Ajker Patrika

নায়ক হারানোর ২৫ বছর

এম এস রানা, ঢাকা
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬: ৫৭
নায়ক হারানোর ২৫ বছর

আজ ৬ সেপ্টম্বর চিত্রনায়ক সালমান শাহর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যূর সময় তাঁর নিজের বয়স ছিল ২৫। ক্যারিয়ারের মাত্র ৪। অভিনীত ছবির সংখ্যা ২৭। মৃত্যুর ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও কী বিস্তৃত তাঁর প্রভাব! এখনো তাঁর তারকাখ্যাতি সমুজ্জ্বল। সালমান শাহ-পরবর্তী সময়ে যারা চলচ্চিত্রে নায়ক হওয়ার জন্য এসেছেন তাঁদের অনেকের কাছেই সালমান শাহ ছিলেন অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস। সালমানকে বলা হতো ৯০ দশকের সেরা নায়ক।

গায়ক থেকে হয়ে ওঠা নায়ক

সালমান শাহ মানেই আমাদের কাছে ছেলেমানুষীভরা, হাস্বোজ্জল এক সফল নায়কের ছবি। অভিনয়ে আসার আগে সালমান নিজেও খুব করে চাইতেন অভিনেতা হিসেবে নাম কুড়াতে। নায়ক হতে। ছোটবেলা থেকেই তাই টুকটাক বিভিন্ন কাজে তাঁর অংশগ্রহণ দেখি। কিন্তু এটাও সত্যি যে, প্রথম জীবনে সালমান শাহ গায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে সেভাবেই নিজেকে গুছিয়েছিলেন সালমান। বন্ধুদের আড্ডায় কিংবা ঘরোয়া আয়োজনে গাইতেনও তিনি। ১৯৮৬ সালে ছায়নট থেকে পল্লীগীতিতে উত্তির্ণ হয়েছিলেন সালমান। বন্ধুমহলে তাই পরিচিত ছিলেন গায়ক হিসেবেই। পরবর্তী জীবনে সালমান যখন নায়ক হয়ে ভক্তদের মনে স্থায়ী আসন গেড়েছেন, তখনো তার গায়কসত্ত্বা থেমে থাকেনি। ‘প্রেমযুদ্ধ’ ও ‘ঋণশোধ’ নামের দুটি ছবিতে নিজকণ্ঠে গেয়েছেন গান। শুধু তাই নয়, হানিফসংকেতের একটি অনুষ্ঠানে সালমানের আত্মপ্রকাশও একটি গানের মাধ্যমে। তবে সেই গানে তিনি কণ্ঠ দেননি। মডেল হয়েছেন। তখনো সালমান ইমন নামেই পরিচিত।

সালমান শাহসালমান ফ্যাশন

ভক্তরা তার প্রিয় নায়ক বা নায়িকাকে ফলো করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কেউ কেউ পারেন ট্রেন্ড তৈরি করতে। সালমান যেমন পেরেছিলেন। সালমান যখন মাথায় স্কার্ফ বাঁধতে শুরু করলেন, গোটা যুবসমাজের কাছে যেন সেটা এক ফ্যাশন আইকন হয়ে উঠল। এছাড়া, কোনো ছবিতে মাথায় ওয়েস্টার্ন হ্যাট চাপিয়ে দেওয়া, কোনো ছবিতে চোখে লেন্স পরে নিজের চাহনি বদলে ফেলা, এমনি নানা রকম পোশাক আশাকে সালমান যেন এক বিস্ময়কর নায়কের পরিণত হয়ে গেলেন। তার কথা বলার ধরন থেকে শুরু করে অনেক কিছুই যেন ভক্তদের অনুকরণীয় হয়ে উঠছিল। আসলে সালমান ছিলেন সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা ফ্যাশন সচেতন এক নায়ক।

২৫ বছরের শোক

কথায় বলে শোকের বয়স তিনদিন। মাাহপুরুষদের বেলায় সেটা মাস পেরোয়, বছর পেরোয়। কিন্তু সালমানের মৃত্যুর পর পেরিয়ে গেছে ২৫টি বছর। দুই যুগেরও বেশি সময়। এখনো কাটেনি ভক্তদের শোক। এখনো সালমানের মৃত্যুদিন কিংবা জন্মদিনে টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা, বিভিন্ন সংগঠনসহ নানা মাধ্যমে সালমান স্মরণে থাকে বিশেষ আয়োজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো প্রায় সারা বছরই সালমানভক্তদের নানা মন্তবে মুখর থাকে। সালমানের মৃত্যূ নিয়ে বছরের পর বছর চলমান মামলা কিংবা তদন্তের কারণে সালমানের মৃত্যুরহস্য আজো যেন ‘শেষ হইয়াও হয় না শেষ’। সালমান শাহর মৃত্যুর পর প্রায় ২৫জন ভক্তের আত্মাহুতির খবর শোনা যায়। কথিত আছে সেই সংখ্যাটা নাকি আরো বেশি। অথচ সালমানের চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার মাত্র চার বছরের। এত স্বল্প পরিসরের ক্যারিয়ারে এতটা জনপ্রিয়তার নজির যেমন বিরল, তেমনি কোনো নায়কের মৃত্যুতে এত ভক্তের আত্মাহুতির ঘটনাও এক ইতিহাস। সালমানের মৃত্যুর সময়ের যুবক ভক্তটি আজ মধ্যবয়স ছুঁইছুঁই। সেদিনের কিশোর আজ আধুনিক চলচ্চিত্র দেখায় অভ্যস্ত। অথচ তাদের মনে সালমানের ছবিটা আজো অবিচল। আজো সালমানের মৃত্যু বাংলা ছবির জগতে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

সালমান শাহবিকল্প সালমান

সালমান শাহ যখন মারা গেলেন, তখন তিনি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। সালমানের ছবি মানেই হিট। স্কুল কলেজের ছেলে-মেয়েদের নিদেনপক্ষে একটা দিনের ক্লাস মিস করে হলে ছোটা।

হুট করেই চলে গেলেন সালমান। কি হবে অসমাপ্ত ছবির? প্রযোজকদের সামনে লাভ্যাংশের পরিমাণ আকাশচুম্বী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা। ভক্তরা প্রিয় নায়ককে দেখতে চান আরো একবার। ঘোষণা আসতে শুরু করল ‘সালমান শাহ অভিনীত শেষ ছবি’র। অসমাপ্ত ছবি শেষ করতে চারদিকে ‘খোঁজখোঁজ’ রব পড়ে গেল সালমানের বিকল্পের সন্ধানে। কমপক্ষে দশজনের মতো ‘ডামি সালমান’ বা বিকল্প সালমানের খবর আসল। কেউ পেছন থেকে দেখতে সালমানের মতো। কেউ চলনে বলনে সালমানের মতো। কেউ আবার সমানা সামনিই দেখতে সালমানের মতো। কোনো নায়কের মৃত্যূর পর এত ‘ডামি নায়ক’-এর চাহিদা আগে দেখেনি কেউ। বিকল্প সালমান নিয়ে অসমাপ্ত ছবি সম্পন্ন করতে উঠে পড়ে লাগেন নির্মাতা প্রযোজকরা। সালমানের বিকল্প হিসেবে এসে পুরো দস্তুর নায়ক হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলেন শাকিল খান।

সহশিল্পী শাবনূর ও মৌসুমী

সালমান-শাবনূর ছিল ওই সময়ের সফল জুটি। সালমানের মৃত্যুর পর অনেকেই শাবনূরের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ককে দায়ী করেছেন। অথচ, সালমান বলেছিলেন শাবনূর তার ‘পিচ্চি বোন’-এর মতো। আর শাবনূর বলেছিলেন সহশিল্পী হিসেবে সালমানের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়াটা চমৎকার। তবে সালমানের মৃত্যুর পর পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে খুব একটা কথা বলতে চাইতেন না শাবনূর।

সালমান শাহসোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় সালমান শাহ ও মৌসুমীর। দুজনে কেবল চলচ্চিত্রেই সহল্পীই ছিলেন না। খুলনা বয়রা মডেল হাই স্কুলে দুজনে সহপাঠীও ছিলেন। দুজনের এই বন্ধুত্বে ভাটা পড়ে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়। বরিশালে একটি সিনেমার কাজে গিয়েছিলেন তাঁরা। হোটেলে গিয়ে দেখা গেল দুজনের রুমের একটাই এটাচড বাথরুম। তা নিয়ে দুজনের মাঝে বাক বিতন্ডা হয়। সেই থেকে আর একসঙ্গে দেখা যায় না সালমান শাহ ও মৌসুমীকে। তবে সালমান মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে সেই সম্পর্ক ঠিক হয়ে যায় তাঁদের।

মৃত্যুর সেই দিন

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। সকালে সালমানের বাবা তাঁর বাসায় গেলে নিচে দারোয়ান বলেন, ‘স্যার, এখনতো উপরে যেতে পারবেন না। কিছু প্রবলেম আছে। আগে ম্যাডামকে (সালমান শাহ'র স্ত্রী সামিরাকে) জিজ্ঞেস করতে হবে।’ এক পর্যায়ে সালমানের বাবা জোর করে উপরে গিয়ে সামিরাকে বলেন, ‘ইমনের (সালমান শাহ'র ডাক নাম) সাথে কাজ আছে, ইনকাম ট্যাক্সের কাগজে সই করাতে হবে।’ সালমানের মা নীলা চৌধুরীর ভাষ্যমতে, সালমানের বাবাকে দেড় ঘণ্টার মতো বসিয়ে রাখা হয়। বেলা এগারোটার দিকে ফোন আসে সালমানের মা নীলা চৌধুরীর বাসায়। বলা হয়, সালমান শাহকে দেখতে হলে তখনই যেতে হবে। টেলিফোন পেয়ে নীলা চৌধুরী ছোটেন সালমানের বাসার দিকে। সালমানের ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে ছেলে সালমান শাহকে বিছানার ওপর দেখতে পান নীলা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সামিরার পার্লারের কিছু মেয়ে ইমনের হাতে-পায়ে সর্ষের তেল দিচ্ছিল। আমি ভেবেছি ইমন ফিট হয়ে গেছে। আমি দেখলাম আমার ছেলের হাতে পায়ের নখগুলো নীল। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, আমার ছেলে তো মরে যাচ্ছে।’

সালমান শাহইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে। সালমানের মৃত্যুর খবরে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে গোটা দেশ, পুরো চলচ্চিত্র জগৎ। কেউ যেন বিশ্বাসই করতে চাইছলেন না সালমান নেই।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বলা হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন।

একনজরে

জন্ম: ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

আসল নাম: চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন

বাবা: মরহুম কমর উদ্দিন চৌধুরী

মা: নীলা চৌধুরী

স্ত্রী: সামিরা

উচ্চতা: ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি

প্রথম চলচ্চিত্র: কেয়ামত থেকে কেয়ামত

প্রথম ছবির নায়িকা: মৌসুমী

সর্বাধিক ছবির নায়িকা: শাবনূর

মোট ছবি: ২৭টি

কয়েকটি ছবির নাম: আনন্দ অশ্রু, স্বপ্নের নায়ক, স্বপ্নের ঠিকানা, অন্তরে অন্তরে, সত্যের মৃত্যু নেই, এই ঘর এই সংসার,

বিজ্ঞাপনচিত্র: মিল্কভিটা, জাগুয়ার কেডস, গোল্ডস্টার টি, কোকাকোলা, ফানটা

ধারাবাহিক নাটক: পাথর সময় এবং ইতিকথা

একক নাটক: আকাশ ছোঁয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফেরে, সৈকতে সারস, নয়ন ও স্বপ্নের পৃথিবী

মৃত্যু: ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিচ্ছেদের গুঞ্জন উড়িয়ে পূর্ণিমা জানালেন, সুখে আছেন তাঁরা

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আশফাকুর রহমান ও পূর্ণিমা
আশফাকুর রহমান ও পূর্ণিমা

হঠাৎ করেই আলোচনায় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী দিলারা হানিফ পূর্ণিমা। তবে অভিনয় নয়, ব্যক্তিজীবন নিয়ে। কয়েক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, আশফাকুর রহমানের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যজীবনে চলছে ভাঙনের সুর। দুজনের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে—এমন খবরও শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জল আর বেশি দূর গড়াতে না দিয়ে গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় পূর্ণিমা জানালেন, তাঁর সংসার ভাঙার খবর সত্য নয়। স্বামীর সঙ্গে সুখে আছেন তিনি। বিচ্ছেদের খবর তাঁকে বিস্মিত করেছে।

পূর্ণিমার বিচ্ছেদের গুঞ্জন ওঠে তাঁর দেওয়া এক ফেসবুক পোস্ট থেকে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘মিথ্যা সম্পর্কের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলার চেয়ে নিঃসঙ্গতা অনেক বেশি শান্ত, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ।’ এরপরেই শুরু হয় গুঞ্জন।

বিষয়টি টের পেয়ে ২২ অক্টোবর স্বামীর সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করেন পূর্ণিমা। কিন্তু তাতেও থামছিল না গুঞ্জন। অবশেষে গতকাল বিষয়টি পরিষ্কার করেন অভিনেত্রী।

ফেসবুকে পূর্ণিমা লেখেন, ‘সুদিনে মানুষের বন্ধুর অভাব হয় না। এদের অধিকাংশই হচ্ছে সুযোগসন্ধানী কৃত্রিম বন্ধু। এরা সব সময়ই নিজের স্বার্থ উদ্ধারে ব্যতিব্যস্ত থাকে। দুর্দিনে এদের খুঁজে পাওয়া ভার! কিছুদিন আগে আমার দেওয়া স্ট্যাটাসটি থেকে এমনটাই বোঝানো হয়েছিল। আসলে প্রতিটি মানুষের চারপাশে যা কিছু ঘটে, এসবকে কেন্দ্র করেই স্ট্যাটাসটা লেখা হয়েছিল। দিন শেষে আমিও একজন মানুষ। সবার মতো আমারও কমবেশি কাছের-দূরের মানুষ রয়েছে। এ কারণে আমাকেও সুসময়ের বন্ধু ও স্বার্থপরদের ফেস করতে হয়েছে। কিন্তু লেখাটির কিছু অংশ আগে-পিছে না বুঝে অনেকে আমার পারিবারিক জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছে!’

তিনি আরও লেখেন, ‘কিছু সংবাদমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণে সত্যতা নিশ্চিত না করে অনেকটা চটকদার শিরোনাম দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে, যা আমাকে ও আমার পরিবারকে বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে। আমার দেওয়া স্ট্যাটাসের সঙ্গে পারিবারিক জীবনের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসায় আমরা আমাদের পরিবার ও সংসারজীবন নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি।’

২০২২ সালের ২৭ মে আশফাকুর রহমান রবিনকে বিয়ে করেন পূর্ণিমা। রবিন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এর আগে ২০০৭ সালে আহমেদ জামাল ফাহাদকে বিয়ে করেছিলেন পূর্ণিমা। তাঁদের এক কন্যাসন্তান আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বুসান থেকে ফিরে শুটিংয়ে মনোজ

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
মনোজ প্রামাণিক। ছবি: সংগৃহীত
মনোজ প্রামাণিক। ছবি: সংগৃহীত

চলচ্চিত্র প্রযোজনাবিষয়ক কোর্স করতে গত মার্চে দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়েছিলেন মনোজ প্রামাণিক। বুসান এশিয়ান ফিল্ম স্কুলের ‘প্রডিউসিং ট্র্যাক’ প্রোগ্রাম শেষ করে সাত মাস পর ২২ অক্টোবর দেশে ফিরেছেন তিনি। গতকাল অংশ নিয়েছেন একটি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে। এটা শেষ করেই শুটিং করবেন দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্যসহ কয়েকটি নাটকের। মনোজ বলেন, ‘বুসানে সাতটি মাস অভিনয়টা খুব মিস করেছি। ওখানে থাকতেই এই বিজ্ঞাপনটি নিয়ে কথা হয়েছে। সাত মাস পর আবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম। খুব ভালো লাগছে।’

সাত মাসের এই কোর্স সম্পর্কে মনোজ বলেন, ‘এই কোর্সে মূলত প্রযোজনা বিষয়ে পড়াশোনা হয়েছে। এ ছাড়া প্র্যাকটিকালি শেখানো হয়েছে কীভাবে একটি সিনেমাকে মার্কেটে উপস্থাপন করতে হয়। বুসান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের যে মার্কেট আছে সেখানে আমাদের পিচিং করানো হয়। এটা খুব এক্সাইটিং ছিল। এ ছাড়া পড়াশোনার ধরন, শিক্ষক, বিষয়—সবই ভালো ছিল।’

মনোজ আরও বলেন, ‘এই কোর্সে এশিয়ার ১৫টি দেশ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। সবাই মিলে একসঙ্গে থাকা, রান্না করা, খাওয়া, ক্লাস অ্যাটেন্ড করা—মনে হচ্ছিল আবার ছাত্রজীবনে ফিরে গিয়েছি। আমাদের মধ্যে সংস্কৃতির দারুণ একটা আদান-প্রদান হয়েছে। ১৫টি দেশের নতুন বন্ধু পেয়েছি। এ এক বিশাল পাওয়া।’

অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনার সঙ্গে আগে থেকেই যুক্ত মনোজ। মনপাচিত্র নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আছে তাঁর। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ‘সেয়ানা’ নামের সিনেমা নির্মাণের জন্য প্রযোজক হিসেবে অনুদান পেয়েছেন তিনি। এই কোর্সের অভিজ্ঞতা প্রযোজক হিসেবে অনেক কাজে দেবে বলে মনে করেন মনোজ। তিনি বলেন, ‘প্রযোজক হিসেবে কোর্সটি আমার অনেক উপকারে আসবে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। কীভাবে সারা বিশ্বের নির্মাতাদের সঙ্গে কমিউনিকেশন বিল্ডআপ করতে হয়, কীভাবে একটি প্রজেক্ট উপস্থাপন করতে হয়, ফান্ড কালেক্ট করতে হয়—এসব বিষয়ে এই কোর্সে জোর দেওয়া হয়েছে।’

মনোজ জানিয়েছেন, তাঁর সেয়ানা সিনেমার প্রি-প্রোডাকশনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। শিগগিরই অভিনয়শিল্পী চূড়ান্ত করে আগামী বছরের প্রথম ভাগে শুরু করতে চান শুটিং। সিনেমাটি পরিচালনা করবেন ইকবাল হাসান খান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আরশাদ ওয়ারসির পছন্দের ৩ সিরিজ

বিনোদন ডেস্ক
আরশাদ ওয়ারসির পছন্দের ৩ সিরিজ

বলিউড অভিনেতা আরশাদ ওয়ারসি নিজে কমেডি চরিত্র বেশি করেন। তবে দর্শক হিসেবে তাঁর পছন্দের শীর্ষে থাকে ক্রাইম ও থ্রিলার গল্প। সম্প্রতি দেখা তিনটি সিরিজের নাম জানালেন আরশাদ ওয়ারসি, ভক্তদের দেখার জন্যও সাজেস্ট করলেন।

‘মবল্যান্ড’ সিরিজের দৃশ্য
‘মবল্যান্ড’ সিরিজের দৃশ্য

মবল্যান্ড

রোনান বেনেট পরিচালিত ব্রিটিশ ক্রাইম ড্রামা সিরিজ ‘মবল্যান্ড’-এর কেন্দ্রে আছে দুটি পরিবার—দ্য হারিগানস ও দ্য স্টিভেনসন। সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তারা। নিজেদের সাম্রাজ্য বাঁচাতে, ক্রমবর্ধমান সংঘাত মোকাবিলা করতে হ্যারি দা সুজা নামের একজনকে নিয়োগ দেয় হারিগানস পরিবার। স্টিভেনসন পরিবারের সব রকমের হামলা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মাঠে নামে সে। মবল্যান্ড সিরিজের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন টম হার্ডি, পিয়ার্স ব্রসনান, হেলেন মিরেন প্রমুখ। গত ৩০ মার্চ সিরিজটি মুক্তি পেয়েছে প্যারামাউন্ট প্লাসে। মবল্যান্ড নিয়ে আরশাদ ওয়ারসি বলেন, ‘দারুণ চিত্রনাট্য, অনবদ্য নির্মাণ। এই সিরিজে সবচেয়ে যেটা ভালো লেগেছে তা হলো, অভিনয়শিল্পীদের পারফরম্যান্স আর টানটান গল্প।’

‘ব্ল্যাক র‍্যাবিট’ সিরিজের দৃশ্য
‘ব্ল্যাক র‍্যাবিট’ সিরিজের দৃশ্য

ব্ল্যাক র‍্যাবিট

জ্যাক ও ভিন্স—দুই ভাইয়ের গল্প। এক ভাই নিউইয়র্ক শহরে রেস্টুরেন্ট চালায়। ব্ল্যাক র‍্যাবিট নামের রেস্টুরেন্টটি যখন জমজমাট, তখন একদিন হঠাৎ ফিরে আসে ভিন্সের ভাই জ্যাক। সে ঋণে জর্জরিত। জ্যাক আসার সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের বিপদও আসে। মিথ্যা, সহিংসতা, বিশ্বাসঘাতকতায় তাদের জীবন ধ্বংসের মুখোমুখি হয়। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে দুই ভাই। এ দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন জুড ল এবং জেসন বেটম্যান। নেটফ্লিক্সে ‘ব্ল্যাক র‍্যাবিট’ সিরিজটি প্রচার শুরু হয় ১৮ সেপ্টেম্বর। আরশাদ ওয়ারসি বলেন, ‘দারুণভাবে তৈরি করা হয়েছে সিরিজটি। গল্প কোথাও গতি হারায়নি, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা ছিল।’

‘ওজার্ক’ সিরিজের দৃশ্য
‘ওজার্ক’ সিরিজের দৃশ্য

ওজার্ক

আমেরিকান ক্রাইম ড্রামা সিরিজ ‘ওজার্ক’। নেটফ্লিক্সে এই পর্যন্ত প্রচারিত হয়েছে চারটি সিজন। প্রতি সিজনে ১০টি করে পর্ব। তবে সবশেষ ২০২২ সালে প্রচারিত চতুর্থ সিজনে ১৪টি পর্ব ছিল। বড় অঙ্কের একটি অর্থ পাচারের পরিকল্পনা ভন্ডুল হয়ে যাওয়ার পর অর্থ উপদেষ্টা মার্টি বার্ড ভিন্ন পথ অবলম্বন করে। স্ত্রীকে নিয়ে মিসৌরির ওকার্ড হ্রদ অঞ্চলে পাড়ি জমায়। সেখানে গিয়ে স্থানীয় মাফিয়া ও অপরাধীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে মার্টি বার্ড। আরশাদ ওয়ারসি বলেন, ‘নির্মাতারা খুবই কৌশলী। প্রথম পর্ব এমন নাটকীয়ভাবে তৈরি করেছে যে বাকি পর্বগুলো দেখার আগ্রহ তৈরি হয়। প্রথম পর্ব যেভাবে মনোযোগ কেড়ে নেয়, তাতে পুরোটা না দেখে ওঠা কঠিন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর সিনেমায় একসঙ্গে চঞ্চল-ফারিণ

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
কলকাতায় একসঙ্গে ফারিণ ও চঞ্চল চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
কলকাতায় একসঙ্গে ফারিণ ও চঞ্চল চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ১০ বছরের বিরতি কাটিয়ে এ বছর বাংলা সিনেমা নির্মাণে ফিরেছেন অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। গত জুলাইয়ে মুক্তি পেয়েছে ‘ডিয়ার মা’। এতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের জয়া আহসান। এবার এই নির্মাতার সিনেমায় দেখা যাবে বাংলাদেশের দুই অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী ও তাসনিয়া ফারিণকে। এমনটাই ইঙ্গিত দিলেন চঞ্চল ও ফারিণ।

ব্রাত্য বসুর ‘শেকড়’ সিনেমার শুটিং করতে গত মাসে পশ্চিমবঙ্গে গেছেন চঞ্চল চৌধুরী। গত শুক্রবার কোয়েল মল্লিকের ডাকে গিয়েছিলেন ‘স্বার্থপর’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনীতে। সেখানে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ফারিণ। সেখানেই চঞ্চল জানান, তাঁরা দুজনেই সেদিন সিনেমা নিয়ে আলাপ করেছেন অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর সঙ্গে। তবে আগে থেকে তাঁরা জানতেন না অনিরুদ্ধ তাঁদের একসঙ্গে ডেকেছেন। তাই একে অপরকে দেখে দুজনেই চমকে গিয়েছিলেন।

চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কেউ জানতাম না দুজনেই কলকাতায় আছি, পুরোটাই কাকতালীয়। সিনেমার শুটিং আর টোনিদা অর্থাৎ অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর সঙ্গে একটি মিটিং করার জন্য আমি কলকাতায় আসি। আর ও (ফারিণ) এখানে টোনিদার সঙ্গে মিটিং করতে আসে। দুজনেই যাওয়ার পর দেখা হয় এবং তখন জানতে পারি দুজনেই এখানে আছি।’

অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর পরিচালনায় দুজনকে একই সিনেমায় দেখা যাবে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে চঞ্চল বলেন, ‘সেটা এখনো নিশ্চিত না। তবে কথাবার্তা চলছে। সম্ভাবনা আছে। আশা করি আমরা একসঙ্গে কাজ করব।’

চঞ্চলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ফারিণকেও বলতে শোনা যায়, ‘কথা হচ্ছে। দেখা যাক। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’

এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় তাসনিয়া ফারিণের সঙ্গে। আজকের পত্রিকাকে খুদে বার্তায় ফারিণ জানান, এ বিষয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলতে চান না তিনি।

টালিউড সিনেমা ‘আরও এক পৃথিবী’ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয় ফারিণের। প্রথম সিনেমাতেই প্রশংসিত হয় তাঁর অভিনয়। পেয়েছিলেন ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস বাংলা পুরস্কার। এরপর বিপ্লব গোস্বামীর ‘পাত্রী চাই’ এবং অভিজিৎ সেনের ‘প্রজাপ্রতি ২’ সিনেমায় অভিনয়ের কথা ছিল ফারিণের। ভিসা জটিলতার কারণে দুটি সিনেমা থেকেই সরে আসেন তিনি।

গত বছর সৃজিত মুখার্জির ‘পদাতিক’ সিনেমা দিয়ে টালিউডে যাত্রা শুরু চঞ্চল চৌধুরীর। এতে তিনি অভিনয় করেন কিংবদন্তি নির্মাতা মৃণাল সেনের চরিত্রে। সম্প্রতি চঞ্চল শেষ করেছেন শেকড় সিনেমার শুটিং। তাঁর হাতে রয়েছে অমিতাভ ভট্টাচার্যের ‘ত্রিধারা’। এতে প্রথমবার চঞ্চলের সঙ্গে দেখা যাবে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত