Ajker Patrika

নির্জন সৈকতে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
নির্জন সৈকতে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি

সুশৃঙ্খল প্রাণী লাল কাঁকড়া। নির্জনতা পছন্দ করে। নির্জনেই বাসা বানায়। দল বেঁধে ছোটাছুটি করে এদিক-ওদিক। সমুদ্রসৈকতের বুকে আঁকা এ প্রাণীর আলপনা সবার নজর কাড়ে, আকর্ষণ বাড়ায় ও পর্যটকদের আনন্দ জোগায়। কক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার অবিচ্ছিন্ন বালুকাময় সৈকত জুড়েই এক সময় লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ ছিল। আগের সেই দৃশ্য এখন আর নেই। তবে বিভিন্ন সৈকতে এখনো হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার দেখা মেলে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, কক্সবাজার সৈকতে ৪-৫ প্রজাতির কাঁকড়ার দেখা মেলে। এর মধ্যে লাল কাঁকড়া সৈকত তীরে খালের মতো তৈরি হওয়া চ্যানেলে বাস করে। এই চ্যানেল সাগরদোনা হিসেবেই পরিচিত। সাগরদোনায় মানুষের যাতায়াত কম। জায়গাটি খুবই নির্জন। এ জন্য লাল কাঁকড়া সেখানেই প্রজনন ও বসবাসে নিরাপদ মনে করে। সাম্প্রতিক সময়ে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন, অসচেতনতা, দূষণ, দখল ও সংরক্ষণের অভাবে পরিবেশের জন্য উপকারী এ প্রাণীটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। 

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে মেরিন ড্রাইভ সড়কের সঙ্গে লাগোয়া সোনারপাড়া। এর আশপাশে রেজুখালের মোহনা ও বেশ কয়েকটি সাগরদোনা রয়েছে। শীতের সকালে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ ভেদ করে হালকা রোদ নেমেছে সাগরদোনায়। বালুর গর্তের বাসা থেকে একে একে বেরিয়ে পড়ছে লাল কাঁকড়া। মানুষের উপস্থিতি টের পেয়েই আবারও গর্তে লুকিয়ে পড়ছে। সম্প্রতি একদল গবেষকের সঙ্গে ওই সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, এমন হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটির দৃশ্য। 

গবেষক দলের সদস্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কক্সবাজারের সামুদ্রিক ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সদ্য অন্যত্র বদলি) মো. আশরাফুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, লাল কাঁকড়া সৈকতের শুধু শোভাবর্ধনকারী প্রাণী নয়, এটি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ প্রাণীটি সৈকতের বালুচরে ৯ থেকে ১৭ ইঞ্চি গর্ত করে বাসা বাঁধে। 

নির্জন সৈকতে অবাধে ঘুরে বেড়ায় লাল কাঁকড়ামো. আশরাফুল হক বলেন, কাঁকড়া সমুদ্র উপকূলের দূষণ পরিষ্কারকারী ‘মেইন বায়োটার্বেটর বা জৈব রাসায়নিক পরিবর্তনকারী’ প্রধান প্রাণী হিসাবে কাজ করে। প্রাণিকুলের জন্য উপকারী এই প্রাণী মাটির ভৌত ও জৈব-রাসায়নিক গুণাগুণের বা বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে খাদ্যশৃঙ্খলের বিভিন্ন জীব-অণুজীব ও উদ্ভিদের বেঁচে থাকার মতো পরিবেশ তৈরি করে। সৈকতের মাটির লবণাক্ততাও হ্রাস করে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ রাসেল (৩৫) বলেন, লাল কাঁকড়া সাগরদোনা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বের হয়ে বালুচর ও সৈকতে দৌড়ঝাঁপ করে। মানুষ কিংবা অন্য কোনো প্রাণী দেখলেই লুকিয়ে পড়ে। 

দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ-প্রকৃতি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও সামুদ্রিক প্রাণী নিয়ে কাজ করছেন কক্সবাজারের প্রকৃতি গবেষক ও সাংবাদিক আহমদ গিয়াস। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের অভাব, অপরিকল্পিত পর্যটন, দখল ও প্লাস্টিক দূষণ পরিবেশের জন্য অপরিহার্য এ প্রাণীটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। 

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কক্সবাজারের সামুদ্রিক ও প্রযুক্তিকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, লাল কাঁকড়া নির্জনতা পছন্দ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক পর্যটকদের অবাধ চলাফেরা ও উৎপাতে এ প্রাণীটি আবাস সংকটে পড়ছে এবং স্থান ত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। 

ড. শফিকুর রহমান আরও বলেন, লাল কাঁকড়া ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যশৃঙ্খলে একটি মূল পরিবেশগত সংযোগ তৈরি করে। মাটিতে থাকা জৈব পদার্থের বণ্টন পরিবর্তন করাসহ পরিবেশের নানা উপকারে ভূমিকা রাখে। এ প্রাণী সংরক্ষণে আরও যত্নবান ও সচেতন হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। 

কক্সবাজারে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, এ প্রাণী নিয়ে গবেষণায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসছে। লাল কাঁকড়া সৈকতের একটি নিখুঁত স্থপতি ও অবিকল্প পরিবেশ প্রকৌশলী। এটি জৈবিক, ভৌত, রাসায়নিক ও জলবায়ু প্রকৌশলীর কাজ করে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রুয়া নির্বাচন: বিএনপিপন্থীদের বর্জন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জামায়াতপন্থী ২৭ জন নির্বাচিত

সৌদি আরবের কেনা ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলকে দেওয়ার অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্রের, প্রত্যাখ্যান করে কিসের ইঙ্গিত দিল রিয়াদ

‘পাপ কাহিনী’র হাত ধরে দেশের ওটিটিতে ফিরল অশ্লীলতা

বীর্যে বিরল অ্যালার্জি, নারীর বন্ধ্যাত্ব নিয়ে চিকিৎসকদের নতুন সতর্কতা

আওয়ামী লীগ নেতাকে ধরতে গিয়ে ছেলের বঁটির আঘাতে এসআই আহত, আটক ২

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত