রজত কান্তি রায়

ঢাকা: বুড়িগঙ্গার বুকে গড়ে ওঠা গমগমে শহরতলি আষাঢ়ের ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমরা খুঁজতে থাকি ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’–এর একটি ছাপড়া ঘর। থানা ভবন থেকে পশ্চিম দিকে একটু এগিয়ে যেতে হবে—এ রকমই ছিল ঠিকানার বর্ণনায়। সেখানে থাকেন বর্ণাঢ্য হয়ে উঠতে না পারা এক ‘ওস্তাদ’ শিল্পী। শহরতলির নাম কামরাঙ্গীরচর। শিল্পীর নাম মোহাম্মদ শোয়েব। জন্ম ১৯৫৫ সাল।
৬৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ শোয়েবের সঙ্গে যখন তাঁর দশ বাই দশ ফুট হাফ বিল্ডিংয়ের ঘরে বসি, মুখোমুখি, তখন বাইরে অঝোর ধারা। বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা আছড়ে পড়ছে টিনের ওপর। আছড়ে পড়া প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা যেন এক–একটি সুরের ঝঙ্কার। যা হয়তো ‘তনুমনপ্রাণ’ ভরে উপভোগ করছেন একজন শিল্পী। তিন দশকের বেশি সময় ধরে উজ্জ্বল রঙে দোর্দণ্ড প্রতাপে তিনি সিনেমার ব্যানার এঁকেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। রাজ্জাক–ইলিয়াস কাঞ্চন–জসিমের মতো বিখ্যাত নায়কেরা তাঁকে সসম্মানে ডাকতেন নিজেদের সিনেমার ব্যানার আঁকতে। তাঁর সামনে বসে জানতে চেষ্টা করি সে ইতিহাস। জানতে চেষ্টা করি, ঢাকাই সিনেমার এক উপেক্ষিত অধ্যায়ের গল্প, আরেক উপেক্ষিত নদীর চরে গজিয়ে ওঠা অপরিকল্পিত শহরতলিতে বসে।
‘অবুঝ মন, জিঘাংসা, জোকার, বেদের মেয়ে জোছনা—সব ফিলিমের ব্যানার আঁকলাম। কত ফিলিম হিট হইলো! মুন, স্টার, লায়ন—এই সব সিনেমা হল আছিল তখন। এখন তো নাই। সামনে লাগানো থাকত ব্যানার। নিচে গেটের কাছে থাকত নায়িকার কাটাউট, লাল–নীল বাত্তি দেওয়া। মানুষ আনন্দ পাইত।’ উসকে দিতেই বলতে শুরু করলেন ওস্তাদ মোহাম্মদ শোয়েব।
গল্পটা ১৯৪৭–এর সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রাজাবাজারে ছিল তাঁর বাপ–দাদার বাস। ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর সাতচল্লিশের দেশভাগের ফেরে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় মোহাম্মদ শোয়েবের পরিবার—ঠিকানা নবাবপুর রোড, ঢাকা ১। ঢাকায় দাদা মোহাম্মদ ইব্রাহীম করতেন লুঙ্গি–গামছার ব্যবসা। বাবা মোহাম্মদ ইশহাক ছিলেন দর্জি। মা রাজিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ১৯৫৫ সালে পুরান ঢাকায় জন্ম মোহাম্মদ শোয়েবের। লেখাপড়া খুব একটা করেননি।

উজ্জ্বল রং মানুষকে আকর্ষণ করে খুব সহজে। সে জন্যই বিশ বাই দশ ফুট, বিশ বাই আট ফুট, পনেরো বাই দশ ফুট, দশ বাই দশ ফুট, বারো বাই আট ফুট মাপের মার্কিন কাপড়ে তৈরি ক্যানভাসে গ্রাফ করে নায়ক–নায়িকা বা ভিলেনের ছবি আঁকা হতো উজ্জ্বল রঙে। সেগুলোই ছিল সিনেমার ব্যানার। সিনেমা হলের দরজার ওপর বিশেষভাবে টাঙানো হতো সেসব। দূর থেকে দেখে আকৃষ্ট হতো মানুষ। শিহরিত হতো নায়িকার রূপ দেখে, নায়ক আর ভিলেনের অ্যাকশন দেখে। সেসব দৃশ্য নিপুণ হাতে আঁকতেন মোহাম্মদ শোয়েব তাঁর শিষ্যদের নিয়ে। ১৯৬৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি এঁকেছেন সিনেমার বর্ণিল জগতের ছবি, কাপড়ের ক্যানভাসে। করেছেন সিনেমার পোস্টার, প্রেস লে আউটের নকশা। বানিয়েছেন নায়ক, নায়িকা বা ভিলেনের কাটআউট। এসব ব্যানার, পোস্টার আর কাট আউট ঢাকা শহরের বলাকা, মুন, স্টার, লায়ন, অভিসার, যশোরের মণিহারসহ পুরো দেশের সিনেমা হলগুলোর শোভা বাড়িয়ে তুলত। ব্যবসা হতো রমরমা।
‘আপনাকে কেন সবাই ডাকতেন ব্যানার আঁকার জন্য? সেটা কি শুধু আপনার ভালো কাজের জন্য?’ প্রশ্ন শুনে একটু থেমে যান মোহাম্মদ শোয়েব। ‘ভালো কাজ কি না জানি না। তবে আমারে ডাকত। রাজ্জাক সাহেব নিজের প্রোডাকশনের ব্যানার বানাইতেন আমারে দিয়া। ইলিয়াস কাঞ্চন, জসিম সবাই ডাকত। কোয়ালিটি হয়তো ভালো আছিল। কে জানে!’ ‘আপনার ওস্তাদ কে ছিলেন?’
এখানে একটা পারিবারিক গল্প আছে মোহাম্মদ শোয়েবের। চান বিবি নামে তাঁর এক নানি ছিলেন। সিনেমার ব্যানার শিল্পীদের সঙ্গে ছিল চান বিবির যোগাযোগ। তিনিই ঢাকার আরেক ওস্তাদ শিল্পী ‘সিতারা পাবলিসিটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিল্পী আনোয়ারের হাতে তুলে দেন শোয়েবকে। সেই শুরু; সালটা ছিল ১৯৬৫। মোহাম্মদ শোয়েব তখন বালক মাত্র, বয়স ১৫ বছর। শিল্পী আনোয়ারের কাছে সিনেমার ব্যানার আঁকার প্রাথমিক কাজ শিখেছেন এক বছর। সে সূত্রে তাঁকেই ওস্তাদ মানেন মোহাম্মদ শোয়েব।
এর পরের বছর তিনি কাজ করতে যান নারিন্দায়, খাজা সাহেবের মালিকানাধীন ‘কার স্টুডিও’–তে। মোহাম্মদ শোয়েব সেখানে কাজ করেন ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। এ সময় তিনি জুনিয়র শিল্পী হিসেবে ব্যানারে ছোট ছোট চরিত্রগুলো আঁকার কাজ শুরু করেন এবং দক্ষ হয়ে ওঠেন। এর পর যত দিন গেছে প্রতিকৃতি আঁকায়, ক্যানভাসে অলংকরণ করায় দক্ষ হয়ে উঠেছেন মোহাম্মদ শোয়েব। তার পর তিনি কাজ করতে যান ‘রূপায়ণ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠান ছিল সিনেমার ব্যানার শিল্পের আরেক গুণী শিল্পী বীরেন দাসের মালিকানাধীন। সেখানে তিনি ব্যানার আঁকার কাজ করেন ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। পরে ক্রমান্বয়ে ‘চিত্রকর’, ‘ফোর স্টার’, ‘মুন আর্ট’ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। শেষে নিজের এক শিষ্যের সঙ্গে ‘একতা পাবলিশিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান। সেটি সচল ছিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত।

প্রায় চল্লিশ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবনে মোহাম্মদ শোয়েব সিনেমার ব্যানার শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছেন পরিশ্রম, আর মেধা দিয়ে। নিখুঁত প্রতিকৃতি আর কাপড়ের ওপর সূক্ষ্ম নকশা তোলায় তিনি ছিলেন ভীষণ দক্ষ। সমসাময়িক আর কোনো ব্যানার শিল্পী তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি বলে সব ‘আর্ট হাউসে’ ছিল তাঁর সমান কদর। যখন যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গিয়েছেন, সিনেমার ব্যানার ইন্ডাস্ট্রিতে সে প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল সেরা। তবে তিনি সিনেমার ব্যানার আঁকার মধ্যেই আটকে ছিলেন না। যখন সিনেমার ব্যানার এঁকে খ্যাতির মধ্যগগনে, তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য প্রচারের জন্য বিলবোর্ড, হোর্ডিং, দেয়ালচিত্র আঁকেন মোহাম্মদ শোয়েব। সেখানেও দাপটের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘ সময়। এ ছাড়া একসময় দেশে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা বিভিন্ন বিদেশি অতিথির প্রতিকৃতিও আঁকেন তিনি। এ ক্ষেত্রেও তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ২০১১ সালে ঢাকা সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের প্রতিকৃতি আঁকেন। সেটিই ছিল তাঁর শেষ কোনো রাষ্ট্রীয় অতিথির প্রতিকৃতি আঁকা। এ ছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার প্রতিকৃতি এঁকেছেন বিভিন্ন সময়। মোহাম্মদ শোয়েব অসামান্য দক্ষতায় প্রতিকৃতি আঁকতে পারতেন বলে এসব কাজে ডাক পেতেন।
২০০০ সালের পর ধীরে ধীরে কাজকর্ম কমতে শুরু করে সিনেমার ব্যানার শিল্পীদের। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেন, অনেকে আশায় বুক বেঁধে ‘লাইনে’ থাকার চেষ্টা করেন আরও কিছুদিন। একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় মোহাম্মদ শোয়েবকেও। সিনেমার ব্যানার আঁকার যুগ যখন ধীরে ধীরে অস্তমিত হয়ে আসতে শুরু করে, মোহাম্মদ শোয়েব তখন চার দশকের চর্চা করা বিদ্যাকে ভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহার করে রোজগার সচল রাখার চেষ্টা করে যান।
সিনেমার ব্যানার শিল্পী হিসেবে মোহাম্মদ শোয়েবের চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন সিটি করপোরেশনের কাছে। প্রবাসী বাঙালি শিল্পী রুহুল আমিন কাজলের সহায়তায় এবং কোপেন হেগেন সিটি করপোরেশনের আমন্ত্রণে ২০১৪ সালে মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর সহশিল্পী মোহাম্মদ হানিফ পাপ্পু ডেনমার্কে গিয়েছিলেন ছবি আঁকতে। সেখানে তাঁদের কাজ প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয় প্যারিসের ‘প্যালেই ডি টোকিও’ স্টুডিওতে, ২০১৯ সালে ‘সিটি প্রিন্সেস’ নামে একটি প্রদর্শনীতে। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক ঢাকা আর্ট সামিটে মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর দলের সিনেমার ব্যানারের আদলে আঁকা একটি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়। তবে তাতে নায়ক–নায়িকার পরিবর্তে আঁকা হয়েছিল আফ্রিকা ও বাংলাদেশের দীর্ঘ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এসব আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে মোহাম্মদ শোয়েবের পরিচিত হয়ে ওঠার পেছনে সহায়তা করেছে ঐতিহ্যবাহী ও সমকালীন শিল্প কেন্দ্র ‘যথাশিল্প’।
‘প্রায় চল্লিশ বছর সিনেমার ব্যানার আঁকলেন। পেছনে ফিরে তাকালে কী মনে হয় আপনার?’ প্রশ্ন শুনে মোহাম্মদ শোয়েব হাসেন। বৃষ্টির শব্দে তাঁর হাসির শব্দ চাপা পড়ে যায়। ‘যা করার আছিল, করছি। মন দিয়া করছি। আর কী?’ তাঁর নীরবতার আড়ালে আরও অনেক কিছু আছে। আছে শিল্পের প্রতি সীমাহীন দরদ। আছে নিঃসিম শূন্যতা। আছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। ১৯৯৪ সালে স্ত্রী বানু বেগম মৃত্যুবরণ করেছেন। পরের বছরই তাঁর বড় মেয়ে রিমা আক্তার মারা গেলে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। অন্য সন্তানদের বড় করেছেন। তাঁর অন্য সন্তানেরা—ছেলে ইমরান, মেয়ে সীমা আক্তার ও সোমা আক্তার বড় হয়েছেন। তাঁদের বিয়েও হয়ে গেছে। এখন নিঃসঙ্গতা জেঁকে বসেছে জীবনে।
যথাশিল্পের কর্ণধার গবেষক ও শিল্পী শাওন আকন্দের কাছে জানতে চাই, বাংলাদেশের চিত্রকলার ইতিহাসে মোহাম্মদ শোয়েবের গুরুত্ব কী। কোনো দ্বিধা ছাড়াই শাওন আকন্দ বলেন, ‘হি ইজ দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস। উনিশ শতকে রাজা রবি বর্মার হাতে তৈরি হয়েছিল এক বিশেষ শিল্প ঘরানার। পরবর্তীকালে ভারতের কোলাপুরের বাবুরাও পেইন্টারের হাত ধরে এবং মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আলো–বাতাসে সে শিল্প ঘরানা সিনেমার ব্যানার শিল্প হিসেবে বেড়ে উঠেছিল। মকবুল ফিদা হুসেন কিংবা আমাদের নিতুন কুণ্ডও এক সময় যুক্ত ছিলেন এ বিশেষ ধরনের শিল্পচর্চায়। উনিশ শতকে গড়ে ওঠা সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের নিরিখে বাংলাদেশে মোহাম্মদ শোয়েব সম্ভবত শেষ গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী।’
বৃষ্টি পড়ে কামরাঙ্গীরচরে। বোদনার অনুষ্টুপ ছন্দ বেজে যায় মোহাম্মদ শোয়েবের টিনের চালে। কামরাঙ্গীরচর, চরের এ ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’ ঘর সিনেমা ব্যানারের রঙিন ক্যানভাস নয়। এখানে রং–তুলি হাতে নিয়ে বসে নেই কোনো ওস্তাদ। বসে আছেন এক বিধ্বস্ত শিল্পী—দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস মোহাম্মদ শোয়েব।

ঢাকা: বুড়িগঙ্গার বুকে গড়ে ওঠা গমগমে শহরতলি আষাঢ়ের ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমরা খুঁজতে থাকি ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’–এর একটি ছাপড়া ঘর। থানা ভবন থেকে পশ্চিম দিকে একটু এগিয়ে যেতে হবে—এ রকমই ছিল ঠিকানার বর্ণনায়। সেখানে থাকেন বর্ণাঢ্য হয়ে উঠতে না পারা এক ‘ওস্তাদ’ শিল্পী। শহরতলির নাম কামরাঙ্গীরচর। শিল্পীর নাম মোহাম্মদ শোয়েব। জন্ম ১৯৫৫ সাল।
৬৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ শোয়েবের সঙ্গে যখন তাঁর দশ বাই দশ ফুট হাফ বিল্ডিংয়ের ঘরে বসি, মুখোমুখি, তখন বাইরে অঝোর ধারা। বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা আছড়ে পড়ছে টিনের ওপর। আছড়ে পড়া প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা যেন এক–একটি সুরের ঝঙ্কার। যা হয়তো ‘তনুমনপ্রাণ’ ভরে উপভোগ করছেন একজন শিল্পী। তিন দশকের বেশি সময় ধরে উজ্জ্বল রঙে দোর্দণ্ড প্রতাপে তিনি সিনেমার ব্যানার এঁকেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। রাজ্জাক–ইলিয়াস কাঞ্চন–জসিমের মতো বিখ্যাত নায়কেরা তাঁকে সসম্মানে ডাকতেন নিজেদের সিনেমার ব্যানার আঁকতে। তাঁর সামনে বসে জানতে চেষ্টা করি সে ইতিহাস। জানতে চেষ্টা করি, ঢাকাই সিনেমার এক উপেক্ষিত অধ্যায়ের গল্প, আরেক উপেক্ষিত নদীর চরে গজিয়ে ওঠা অপরিকল্পিত শহরতলিতে বসে।
‘অবুঝ মন, জিঘাংসা, জোকার, বেদের মেয়ে জোছনা—সব ফিলিমের ব্যানার আঁকলাম। কত ফিলিম হিট হইলো! মুন, স্টার, লায়ন—এই সব সিনেমা হল আছিল তখন। এখন তো নাই। সামনে লাগানো থাকত ব্যানার। নিচে গেটের কাছে থাকত নায়িকার কাটাউট, লাল–নীল বাত্তি দেওয়া। মানুষ আনন্দ পাইত।’ উসকে দিতেই বলতে শুরু করলেন ওস্তাদ মোহাম্মদ শোয়েব।
গল্পটা ১৯৪৭–এর সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রাজাবাজারে ছিল তাঁর বাপ–দাদার বাস। ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর সাতচল্লিশের দেশভাগের ফেরে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় মোহাম্মদ শোয়েবের পরিবার—ঠিকানা নবাবপুর রোড, ঢাকা ১। ঢাকায় দাদা মোহাম্মদ ইব্রাহীম করতেন লুঙ্গি–গামছার ব্যবসা। বাবা মোহাম্মদ ইশহাক ছিলেন দর্জি। মা রাজিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ১৯৫৫ সালে পুরান ঢাকায় জন্ম মোহাম্মদ শোয়েবের। লেখাপড়া খুব একটা করেননি।

উজ্জ্বল রং মানুষকে আকর্ষণ করে খুব সহজে। সে জন্যই বিশ বাই দশ ফুট, বিশ বাই আট ফুট, পনেরো বাই দশ ফুট, দশ বাই দশ ফুট, বারো বাই আট ফুট মাপের মার্কিন কাপড়ে তৈরি ক্যানভাসে গ্রাফ করে নায়ক–নায়িকা বা ভিলেনের ছবি আঁকা হতো উজ্জ্বল রঙে। সেগুলোই ছিল সিনেমার ব্যানার। সিনেমা হলের দরজার ওপর বিশেষভাবে টাঙানো হতো সেসব। দূর থেকে দেখে আকৃষ্ট হতো মানুষ। শিহরিত হতো নায়িকার রূপ দেখে, নায়ক আর ভিলেনের অ্যাকশন দেখে। সেসব দৃশ্য নিপুণ হাতে আঁকতেন মোহাম্মদ শোয়েব তাঁর শিষ্যদের নিয়ে। ১৯৬৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি এঁকেছেন সিনেমার বর্ণিল জগতের ছবি, কাপড়ের ক্যানভাসে। করেছেন সিনেমার পোস্টার, প্রেস লে আউটের নকশা। বানিয়েছেন নায়ক, নায়িকা বা ভিলেনের কাটআউট। এসব ব্যানার, পোস্টার আর কাট আউট ঢাকা শহরের বলাকা, মুন, স্টার, লায়ন, অভিসার, যশোরের মণিহারসহ পুরো দেশের সিনেমা হলগুলোর শোভা বাড়িয়ে তুলত। ব্যবসা হতো রমরমা।
‘আপনাকে কেন সবাই ডাকতেন ব্যানার আঁকার জন্য? সেটা কি শুধু আপনার ভালো কাজের জন্য?’ প্রশ্ন শুনে একটু থেমে যান মোহাম্মদ শোয়েব। ‘ভালো কাজ কি না জানি না। তবে আমারে ডাকত। রাজ্জাক সাহেব নিজের প্রোডাকশনের ব্যানার বানাইতেন আমারে দিয়া। ইলিয়াস কাঞ্চন, জসিম সবাই ডাকত। কোয়ালিটি হয়তো ভালো আছিল। কে জানে!’ ‘আপনার ওস্তাদ কে ছিলেন?’
এখানে একটা পারিবারিক গল্প আছে মোহাম্মদ শোয়েবের। চান বিবি নামে তাঁর এক নানি ছিলেন। সিনেমার ব্যানার শিল্পীদের সঙ্গে ছিল চান বিবির যোগাযোগ। তিনিই ঢাকার আরেক ওস্তাদ শিল্পী ‘সিতারা পাবলিসিটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিল্পী আনোয়ারের হাতে তুলে দেন শোয়েবকে। সেই শুরু; সালটা ছিল ১৯৬৫। মোহাম্মদ শোয়েব তখন বালক মাত্র, বয়স ১৫ বছর। শিল্পী আনোয়ারের কাছে সিনেমার ব্যানার আঁকার প্রাথমিক কাজ শিখেছেন এক বছর। সে সূত্রে তাঁকেই ওস্তাদ মানেন মোহাম্মদ শোয়েব।
এর পরের বছর তিনি কাজ করতে যান নারিন্দায়, খাজা সাহেবের মালিকানাধীন ‘কার স্টুডিও’–তে। মোহাম্মদ শোয়েব সেখানে কাজ করেন ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। এ সময় তিনি জুনিয়র শিল্পী হিসেবে ব্যানারে ছোট ছোট চরিত্রগুলো আঁকার কাজ শুরু করেন এবং দক্ষ হয়ে ওঠেন। এর পর যত দিন গেছে প্রতিকৃতি আঁকায়, ক্যানভাসে অলংকরণ করায় দক্ষ হয়ে উঠেছেন মোহাম্মদ শোয়েব। তার পর তিনি কাজ করতে যান ‘রূপায়ণ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠান ছিল সিনেমার ব্যানার শিল্পের আরেক গুণী শিল্পী বীরেন দাসের মালিকানাধীন। সেখানে তিনি ব্যানার আঁকার কাজ করেন ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। পরে ক্রমান্বয়ে ‘চিত্রকর’, ‘ফোর স্টার’, ‘মুন আর্ট’ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। শেষে নিজের এক শিষ্যের সঙ্গে ‘একতা পাবলিশিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান। সেটি সচল ছিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত।

প্রায় চল্লিশ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবনে মোহাম্মদ শোয়েব সিনেমার ব্যানার শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছেন পরিশ্রম, আর মেধা দিয়ে। নিখুঁত প্রতিকৃতি আর কাপড়ের ওপর সূক্ষ্ম নকশা তোলায় তিনি ছিলেন ভীষণ দক্ষ। সমসাময়িক আর কোনো ব্যানার শিল্পী তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি বলে সব ‘আর্ট হাউসে’ ছিল তাঁর সমান কদর। যখন যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গিয়েছেন, সিনেমার ব্যানার ইন্ডাস্ট্রিতে সে প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল সেরা। তবে তিনি সিনেমার ব্যানার আঁকার মধ্যেই আটকে ছিলেন না। যখন সিনেমার ব্যানার এঁকে খ্যাতির মধ্যগগনে, তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য প্রচারের জন্য বিলবোর্ড, হোর্ডিং, দেয়ালচিত্র আঁকেন মোহাম্মদ শোয়েব। সেখানেও দাপটের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘ সময়। এ ছাড়া একসময় দেশে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা বিভিন্ন বিদেশি অতিথির প্রতিকৃতিও আঁকেন তিনি। এ ক্ষেত্রেও তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ২০১১ সালে ঢাকা সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের প্রতিকৃতি আঁকেন। সেটিই ছিল তাঁর শেষ কোনো রাষ্ট্রীয় অতিথির প্রতিকৃতি আঁকা। এ ছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার প্রতিকৃতি এঁকেছেন বিভিন্ন সময়। মোহাম্মদ শোয়েব অসামান্য দক্ষতায় প্রতিকৃতি আঁকতে পারতেন বলে এসব কাজে ডাক পেতেন।
২০০০ সালের পর ধীরে ধীরে কাজকর্ম কমতে শুরু করে সিনেমার ব্যানার শিল্পীদের। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেন, অনেকে আশায় বুক বেঁধে ‘লাইনে’ থাকার চেষ্টা করেন আরও কিছুদিন। একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় মোহাম্মদ শোয়েবকেও। সিনেমার ব্যানার আঁকার যুগ যখন ধীরে ধীরে অস্তমিত হয়ে আসতে শুরু করে, মোহাম্মদ শোয়েব তখন চার দশকের চর্চা করা বিদ্যাকে ভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহার করে রোজগার সচল রাখার চেষ্টা করে যান।
সিনেমার ব্যানার শিল্পী হিসেবে মোহাম্মদ শোয়েবের চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন সিটি করপোরেশনের কাছে। প্রবাসী বাঙালি শিল্পী রুহুল আমিন কাজলের সহায়তায় এবং কোপেন হেগেন সিটি করপোরেশনের আমন্ত্রণে ২০১৪ সালে মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর সহশিল্পী মোহাম্মদ হানিফ পাপ্পু ডেনমার্কে গিয়েছিলেন ছবি আঁকতে। সেখানে তাঁদের কাজ প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয় প্যারিসের ‘প্যালেই ডি টোকিও’ স্টুডিওতে, ২০১৯ সালে ‘সিটি প্রিন্সেস’ নামে একটি প্রদর্শনীতে। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক ঢাকা আর্ট সামিটে মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর দলের সিনেমার ব্যানারের আদলে আঁকা একটি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়। তবে তাতে নায়ক–নায়িকার পরিবর্তে আঁকা হয়েছিল আফ্রিকা ও বাংলাদেশের দীর্ঘ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এসব আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে মোহাম্মদ শোয়েবের পরিচিত হয়ে ওঠার পেছনে সহায়তা করেছে ঐতিহ্যবাহী ও সমকালীন শিল্প কেন্দ্র ‘যথাশিল্প’।
‘প্রায় চল্লিশ বছর সিনেমার ব্যানার আঁকলেন। পেছনে ফিরে তাকালে কী মনে হয় আপনার?’ প্রশ্ন শুনে মোহাম্মদ শোয়েব হাসেন। বৃষ্টির শব্দে তাঁর হাসির শব্দ চাপা পড়ে যায়। ‘যা করার আছিল, করছি। মন দিয়া করছি। আর কী?’ তাঁর নীরবতার আড়ালে আরও অনেক কিছু আছে। আছে শিল্পের প্রতি সীমাহীন দরদ। আছে নিঃসিম শূন্যতা। আছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। ১৯৯৪ সালে স্ত্রী বানু বেগম মৃত্যুবরণ করেছেন। পরের বছরই তাঁর বড় মেয়ে রিমা আক্তার মারা গেলে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। অন্য সন্তানদের বড় করেছেন। তাঁর অন্য সন্তানেরা—ছেলে ইমরান, মেয়ে সীমা আক্তার ও সোমা আক্তার বড় হয়েছেন। তাঁদের বিয়েও হয়ে গেছে। এখন নিঃসঙ্গতা জেঁকে বসেছে জীবনে।
যথাশিল্পের কর্ণধার গবেষক ও শিল্পী শাওন আকন্দের কাছে জানতে চাই, বাংলাদেশের চিত্রকলার ইতিহাসে মোহাম্মদ শোয়েবের গুরুত্ব কী। কোনো দ্বিধা ছাড়াই শাওন আকন্দ বলেন, ‘হি ইজ দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস। উনিশ শতকে রাজা রবি বর্মার হাতে তৈরি হয়েছিল এক বিশেষ শিল্প ঘরানার। পরবর্তীকালে ভারতের কোলাপুরের বাবুরাও পেইন্টারের হাত ধরে এবং মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আলো–বাতাসে সে শিল্প ঘরানা সিনেমার ব্যানার শিল্প হিসেবে বেড়ে উঠেছিল। মকবুল ফিদা হুসেন কিংবা আমাদের নিতুন কুণ্ডও এক সময় যুক্ত ছিলেন এ বিশেষ ধরনের শিল্পচর্চায়। উনিশ শতকে গড়ে ওঠা সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের নিরিখে বাংলাদেশে মোহাম্মদ শোয়েব সম্ভবত শেষ গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী।’
বৃষ্টি পড়ে কামরাঙ্গীরচরে। বোদনার অনুষ্টুপ ছন্দ বেজে যায় মোহাম্মদ শোয়েবের টিনের চালে। কামরাঙ্গীরচর, চরের এ ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’ ঘর সিনেমা ব্যানারের রঙিন ক্যানভাস নয়। এখানে রং–তুলি হাতে নিয়ে বসে নেই কোনো ওস্তাদ। বসে আছেন এক বিধ্বস্ত শিল্পী—দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস মোহাম্মদ শোয়েব।
রজত কান্তি রায়

ঢাকা: বুড়িগঙ্গার বুকে গড়ে ওঠা গমগমে শহরতলি আষাঢ়ের ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমরা খুঁজতে থাকি ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’–এর একটি ছাপড়া ঘর। থানা ভবন থেকে পশ্চিম দিকে একটু এগিয়ে যেতে হবে—এ রকমই ছিল ঠিকানার বর্ণনায়। সেখানে থাকেন বর্ণাঢ্য হয়ে উঠতে না পারা এক ‘ওস্তাদ’ শিল্পী। শহরতলির নাম কামরাঙ্গীরচর। শিল্পীর নাম মোহাম্মদ শোয়েব। জন্ম ১৯৫৫ সাল।
৬৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ শোয়েবের সঙ্গে যখন তাঁর দশ বাই দশ ফুট হাফ বিল্ডিংয়ের ঘরে বসি, মুখোমুখি, তখন বাইরে অঝোর ধারা। বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা আছড়ে পড়ছে টিনের ওপর। আছড়ে পড়া প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা যেন এক–একটি সুরের ঝঙ্কার। যা হয়তো ‘তনুমনপ্রাণ’ ভরে উপভোগ করছেন একজন শিল্পী। তিন দশকের বেশি সময় ধরে উজ্জ্বল রঙে দোর্দণ্ড প্রতাপে তিনি সিনেমার ব্যানার এঁকেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। রাজ্জাক–ইলিয়াস কাঞ্চন–জসিমের মতো বিখ্যাত নায়কেরা তাঁকে সসম্মানে ডাকতেন নিজেদের সিনেমার ব্যানার আঁকতে। তাঁর সামনে বসে জানতে চেষ্টা করি সে ইতিহাস। জানতে চেষ্টা করি, ঢাকাই সিনেমার এক উপেক্ষিত অধ্যায়ের গল্প, আরেক উপেক্ষিত নদীর চরে গজিয়ে ওঠা অপরিকল্পিত শহরতলিতে বসে।
‘অবুঝ মন, জিঘাংসা, জোকার, বেদের মেয়ে জোছনা—সব ফিলিমের ব্যানার আঁকলাম। কত ফিলিম হিট হইলো! মুন, স্টার, লায়ন—এই সব সিনেমা হল আছিল তখন। এখন তো নাই। সামনে লাগানো থাকত ব্যানার। নিচে গেটের কাছে থাকত নায়িকার কাটাউট, লাল–নীল বাত্তি দেওয়া। মানুষ আনন্দ পাইত।’ উসকে দিতেই বলতে শুরু করলেন ওস্তাদ মোহাম্মদ শোয়েব।
গল্পটা ১৯৪৭–এর সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রাজাবাজারে ছিল তাঁর বাপ–দাদার বাস। ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর সাতচল্লিশের দেশভাগের ফেরে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় মোহাম্মদ শোয়েবের পরিবার—ঠিকানা নবাবপুর রোড, ঢাকা ১। ঢাকায় দাদা মোহাম্মদ ইব্রাহীম করতেন লুঙ্গি–গামছার ব্যবসা। বাবা মোহাম্মদ ইশহাক ছিলেন দর্জি। মা রাজিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ১৯৫৫ সালে পুরান ঢাকায় জন্ম মোহাম্মদ শোয়েবের। লেখাপড়া খুব একটা করেননি।

উজ্জ্বল রং মানুষকে আকর্ষণ করে খুব সহজে। সে জন্যই বিশ বাই দশ ফুট, বিশ বাই আট ফুট, পনেরো বাই দশ ফুট, দশ বাই দশ ফুট, বারো বাই আট ফুট মাপের মার্কিন কাপড়ে তৈরি ক্যানভাসে গ্রাফ করে নায়ক–নায়িকা বা ভিলেনের ছবি আঁকা হতো উজ্জ্বল রঙে। সেগুলোই ছিল সিনেমার ব্যানার। সিনেমা হলের দরজার ওপর বিশেষভাবে টাঙানো হতো সেসব। দূর থেকে দেখে আকৃষ্ট হতো মানুষ। শিহরিত হতো নায়িকার রূপ দেখে, নায়ক আর ভিলেনের অ্যাকশন দেখে। সেসব দৃশ্য নিপুণ হাতে আঁকতেন মোহাম্মদ শোয়েব তাঁর শিষ্যদের নিয়ে। ১৯৬৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি এঁকেছেন সিনেমার বর্ণিল জগতের ছবি, কাপড়ের ক্যানভাসে। করেছেন সিনেমার পোস্টার, প্রেস লে আউটের নকশা। বানিয়েছেন নায়ক, নায়িকা বা ভিলেনের কাটআউট। এসব ব্যানার, পোস্টার আর কাট আউট ঢাকা শহরের বলাকা, মুন, স্টার, লায়ন, অভিসার, যশোরের মণিহারসহ পুরো দেশের সিনেমা হলগুলোর শোভা বাড়িয়ে তুলত। ব্যবসা হতো রমরমা।
‘আপনাকে কেন সবাই ডাকতেন ব্যানার আঁকার জন্য? সেটা কি শুধু আপনার ভালো কাজের জন্য?’ প্রশ্ন শুনে একটু থেমে যান মোহাম্মদ শোয়েব। ‘ভালো কাজ কি না জানি না। তবে আমারে ডাকত। রাজ্জাক সাহেব নিজের প্রোডাকশনের ব্যানার বানাইতেন আমারে দিয়া। ইলিয়াস কাঞ্চন, জসিম সবাই ডাকত। কোয়ালিটি হয়তো ভালো আছিল। কে জানে!’ ‘আপনার ওস্তাদ কে ছিলেন?’
এখানে একটা পারিবারিক গল্প আছে মোহাম্মদ শোয়েবের। চান বিবি নামে তাঁর এক নানি ছিলেন। সিনেমার ব্যানার শিল্পীদের সঙ্গে ছিল চান বিবির যোগাযোগ। তিনিই ঢাকার আরেক ওস্তাদ শিল্পী ‘সিতারা পাবলিসিটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিল্পী আনোয়ারের হাতে তুলে দেন শোয়েবকে। সেই শুরু; সালটা ছিল ১৯৬৫। মোহাম্মদ শোয়েব তখন বালক মাত্র, বয়স ১৫ বছর। শিল্পী আনোয়ারের কাছে সিনেমার ব্যানার আঁকার প্রাথমিক কাজ শিখেছেন এক বছর। সে সূত্রে তাঁকেই ওস্তাদ মানেন মোহাম্মদ শোয়েব।
এর পরের বছর তিনি কাজ করতে যান নারিন্দায়, খাজা সাহেবের মালিকানাধীন ‘কার স্টুডিও’–তে। মোহাম্মদ শোয়েব সেখানে কাজ করেন ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। এ সময় তিনি জুনিয়র শিল্পী হিসেবে ব্যানারে ছোট ছোট চরিত্রগুলো আঁকার কাজ শুরু করেন এবং দক্ষ হয়ে ওঠেন। এর পর যত দিন গেছে প্রতিকৃতি আঁকায়, ক্যানভাসে অলংকরণ করায় দক্ষ হয়ে উঠেছেন মোহাম্মদ শোয়েব। তার পর তিনি কাজ করতে যান ‘রূপায়ণ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠান ছিল সিনেমার ব্যানার শিল্পের আরেক গুণী শিল্পী বীরেন দাসের মালিকানাধীন। সেখানে তিনি ব্যানার আঁকার কাজ করেন ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। পরে ক্রমান্বয়ে ‘চিত্রকর’, ‘ফোর স্টার’, ‘মুন আর্ট’ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। শেষে নিজের এক শিষ্যের সঙ্গে ‘একতা পাবলিশিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান। সেটি সচল ছিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত।

প্রায় চল্লিশ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবনে মোহাম্মদ শোয়েব সিনেমার ব্যানার শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছেন পরিশ্রম, আর মেধা দিয়ে। নিখুঁত প্রতিকৃতি আর কাপড়ের ওপর সূক্ষ্ম নকশা তোলায় তিনি ছিলেন ভীষণ দক্ষ। সমসাময়িক আর কোনো ব্যানার শিল্পী তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি বলে সব ‘আর্ট হাউসে’ ছিল তাঁর সমান কদর। যখন যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গিয়েছেন, সিনেমার ব্যানার ইন্ডাস্ট্রিতে সে প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল সেরা। তবে তিনি সিনেমার ব্যানার আঁকার মধ্যেই আটকে ছিলেন না। যখন সিনেমার ব্যানার এঁকে খ্যাতির মধ্যগগনে, তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য প্রচারের জন্য বিলবোর্ড, হোর্ডিং, দেয়ালচিত্র আঁকেন মোহাম্মদ শোয়েব। সেখানেও দাপটের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘ সময়। এ ছাড়া একসময় দেশে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা বিভিন্ন বিদেশি অতিথির প্রতিকৃতিও আঁকেন তিনি। এ ক্ষেত্রেও তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ২০১১ সালে ঢাকা সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের প্রতিকৃতি আঁকেন। সেটিই ছিল তাঁর শেষ কোনো রাষ্ট্রীয় অতিথির প্রতিকৃতি আঁকা। এ ছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার প্রতিকৃতি এঁকেছেন বিভিন্ন সময়। মোহাম্মদ শোয়েব অসামান্য দক্ষতায় প্রতিকৃতি আঁকতে পারতেন বলে এসব কাজে ডাক পেতেন।
২০০০ সালের পর ধীরে ধীরে কাজকর্ম কমতে শুরু করে সিনেমার ব্যানার শিল্পীদের। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেন, অনেকে আশায় বুক বেঁধে ‘লাইনে’ থাকার চেষ্টা করেন আরও কিছুদিন। একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় মোহাম্মদ শোয়েবকেও। সিনেমার ব্যানার আঁকার যুগ যখন ধীরে ধীরে অস্তমিত হয়ে আসতে শুরু করে, মোহাম্মদ শোয়েব তখন চার দশকের চর্চা করা বিদ্যাকে ভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহার করে রোজগার সচল রাখার চেষ্টা করে যান।
সিনেমার ব্যানার শিল্পী হিসেবে মোহাম্মদ শোয়েবের চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন সিটি করপোরেশনের কাছে। প্রবাসী বাঙালি শিল্পী রুহুল আমিন কাজলের সহায়তায় এবং কোপেন হেগেন সিটি করপোরেশনের আমন্ত্রণে ২০১৪ সালে মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর সহশিল্পী মোহাম্মদ হানিফ পাপ্পু ডেনমার্কে গিয়েছিলেন ছবি আঁকতে। সেখানে তাঁদের কাজ প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয় প্যারিসের ‘প্যালেই ডি টোকিও’ স্টুডিওতে, ২০১৯ সালে ‘সিটি প্রিন্সেস’ নামে একটি প্রদর্শনীতে। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক ঢাকা আর্ট সামিটে মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর দলের সিনেমার ব্যানারের আদলে আঁকা একটি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়। তবে তাতে নায়ক–নায়িকার পরিবর্তে আঁকা হয়েছিল আফ্রিকা ও বাংলাদেশের দীর্ঘ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এসব আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে মোহাম্মদ শোয়েবের পরিচিত হয়ে ওঠার পেছনে সহায়তা করেছে ঐতিহ্যবাহী ও সমকালীন শিল্প কেন্দ্র ‘যথাশিল্প’।
‘প্রায় চল্লিশ বছর সিনেমার ব্যানার আঁকলেন। পেছনে ফিরে তাকালে কী মনে হয় আপনার?’ প্রশ্ন শুনে মোহাম্মদ শোয়েব হাসেন। বৃষ্টির শব্দে তাঁর হাসির শব্দ চাপা পড়ে যায়। ‘যা করার আছিল, করছি। মন দিয়া করছি। আর কী?’ তাঁর নীরবতার আড়ালে আরও অনেক কিছু আছে। আছে শিল্পের প্রতি সীমাহীন দরদ। আছে নিঃসিম শূন্যতা। আছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। ১৯৯৪ সালে স্ত্রী বানু বেগম মৃত্যুবরণ করেছেন। পরের বছরই তাঁর বড় মেয়ে রিমা আক্তার মারা গেলে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। অন্য সন্তানদের বড় করেছেন। তাঁর অন্য সন্তানেরা—ছেলে ইমরান, মেয়ে সীমা আক্তার ও সোমা আক্তার বড় হয়েছেন। তাঁদের বিয়েও হয়ে গেছে। এখন নিঃসঙ্গতা জেঁকে বসেছে জীবনে।
যথাশিল্পের কর্ণধার গবেষক ও শিল্পী শাওন আকন্দের কাছে জানতে চাই, বাংলাদেশের চিত্রকলার ইতিহাসে মোহাম্মদ শোয়েবের গুরুত্ব কী। কোনো দ্বিধা ছাড়াই শাওন আকন্দ বলেন, ‘হি ইজ দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস। উনিশ শতকে রাজা রবি বর্মার হাতে তৈরি হয়েছিল এক বিশেষ শিল্প ঘরানার। পরবর্তীকালে ভারতের কোলাপুরের বাবুরাও পেইন্টারের হাত ধরে এবং মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আলো–বাতাসে সে শিল্প ঘরানা সিনেমার ব্যানার শিল্প হিসেবে বেড়ে উঠেছিল। মকবুল ফিদা হুসেন কিংবা আমাদের নিতুন কুণ্ডও এক সময় যুক্ত ছিলেন এ বিশেষ ধরনের শিল্পচর্চায়। উনিশ শতকে গড়ে ওঠা সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের নিরিখে বাংলাদেশে মোহাম্মদ শোয়েব সম্ভবত শেষ গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী।’
বৃষ্টি পড়ে কামরাঙ্গীরচরে। বোদনার অনুষ্টুপ ছন্দ বেজে যায় মোহাম্মদ শোয়েবের টিনের চালে। কামরাঙ্গীরচর, চরের এ ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’ ঘর সিনেমা ব্যানারের রঙিন ক্যানভাস নয়। এখানে রং–তুলি হাতে নিয়ে বসে নেই কোনো ওস্তাদ। বসে আছেন এক বিধ্বস্ত শিল্পী—দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস মোহাম্মদ শোয়েব।

ঢাকা: বুড়িগঙ্গার বুকে গড়ে ওঠা গমগমে শহরতলি আষাঢ়ের ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমরা খুঁজতে থাকি ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’–এর একটি ছাপড়া ঘর। থানা ভবন থেকে পশ্চিম দিকে একটু এগিয়ে যেতে হবে—এ রকমই ছিল ঠিকানার বর্ণনায়। সেখানে থাকেন বর্ণাঢ্য হয়ে উঠতে না পারা এক ‘ওস্তাদ’ শিল্পী। শহরতলির নাম কামরাঙ্গীরচর। শিল্পীর নাম মোহাম্মদ শোয়েব। জন্ম ১৯৫৫ সাল।
৬৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ শোয়েবের সঙ্গে যখন তাঁর দশ বাই দশ ফুট হাফ বিল্ডিংয়ের ঘরে বসি, মুখোমুখি, তখন বাইরে অঝোর ধারা। বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা আছড়ে পড়ছে টিনের ওপর। আছড়ে পড়া প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা যেন এক–একটি সুরের ঝঙ্কার। যা হয়তো ‘তনুমনপ্রাণ’ ভরে উপভোগ করছেন একজন শিল্পী। তিন দশকের বেশি সময় ধরে উজ্জ্বল রঙে দোর্দণ্ড প্রতাপে তিনি সিনেমার ব্যানার এঁকেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। রাজ্জাক–ইলিয়াস কাঞ্চন–জসিমের মতো বিখ্যাত নায়কেরা তাঁকে সসম্মানে ডাকতেন নিজেদের সিনেমার ব্যানার আঁকতে। তাঁর সামনে বসে জানতে চেষ্টা করি সে ইতিহাস। জানতে চেষ্টা করি, ঢাকাই সিনেমার এক উপেক্ষিত অধ্যায়ের গল্প, আরেক উপেক্ষিত নদীর চরে গজিয়ে ওঠা অপরিকল্পিত শহরতলিতে বসে।
‘অবুঝ মন, জিঘাংসা, জোকার, বেদের মেয়ে জোছনা—সব ফিলিমের ব্যানার আঁকলাম। কত ফিলিম হিট হইলো! মুন, স্টার, লায়ন—এই সব সিনেমা হল আছিল তখন। এখন তো নাই। সামনে লাগানো থাকত ব্যানার। নিচে গেটের কাছে থাকত নায়িকার কাটাউট, লাল–নীল বাত্তি দেওয়া। মানুষ আনন্দ পাইত।’ উসকে দিতেই বলতে শুরু করলেন ওস্তাদ মোহাম্মদ শোয়েব।
গল্পটা ১৯৪৭–এর সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রাজাবাজারে ছিল তাঁর বাপ–দাদার বাস। ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর সাতচল্লিশের দেশভাগের ফেরে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় মোহাম্মদ শোয়েবের পরিবার—ঠিকানা নবাবপুর রোড, ঢাকা ১। ঢাকায় দাদা মোহাম্মদ ইব্রাহীম করতেন লুঙ্গি–গামছার ব্যবসা। বাবা মোহাম্মদ ইশহাক ছিলেন দর্জি। মা রাজিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ১৯৫৫ সালে পুরান ঢাকায় জন্ম মোহাম্মদ শোয়েবের। লেখাপড়া খুব একটা করেননি।

উজ্জ্বল রং মানুষকে আকর্ষণ করে খুব সহজে। সে জন্যই বিশ বাই দশ ফুট, বিশ বাই আট ফুট, পনেরো বাই দশ ফুট, দশ বাই দশ ফুট, বারো বাই আট ফুট মাপের মার্কিন কাপড়ে তৈরি ক্যানভাসে গ্রাফ করে নায়ক–নায়িকা বা ভিলেনের ছবি আঁকা হতো উজ্জ্বল রঙে। সেগুলোই ছিল সিনেমার ব্যানার। সিনেমা হলের দরজার ওপর বিশেষভাবে টাঙানো হতো সেসব। দূর থেকে দেখে আকৃষ্ট হতো মানুষ। শিহরিত হতো নায়িকার রূপ দেখে, নায়ক আর ভিলেনের অ্যাকশন দেখে। সেসব দৃশ্য নিপুণ হাতে আঁকতেন মোহাম্মদ শোয়েব তাঁর শিষ্যদের নিয়ে। ১৯৬৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি এঁকেছেন সিনেমার বর্ণিল জগতের ছবি, কাপড়ের ক্যানভাসে। করেছেন সিনেমার পোস্টার, প্রেস লে আউটের নকশা। বানিয়েছেন নায়ক, নায়িকা বা ভিলেনের কাটআউট। এসব ব্যানার, পোস্টার আর কাট আউট ঢাকা শহরের বলাকা, মুন, স্টার, লায়ন, অভিসার, যশোরের মণিহারসহ পুরো দেশের সিনেমা হলগুলোর শোভা বাড়িয়ে তুলত। ব্যবসা হতো রমরমা।
‘আপনাকে কেন সবাই ডাকতেন ব্যানার আঁকার জন্য? সেটা কি শুধু আপনার ভালো কাজের জন্য?’ প্রশ্ন শুনে একটু থেমে যান মোহাম্মদ শোয়েব। ‘ভালো কাজ কি না জানি না। তবে আমারে ডাকত। রাজ্জাক সাহেব নিজের প্রোডাকশনের ব্যানার বানাইতেন আমারে দিয়া। ইলিয়াস কাঞ্চন, জসিম সবাই ডাকত। কোয়ালিটি হয়তো ভালো আছিল। কে জানে!’ ‘আপনার ওস্তাদ কে ছিলেন?’
এখানে একটা পারিবারিক গল্প আছে মোহাম্মদ শোয়েবের। চান বিবি নামে তাঁর এক নানি ছিলেন। সিনেমার ব্যানার শিল্পীদের সঙ্গে ছিল চান বিবির যোগাযোগ। তিনিই ঢাকার আরেক ওস্তাদ শিল্পী ‘সিতারা পাবলিসিটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিল্পী আনোয়ারের হাতে তুলে দেন শোয়েবকে। সেই শুরু; সালটা ছিল ১৯৬৫। মোহাম্মদ শোয়েব তখন বালক মাত্র, বয়স ১৫ বছর। শিল্পী আনোয়ারের কাছে সিনেমার ব্যানার আঁকার প্রাথমিক কাজ শিখেছেন এক বছর। সে সূত্রে তাঁকেই ওস্তাদ মানেন মোহাম্মদ শোয়েব।
এর পরের বছর তিনি কাজ করতে যান নারিন্দায়, খাজা সাহেবের মালিকানাধীন ‘কার স্টুডিও’–তে। মোহাম্মদ শোয়েব সেখানে কাজ করেন ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। এ সময় তিনি জুনিয়র শিল্পী হিসেবে ব্যানারে ছোট ছোট চরিত্রগুলো আঁকার কাজ শুরু করেন এবং দক্ষ হয়ে ওঠেন। এর পর যত দিন গেছে প্রতিকৃতি আঁকায়, ক্যানভাসে অলংকরণ করায় দক্ষ হয়ে উঠেছেন মোহাম্মদ শোয়েব। তার পর তিনি কাজ করতে যান ‘রূপায়ণ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠান ছিল সিনেমার ব্যানার শিল্পের আরেক গুণী শিল্পী বীরেন দাসের মালিকানাধীন। সেখানে তিনি ব্যানার আঁকার কাজ করেন ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। পরে ক্রমান্বয়ে ‘চিত্রকর’, ‘ফোর স্টার’, ‘মুন আর্ট’ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। শেষে নিজের এক শিষ্যের সঙ্গে ‘একতা পাবলিশিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান। সেটি সচল ছিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত।

প্রায় চল্লিশ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবনে মোহাম্মদ শোয়েব সিনেমার ব্যানার শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছেন পরিশ্রম, আর মেধা দিয়ে। নিখুঁত প্রতিকৃতি আর কাপড়ের ওপর সূক্ষ্ম নকশা তোলায় তিনি ছিলেন ভীষণ দক্ষ। সমসাময়িক আর কোনো ব্যানার শিল্পী তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি বলে সব ‘আর্ট হাউসে’ ছিল তাঁর সমান কদর। যখন যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গিয়েছেন, সিনেমার ব্যানার ইন্ডাস্ট্রিতে সে প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল সেরা। তবে তিনি সিনেমার ব্যানার আঁকার মধ্যেই আটকে ছিলেন না। যখন সিনেমার ব্যানার এঁকে খ্যাতির মধ্যগগনে, তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য প্রচারের জন্য বিলবোর্ড, হোর্ডিং, দেয়ালচিত্র আঁকেন মোহাম্মদ শোয়েব। সেখানেও দাপটের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘ সময়। এ ছাড়া একসময় দেশে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা বিভিন্ন বিদেশি অতিথির প্রতিকৃতিও আঁকেন তিনি। এ ক্ষেত্রেও তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ২০১১ সালে ঢাকা সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের প্রতিকৃতি আঁকেন। সেটিই ছিল তাঁর শেষ কোনো রাষ্ট্রীয় অতিথির প্রতিকৃতি আঁকা। এ ছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার প্রতিকৃতি এঁকেছেন বিভিন্ন সময়। মোহাম্মদ শোয়েব অসামান্য দক্ষতায় প্রতিকৃতি আঁকতে পারতেন বলে এসব কাজে ডাক পেতেন।
২০০০ সালের পর ধীরে ধীরে কাজকর্ম কমতে শুরু করে সিনেমার ব্যানার শিল্পীদের। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেন, অনেকে আশায় বুক বেঁধে ‘লাইনে’ থাকার চেষ্টা করেন আরও কিছুদিন। একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় মোহাম্মদ শোয়েবকেও। সিনেমার ব্যানার আঁকার যুগ যখন ধীরে ধীরে অস্তমিত হয়ে আসতে শুরু করে, মোহাম্মদ শোয়েব তখন চার দশকের চর্চা করা বিদ্যাকে ভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহার করে রোজগার সচল রাখার চেষ্টা করে যান।
সিনেমার ব্যানার শিল্পী হিসেবে মোহাম্মদ শোয়েবের চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন সিটি করপোরেশনের কাছে। প্রবাসী বাঙালি শিল্পী রুহুল আমিন কাজলের সহায়তায় এবং কোপেন হেগেন সিটি করপোরেশনের আমন্ত্রণে ২০১৪ সালে মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর সহশিল্পী মোহাম্মদ হানিফ পাপ্পু ডেনমার্কে গিয়েছিলেন ছবি আঁকতে। সেখানে তাঁদের কাজ প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয় প্যারিসের ‘প্যালেই ডি টোকিও’ স্টুডিওতে, ২০১৯ সালে ‘সিটি প্রিন্সেস’ নামে একটি প্রদর্শনীতে। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক ঢাকা আর্ট সামিটে মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর দলের সিনেমার ব্যানারের আদলে আঁকা একটি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়। তবে তাতে নায়ক–নায়িকার পরিবর্তে আঁকা হয়েছিল আফ্রিকা ও বাংলাদেশের দীর্ঘ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এসব আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে মোহাম্মদ শোয়েবের পরিচিত হয়ে ওঠার পেছনে সহায়তা করেছে ঐতিহ্যবাহী ও সমকালীন শিল্প কেন্দ্র ‘যথাশিল্প’।
‘প্রায় চল্লিশ বছর সিনেমার ব্যানার আঁকলেন। পেছনে ফিরে তাকালে কী মনে হয় আপনার?’ প্রশ্ন শুনে মোহাম্মদ শোয়েব হাসেন। বৃষ্টির শব্দে তাঁর হাসির শব্দ চাপা পড়ে যায়। ‘যা করার আছিল, করছি। মন দিয়া করছি। আর কী?’ তাঁর নীরবতার আড়ালে আরও অনেক কিছু আছে। আছে শিল্পের প্রতি সীমাহীন দরদ। আছে নিঃসিম শূন্যতা। আছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। ১৯৯৪ সালে স্ত্রী বানু বেগম মৃত্যুবরণ করেছেন। পরের বছরই তাঁর বড় মেয়ে রিমা আক্তার মারা গেলে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। অন্য সন্তানদের বড় করেছেন। তাঁর অন্য সন্তানেরা—ছেলে ইমরান, মেয়ে সীমা আক্তার ও সোমা আক্তার বড় হয়েছেন। তাঁদের বিয়েও হয়ে গেছে। এখন নিঃসঙ্গতা জেঁকে বসেছে জীবনে।
যথাশিল্পের কর্ণধার গবেষক ও শিল্পী শাওন আকন্দের কাছে জানতে চাই, বাংলাদেশের চিত্রকলার ইতিহাসে মোহাম্মদ শোয়েবের গুরুত্ব কী। কোনো দ্বিধা ছাড়াই শাওন আকন্দ বলেন, ‘হি ইজ দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস। উনিশ শতকে রাজা রবি বর্মার হাতে তৈরি হয়েছিল এক বিশেষ শিল্প ঘরানার। পরবর্তীকালে ভারতের কোলাপুরের বাবুরাও পেইন্টারের হাত ধরে এবং মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আলো–বাতাসে সে শিল্প ঘরানা সিনেমার ব্যানার শিল্প হিসেবে বেড়ে উঠেছিল। মকবুল ফিদা হুসেন কিংবা আমাদের নিতুন কুণ্ডও এক সময় যুক্ত ছিলেন এ বিশেষ ধরনের শিল্পচর্চায়। উনিশ শতকে গড়ে ওঠা সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের নিরিখে বাংলাদেশে মোহাম্মদ শোয়েব সম্ভবত শেষ গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী।’
বৃষ্টি পড়ে কামরাঙ্গীরচরে। বোদনার অনুষ্টুপ ছন্দ বেজে যায় মোহাম্মদ শোয়েবের টিনের চালে। কামরাঙ্গীরচর, চরের এ ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’ ঘর সিনেমা ব্যানারের রঙিন ক্যানভাস নয়। এখানে রং–তুলি হাতে নিয়ে বসে নেই কোনো ওস্তাদ। বসে আছেন এক বিধ্বস্ত শিল্পী—দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস মোহাম্মদ শোয়েব।

নাটক, ওটিটির পর সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন মেহজাবীন চৌধুরী। ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত দুটি সিনেমা—‘প্রিয় মালতী’ ও ‘সাবা’। গত আগস্ট মাসে প্রচারিত এক পডকাস্টে মেহজাবীন বলেছিলেন, টালিউড থেকেও সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি।
৮ মিনিট আগে
আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এ বছর ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা রায়হান রাফী ও সাংবাদিক আলিমুজ্জামান। গতকাল রোববার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হলো কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন প্রবর্তিত এই স্মৃতি পুরস্কার
২৩ মিনিট আগে
অভিনয়ের পাশাপাশি গানও করেন নুসরাত ফারিয়া। ২০১৮ সালে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম গান ‘পটাকা’। এখন পর্যন্ত চারটি গান প্রকাশ পেয়েছে তাঁর। গত বছরের শুরুতে ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের সংগীতায়োজনে রেকর্ড করেছিলেন নতুন গান। সে সময় জানিয়েছিলেন, দ্রুতই গানটি শুনতে পারবেন শ্রোতারা। দেড় বছর পার হয়ে গেলেও এখনো প্রকাশ....
৩৯ মিনিট আগে
হঠাৎ করে আলোচনায় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী দিলারা হানিফ পূর্ণিমা। তবে অভিনয় নয়, ব্যক্তিজীবন নিয়ে। কয়েক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে, আশফাকুর রহমানের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যজীবনে চলছে ভাঙনের সুর। দুজনের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে—এমন খবরও শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

নাটক, ওটিটির পর সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন মেহজাবীন চৌধুরী। ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত দুটি সিনেমা—‘প্রিয় মালতী’ ও ‘সাবা’। গত আগস্ট মাসে প্রচারিত এক পডকাস্টে মেহজাবীন বলেছিলেন, টালিউড থেকেও সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। গত বছর মুক্তি পাওয়া নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখার্জির ‘বহুরূপী’ সিনেমায় ভাবা হয়েছিল তাঁকে। তবে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সেই পডকাস্ট প্রচারের দুই মাস পর মেহজাবীনকে প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেন নির্মাতা নন্দিতা রায়।
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার অনলাইনে নন্দিতা রায় বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে এ রকম কোনো প্রস্তাব পাঠানো হয়নি।’ তবে শিবপ্রসাদ মুখার্জির থেকে মেহজাবীন প্রস্তাব পেয়েছেন কি না, সেটা তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন। নন্দিতার ভাষ্যমতে, ‘আমি আর শিবপ্রসাদ সব কাজ একসঙ্গে করি। পরিচালনা-প্রযোজনা সবটাই। শিবুও বহুরূপীর ক্ষেত্রে সমান দায়িত্ব পালন করেছে। আর বাংলাদেশে ওর অনেক চেনাজানা। ওর পক্ষ থেকে অনুরোধ পাঠানো হয়েছিল কি না, সেটা জানি না। তবে আমি কোনো প্রস্তাব পাঠাইনি।’
সেই পডকাস্টে জানা যায়, শুধু বহুরূপী নয়, টালিউড ইন্ডাস্ট্রির এক সুপারস্টারের সিনেমাও ফিরিয়ে দেন মেহজাবীন। অভিনেত্রী বলেন, ‘অফার এলেই যে গ্রহণ করে নিতে হবে, সেটা নয়। কথা হয়তো ওই পর্যায়ে এগিয়ে যায়নি, তাই কাজ করা হয়নি।’

একাধিক প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও টালিউডে কাজ করার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন মেহজাবীন। তিনি মনে করেন, সংস্কৃতির আদান-প্রদান হলে দুই ইন্ডাস্ট্রির জন্য তা হবে ইতিবাচক। মেহজাবীন বলেন, ‘ওপার বাংলা-এপার বাংলা করে আমরা যে ভেদাভেদটা করি, সেটা আসলে দরকার নেই। বাংলা মানে বাংলা। আমরা সবাই বাঙালি। দুই জায়গার ভাষাটাও একই রকম। ওরা যেমন আমাদের নাটক দেখে, আমরাও ওদের সিনেমা দেখি। সত্যি বলতে ইন্ডাস্ট্রি যত বড় হবে, আমাদের জন্য ততই ভালো। ওদের দর্শক যদি আমরা পাই, একইভাবে আমাদেরটা ওরা; তাহলে কিন্তু বেটার বাণিজ্য হবে, যেটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভালো। আর ক্রিয়েটিভিটি যত শেয়ার করা যায়, তত বাড়ে। নিজেদের সীমাবদ্ধ করে রাখা বা বাউন্ডারি ক্রিয়েট করে রাখলে ক্রিয়েটিভিটি ছড়ায় না।’/
এদিকে, মেহজাবীন অভিনীত ‘সাবা’ এখনো চলছে প্রেক্ষাগৃহে। পঞ্চম সপ্তাহে এসে মাকসুদ হোসেন পরিচালিত সিনেমাটি দেখা যাচ্ছে ৩টি সিনেপ্লেক্সে। বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় সাবা।

নাটক, ওটিটির পর সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন মেহজাবীন চৌধুরী। ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত দুটি সিনেমা—‘প্রিয় মালতী’ ও ‘সাবা’। গত আগস্ট মাসে প্রচারিত এক পডকাস্টে মেহজাবীন বলেছিলেন, টালিউড থেকেও সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। গত বছর মুক্তি পাওয়া নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখার্জির ‘বহুরূপী’ সিনেমায় ভাবা হয়েছিল তাঁকে। তবে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সেই পডকাস্ট প্রচারের দুই মাস পর মেহজাবীনকে প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেন নির্মাতা নন্দিতা রায়।
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার অনলাইনে নন্দিতা রায় বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে এ রকম কোনো প্রস্তাব পাঠানো হয়নি।’ তবে শিবপ্রসাদ মুখার্জির থেকে মেহজাবীন প্রস্তাব পেয়েছেন কি না, সেটা তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন। নন্দিতার ভাষ্যমতে, ‘আমি আর শিবপ্রসাদ সব কাজ একসঙ্গে করি। পরিচালনা-প্রযোজনা সবটাই। শিবুও বহুরূপীর ক্ষেত্রে সমান দায়িত্ব পালন করেছে। আর বাংলাদেশে ওর অনেক চেনাজানা। ওর পক্ষ থেকে অনুরোধ পাঠানো হয়েছিল কি না, সেটা জানি না। তবে আমি কোনো প্রস্তাব পাঠাইনি।’
সেই পডকাস্টে জানা যায়, শুধু বহুরূপী নয়, টালিউড ইন্ডাস্ট্রির এক সুপারস্টারের সিনেমাও ফিরিয়ে দেন মেহজাবীন। অভিনেত্রী বলেন, ‘অফার এলেই যে গ্রহণ করে নিতে হবে, সেটা নয়। কথা হয়তো ওই পর্যায়ে এগিয়ে যায়নি, তাই কাজ করা হয়নি।’

একাধিক প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও টালিউডে কাজ করার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন মেহজাবীন। তিনি মনে করেন, সংস্কৃতির আদান-প্রদান হলে দুই ইন্ডাস্ট্রির জন্য তা হবে ইতিবাচক। মেহজাবীন বলেন, ‘ওপার বাংলা-এপার বাংলা করে আমরা যে ভেদাভেদটা করি, সেটা আসলে দরকার নেই। বাংলা মানে বাংলা। আমরা সবাই বাঙালি। দুই জায়গার ভাষাটাও একই রকম। ওরা যেমন আমাদের নাটক দেখে, আমরাও ওদের সিনেমা দেখি। সত্যি বলতে ইন্ডাস্ট্রি যত বড় হবে, আমাদের জন্য ততই ভালো। ওদের দর্শক যদি আমরা পাই, একইভাবে আমাদেরটা ওরা; তাহলে কিন্তু বেটার বাণিজ্য হবে, যেটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভালো। আর ক্রিয়েটিভিটি যত শেয়ার করা যায়, তত বাড়ে। নিজেদের সীমাবদ্ধ করে রাখা বা বাউন্ডারি ক্রিয়েট করে রাখলে ক্রিয়েটিভিটি ছড়ায় না।’/
এদিকে, মেহজাবীন অভিনীত ‘সাবা’ এখনো চলছে প্রেক্ষাগৃহে। পঞ্চম সপ্তাহে এসে মাকসুদ হোসেন পরিচালিত সিনেমাটি দেখা যাচ্ছে ৩টি সিনেপ্লেক্সে। বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় সাবা।

গল্পটা ১৯৪৭–এর সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রাজাবাজারে ছিল তাঁর বাপ–দাদার বাস। ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর সাতচল্লিশের দেশভাগের ফেরে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় মোহাম্মদ শোয়েবের পরিবার—ঠিকানা নবাবপুর রোড, ঢাকা ১।
২৯ জুন ২০২১
আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এ বছর ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা রায়হান রাফী ও সাংবাদিক আলিমুজ্জামান। গতকাল রোববার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হলো কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন প্রবর্তিত এই স্মৃতি পুরস্কার
২৩ মিনিট আগে
অভিনয়ের পাশাপাশি গানও করেন নুসরাত ফারিয়া। ২০১৮ সালে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম গান ‘পটাকা’। এখন পর্যন্ত চারটি গান প্রকাশ পেয়েছে তাঁর। গত বছরের শুরুতে ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের সংগীতায়োজনে রেকর্ড করেছিলেন নতুন গান। সে সময় জানিয়েছিলেন, দ্রুতই গানটি শুনতে পারবেন শ্রোতারা। দেড় বছর পার হয়ে গেলেও এখনো প্রকাশ....
৩৯ মিনিট আগে
হঠাৎ করে আলোচনায় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী দিলারা হানিফ পূর্ণিমা। তবে অভিনয় নয়, ব্যক্তিজীবন নিয়ে। কয়েক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে, আশফাকুর রহমানের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যজীবনে চলছে ভাঙনের সুর। দুজনের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে—এমন খবরও শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এ বছর ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা রায়হান রাফী ও সাংবাদিক আলিমুজ্জামান। গতকাল রোববার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হলো কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন প্রবর্তিত এই স্মৃতি পুরস্কার। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেকেই পেয়েছেন একটি ক্রেস্ট ও ৫০ হাজার টাকা এবং পরিয়ে দেওয়া হয়েছে উত্তরীয়। তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, নির্মাতা মতিন রহমান, অভিনেতা আফজাল হোসেন, রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসী এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু।
পুরস্কার প্রদান উপলক্ষে চ্যানেল আইয়ে আয়োজন করা হয় একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দেখানো হয় ফজলুল হককে নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র। এরপর শুরু হয় আলোচনা পর্ব। এই পর্বে আলোচনায় অংশ নেন মতিন রহমান, রেজাউদ্দিন স্টালিন, মুকিত মজুমদার বাবু, কেকা ফেরদৌসী, আফজাল হোসেন, অভিনেত্রী ও নির্মাতা আফসানা মিমি, সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম, নির্মাতা ছটকু আহমেদ, অভিনেতা কেরামত মওলা, অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, ফজলুল হককে রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়ন করা হবে। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জানান, শিল্পকলা একাডেমির সারা দেশের শাখাগুলোতে ফজলুল হককে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আলোচনা পর্বের পরেই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় নির্মাতা রায়হান রাফী ও সাংবাদিক আলিমুজ্জামানের হাতে। রায়হান রাফীর সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর মা। তিনি ছেলের পুরস্কারপ্রাপ্তিতে সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।
উল্লেখ্য, দেশের প্রথম চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা ‘সিনেমা’-এর সম্পাদক ও বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘সান অব পাকিস্তান (প্রেসিডেন্ট)’-এর নির্মাতা প্রয়াত ফজলুল হক স্মরণে গত ২২ বছর এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে।

আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এ বছর ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা রায়হান রাফী ও সাংবাদিক আলিমুজ্জামান। গতকাল রোববার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হলো কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন প্রবর্তিত এই স্মৃতি পুরস্কার। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেকেই পেয়েছেন একটি ক্রেস্ট ও ৫০ হাজার টাকা এবং পরিয়ে দেওয়া হয়েছে উত্তরীয়। তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, নির্মাতা মতিন রহমান, অভিনেতা আফজাল হোসেন, রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসী এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু।
পুরস্কার প্রদান উপলক্ষে চ্যানেল আইয়ে আয়োজন করা হয় একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দেখানো হয় ফজলুল হককে নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র। এরপর শুরু হয় আলোচনা পর্ব। এই পর্বে আলোচনায় অংশ নেন মতিন রহমান, রেজাউদ্দিন স্টালিন, মুকিত মজুমদার বাবু, কেকা ফেরদৌসী, আফজাল হোসেন, অভিনেত্রী ও নির্মাতা আফসানা মিমি, সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম, নির্মাতা ছটকু আহমেদ, অভিনেতা কেরামত মওলা, অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, ফজলুল হককে রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়ন করা হবে। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জানান, শিল্পকলা একাডেমির সারা দেশের শাখাগুলোতে ফজলুল হককে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আলোচনা পর্বের পরেই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় নির্মাতা রায়হান রাফী ও সাংবাদিক আলিমুজ্জামানের হাতে। রায়হান রাফীর সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর মা। তিনি ছেলের পুরস্কারপ্রাপ্তিতে সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।
উল্লেখ্য, দেশের প্রথম চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা ‘সিনেমা’-এর সম্পাদক ও বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘সান অব পাকিস্তান (প্রেসিডেন্ট)’-এর নির্মাতা প্রয়াত ফজলুল হক স্মরণে গত ২২ বছর এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে।

গল্পটা ১৯৪৭–এর সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রাজাবাজারে ছিল তাঁর বাপ–দাদার বাস। ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর সাতচল্লিশের দেশভাগের ফেরে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় মোহাম্মদ শোয়েবের পরিবার—ঠিকানা নবাবপুর রোড, ঢাকা ১।
২৯ জুন ২০২১
নাটক, ওটিটির পর সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন মেহজাবীন চৌধুরী। ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত দুটি সিনেমা—‘প্রিয় মালতী’ ও ‘সাবা’। গত আগস্ট মাসে প্রচারিত এক পডকাস্টে মেহজাবীন বলেছিলেন, টালিউড থেকেও সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি।
৮ মিনিট আগে
অভিনয়ের পাশাপাশি গানও করেন নুসরাত ফারিয়া। ২০১৮ সালে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম গান ‘পটাকা’। এখন পর্যন্ত চারটি গান প্রকাশ পেয়েছে তাঁর। গত বছরের শুরুতে ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের সংগীতায়োজনে রেকর্ড করেছিলেন নতুন গান। সে সময় জানিয়েছিলেন, দ্রুতই গানটি শুনতে পারবেন শ্রোতারা। দেড় বছর পার হয়ে গেলেও এখনো প্রকাশ....
৩৯ মিনিট আগে
হঠাৎ করে আলোচনায় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী দিলারা হানিফ পূর্ণিমা। তবে অভিনয় নয়, ব্যক্তিজীবন নিয়ে। কয়েক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে, আশফাকুর রহমানের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যজীবনে চলছে ভাঙনের সুর। দুজনের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে—এমন খবরও শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

অভিনয়ের পাশাপাশি গানও করেন নুসরাত ফারিয়া। ২০১৮ সালে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম গান ‘পটাকা’। এখন পর্যন্ত চারটি গান প্রকাশ পেয়েছে তাঁর। গত বছরের শুরুতে ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের সংগীতায়োজনে রেকর্ড করেছিলেন নতুন গান। সে সময় জানিয়েছিলেন, দ্রুতই গানটি শুনতে পারবেন শ্রোতারা। দেড় বছর পার হয়ে গেলেও এখনো প্রকাশ পায়নি সেই গান। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গান প্রকাশের দেরি হওয়ার কারণ, সেই সঙ্গে গান নিয়ে নতুন পরিকল্পনার কথা জানান ফারিয়া।
গান প্রকাশের বিলম্ব হওয়ার কারণ জানিয়ে ফারিয়া বলেন, ‘আসলে অনেকগুলো মানুষের সমন্বয়ে একটি ভালো কাজ হয়। তাই একটু সময়ে লেগে যায় গান প্রকাশের ক্ষেত্রে। আর আমি তো শুধু গান গেয়েই প্রকাশ করি না, তার পেছনে একটা ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিও তৈরি করতে হয়; যেটা দেখতে ভিন্ন লাগে। দর্শকের কাছে যেন মনে হয়, এ রকম কিছু প্রথমবার দেখছেন। এ কারণেই একটু দেরি হচ্ছে। নতুন বেশ কয়েকটি গান রেডি করা আছে। ফুয়াদ আল মুক্তাদির, সঞ্জয়সহ বেশ কয়েকজন সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করা হয়েছে।’
ভবিষ্যতে নিজের পছন্দের শিল্পীদের সঙ্গে কোলাবরেশন করার ইচ্ছা আছে বলে জানান ফারিয়া। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার পছন্দের কয়েকজন শিল্পী, যাঁদের গান শুনে বড় হয়েছি, তাঁদের সঙ্গে যদি কোলাবরেশন করা যায়, তাহলে খুব ইন্টারেস্টিং কিছু হবে। পরিকল্পনা করছি, দেখা যাক কত দূর কী হয়।’
গানের পাশাপাশি সিনেমা নিয়েও কথা বলেন এই অভিনেত্রী। ফারিয়া জানান, এ মাসের শেষ দিকে নতুন সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার কথা আছে তাঁর। শিগগির আসবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
ঢালিউডের পাশাপাশি টালিউডের অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন ফারিয়া। তবে কয়েক বছর ধরে সেই ইন্ডাস্ট্রির কোনো কাজে দেখা যায়নি তাঁকে। ফারিয়া বলেন, ‘ওপার বাংলায় কাজ করছি না বেশ কয়েক বছর হয়ে গেছে। বিশেষ কোনো কারণ নেই। ভিসা জটিলতা, ট্রাভেল সবকিছু মিলিয়েই এখন ওখানে কাজ করা কঠিন। সবকিছু স্বাভাবিক হলে আবার নিশ্চয়ই ওখানে কাজ করা হবে।’
গত মাসে কানাডায় স্টেজ শো করতে গিয়েছিলেন নুসরাত ফারিয়া। আগামী নভেম্বরেও দেশের বাইরে যাওয়ার কথা আছে বলে জানান তিনি।

অভিনয়ের পাশাপাশি গানও করেন নুসরাত ফারিয়া। ২০১৮ সালে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম গান ‘পটাকা’। এখন পর্যন্ত চারটি গান প্রকাশ পেয়েছে তাঁর। গত বছরের শুরুতে ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের সংগীতায়োজনে রেকর্ড করেছিলেন নতুন গান। সে সময় জানিয়েছিলেন, দ্রুতই গানটি শুনতে পারবেন শ্রোতারা। দেড় বছর পার হয়ে গেলেও এখনো প্রকাশ পায়নি সেই গান। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গান প্রকাশের দেরি হওয়ার কারণ, সেই সঙ্গে গান নিয়ে নতুন পরিকল্পনার কথা জানান ফারিয়া।
গান প্রকাশের বিলম্ব হওয়ার কারণ জানিয়ে ফারিয়া বলেন, ‘আসলে অনেকগুলো মানুষের সমন্বয়ে একটি ভালো কাজ হয়। তাই একটু সময়ে লেগে যায় গান প্রকাশের ক্ষেত্রে। আর আমি তো শুধু গান গেয়েই প্রকাশ করি না, তার পেছনে একটা ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিও তৈরি করতে হয়; যেটা দেখতে ভিন্ন লাগে। দর্শকের কাছে যেন মনে হয়, এ রকম কিছু প্রথমবার দেখছেন। এ কারণেই একটু দেরি হচ্ছে। নতুন বেশ কয়েকটি গান রেডি করা আছে। ফুয়াদ আল মুক্তাদির, সঞ্জয়সহ বেশ কয়েকজন সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করা হয়েছে।’
ভবিষ্যতে নিজের পছন্দের শিল্পীদের সঙ্গে কোলাবরেশন করার ইচ্ছা আছে বলে জানান ফারিয়া। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার পছন্দের কয়েকজন শিল্পী, যাঁদের গান শুনে বড় হয়েছি, তাঁদের সঙ্গে যদি কোলাবরেশন করা যায়, তাহলে খুব ইন্টারেস্টিং কিছু হবে। পরিকল্পনা করছি, দেখা যাক কত দূর কী হয়।’
গানের পাশাপাশি সিনেমা নিয়েও কথা বলেন এই অভিনেত্রী। ফারিয়া জানান, এ মাসের শেষ দিকে নতুন সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার কথা আছে তাঁর। শিগগির আসবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
ঢালিউডের পাশাপাশি টালিউডের অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন ফারিয়া। তবে কয়েক বছর ধরে সেই ইন্ডাস্ট্রির কোনো কাজে দেখা যায়নি তাঁকে। ফারিয়া বলেন, ‘ওপার বাংলায় কাজ করছি না বেশ কয়েক বছর হয়ে গেছে। বিশেষ কোনো কারণ নেই। ভিসা জটিলতা, ট্রাভেল সবকিছু মিলিয়েই এখন ওখানে কাজ করা কঠিন। সবকিছু স্বাভাবিক হলে আবার নিশ্চয়ই ওখানে কাজ করা হবে।’
গত মাসে কানাডায় স্টেজ শো করতে গিয়েছিলেন নুসরাত ফারিয়া। আগামী নভেম্বরেও দেশের বাইরে যাওয়ার কথা আছে বলে জানান তিনি।

গল্পটা ১৯৪৭–এর সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রাজাবাজারে ছিল তাঁর বাপ–দাদার বাস। ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর সাতচল্লিশের দেশভাগের ফেরে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় মোহাম্মদ শোয়েবের পরিবার—ঠিকানা নবাবপুর রোড, ঢাকা ১।
২৯ জুন ২০২১
নাটক, ওটিটির পর সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন মেহজাবীন চৌধুরী। ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত দুটি সিনেমা—‘প্রিয় মালতী’ ও ‘সাবা’। গত আগস্ট মাসে প্রচারিত এক পডকাস্টে মেহজাবীন বলেছিলেন, টালিউড থেকেও সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি।
৮ মিনিট আগে
আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এ বছর ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা রায়হান রাফী ও সাংবাদিক আলিমুজ্জামান। গতকাল রোববার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হলো কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন প্রবর্তিত এই স্মৃতি পুরস্কার
২৪ মিনিট আগে
হঠাৎ করে আলোচনায় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী দিলারা হানিফ পূর্ণিমা। তবে অভিনয় নয়, ব্যক্তিজীবন নিয়ে। কয়েক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে, আশফাকুর রহমানের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যজীবনে চলছে ভাঙনের সুর। দুজনের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে—এমন খবরও শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

হঠাৎ করে আলোচনায় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী দিলারা হানিফ পূর্ণিমা। তবে অভিনয় নয়, ব্যক্তিজীবন নিয়ে। কয়েক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে, আশফাকুর রহমানের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যজীবনে চলছে ভাঙনের সুর। দুজনের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে—এমন খবরও শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জল আর বেশি দূর গড়াতে না দিয়ে গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় পূর্ণিমা জানালেন, তাঁর সংসার ভাঙার খবর সত্য নয়। স্বামীর সঙ্গে সুখে আছেন তিনি। বিচ্ছেদের খবর তাঁকে বিস্মিত করেছে।
পূর্ণিমার বিচ্ছেদের গুঞ্জন ওঠে তাঁর দেওয়া এক ফেসবুক পোস্ট থেকে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘মিথ্যা সম্পর্কের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলার চেয়ে নিঃসঙ্গতা অনেক বেশি শান্ত, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ।’ এরপরেই শুরু হয় গুঞ্জন।
বিষয়টি টের পেয়ে ২২ অক্টোবর স্বামীর সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করেন পূর্ণিমা। কিন্তু তাতেও থামছিল না গুঞ্জন। অবশেষে গতকাল বিষয়টি পরিষ্কার করেন অভিনেত্রী।
ফেসবুকে পূর্ণিমা লেখেন, ‘সুদিনে মানুষের বন্ধুর অভাব হয় না। এদের অধিকাংশই হচ্ছে সুযোগসন্ধানী কৃত্রিম বন্ধু। এরা সব সময় নিজের স্বার্থ উদ্ধারে ব্যতিব্যস্ত থাকে। দুর্দিনে এদের খুঁজে পাওয়া ভার! কিছুদিন আগে আমার দেওয়া স্ট্যাটাসটি থেকে এমনটাই বোঝানো হয়েছিল। আসলে প্রতিটি মানুষের চারপাশে যা কিছু ঘটে, এসবকে কেন্দ্র করেই স্ট্যাটাসটা লেখা হয়েছিল। দিন শেষে আমিও একজন মানুষ। সবার মতো আমারও কমবেশি কাছের-দূরের মানুষ রয়েছে। এ কারণে আমাকেও সুসময়ের বন্ধু ও স্বার্থপরদের ফেস করতে হয়েছে। কিন্তু লেখাটির কিছু অংশ আগে-পিছে না বুঝে অনেকে আমার পারিবারিক জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছে!’
তিনি আরও লেখেন, ‘কিছু সংবাদমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণে সত্যতা নিশ্চিত না করে অনেকটা চটকদার শিরোনাম দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে, যা আমাকে ও আমার পরিবারকে বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে। আমার দেওয়া স্ট্যাটাসের সঙ্গে পারিবারিক জীবনের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসায় আমরা আমাদের পরিবার ও সংসারজীবন নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি।’
২০২২ সালের ২৭ মে আশফাকুর রহমান রবিনকে বিয়ে করেন পূর্ণিমা। রবিন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এর আগে ২০০৭ সালে আহমেদ জামাল ফাহাদকে বিয়ে করেছিলেন পূর্ণিমা। তাঁদের এক কন্যাসন্তান আছে।

হঠাৎ করে আলোচনায় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী দিলারা হানিফ পূর্ণিমা। তবে অভিনয় নয়, ব্যক্তিজীবন নিয়ে। কয়েক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে, আশফাকুর রহমানের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যজীবনে চলছে ভাঙনের সুর। দুজনের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে—এমন খবরও শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জল আর বেশি দূর গড়াতে না দিয়ে গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় পূর্ণিমা জানালেন, তাঁর সংসার ভাঙার খবর সত্য নয়। স্বামীর সঙ্গে সুখে আছেন তিনি। বিচ্ছেদের খবর তাঁকে বিস্মিত করেছে।
পূর্ণিমার বিচ্ছেদের গুঞ্জন ওঠে তাঁর দেওয়া এক ফেসবুক পোস্ট থেকে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘মিথ্যা সম্পর্কের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলার চেয়ে নিঃসঙ্গতা অনেক বেশি শান্ত, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ।’ এরপরেই শুরু হয় গুঞ্জন।
বিষয়টি টের পেয়ে ২২ অক্টোবর স্বামীর সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করেন পূর্ণিমা। কিন্তু তাতেও থামছিল না গুঞ্জন। অবশেষে গতকাল বিষয়টি পরিষ্কার করেন অভিনেত্রী।
ফেসবুকে পূর্ণিমা লেখেন, ‘সুদিনে মানুষের বন্ধুর অভাব হয় না। এদের অধিকাংশই হচ্ছে সুযোগসন্ধানী কৃত্রিম বন্ধু। এরা সব সময় নিজের স্বার্থ উদ্ধারে ব্যতিব্যস্ত থাকে। দুর্দিনে এদের খুঁজে পাওয়া ভার! কিছুদিন আগে আমার দেওয়া স্ট্যাটাসটি থেকে এমনটাই বোঝানো হয়েছিল। আসলে প্রতিটি মানুষের চারপাশে যা কিছু ঘটে, এসবকে কেন্দ্র করেই স্ট্যাটাসটা লেখা হয়েছিল। দিন শেষে আমিও একজন মানুষ। সবার মতো আমারও কমবেশি কাছের-দূরের মানুষ রয়েছে। এ কারণে আমাকেও সুসময়ের বন্ধু ও স্বার্থপরদের ফেস করতে হয়েছে। কিন্তু লেখাটির কিছু অংশ আগে-পিছে না বুঝে অনেকে আমার পারিবারিক জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছে!’
তিনি আরও লেখেন, ‘কিছু সংবাদমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণে সত্যতা নিশ্চিত না করে অনেকটা চটকদার শিরোনাম দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে, যা আমাকে ও আমার পরিবারকে বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে। আমার দেওয়া স্ট্যাটাসের সঙ্গে পারিবারিক জীবনের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসায় আমরা আমাদের পরিবার ও সংসারজীবন নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি।’
২০২২ সালের ২৭ মে আশফাকুর রহমান রবিনকে বিয়ে করেন পূর্ণিমা। রবিন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এর আগে ২০০৭ সালে আহমেদ জামাল ফাহাদকে বিয়ে করেছিলেন পূর্ণিমা। তাঁদের এক কন্যাসন্তান আছে।

গল্পটা ১৯৪৭–এর সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রাজাবাজারে ছিল তাঁর বাপ–দাদার বাস। ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর সাতচল্লিশের দেশভাগের ফেরে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় মোহাম্মদ শোয়েবের পরিবার—ঠিকানা নবাবপুর রোড, ঢাকা ১।
২৯ জুন ২০২১
নাটক, ওটিটির পর সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন মেহজাবীন চৌধুরী। ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত দুটি সিনেমা—‘প্রিয় মালতী’ ও ‘সাবা’। গত আগস্ট মাসে প্রচারিত এক পডকাস্টে মেহজাবীন বলেছিলেন, টালিউড থেকেও সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি।
৮ মিনিট আগে
আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এ বছর ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা রায়হান রাফী ও সাংবাদিক আলিমুজ্জামান। গতকাল রোববার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হলো কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন প্রবর্তিত এই স্মৃতি পুরস্কার
২৪ মিনিট আগে
অভিনয়ের পাশাপাশি গানও করেন নুসরাত ফারিয়া। ২০১৮ সালে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম গান ‘পটাকা’। এখন পর্যন্ত চারটি গান প্রকাশ পেয়েছে তাঁর। গত বছরের শুরুতে ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের সংগীতায়োজনে রেকর্ড করেছিলেন নতুন গান। সে সময় জানিয়েছিলেন, দ্রুতই গানটি শুনতে পারবেন শ্রোতারা। দেড় বছর পার হয়ে গেলেও এখনো প্রকাশ....
৩৯ মিনিট আগে