ্রমণ করেছিলেন সোয়া দুই শ বছর আগে, ১৭৮৩ সালে। আবার বগা লেকের পাশে অ্যালেংথং পাহাড়ে বাদুড়ের গুহায় ভ্রমণ কিংবা রাইংক্ষিয়ং রিজার্ভ ফরেস্টে তাঁর রোমাঞ্চকর অভিযানও মুগ্ধ করবে পাঠককে।
বইটি পড়তে পড়তে বন্যপ্রাণীপ্রেমীরা কখনো চমকিত হবেন লেখকের সঙ্গে নিকট অতীতে পাহাড়ি বনে বাঘ দেখা যাওয়ার খবর শুনে। কখনো আবার মন কেঁদে উঠবে বাঘ-হরিণ কিংবা অন্য কোনো বিপন্ন বন্যপ্রাণী শিকারের খবর শুনে, অরণ্য ধ্বংসের বৃত্তান্ত পড়ে।
সবকিছু মিলিয়ে তাই বলা যায় শুধুমাত্র বন্যপ্রাণীপ্রেমী নয় পাহাড়ে-জঙ্গল-ঝরনা যাদের পছন্দ সেসব অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদেরও ভালো লাগবে বইটি। আর যেসব পাহাড়-অরণ্যপ্রেমী নানা ব্যস্ততায় সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণে যেতে পারছেন না তাঁরাও কয়েকটা ঘণ্টার জন্য হারিয়ে যেতে পারবেন রাঙামাটি-বান্দরবানের গহিনে, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে।
ইশতিয়াক হাসান

সাঙ্গু নদী ধরে চলেছে নৌকা। আন্ধারমানিকের কাছে হঠাৎ নদীর পাশে ঝোপের মধ্যে দেখা গেল অতিদুর্লভ, বিষধর একটি সাপ। শরীরের বেশির ভাগ সবুজ, তবে চোখ আর লেজ লাল। পোপস পিট ভাইপার। সরীসৃপটিকে শান্তিতে থাকতে দিয়ে কিছুটা এগোনোর পর নৌকার ওপরে তাকাতেই আঁতকে উঠলেন। পাহাড়ের ঢালে নদীর দিকে হেলে পড়া এক গাছের ডালে পেঁচিয়ে আছে বিশালাকায় একটা গোলবাহার অজগর বা রেটিকুলেটেড পাইথন। পেটটা ভুলে আছে বেঢপভাবে। কিছুক্ষণ আগেই হয়তো শিকার ধরে খেয়েছে।
রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খানের। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে রোমাঞ্চের নেশায়, ঝরনা দেখতে ঘুরে বেড়ান অনেক তরুণই। তবে দুই যুগ ধরে এই শিক্ষক পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়ানোর বড় কারণ বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান, অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। আর তাঁর সেই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাণবৈচিত্র্যের সন্ধানে’ নামে দুই মলাটের মধ্যে বন্দী করেছে প্রথমা প্রকাশন। বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪৫০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন মাহবুব রহমান।
কখনো রাঙামাটির দুর্গম কাসালং সংরক্ষিত অরণ্যে কিংবা কাপ্তাইয়ের সীতা পাহাড়, রাম পাহাড়, কখনো আবার বান্দরবানের সাঙ্গু-মাতামুহুরী বা কিরস তংয়ের গহিন অরণ্যে চষে বেড়িয়েছেন। পাহাড়ি দুরারোহ পথে ১০-১২ ঘণ্টা হাঁটতে হয়েছে বড় কোনো যাত্রাবিরতি ছাড়াই। দেশের জন্য নতুন এমন বেশ কয়েকটি প্রাণীও আবিষ্কার করেছেন পাহাড়ের গহিনের এসব রোমাঞ্চকর অভিযানের সময়। ২০০৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই যুগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে ১০টি অধ্যায়ে ভাগ করে বর্ণনা করেছেন লেখক। পাঠকদের জন্য বাড়তি পাওনা অরণ্য-পাহাড় আর বন্যপ্রাণীর চমৎকার কিছু ছবি।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ ফরেস্ট। ১ হাজার ৬৪৫ বর্গকিলোমিটারে বনটির বর্তমানে ৪০০ বর্গকিলোমিটার ভালো বন অবশিষ্ট আছে বলে জানিয়েছেন লেখক মনিরুল খান। কাসালং বনে লেখক গিয়েছেন মোটমাট চারবার। আর এই বনে রোমাঞ্চকর অভিযানের বর্ণনা পাবেন ‘কাসালংয়ের অজানা অরণ্যে’ অধ্যায়টিতে। এর মধ্যে বনের গভীরে ঢুকতে পেরেছেন দুবার। প্রথম এখানকার গহিন অরণ্যে প্রবেশ করতে পারেন মনিরুল খান ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। ঢাকা থেকে সঙ্গে ছিল তাঁর ছাত্র আশিকুর রহমান। পরে অবশ্য মাসালং থেকে গাইড হিসেবে যোগ দেন আরও দুজন।
জলপথে যাওয়া সহজ হলেও সেবার কাসালংয়ের অরণ্যে তাঁদের যাত্রাটা হয় পায়ে হেঁটে। লেখকের বর্ণনায় দেখি মান্দিরছড়ার পরে ঘন বনের শুরু। দুর্গম যাত্রায় কখনো পাহাড় বেয়ে উঠতে হয়, কখনো আবার চলতে হয় ছড়া ধরে। এভাবে চলতে চলতেই তাঁরা পৌঁছান লালু-কালু এলাকার পূর্ব দিকে। এখান থেকে পশ্চিমে দেখতে পাচ্ছিলেন এই এলাকার সবচেয়ে বড় ও গভীর বনানীর পাহাড় ভুলংতলি। বইটি পড়ার সময় মনে হবে আপনিও গহিন কোনো অরণ্যপথে হাঁটছেন লেখকদের ছোট দলটির একজন সদস্য হয়ে। গাইডদের বাঁশ কেটে তৈরি করা চোঙে মাছ আর পাহাড়ি কন্দ যোগ করে রান্না করে বুনো স্বাদের সেই তরকারির স্বাদ পাচ্ছেন। পথে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা হলে যখন তাঁরা বলে দুই বছর আগে (২০০৯) নাবা এলাকায় বাঘ দেখেছে, তখন শিহরিত হবেন আপনিও।
সেই ভ্রমণে ফিরতি যাত্রা ছিল বেশ মজার। মাসালং নদীর একটি শাখায় বাঁশের চালি ভাসিয়ে আনা হচ্ছিল। এতে উঠে তাঁরা চলে আসেন মাসালং বাজারে।
পরের সফরটি এক দশক পরে, ২০২১ সালে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ের খণ্ড বনগুলো করিডরের মাধ্যমে জোড়া লাগানোর বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করে বন বিভাগ। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইইউসিএনকে। এ সমীক্ষার অংশ হিসেবেই অন্য গবেষক, বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যান মনিরুল খান। চারটি নৌকায় চেপে, সঙ্গে প্রয়োজনীয় চাল-ডাল নিয়ে কাসালং নদী ধরে মাসালং বাজার থেকে রওনা দেন তাঁরা। একপর্যায়ে লালু পৌঁছান তারা। লেখকের ভাষায়, এখান থেকেই গহিন বনের শুরু, যেটা উজানের দিকে চলে গেছে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
লেখক বলেছেন, কাসালংয়ের গহিন বনে কোনো পাড়া নেই। তবে মানুষের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ছাউনি আছে। নৌকা থেকে নেমে গহিন এক ছড়া ধরে যাওয়ার সময় আপনিও মনে মনে সঙ্গী হয়ে যাবেন অভিযাত্রীদের। আচমকা আপনার দেখা হয়ে যাবে ভালুকের সঙ্গে চেহারার মিল আছে এমন একধরনের গাছ খাটাশ, বিন্টুরং বা বাঁশ ভালুকের। ছড়া থেকে ফিরে এসে লেখক আরও দুজনের সঙ্গে রাত কাটিয়েছিলেন একটি নৌকায়। রাতে প্রবল বৃষ্টিতে দেখা গেল নৌকা জলে ভরে যাচ্ছে। তাঁরা লেগে গেলেন পানি সেচতে। এমনই নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয় এই ভ্রমণে। ফেরার পথে আবিষ্কার করে বসেন বাংলাদেশের জন্য ময়নার এক নতুন প্রজাতি গোল্ডেন ক্রেস্টেড বা সোনাঝুঁটি ময়না।
মজার ঘটনা, কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যেতে হলে সাজেক যাওয়ার পথেই নামতে হবে আপনাকে। আর এই অধ্যায়টিতে সাজেক ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেছেন। পুরোনো সেই বুনো সাজেক আর এখনকার কংক্রিটের অট্টালিকায় ভরা সাজেক দুটোর তুলনা করতে গিয়ে লেখককে অনেকটাই দিশেহারা মনে হয়েছে। তিনি আফসোস করেন, এখন সাজেকে সবাই সুখী, তবে দুঃখী শুধু সেই হারিয়ে যাওয়া নির্মল সবুজ পাহাড়, কংক্রিট আর আবর্জনায় ঢাকা পড়ছে যেটি।
‘বন্য হাতির মুখোমুখি’ অধ্যায়ে আবার হাতির মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার একাধিক রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। ২০০২ সালে যেমন রাঙিপাড়ায় গিয়েছিলেন। তিন দিকে জলবেষ্টিত একটি পাহাড়ে উঠেছিলেন। ভেতরে ঢোকার পথ কেবল একটি। ঝোপ-জঙ্গলে ঠাসা পাহাড়টিতে হঠাৎ হাতির কাছে চলে গিয়ে বিপদে পড়ার আশঙ্কা বারো আনা। একপর্যায়ে হাতির ডাল ভাঙার শব্দ শুনলেন। একটু পরেই গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা পেলেন বিশালদেহী ঐরাবতদের—একটি-দুটি নয়, সাতটি। একপর্যায়ে আবিষ্কার করলেন, লতা-পাতা খেতে খেতে তাদের বেরোনোর পথটাই আটকে দাঁড়িয়েছে হাতির পাল। একপর্যায়ে হাতিগুলো বনের ভেতরে ঢুকে গেল, তাদের শব্দও থেমে গেল।
একটু অপেক্ষা করে যাওয়া নিরাপদ মনে করে সরু পথটা ধরে একজনের পেছনে আরেকজন লাইন ধরে এগোলেন। এই জায়গায় পথ ৯০ ডিগ্রি বাঁক নিয়েছে। বাঁক ঘুরেই আঁতকে উঠলেন। ঠিক সামনে পাঁচ মিটার দূরে পথের ওপর দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড এক হাতি। হাতিটা বিরক্ত হয়ে জোরে একটা শ্বাস নিতেই অন্য হাতিদের শব্দে জেগে উঠল বনানী। তাঁরা ঘুরে দিলেন দৌড়। পেছনে জঙ্গল ভেঙে ছুটে আসছে হাতির পাল। তারপর কী ঘটল জানার জন্য বইটি পড়তে হবে আপনাকে।
বান্দরবানের দুর্গমে মিয়ানমার সীমান্তে সাঙ্গু-মাতামুহুরী বন। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে বড় মোদকের দিকের এক অভিযানের কাহিনি পড়ে বনটির প্রতি আগ্রহ চূড়ায় গিয়ে ঠেকে মনিরুল খানের। এনায়েত মাওলাদের অভিযানটি ছিল ১৯৫৭ সালের। মনিরুল খান ২০০৫ সালে প্রথম যান সাঙ্গুর গহিনে। তারপর ২০০৮ ও ২০২১ সালে সাঙ্গু-মাতামুহুরীর দিকে আবার অভিযানে যান। আর পাঠক যেন লেখকের সঙ্গে চলে যাবেন অন্য এক পৃথিবীতে। ওই যে লেখার শুরুতে সাঙ্গু নদীর ধারে গোলবাহার অজগর দেখার যে বর্ণনা দিয়েছিলাম, সেটা কিন্তু প্রথমবার সাঙ্গু রিজার্ভ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে এই ভ্রমণ রোমাঞ্চ ও বনপ্রেমী পাঠকদের মন কেড়ে নেবে।
কখনো নদীর দুই পাড়ের ঘন পাহাড়ি বন, উঁচু ট্রি-ফার্ন ও লতানো বাঁশসহ নানা উদ্ভিদ লেখকের সঙ্গে আপনাকেও যেন হারানো পৃথিবীর কথা মনে করিয়ে দেবে। একপর্যায়ে চমকে গিয়ে আবিষ্কার করবেন লেখকও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে গাইডের সঙ্গে উচ্চিংড়া নামে একধরনের পোকার ভাজি ও কুমড়াপাতা সিদ্ধ দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। সাঙ্গু নদীর উজানে শেষ গ্রামটি পেরিয়ে লেখকের সঙ্গে রওনা দেবেন লিক্রি পাহাড়ের গহিন অরণ্যের দিকে, যেখানে বন্যপ্রাণীদের আড্ডাখানা। চন্দইপাড়ার গ্রামপ্রধান যখন বলবেন ওই পাহাড়ে আগের বছর (২০০৪) রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও কালো চিতার মুখোমুখি হয়েছেন, তখন রোমাঞ্চে গা কাঁটা দেবে আপনার। তারপর লিক্রি পাহাড় ও ইয়ামবং পাহাড় পেরিয়ে দশ-এগারো ঘণ্টার এক যাত্রা করেন লেখক এবং তাঁর সঙ্গীরা পাহাড়ের অন্য পাশে অর্থাৎ আলীকদমের দিকে পৌঁছাতে।
বইটির অন্যান্য অধ্যায়গুলো কম রোমাঞ্চকর নয়। কখনো লেখক বন্যপ্রাণী সন্ধানে চলে যান দেশে সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলো যেমন সাকা হাকং, কেওক্রাডং কিংবা তাজিংডংয়ের দিকে। কখনো আবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার-ভারতের সীমানা চিহ্নিত করা তিন মাথা পিলার এলাকায়। কখনো আবার লেখকের সঙ্গে দুঃখ ভারাক্রান্ত হবে আপনার মন। যেমন কেওক্রাডং পাহাড় পেরিয়ে জাদিপাই ঝরনায় যাওয়ার আগে জাদিপাই গ্রামে গিয়ে দেখেন ছোট্ট এক মেয়ে শিশুর মৃতদেহ কফিনে ভরার প্রস্তুতি চলছে। বেশ কিছুদিন ম্যালেরিয়ায় ভুগে মৃত্যু হয়েছে মেয়েটির।
কখনো কখনো লেখকের সঙ্গে দেশের জন্য নতুন কোনো প্রাণী আবিষ্কারের আনন্দ পাবেন। ক্যাপিটাল হিল পেরিয়ে একটি বনে গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়াতে দেখেন খুব ছোট এক ধরনের কাঠবিড়ালিকে। সাধারণত দেখা যাওয়া বাদামি কাঠবিড়ালির অর্ধেক, নাম হিমালয়ান স্ট্রাইপড স্কুইরেল। বাংলাদেশ এই কাঠবিড়ালি দেখা যাওয়ার এটাই প্রথম রেকর্ড।
এ ছাড়া ‘কিরস তং যেন হারানো পৃথিবী’তে কিরস তং বনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তুলনা করেছেন স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের বিখ্যাত বই লস্ট ওয়ার্ল্ডের সেই হারানো পৃথিবীর সঙ্গে। চিম্বুক পাহাড়শ্রেণীর মাঝামাঝি অবস্থিত কিরস তংয়ের শত শত বছরের পুরোনো বনের আবহ পেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন লেখক। বারবার ছুটে গিয়েছেন সেখানে। তবে মানুষের লোভের কারণে আদিম এই অরণ্য আর কত দিন টিকে থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এখানে ২০১৯ সালে চিতা বাঘের তাজা পায়ের ছাপ পান লেখক। বনটি তাঁর এত প্রিয় যে অধ্যায়ের শেষ করেন এভাবে, যত দিন আমি টিকে আছি এই ধরনীতে, তত দিন বারবার ফিরে যাব কিরস তংয়ের কোলে।
এ ছাড়াও অন্যান্য অধ্যায়গুলোতে কখনো মনিরুল খানকে দেখা যায় দেও হাঁসের খোঁজে পাবলাখালী-রাঙিপাড়ার পাহাড়ের চষে বেড়াতে, কখনো ফ্রান্সিস বুকাননের পথ ধরে রাঙামাটির কাপ্তাই কিংবা বরকলের গহিন অরণ্যে চলে যেতে। স্কটিশ জরিপকারী বুকানন এসব এলাকা ভ্রমণ করেছিলেন সোয়া দুই শ বছর আগে, ১৭৮৩ সালে। আবার বগা লেকের পাশে অ্যালেংথং পাহাড়ে বাদুড়ের গুহায় ভ্রমণ কিংবা রাইংক্ষিয়ং রিজার্ভ ফরেস্টে তাঁর রোমাঞ্চকর অভিযানও মুগ্ধ করবে পাঠককে।
বইটি পড়তে পড়তে বন্যপ্রাণীপ্রেমীরা কখনো চমকিত হবেন লেখকের সঙ্গে নিকট অতীতে পাহাড়ি বনে বাঘ দেখা যাওয়ার খবর শুনে। কখনো আবার মন কেঁদে উঠবে বাঘ-হরিণ কিংবা অন্য কোনো বিপন্ন বন্যপ্রাণী শিকারের খবর শুনে, অরণ্য ধ্বংসের বৃত্তান্ত পড়ে।
সবকিছু মিলিয়ে তাই বলা যায় শুধুমাত্র বন্যপ্রাণীপ্রেমী নয় পাহাড়ে-জঙ্গল-ঝরনা যাদের পছন্দ সেসব অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদেরও ভালো লাগবে বইটি। আর যেসব পাহাড়-অরণ্যপ্রেমী নানা ব্যস্ততায় সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণে যেতে পারছেন না তাঁরাও কয়েকটা ঘণ্টার জন্য হারিয়ে যেতে পারবেন রাঙামাটি-বান্দরবানের গহিনে, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে।

সাঙ্গু নদী ধরে চলেছে নৌকা। আন্ধারমানিকের কাছে হঠাৎ নদীর পাশে ঝোপের মধ্যে দেখা গেল অতিদুর্লভ, বিষধর একটি সাপ। শরীরের বেশির ভাগ সবুজ, তবে চোখ আর লেজ লাল। পোপস পিট ভাইপার। সরীসৃপটিকে শান্তিতে থাকতে দিয়ে কিছুটা এগোনোর পর নৌকার ওপরে তাকাতেই আঁতকে উঠলেন। পাহাড়ের ঢালে নদীর দিকে হেলে পড়া এক গাছের ডালে পেঁচিয়ে আছে বিশালাকায় একটা গোলবাহার অজগর বা রেটিকুলেটেড পাইথন। পেটটা ভুলে আছে বেঢপভাবে। কিছুক্ষণ আগেই হয়তো শিকার ধরে খেয়েছে।
রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খানের। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে রোমাঞ্চের নেশায়, ঝরনা দেখতে ঘুরে বেড়ান অনেক তরুণই। তবে দুই যুগ ধরে এই শিক্ষক পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়ানোর বড় কারণ বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান, অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। আর তাঁর সেই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাণবৈচিত্র্যের সন্ধানে’ নামে দুই মলাটের মধ্যে বন্দী করেছে প্রথমা প্রকাশন। বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪৫০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন মাহবুব রহমান।
কখনো রাঙামাটির দুর্গম কাসালং সংরক্ষিত অরণ্যে কিংবা কাপ্তাইয়ের সীতা পাহাড়, রাম পাহাড়, কখনো আবার বান্দরবানের সাঙ্গু-মাতামুহুরী বা কিরস তংয়ের গহিন অরণ্যে চষে বেড়িয়েছেন। পাহাড়ি দুরারোহ পথে ১০-১২ ঘণ্টা হাঁটতে হয়েছে বড় কোনো যাত্রাবিরতি ছাড়াই। দেশের জন্য নতুন এমন বেশ কয়েকটি প্রাণীও আবিষ্কার করেছেন পাহাড়ের গহিনের এসব রোমাঞ্চকর অভিযানের সময়। ২০০৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই যুগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে ১০টি অধ্যায়ে ভাগ করে বর্ণনা করেছেন লেখক। পাঠকদের জন্য বাড়তি পাওনা অরণ্য-পাহাড় আর বন্যপ্রাণীর চমৎকার কিছু ছবি।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ ফরেস্ট। ১ হাজার ৬৪৫ বর্গকিলোমিটারে বনটির বর্তমানে ৪০০ বর্গকিলোমিটার ভালো বন অবশিষ্ট আছে বলে জানিয়েছেন লেখক মনিরুল খান। কাসালং বনে লেখক গিয়েছেন মোটমাট চারবার। আর এই বনে রোমাঞ্চকর অভিযানের বর্ণনা পাবেন ‘কাসালংয়ের অজানা অরণ্যে’ অধ্যায়টিতে। এর মধ্যে বনের গভীরে ঢুকতে পেরেছেন দুবার। প্রথম এখানকার গহিন অরণ্যে প্রবেশ করতে পারেন মনিরুল খান ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। ঢাকা থেকে সঙ্গে ছিল তাঁর ছাত্র আশিকুর রহমান। পরে অবশ্য মাসালং থেকে গাইড হিসেবে যোগ দেন আরও দুজন।
জলপথে যাওয়া সহজ হলেও সেবার কাসালংয়ের অরণ্যে তাঁদের যাত্রাটা হয় পায়ে হেঁটে। লেখকের বর্ণনায় দেখি মান্দিরছড়ার পরে ঘন বনের শুরু। দুর্গম যাত্রায় কখনো পাহাড় বেয়ে উঠতে হয়, কখনো আবার চলতে হয় ছড়া ধরে। এভাবে চলতে চলতেই তাঁরা পৌঁছান লালু-কালু এলাকার পূর্ব দিকে। এখান থেকে পশ্চিমে দেখতে পাচ্ছিলেন এই এলাকার সবচেয়ে বড় ও গভীর বনানীর পাহাড় ভুলংতলি। বইটি পড়ার সময় মনে হবে আপনিও গহিন কোনো অরণ্যপথে হাঁটছেন লেখকদের ছোট দলটির একজন সদস্য হয়ে। গাইডদের বাঁশ কেটে তৈরি করা চোঙে মাছ আর পাহাড়ি কন্দ যোগ করে রান্না করে বুনো স্বাদের সেই তরকারির স্বাদ পাচ্ছেন। পথে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা হলে যখন তাঁরা বলে দুই বছর আগে (২০০৯) নাবা এলাকায় বাঘ দেখেছে, তখন শিহরিত হবেন আপনিও।
সেই ভ্রমণে ফিরতি যাত্রা ছিল বেশ মজার। মাসালং নদীর একটি শাখায় বাঁশের চালি ভাসিয়ে আনা হচ্ছিল। এতে উঠে তাঁরা চলে আসেন মাসালং বাজারে।
পরের সফরটি এক দশক পরে, ২০২১ সালে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ের খণ্ড বনগুলো করিডরের মাধ্যমে জোড়া লাগানোর বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করে বন বিভাগ। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইইউসিএনকে। এ সমীক্ষার অংশ হিসেবেই অন্য গবেষক, বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যান মনিরুল খান। চারটি নৌকায় চেপে, সঙ্গে প্রয়োজনীয় চাল-ডাল নিয়ে কাসালং নদী ধরে মাসালং বাজার থেকে রওনা দেন তাঁরা। একপর্যায়ে লালু পৌঁছান তারা। লেখকের ভাষায়, এখান থেকেই গহিন বনের শুরু, যেটা উজানের দিকে চলে গেছে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
লেখক বলেছেন, কাসালংয়ের গহিন বনে কোনো পাড়া নেই। তবে মানুষের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ছাউনি আছে। নৌকা থেকে নেমে গহিন এক ছড়া ধরে যাওয়ার সময় আপনিও মনে মনে সঙ্গী হয়ে যাবেন অভিযাত্রীদের। আচমকা আপনার দেখা হয়ে যাবে ভালুকের সঙ্গে চেহারার মিল আছে এমন একধরনের গাছ খাটাশ, বিন্টুরং বা বাঁশ ভালুকের। ছড়া থেকে ফিরে এসে লেখক আরও দুজনের সঙ্গে রাত কাটিয়েছিলেন একটি নৌকায়। রাতে প্রবল বৃষ্টিতে দেখা গেল নৌকা জলে ভরে যাচ্ছে। তাঁরা লেগে গেলেন পানি সেচতে। এমনই নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয় এই ভ্রমণে। ফেরার পথে আবিষ্কার করে বসেন বাংলাদেশের জন্য ময়নার এক নতুন প্রজাতি গোল্ডেন ক্রেস্টেড বা সোনাঝুঁটি ময়না।
মজার ঘটনা, কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যেতে হলে সাজেক যাওয়ার পথেই নামতে হবে আপনাকে। আর এই অধ্যায়টিতে সাজেক ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেছেন। পুরোনো সেই বুনো সাজেক আর এখনকার কংক্রিটের অট্টালিকায় ভরা সাজেক দুটোর তুলনা করতে গিয়ে লেখককে অনেকটাই দিশেহারা মনে হয়েছে। তিনি আফসোস করেন, এখন সাজেকে সবাই সুখী, তবে দুঃখী শুধু সেই হারিয়ে যাওয়া নির্মল সবুজ পাহাড়, কংক্রিট আর আবর্জনায় ঢাকা পড়ছে যেটি।
‘বন্য হাতির মুখোমুখি’ অধ্যায়ে আবার হাতির মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার একাধিক রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। ২০০২ সালে যেমন রাঙিপাড়ায় গিয়েছিলেন। তিন দিকে জলবেষ্টিত একটি পাহাড়ে উঠেছিলেন। ভেতরে ঢোকার পথ কেবল একটি। ঝোপ-জঙ্গলে ঠাসা পাহাড়টিতে হঠাৎ হাতির কাছে চলে গিয়ে বিপদে পড়ার আশঙ্কা বারো আনা। একপর্যায়ে হাতির ডাল ভাঙার শব্দ শুনলেন। একটু পরেই গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা পেলেন বিশালদেহী ঐরাবতদের—একটি-দুটি নয়, সাতটি। একপর্যায়ে আবিষ্কার করলেন, লতা-পাতা খেতে খেতে তাদের বেরোনোর পথটাই আটকে দাঁড়িয়েছে হাতির পাল। একপর্যায়ে হাতিগুলো বনের ভেতরে ঢুকে গেল, তাদের শব্দও থেমে গেল।
একটু অপেক্ষা করে যাওয়া নিরাপদ মনে করে সরু পথটা ধরে একজনের পেছনে আরেকজন লাইন ধরে এগোলেন। এই জায়গায় পথ ৯০ ডিগ্রি বাঁক নিয়েছে। বাঁক ঘুরেই আঁতকে উঠলেন। ঠিক সামনে পাঁচ মিটার দূরে পথের ওপর দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড এক হাতি। হাতিটা বিরক্ত হয়ে জোরে একটা শ্বাস নিতেই অন্য হাতিদের শব্দে জেগে উঠল বনানী। তাঁরা ঘুরে দিলেন দৌড়। পেছনে জঙ্গল ভেঙে ছুটে আসছে হাতির পাল। তারপর কী ঘটল জানার জন্য বইটি পড়তে হবে আপনাকে।
বান্দরবানের দুর্গমে মিয়ানমার সীমান্তে সাঙ্গু-মাতামুহুরী বন। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে বড় মোদকের দিকের এক অভিযানের কাহিনি পড়ে বনটির প্রতি আগ্রহ চূড়ায় গিয়ে ঠেকে মনিরুল খানের। এনায়েত মাওলাদের অভিযানটি ছিল ১৯৫৭ সালের। মনিরুল খান ২০০৫ সালে প্রথম যান সাঙ্গুর গহিনে। তারপর ২০০৮ ও ২০২১ সালে সাঙ্গু-মাতামুহুরীর দিকে আবার অভিযানে যান। আর পাঠক যেন লেখকের সঙ্গে চলে যাবেন অন্য এক পৃথিবীতে। ওই যে লেখার শুরুতে সাঙ্গু নদীর ধারে গোলবাহার অজগর দেখার যে বর্ণনা দিয়েছিলাম, সেটা কিন্তু প্রথমবার সাঙ্গু রিজার্ভ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে এই ভ্রমণ রোমাঞ্চ ও বনপ্রেমী পাঠকদের মন কেড়ে নেবে।
কখনো নদীর দুই পাড়ের ঘন পাহাড়ি বন, উঁচু ট্রি-ফার্ন ও লতানো বাঁশসহ নানা উদ্ভিদ লেখকের সঙ্গে আপনাকেও যেন হারানো পৃথিবীর কথা মনে করিয়ে দেবে। একপর্যায়ে চমকে গিয়ে আবিষ্কার করবেন লেখকও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে গাইডের সঙ্গে উচ্চিংড়া নামে একধরনের পোকার ভাজি ও কুমড়াপাতা সিদ্ধ দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। সাঙ্গু নদীর উজানে শেষ গ্রামটি পেরিয়ে লেখকের সঙ্গে রওনা দেবেন লিক্রি পাহাড়ের গহিন অরণ্যের দিকে, যেখানে বন্যপ্রাণীদের আড্ডাখানা। চন্দইপাড়ার গ্রামপ্রধান যখন বলবেন ওই পাহাড়ে আগের বছর (২০০৪) রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও কালো চিতার মুখোমুখি হয়েছেন, তখন রোমাঞ্চে গা কাঁটা দেবে আপনার। তারপর লিক্রি পাহাড় ও ইয়ামবং পাহাড় পেরিয়ে দশ-এগারো ঘণ্টার এক যাত্রা করেন লেখক এবং তাঁর সঙ্গীরা পাহাড়ের অন্য পাশে অর্থাৎ আলীকদমের দিকে পৌঁছাতে।
বইটির অন্যান্য অধ্যায়গুলো কম রোমাঞ্চকর নয়। কখনো লেখক বন্যপ্রাণী সন্ধানে চলে যান দেশে সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলো যেমন সাকা হাকং, কেওক্রাডং কিংবা তাজিংডংয়ের দিকে। কখনো আবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার-ভারতের সীমানা চিহ্নিত করা তিন মাথা পিলার এলাকায়। কখনো আবার লেখকের সঙ্গে দুঃখ ভারাক্রান্ত হবে আপনার মন। যেমন কেওক্রাডং পাহাড় পেরিয়ে জাদিপাই ঝরনায় যাওয়ার আগে জাদিপাই গ্রামে গিয়ে দেখেন ছোট্ট এক মেয়ে শিশুর মৃতদেহ কফিনে ভরার প্রস্তুতি চলছে। বেশ কিছুদিন ম্যালেরিয়ায় ভুগে মৃত্যু হয়েছে মেয়েটির।
কখনো কখনো লেখকের সঙ্গে দেশের জন্য নতুন কোনো প্রাণী আবিষ্কারের আনন্দ পাবেন। ক্যাপিটাল হিল পেরিয়ে একটি বনে গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়াতে দেখেন খুব ছোট এক ধরনের কাঠবিড়ালিকে। সাধারণত দেখা যাওয়া বাদামি কাঠবিড়ালির অর্ধেক, নাম হিমালয়ান স্ট্রাইপড স্কুইরেল। বাংলাদেশ এই কাঠবিড়ালি দেখা যাওয়ার এটাই প্রথম রেকর্ড।
এ ছাড়া ‘কিরস তং যেন হারানো পৃথিবী’তে কিরস তং বনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তুলনা করেছেন স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের বিখ্যাত বই লস্ট ওয়ার্ল্ডের সেই হারানো পৃথিবীর সঙ্গে। চিম্বুক পাহাড়শ্রেণীর মাঝামাঝি অবস্থিত কিরস তংয়ের শত শত বছরের পুরোনো বনের আবহ পেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন লেখক। বারবার ছুটে গিয়েছেন সেখানে। তবে মানুষের লোভের কারণে আদিম এই অরণ্য আর কত দিন টিকে থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এখানে ২০১৯ সালে চিতা বাঘের তাজা পায়ের ছাপ পান লেখক। বনটি তাঁর এত প্রিয় যে অধ্যায়ের শেষ করেন এভাবে, যত দিন আমি টিকে আছি এই ধরনীতে, তত দিন বারবার ফিরে যাব কিরস তংয়ের কোলে।
এ ছাড়াও অন্যান্য অধ্যায়গুলোতে কখনো মনিরুল খানকে দেখা যায় দেও হাঁসের খোঁজে পাবলাখালী-রাঙিপাড়ার পাহাড়ের চষে বেড়াতে, কখনো ফ্রান্সিস বুকাননের পথ ধরে রাঙামাটির কাপ্তাই কিংবা বরকলের গহিন অরণ্যে চলে যেতে। স্কটিশ জরিপকারী বুকানন এসব এলাকা ভ্রমণ করেছিলেন সোয়া দুই শ বছর আগে, ১৭৮৩ সালে। আবার বগা লেকের পাশে অ্যালেংথং পাহাড়ে বাদুড়ের গুহায় ভ্রমণ কিংবা রাইংক্ষিয়ং রিজার্ভ ফরেস্টে তাঁর রোমাঞ্চকর অভিযানও মুগ্ধ করবে পাঠককে।
বইটি পড়তে পড়তে বন্যপ্রাণীপ্রেমীরা কখনো চমকিত হবেন লেখকের সঙ্গে নিকট অতীতে পাহাড়ি বনে বাঘ দেখা যাওয়ার খবর শুনে। কখনো আবার মন কেঁদে উঠবে বাঘ-হরিণ কিংবা অন্য কোনো বিপন্ন বন্যপ্রাণী শিকারের খবর শুনে, অরণ্য ধ্বংসের বৃত্তান্ত পড়ে।
সবকিছু মিলিয়ে তাই বলা যায় শুধুমাত্র বন্যপ্রাণীপ্রেমী নয় পাহাড়ে-জঙ্গল-ঝরনা যাদের পছন্দ সেসব অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদেরও ভালো লাগবে বইটি। আর যেসব পাহাড়-অরণ্যপ্রেমী নানা ব্যস্ততায় সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণে যেতে পারছেন না তাঁরাও কয়েকটা ঘণ্টার জন্য হারিয়ে যেতে পারবেন রাঙামাটি-বান্দরবানের গহিনে, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে।

ইরান ও পাকিস্তানের সীমান্তের কাছে অবস্থিত তাফতান আগ্নেয়গিরি আবার সক্রিয় হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ৭ লাখ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা এই আগ্নেয়গিরির চূড়া গত এক বছরে প্রায় ৩.৫ ইঞ্চি উঁচু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায়।
৮ ঘণ্টা আগে
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে আগামীকাল সোমবার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আজ রোববার রাত ৯টায় আবহাওয়ার বিশেষ ৪ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
৯ ঘণ্টা আগে
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস।
১ দিন আগে
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরান ও পাকিস্তানের সীমান্তের কাছে অবস্থিত তাফতান আগ্নেয়গিরি আবার সক্রিয় হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ৭ লাখ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা এই আগ্নেয়গিরির চূড়া গত এক বছরে প্রায় ৩.৫ ইঞ্চি উঁচু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায়।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আগ্নেয়গিরিটির নিচে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যা কোনো না কোনোভাবে ভবিষ্যতে নির্গত হতে বাধ্য। এটি সহিংস বিস্ফোরণের মাধ্যমেও ঘটতে পারে, অথবা ধীরে ধীরে গ্যাস নিঃসরণের মাধ্যমে।
গবেষণাটির প্রধান লেখক ও আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ পাবলো গনজালেস লাইভ সায়েন্সকে বলেছেন, ‘এটি আতঙ্ক তৈরির জন্য নয়, বরং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য একটি সতর্কবার্তা—যাতে তারা অঞ্চলটিতে পর্যবেক্ষণের জন্য রসদ বরাদ্দ করে।’
রোববার (২৬ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দারাও ইতিমধ্যে ২০২৩ সাল থেকেই আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি এলাকায় গ্যাস নিঃসরণের ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ লক্ষ্য করেছেন। এমনকি চূড়া থেকে প্রায় ৩০ মাইল দূরেও এমনটি টের পাওয়া গেছে। ১২ হাজার ৯২৭ ফুট উচ্চতার এই বিশাল আগ্নেয়গিরি দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের সবচেয়ে বড় এবং পার্শ্ববর্তী ছোট পাহাড়গুলোকে ছাপিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দূরবর্তী ও প্রত্যন্ত অবস্থানের কারণে এটিকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করাও কঠিন। এ অবস্থায় গবেষণারত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হোসেইন মোহাম্মদনিয়া ও পাবলো গনজালেস স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করে আগ্নেয়গিরির চূড়ার উচ্চতা বৃদ্ধির প্রমাণ পান।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পরিবর্তনের কারণ সম্ভবত আগ্নেয়গিরির নিচের হাইড্রোথার্মাল ব্যবস্থায় পরিবর্তন, যা গ্যাস জমা বা ম্যাগমার স্থানচ্যুতি ঘটাতে পারে। তাঁরা জানিয়েছেন, তাফতান আগ্নেয়গিরির পরিস্থিতি এখন নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং গবেষণা অব্যাহত থাকবে।

ইরান ও পাকিস্তানের সীমান্তের কাছে অবস্থিত তাফতান আগ্নেয়গিরি আবার সক্রিয় হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ৭ লাখ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা এই আগ্নেয়গিরির চূড়া গত এক বছরে প্রায় ৩.৫ ইঞ্চি উঁচু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায়।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আগ্নেয়গিরিটির নিচে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যা কোনো না কোনোভাবে ভবিষ্যতে নির্গত হতে বাধ্য। এটি সহিংস বিস্ফোরণের মাধ্যমেও ঘটতে পারে, অথবা ধীরে ধীরে গ্যাস নিঃসরণের মাধ্যমে।
গবেষণাটির প্রধান লেখক ও আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ পাবলো গনজালেস লাইভ সায়েন্সকে বলেছেন, ‘এটি আতঙ্ক তৈরির জন্য নয়, বরং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য একটি সতর্কবার্তা—যাতে তারা অঞ্চলটিতে পর্যবেক্ষণের জন্য রসদ বরাদ্দ করে।’
রোববার (২৬ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দারাও ইতিমধ্যে ২০২৩ সাল থেকেই আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি এলাকায় গ্যাস নিঃসরণের ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ লক্ষ্য করেছেন। এমনকি চূড়া থেকে প্রায় ৩০ মাইল দূরেও এমনটি টের পাওয়া গেছে। ১২ হাজার ৯২৭ ফুট উচ্চতার এই বিশাল আগ্নেয়গিরি দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের সবচেয়ে বড় এবং পার্শ্ববর্তী ছোট পাহাড়গুলোকে ছাপিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দূরবর্তী ও প্রত্যন্ত অবস্থানের কারণে এটিকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করাও কঠিন। এ অবস্থায় গবেষণারত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হোসেইন মোহাম্মদনিয়া ও পাবলো গনজালেস স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করে আগ্নেয়গিরির চূড়ার উচ্চতা বৃদ্ধির প্রমাণ পান।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পরিবর্তনের কারণ সম্ভবত আগ্নেয়গিরির নিচের হাইড্রোথার্মাল ব্যবস্থায় পরিবর্তন, যা গ্যাস জমা বা ম্যাগমার স্থানচ্যুতি ঘটাতে পারে। তাঁরা জানিয়েছেন, তাফতান আগ্নেয়গিরির পরিস্থিতি এখন নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং গবেষণা অব্যাহত থাকবে।

দুই যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়িয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান। উদ্দেশ্য বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। তাঁর এসব রোমাঞ্চকর অভিযান কাহিনির বিবরন স্থান পেয়েছে ‘পার্বত্য
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে আগামীকাল সোমবার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আজ রোববার রাত ৯টায় আবহাওয়ার বিশেষ ৪ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
৯ ঘণ্টা আগে
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস।
১ দিন আগে
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
১ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে আগামীকাল সোমবার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আজ রোববার রাত ৯টায় আবহাওয়ার বিশেষ ৪ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় (১১.৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৬.৬ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।
গভীর নিম্নচাপটি আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০১ (এক) নম্বর (পুনঃ) ০১ (এক) নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেসঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে আগামীকাল সোমবার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আজ রোববার রাত ৯টায় আবহাওয়ার বিশেষ ৪ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় (১১.৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৬.৬ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।
গভীর নিম্নচাপটি আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০১ (এক) নম্বর (পুনঃ) ০১ (এক) নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেসঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

দুই যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়িয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান। উদ্দেশ্য বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। তাঁর এসব রোমাঞ্চকর অভিযান কাহিনির বিবরন স্থান পেয়েছে ‘পার্বত্য
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ইরান ও পাকিস্তানের সীমান্তের কাছে অবস্থিত তাফতান আগ্নেয়গিরি আবার সক্রিয় হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ৭ লাখ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা এই আগ্নেয়গিরির চূড়া গত এক বছরে প্রায় ৩.৫ ইঞ্চি উঁচু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায়।
৮ ঘণ্টা আগে
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস।
১ দিন আগে
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাজধানী শহর ঢাকায় দূষণ কমছেই না। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে ঢাকা। প্রতিবছর শীতকাল শুরুর আগেই ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়তে শুরু করে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ রোববার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ছিল ১৬৯। সে হিসাবে বাতাসের মান ‘সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এই স্কোর নিয়ে ঢাকা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
একিউআই মানদণ্ড অনুসারে, ১৫১ থেকে ২০০ স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বিবেচনা করা হয়। এই স্তরে সাধারণ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা অসুস্থতা অনুভব করতে পারেন এবং সংবেদনশীল গোষ্ঠীর (যেমন শিশু, বয়স্ক এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগী) জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
বাতাসের মূল ক্ষতিকারক উপাদান হলো ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এটি এতই সূক্ষ্ম যে তা ফুসফুসে, এমনকি রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করতে পারে।
আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ৩৮০ একিউআই স্কোর নিয়ে পাকিস্তানের লাহোর এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এই শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ (Hazardous) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।
আজ সকাল ৮টা ২০ মিনিটে আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১০ দূষিত শহরের তালিকার বাকি শহরগুলো হলো —
(বায়ুমানের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে র্যাঙ্কিংয়ে পরিবর্তন হতে পারে)
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি (২৯১, খুবই অস্বাস্থ্যকর)। তৃতীয় স্থানে রয়েছে উজবেকিস্তানের তাসখন্দ (১৭৫, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)। চতুর্থ স্থানে রয়েছে ঢাকা এবং পঞ্চম স্থানে পাকিস্তানের করাচি (১৬১,সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)।
শীর্ষ দশের অন্যান্য শহর:
৬. কায়রো, মিসর (১৫৮)
৭. বাকু, আজারবাইজান (১৫৭)
৮. কাম্পালা, উগান্ডা (১৫২)
৯. দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত (১৪৯)
১০. কলকাতা, ভারত (১৪৩)
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশিমাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

রাজধানী শহর ঢাকায় দূষণ কমছেই না। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে ঢাকা। প্রতিবছর শীতকাল শুরুর আগেই ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়তে শুরু করে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ রোববার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ছিল ১৬৯। সে হিসাবে বাতাসের মান ‘সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এই স্কোর নিয়ে ঢাকা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
একিউআই মানদণ্ড অনুসারে, ১৫১ থেকে ২০০ স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বিবেচনা করা হয়। এই স্তরে সাধারণ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা অসুস্থতা অনুভব করতে পারেন এবং সংবেদনশীল গোষ্ঠীর (যেমন শিশু, বয়স্ক এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগী) জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
বাতাসের মূল ক্ষতিকারক উপাদান হলো ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এটি এতই সূক্ষ্ম যে তা ফুসফুসে, এমনকি রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করতে পারে।
আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ৩৮০ একিউআই স্কোর নিয়ে পাকিস্তানের লাহোর এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এই শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ (Hazardous) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।
আজ সকাল ৮টা ২০ মিনিটে আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১০ দূষিত শহরের তালিকার বাকি শহরগুলো হলো —
(বায়ুমানের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে র্যাঙ্কিংয়ে পরিবর্তন হতে পারে)
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি (২৯১, খুবই অস্বাস্থ্যকর)। তৃতীয় স্থানে রয়েছে উজবেকিস্তানের তাসখন্দ (১৭৫, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)। চতুর্থ স্থানে রয়েছে ঢাকা এবং পঞ্চম স্থানে পাকিস্তানের করাচি (১৬১,সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)।
শীর্ষ দশের অন্যান্য শহর:
৬. কায়রো, মিসর (১৫৮)
৭. বাকু, আজারবাইজান (১৫৭)
৮. কাম্পালা, উগান্ডা (১৫২)
৯. দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত (১৪৯)
১০. কলকাতা, ভারত (১৪৩)
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশিমাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

দুই যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়িয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান। উদ্দেশ্য বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। তাঁর এসব রোমাঞ্চকর অভিযান কাহিনির বিবরন স্থান পেয়েছে ‘পার্বত্য
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ইরান ও পাকিস্তানের সীমান্তের কাছে অবস্থিত তাফতান আগ্নেয়গিরি আবার সক্রিয় হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ৭ লাখ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা এই আগ্নেয়গিরির চূড়া গত এক বছরে প্রায় ৩.৫ ইঞ্চি উঁচু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায়।
৮ ঘণ্টা আগে
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে আগামীকাল সোমবার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আজ রোববার রাত ৯টায় আবহাওয়ার বিশেষ ৪ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
৯ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ঢাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টির প্রবণতা কমে এসেছে। ফলে আবহাওয়া শুষ্ক, বেড়েছে তাপমাত্রা। তবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে নিম্নচাপ। এটি গভীর নিম্নচাপ থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে ২৮ অক্টোবর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তর ও পশ্চিম-দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তর ও পশ্চিম-দক্ষিণে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আজ রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ সারা দেশে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকলেও আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কাল সোমবার থেকে আবহাওয়া প্রায় একই রকম থাকবে। তবে ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রাম ছাড়াও রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
বৃষ্টির এই ধারা ২৯ অক্টোবরও অব্যাহত থাকতে পারে। ৩০ অক্টোবর থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে গভীর নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলেও এটির বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। আজ সকালে আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় যা-ই হোক না কেন, আপাতত এর গতিবিধিতে মনে হচ্ছে এটি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

ঢাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টির প্রবণতা কমে এসেছে। ফলে আবহাওয়া শুষ্ক, বেড়েছে তাপমাত্রা। তবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে নিম্নচাপ। এটি গভীর নিম্নচাপ থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে ২৮ অক্টোবর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তর ও পশ্চিম-দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তর ও পশ্চিম-দক্ষিণে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আজ রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ সারা দেশে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকলেও আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কাল সোমবার থেকে আবহাওয়া প্রায় একই রকম থাকবে। তবে ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রাম ছাড়াও রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
বৃষ্টির এই ধারা ২৯ অক্টোবরও অব্যাহত থাকতে পারে। ৩০ অক্টোবর থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে গভীর নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলেও এটির বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। আজ সকালে আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় যা-ই হোক না কেন, আপাতত এর গতিবিধিতে মনে হচ্ছে এটি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

দুই যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়িয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান। উদ্দেশ্য বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। তাঁর এসব রোমাঞ্চকর অভিযান কাহিনির বিবরন স্থান পেয়েছে ‘পার্বত্য
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ইরান ও পাকিস্তানের সীমান্তের কাছে অবস্থিত তাফতান আগ্নেয়গিরি আবার সক্রিয় হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ৭ লাখ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা এই আগ্নেয়গিরির চূড়া গত এক বছরে প্রায় ৩.৫ ইঞ্চি উঁচু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায়।
৮ ঘণ্টা আগে
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে আগামীকাল সোমবার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আজ রোববার রাত ৯টায় আবহাওয়ার বিশেষ ৪ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
৯ ঘণ্টা আগে
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস।
১ দিন আগে