Ajker Patrika

আমির খানের অভিনয়ের মাস্টারক্লাস

বিনোদন ডেস্ক
মাস্টারক্লাসে আমির খান। ছবি: সংগৃহীত
মাস্টারক্লাসে আমির খান। ছবি: সংগৃহীত

মিস্টার পারফেকশনিস্ট কীভাবে হয়ে ওঠা সম্ভব? প্রস্তুতি নেন কীভাবে? সম্প্রতি মুম্বাইয়ের ওয়েভস সামিটে ‘দ্য আর্ট অব অ্যাক্টিং’ শিরোনামে একটি মাস্টারক্লাস নিয়েছেন আমির খান। প্রায় দেড় ঘণ্টার সেই ক্লাসের সারসংক্ষেপ রইল পাঠকদের জন্য।

অভিনেতার প্রস্তুতি

প্রথাগত কোনো অভিনয় শিক্ষা আমার নেওয়া হয়নি। কাজ করতে করতেই শিখেছি। এটা নিয়ে আমার আফসোসও রয়েছে, যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অভিনয় শিখতে পারতাম! আমি নিজের জন্য একটা পদ্ধতি তৈরি করে নিয়েছি, যে চরিত্র করছি, প্রথমে তার মানসিকতা বোঝার চেষ্টা করি। সেটা বোঝার জন্য সময় লাগে, স্ক্রিপ্ট বারবার পড়তে হয়। যেকোনো সিনেমার শুটিংয়ের আগে স্ক্রিপ্ট নিয়ে অনেকটা সময় কাটাই। সংলাপ মুখস্থ করার জন্য কমপক্ষে তিন-চার মাস লাগে। এমনিতে আমার স্মৃতিশক্তি দুর্বল, ‘গজনি’ করার পর মনে হয় আরও দুর্বল হয়েছে। সংলাপগুলো কাগজে-কলমে লিখি। যার ফলে সেগুলো মাথায় গেঁথে যায়।

সিনেমার সবচেয়ে কঠিন দৃশ্য যেটা, সেটা নিয়ে প্রথমে কাজ শুরু করি। প্রস্তুতির প্রথম দিনে ৩-৪ ঘণ্টা শুধু ওই দৃশ্য নিয়ে পড়ে থাকি। প্রতিটি লাইন শতবার করে পড়ি। ঘুম থেকে উঠলেও যেন ওই লাইন চট করে বলে দিতে পারি, এমন সড়গড় হওয়া চাই। পরের দিনে প্রথম সিন দিয়ে শুরু করি। আধা ঘণ্টা কাজ করার পর দ্বিতীয় সিনের কাজ করি। এভাবে প্রতিদিন আগের সিনগুলোর প্রিপারেশন নেওয়ার পর একটা করে নতুন সিনের প্রস্তুতি নিতে থাকি। এই প্রসেস চলতে চলতে তিন মাসের মাথায় প্রথম সিনটা হয়তো ৯ হাজারবার রিহার্স করে ফেলি। যতক্ষণ পর্যন্ত সংলাপগুলো নিজের মনে না হবে, ততক্ষণ ওই লাইনগুলো ঠিকঠাক বলতে পারবেন না, তার সঙ্গে জাস্টিস করতে পারবেন না।

শুটিংয়ের ধরন বদল

প্রথম যখন ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম, তখন একসঙ্গে তিন-চারটি সিনেমার শুটিং করতে হতো। ওই সিস্টেমে নিজেকে ফিট করতে পারতাম না। শুটিং সেটে ডায়ালগ আসত, পরিবর্তন হতো, মনে রাখতে সমস্যায় পড়তাম। এমন হতো, একই দিনে তিন সিনেমার শুটিং। স্ক্রিপ্টের প্রতিটি লাইন ভালো করে মুখস্থ হতো না। এতে খুব ডিস্টার্বড হতাম। পরিচালক, প্রযোজকদের বারবার বলতাম, একটা সিনেমার কাজ একবারে শেষ করুন, এতে যদি ছয় মাসও লাগে, দিতে রাজি আছি। শুরুর দিকে কেউ সেভাবে কথাগুলো পাত্তা দিত না। অনেকের মনে হতো, একটানা একটি সিনেমার কাজ কীভাবে শেষ হবে! এত লোকেশনে শুটিং করতে হয়। এই প্রসেস ভাঙতে পারলাম যখন নিজে ‘লগান’ প্রযোজনা করেছিলাম। কাজের জন্য যে পদ্ধতিকে আমার ঠিক মনে হয়েছিল, লগানে সেভাবেই করতে পেরেছিলাম।

নিজেকে আগে বিশ্বাস করাতে হবে

যখন সামনে কোনো চ্যালেঞ্জিং দৃশ্য আসে যেমন রাগ ও দুঃখ-কষ্টের দৃশ্য; শুরুতে এসব দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার জন্য নিজের স্মৃতির সাহায্য নিতাম। রাগ হোক, ভালো লাগা হোক বা অন্য কী ঘটনাক্রম আমার সঙ্গে ঘটেছে, সেটার সঙ্গে কোনো সিনের ইমোশনকে মেলানোর চেষ্টা করতাম। পরে মনে হয়েছিল, এতে কাজটা ভালো হচ্ছে না। নিজেকে বুঝিয়েছিলাম, যে ইমোশনই ফুটিয়ে তুলতে হোক না কেন, সেটা সিনেমার স্ক্রিপ্ট থেকে বের করে আনতে হবে। আমার মনে হয়েছিল, নিজেকে আগে বিশ্বাস করাতে হবে।

নিজেকে বোঝাতে হবে স্ক্রিপ্টে

আপনার চরিত্র যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে, সত্যি সেটার সম্মুখীন হতে হয়েছে আপনাকে—এ বিশ্বাস জরুরি। যখন নিজের বিশ্বাস শতভাগ হবে, দর্শকও আপনার অভিনয়ের সঙ্গে একাত্ম হবে। অভিনেতার জন্য সবচেয়ে জরুরি এই বিশ্বাস।

সবচেয়ে বড় অস্ত্র রিপিটেশন

অভিনয় করতে গিয়ে ছোট কিছু টিপস খুঁজে নিয়েছি। আমি প্রশিক্ষিত অভিনেতা নই, তাই এসব টিপস তৈরি করেছি নিজের জন্য। কখনো কখনো ইমোশনাল দৃশ্যে আমার বেশ ভয় লাগে, দ্বিতীয়বার এটা করতে পারব কি না। এটা একজন অভিনেতার দুর্বল দিক। অভিনেতার কাজ হচ্ছে, একই জিনিস ১০ বার, ৫০ বার একই রকম দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলতে পারা। চার্লি চ্যাপলিনের একটা বিষয় বলি, তাঁর সম্পর্কে অনেক পড়েছি আমি। তিনি ২০০-৩০০ বার রিহার্সাল করতেন। ২০০-৩০০ টেকও দিতেন। একই শট বারবার ট্রাই করতেন, যতক্ষণ না ভালো হচ্ছে। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, আমরা যখন তাঁর সিনেমা দেখি, মনে হয়, এটা প্রথমবার ঘটেছে। একই জিনিস বারবার করতে পারলে তবে বোঝা যায়, আলাদা ঠিক কী করলে বিষয়টা ভালো হতে পারে। আসলে রিপিটেশন থেকে পারফেকশন আসে। আমি ঘুমের আগে দৃশ্যগুলো নিয়ে ভাবি। যতক্ষণ না মনে হয় মেন্টালি আমি রেডি, ততক্ষণ পর্যন্ত ভাবতে থাকি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত