Ajker Patrika

পাকিস্তানের হিরো আলম, কে এই চাহাত ফতেহ আলী খান

জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১৯: ৫৭
পাকিস্তানের হিরো আলম, কে এই চাহাত ফতেহ আলী খান

তিনি সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশন, ওস্তাদ, কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার, কম্পোজার—ধ্রুপদি, কাওয়ালি, পপ, ভাঙড়া, বলিউড—সংগীতের এমন কোনো ধারা নেই যেখানে তাঁর সরব উপস্থিতি নেই! সোশ্যাল মিডিয়াতে এমন সব বিশেষণেই অভিষিক্ত চাহাত ফতেহ আলী খান। তিনি পাকিস্তানি সেলিব্রিটি। 

নাম শুনে নিশ্চয়ই, বিখ্যাত ফতেহ আলী খান পরিবারের উত্তরাধিকারী বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু না, উপমহাদেশের প্রখ্যাত কাওয়ালি পরিবারের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। সংগীতে তাঁর অসাধারণ প্রতিভার কথা কয়েক বছর আগেও কেউ জানত না। নুসরাত ফতেহ আলী খানের কাওয়ালি তাঁকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে এটা সত্য। 

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে বড় হওয়া এই ‘প্রতিভা’ মধ্যবয়সে ভাগ্যের সন্ধানে পাড়ি জমান লন্ডনে। সেখানে মিনি–ক্যাব চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তখনো তিনি তাঁর অন্তর্নিহিত সংগীত প্রতিভা টের পাননি। কিন্তু অতিমারী সেই সুযোগ করে দেয়। লকডাউনে ঘরবন্দী অলস সময়ে নিজের প্রতি উঁকি দেওয়ার ফুরসত পেয়ে যান। গান রেকর্ড করতে শুরু করেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে সুপ্ত প্রতিভার স্ফুরণ ঘটতে শুরু করে। 

সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশন চাহাত ফতেহ আলী খান। ছবি: এক্সচাহাত ফতেহ আলী খান সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশনে পরিণত হন মূলত কাইফি খালিলের আইকনিক ট্র্যাক ‘কাহানি সুনো ২.০’ এবং পাকিস্তান ক্রিকেট লিগের থিম সং–এর অষ্টম সংস্করণ প্রকাশ করে। রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যান। পাকিস্তান, ভারত দুই দেশের রসিক নেটিজেনরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। শিগগিরই ‘বেসুরোঁ কা বেতাজ বাদশাহ’ খেতাব পেয়ে যান! ফেসবুক, টুইটার, টিকটক—সব সোশ্যাল মিডিয়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। 

এই কিংবদন্তি সংগীত প্রতিভার (!) পরিচয় সম্পর্কে পাকিস্তান বা ভারতের কোনো গণমাধ্যমেই তেমন তথ্য পাওয়া যায় না। তাঁর বয়স এখন ৫৬ বছর এবং তিনি বিবাহিত। ১৯৬৬ সালে লাহোরে জন্ম তাঁর। এখন থাকেন লন্ডনে, মিনিক্যাব চালানো পেশা হলেও নেশা তাঁর গান! ভক্তদের তিনি এতটাই মাতিয়ে রাখেন যে, এর বেশি পরিচয় জানার আর প্রয়োজন বোধ করার অবকাশ থাকে না। 

বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, চাহাত ফতেহ আলী খানের আসল নাম ‘কাশিফ রানা’। বাপ–মায়ের দেওয়া এ নাম তিনি ভুলিয়ে দিয়েছেন! নতুন নাম গ্রহণেও অত্যন্ত বুদ্ধিমানের পরিচয় দিয়েছেন। নুসরাত ফতেহ আলী খান পরিবারের খ্যাতি তাঁর জানা। ফতেহ আলী খান পরিবারের লোকদের সঙ্গে তাঁর চেহারাও চমৎকার মিল রয়েছে। 

 

বিয়ে আর কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ত আছেন চাহাত ফতেহ আলী খান। ছবি: এক্স

‘মেরে রাকশে কামার’, ‘হালকা হালকা সুরুর’, ‘দিল গালতি কার ব্যায়ঠা’–সহ নুসরাত ফতেহ আলী খানের প্রায় সব জনপ্রিয় গানই তিনি গেয়েছেন নিজস্ব স্টাইলে। অসংখ্য গানের প্যারোডি করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউয়ের প্রচুর মিউজিক ভিডিও পাওয়া যায়। 

টুইটার মাতিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন এই ‘বেসুরোদের মুকুটহীন বাদশাহ’! ‘লর্ড অব মেলোডি’, ‘লর্ড অব লিরিক’ খেতাব পেয়েছেন এই সেলিব্রিটি। টুইটারে ৭০০–এর বেশি লাইভ ভিডিও করেছেন। ভক্তদের আবদার কখনো ফেলতে পারেন না। লন্ডনে বিভিন্ন মজলিশে তাঁকে দেখা যায়। সেখানে তিনি তাঁর অনন্য গায়কি দিয়ে মেহফিল মাতিয়ে রাখেন। 

চাহাত ফতেহ আলী খান এখন দেশে–বিদেশে কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ত। শোনা যায়, তিনি এক একটি কনসার্টের জন্য ৮ লাখ রুপি পর্যন্ত সম্মানী হাঁকিয়ে বসেন! লন্ডনে পাকিস্তান কমিউনিটি এবং পাকিস্তানে বিয়ের অনুষ্ঠানে নিয়মিত আমন্ত্রণ পান চাহাত ফতেহ আলী খান। অনেকে বলেন, কনেপক্ষের লোকেরা ইচ্ছে করে অতিথিদের অত্যাচার করতেই তাঁকে ডাকে! উদ্দেশ্য যাই হোক, বিয়েবাটিতে অন্য মাত্রা যোগ করেন এই পারফরমার। অতিথিরা তো বটেই, টুকটুকে কনেটিও দোপাট্টার আড়ালে হেসে কুটিকুটি হয়। 

চাহাতের মিউজিক ভিডিওগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে তুমুল জনপ্রিয়। ছবি: এক্সএই যে এত এত বিখ্যাত শিল্পীর গানের তিনি বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন, এ নিয়ে পাকিস্তানে কেউ কিছু বলে না? মৃদু প্রতিবাদ হয়তো অনেকে করে, তবে সবার কাছে মজা নেওয়াটাই মুখ্য। নুসরাত ফতেহ আলী খানের গান যখন বেসুরো গলায় রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেড়েছিলেন চাহাত, তখন অনেক নেটিজেনই তাঁকে হাতজোড় করে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর দোহাই, এই অত্যাচার বন্ধ করেন!’ তবে ফতেহ আলী খান পরিবার থেকে এ নিয়ে কখনো প্রতিবাদ বা অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানা যায় না। 

গত এপ্রিলে পাকিস্তানের শিল্পী আলী জাফরের জনপ্রিয় গান ‘চান্নো’ নিজের কণ্ঠে রেকর্ড করে এক্সে (টুইটার) ছাড়েন চাহাত ফতেহ আলী খান। আলী জাফর সেই ‘অসাধারণ’ কম্পোজিশন শেয়ার করে প্রতিক্রিয়ায় লিখেছিলেন, ‘ইয়া আল্লাহ খায়ের’। বাংলায় বললে হয়তো আলী জাফর বলতেন, ‘আল্লাহরে, খাইছে!’ চাহাত অবশ্য পরে আলী জাফরকে তাঁর লন্ডনের বাসায় দাওয়াত দিয়ে টুইট করেছিলেন। 

চাহাত ফতেহ আলী খান ওরফে কাশিফ রানা বিখ্যাত সংগীত পরিবারের নাম ধারণ করে দিব্যি দাপটের সঙ্গে তাঁর প্রতিভা জানান দিয়ে যাচ্ছেন। ‘দেশে এলে ঠ্যাং ভেঙে দেওয়ার’ হুমকি কেউ কখনো দিয়েছে বলে শোনা যায়নি। এর জন্য কখনো কোথাও হয়রানির শিকারও হননি। তিনি পাকিস্তানে মাঝেমধ্যে আসেন। কিন্তু কখনো ডিবি কার্যালয়ে মুখ দর্শনের জন্য যাওয়ার কথাও শোনা যায়নি!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও মামলা প্রত্যাহার

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

জুলাই সনদের বৈধতা নিয়ে আদালতেও প্রশ্ন তোলা যাবে না

জর্ডান-মিসরকে নিয়ে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করতে চান নেতানিয়াহু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত