ইলিয়াস শান্ত, ঢাকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে অধিভুক্ত সাত কলেজের আনুষ্ঠানিক পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম নতুন কাঠামোর অধীনে হবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নজরদারিতে তৈরি হবে সমন্বয় কমিটি। যার পরিচালক হবেন সাত কলেজের কোনো একজন অধ্যক্ষ। সঙ্গে থাকবে ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভর্তি, রেজিস্ট্রার ও হিসাব বিভাগের প্রতিনিধি। তবে যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্তমান ব্যবস্থা চালু রাখবে।
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে নানা জটিলতা তৈরি হতে থাকে। অধিভুক্তির দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও পরীক্ষা, মানসম্মত শিক্ষাসহ অন্য সমস্যা সমাধান পুরোপুরি হয়নি। ফলে বারবার আন্দোলনে নেমেছেন কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ গেল বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে নামেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাত কলেজকে ‘সম্মানজনক’ পৃথকীকরণের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এতে সাত কলেজের চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম জটিলতার মুখে পড়ে।
ঢাবি প্রশাসনের সাত কলেজের পৃথকীকরণের সিদ্ধান্তের প্রায় এক মাস পর এবার নতুন পদক্ষেপের কথা জানাল ইউজিসি। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। যেখানে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথকীকরণের কথা জানানো হয়।
শিক্ষার্থীরা কী বলছেন
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী জাফরিন আক্তার বলেন, ‘সাত কলেজের সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের প্রায় দুই মাস শেষ হয়েছে। এ সময়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির বেশ কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমরা দেখেছি। তারা কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছেন। এখন ক্যাম্পাসগুলো ঘুরে দেখছেন। সম্প্রতি সাত কলেজের পরিচালনায় নতুন পরিচালনা কাঠামোর খবর সামনে এসেছে। শুনেছি, এটা ঢাবি প্রশাসন অনুমোদন দিলে আইনগত বৈধতা পাবে। পবিত্র রমজান মাসের মধ্যেও কাজগুলো চলমান রয়েছে। যা প্রকৃতপক্ষেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভরসার জায়গা তৈরি করছে। আমরা আশাবাদী, অবশিষ্ট কাজগুলোও অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হবে।’
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিটি পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের প্রাণ ছুঁয়েছে। প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো তাঁরা যত্নের সঙ্গে শুনেছেন। এখন যতটুকু জানতে পেরেছি, অধিকাংশ কাজই গোছানো হয়ে গেছে। আমাদের প্রত্যাশা, বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্রুতই সাত কলেজের চূড়ান্ত মুক্তির অভিপ্রায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঘোষণা করে যাবতীয় কর্মযজ্ঞ সমাপ্ত করবেন। স্বাধীনতার এত বছর পরে সাত কলেজের চূড়ান্ত মুক্তির জন্য যেসব শিক্ষাবিদ নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা তাঁদের আমৃত্যু স্মরণ রাখবে।’
সাত কলেজ পরিচালনায় নতুন পরিচালনা কমিটির প্রস্তাবনা এলেও শিক্ষার্থীদের মূল ফোকাস ‘বিশ্ববিদ্যালয়’। সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী সাবরিনা সুলতানা বলেন, ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা মূলত চূড়ান্ত মুক্তির আন্দোলন শুরু করেছিল। সরকারের নির্দেশনায় ইউজিসি ধাপে ধাপে সেদিকে এগোচ্ছে। এখন বিশেষ পরিস্থিতিতে যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, সেখানে পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে সাত কলেজের কার্যক্রম চালু রাখার কথা হয়েছে। পরিচালনা কমিটি হোক আর যা-ই হোক, আমাদের শিক্ষার্থীদের মূল দাবি কিন্তু চূড়ান্ত মুক্তি। সে ক্ষেত্রে সাত কলেজের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়কেই আমরা চূড়ান্ত মুক্তি হিসেবে দেখছি।’
ইউজিসির সুপারিশ অনুযায়ী, সাময়িকভাবে সাতটি প্রতিষ্ঠানে একক সমন্বিত কাঠামো থাকবে। একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা সমকক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতাভুক্ত হওয়ার আগপর্যন্ত এই সাময়িক কাঠামো সাতটি কলেজের দায়িত্ব পালন করবে। কমিটির পরিচালক হবেন সাত কলেজ থেকে একজন অধ্যক্ষ। এই কাঠামোর অধীনে সাত কলেজের সব হিসাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পরিচালিত হবে। প্রস্তাবিত এই ব্যবস্থাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ঢাবি থেকে অনুমোদনের পরই তা কার্যকর হবে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘সাত কলেজ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সাময়িক ব্যবস্থা সংক্রান্ত’ শিরোনামে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইউজিসির ওই সুপারিশপত্রে স্বাক্ষর করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও সাত কলেজ বিষয়ে গঠিত উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। এরপর ২ মার্চ ইউজিসির এই সুপারিশপত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয় দেয়। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে ইউজিসির সুপারিশ অনুযায়ী অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানায় মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাত কলেজ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমরা একটি চিঠি রিসিভ করেছি। ঢাবি থেকে সাত কলেজকে পৃথক্করণ ঘোষণার পর এসব কলেজের জন্য ইউজিসির পক্ষ থেকে চিঠিতে একটি পরিচালনা কমিটির সুপারিশ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ সুপারিশের অনুমোদন দিলে নতুন পরিচালনা কমিটি আইনগত বৈধতা পাবে। আমরা সে প্রক্রিয়ার দিকেই যাচ্ছি। এ কমিটি ঢাবি থেকে অনুমোদনের জন্য কিছু ধাপ রয়েছে। এ ধাপগুলো শেষ করতে কিছু সময় লাগতে পারে। এটা আগামী দু-এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে পারব।’
রাজধানীর সাত সরকারি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এই কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষক এক হাজারের বেশি।
ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস আজকের পত্রিকাকে বলেন, সাত কলেজ বিষয়ে এবার কিন্তু সময় নিয়ে ও সুচিন্তিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যাতে নতুন করে আর কোনো সমস্যা তৈরির সুযোগ না থাকে। সাত কলেজকে এমন নির্দিষ্ট একটা গন্তব্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ইউজিসির নেতৃত্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। সে আলোকেই কিন্তু এ অন্তর্বর্তী কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।
ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শামছুন নাহার বলেন, ‘সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখার লক্ষ্যে একটা অন্তর্বর্তী কমিটি গঠনের কথা আমরা শুনেছি। সাত কলেজে কোনো এক অধ্যক্ষকে এ কমিটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। আমরা তো আসলে এখন কোথাও নেই... না আছি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের তো একটা পরিচয় লাগবে। সে অর্থে চিন্তা করলে ইউজিসির এই সুপারিশকে কাজের অগ্রগতি বলাই যায়।’
ইউজিসির নেতৃত্বে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র পরিচয় নিশ্চিত করতে চান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে নতুন প্রস্তাবনায় যেন কোনো সমন্বয়হীনতা তৈরি না হয়, সে প্রত্যাশাও তাঁদের। কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারী সাগর বলেন, ঢাবির অধীনে থেকেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পরিচয় সংকটের মধ্যে ছিল। ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল ঘোষণার পর থেকে সাত কলেজ এখন অভিভাবকহীন অবস্থায় চলছে। এমন অবস্থায় ইউজিসি সাত কলেজের জন্য একটি পরিচালনা কমিটির সুপারিশ করেছে। এ কমিটির অধীনে যেন সাত কলেজ পরিচালনায় কোনো সমন্বয়হীনতা না থাকে। একই সঙ্গে এ পরিচালনা কমিটি কত দিন দায়িত্ব পালন করবে, সক্ষমতা কতটুকু থাকবে—এসব বিষয়গুলোর পরিষ্কার করতে হবে।
সাত কলেজের স্বতন্ত্র পরিচয় প্রতিষ্ঠায় গত ৩০ ডিসেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে সভাপতি করে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির সদস্যরা হলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ ও ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান। এ কমিটিকে আগামী এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। এ কমিটি তাদের সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সাময়িক ব্যবস্থার সুপারিশ করে।
প্রস্তাবিত পরিচালনা কমিটির মেয়াদ কতদিন
ইউজিসির প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে, একটি সনদপ্রাপ্ত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়/সমকক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতাভুক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই সাময়িক কাঠামো সাতটি কলেজ বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবে।
চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেহেতু সাত কলেজকে পৃথকীকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে এ কলেজগুলোর প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম স্থিতিশীল রাখতে একটা পরিচালনা কাঠামোর প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় সেটার অনুমোদন দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে। এখন এটা ঢাবির সিন্ডিকেট ও কাউন্সিলে পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ঢাবির অনুমোদনের পর এ কমিটি নতুন সেশনের ভর্তি কার্যক্রমসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ কমিটি ইউজিসির নজরদারিতে কাজ করবে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো, আইন ও ঘোষণা হওয়া আগপর্যন্ত এ কমিটির কার্যকারিতা বলবৎ থাকবে।
সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, অধিভুক্তি বাতিল করে এসব কলেজগুলোর সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার। অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। সে অনুযায়ী কাজও চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, আট বছর আগে একটি সরকার বিবেচনাহীনভাবে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে। যার ফলে জটিল সমস্যা তৈরি হয়েছে। এই সাত কলেজ নিয়ে নতুন একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ কতদূর
ইউজিসি চেয়ারম্যান ও উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ফায়েজ বলেন, সাত কলেজের সমন্বয়ে নতুন যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা কাজ করছি, সেটার বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এখন কাজ প্রায় শেষের দিকে রয়েছে। আমরা শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, সাত কলেজের অধ্যক্ষ, ঢাবি কর্তৃপক্ষ—সবার সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেছি। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চেয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। এসবগুলো কাজ এখন আমাদের ফিল্টারিং করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইউজিসির নেতৃত্বে আমরা প্রায় সবগুলো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখেছি। এর মাধ্যমে আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা ও দুর্বলতার দিকগুলো নির্ণয়ের চেষ্টা করছি। কিছু প্রতিষ্ঠানে সন্তোষজনক অবস্থা দেখা গেছে। কয়েকটির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। আমরা এখন ক্যাম্পাসগুলোর সরেজমিন পর্যবেক্ষণ মূল্যায়নের চেষ্টা করছি। একইসঙ্গে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেলের কাজও দ্রুত গতিতে চলছে। আশা করছি, আমাদের যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে তার আগেই কাজ শেষ করতে পারব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে অধিভুক্ত সাত কলেজের আনুষ্ঠানিক পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম নতুন কাঠামোর অধীনে হবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নজরদারিতে তৈরি হবে সমন্বয় কমিটি। যার পরিচালক হবেন সাত কলেজের কোনো একজন অধ্যক্ষ। সঙ্গে থাকবে ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভর্তি, রেজিস্ট্রার ও হিসাব বিভাগের প্রতিনিধি। তবে যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্তমান ব্যবস্থা চালু রাখবে।
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে নানা জটিলতা তৈরি হতে থাকে। অধিভুক্তির দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও পরীক্ষা, মানসম্মত শিক্ষাসহ অন্য সমস্যা সমাধান পুরোপুরি হয়নি। ফলে বারবার আন্দোলনে নেমেছেন কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ গেল বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে নামেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাত কলেজকে ‘সম্মানজনক’ পৃথকীকরণের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এতে সাত কলেজের চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম জটিলতার মুখে পড়ে।
ঢাবি প্রশাসনের সাত কলেজের পৃথকীকরণের সিদ্ধান্তের প্রায় এক মাস পর এবার নতুন পদক্ষেপের কথা জানাল ইউজিসি। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। যেখানে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথকীকরণের কথা জানানো হয়।
শিক্ষার্থীরা কী বলছেন
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী জাফরিন আক্তার বলেন, ‘সাত কলেজের সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের প্রায় দুই মাস শেষ হয়েছে। এ সময়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির বেশ কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমরা দেখেছি। তারা কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছেন। এখন ক্যাম্পাসগুলো ঘুরে দেখছেন। সম্প্রতি সাত কলেজের পরিচালনায় নতুন পরিচালনা কাঠামোর খবর সামনে এসেছে। শুনেছি, এটা ঢাবি প্রশাসন অনুমোদন দিলে আইনগত বৈধতা পাবে। পবিত্র রমজান মাসের মধ্যেও কাজগুলো চলমান রয়েছে। যা প্রকৃতপক্ষেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভরসার জায়গা তৈরি করছে। আমরা আশাবাদী, অবশিষ্ট কাজগুলোও অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হবে।’
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিটি পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের প্রাণ ছুঁয়েছে। প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো তাঁরা যত্নের সঙ্গে শুনেছেন। এখন যতটুকু জানতে পেরেছি, অধিকাংশ কাজই গোছানো হয়ে গেছে। আমাদের প্রত্যাশা, বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্রুতই সাত কলেজের চূড়ান্ত মুক্তির অভিপ্রায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঘোষণা করে যাবতীয় কর্মযজ্ঞ সমাপ্ত করবেন। স্বাধীনতার এত বছর পরে সাত কলেজের চূড়ান্ত মুক্তির জন্য যেসব শিক্ষাবিদ নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা তাঁদের আমৃত্যু স্মরণ রাখবে।’
সাত কলেজ পরিচালনায় নতুন পরিচালনা কমিটির প্রস্তাবনা এলেও শিক্ষার্থীদের মূল ফোকাস ‘বিশ্ববিদ্যালয়’। সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী সাবরিনা সুলতানা বলেন, ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা মূলত চূড়ান্ত মুক্তির আন্দোলন শুরু করেছিল। সরকারের নির্দেশনায় ইউজিসি ধাপে ধাপে সেদিকে এগোচ্ছে। এখন বিশেষ পরিস্থিতিতে যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, সেখানে পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে সাত কলেজের কার্যক্রম চালু রাখার কথা হয়েছে। পরিচালনা কমিটি হোক আর যা-ই হোক, আমাদের শিক্ষার্থীদের মূল দাবি কিন্তু চূড়ান্ত মুক্তি। সে ক্ষেত্রে সাত কলেজের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়কেই আমরা চূড়ান্ত মুক্তি হিসেবে দেখছি।’
ইউজিসির সুপারিশ অনুযায়ী, সাময়িকভাবে সাতটি প্রতিষ্ঠানে একক সমন্বিত কাঠামো থাকবে। একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা সমকক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতাভুক্ত হওয়ার আগপর্যন্ত এই সাময়িক কাঠামো সাতটি কলেজের দায়িত্ব পালন করবে। কমিটির পরিচালক হবেন সাত কলেজ থেকে একজন অধ্যক্ষ। এই কাঠামোর অধীনে সাত কলেজের সব হিসাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পরিচালিত হবে। প্রস্তাবিত এই ব্যবস্থাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ঢাবি থেকে অনুমোদনের পরই তা কার্যকর হবে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘সাত কলেজ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সাময়িক ব্যবস্থা সংক্রান্ত’ শিরোনামে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইউজিসির ওই সুপারিশপত্রে স্বাক্ষর করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও সাত কলেজ বিষয়ে গঠিত উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। এরপর ২ মার্চ ইউজিসির এই সুপারিশপত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয় দেয়। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে ইউজিসির সুপারিশ অনুযায়ী অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানায় মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাত কলেজ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমরা একটি চিঠি রিসিভ করেছি। ঢাবি থেকে সাত কলেজকে পৃথক্করণ ঘোষণার পর এসব কলেজের জন্য ইউজিসির পক্ষ থেকে চিঠিতে একটি পরিচালনা কমিটির সুপারিশ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ সুপারিশের অনুমোদন দিলে নতুন পরিচালনা কমিটি আইনগত বৈধতা পাবে। আমরা সে প্রক্রিয়ার দিকেই যাচ্ছি। এ কমিটি ঢাবি থেকে অনুমোদনের জন্য কিছু ধাপ রয়েছে। এ ধাপগুলো শেষ করতে কিছু সময় লাগতে পারে। এটা আগামী দু-এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে পারব।’
রাজধানীর সাত সরকারি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এই কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষক এক হাজারের বেশি।
ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস আজকের পত্রিকাকে বলেন, সাত কলেজ বিষয়ে এবার কিন্তু সময় নিয়ে ও সুচিন্তিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যাতে নতুন করে আর কোনো সমস্যা তৈরির সুযোগ না থাকে। সাত কলেজকে এমন নির্দিষ্ট একটা গন্তব্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ইউজিসির নেতৃত্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। সে আলোকেই কিন্তু এ অন্তর্বর্তী কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।
ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শামছুন নাহার বলেন, ‘সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখার লক্ষ্যে একটা অন্তর্বর্তী কমিটি গঠনের কথা আমরা শুনেছি। সাত কলেজে কোনো এক অধ্যক্ষকে এ কমিটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। আমরা তো আসলে এখন কোথাও নেই... না আছি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের তো একটা পরিচয় লাগবে। সে অর্থে চিন্তা করলে ইউজিসির এই সুপারিশকে কাজের অগ্রগতি বলাই যায়।’
ইউজিসির নেতৃত্বে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র পরিচয় নিশ্চিত করতে চান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে নতুন প্রস্তাবনায় যেন কোনো সমন্বয়হীনতা তৈরি না হয়, সে প্রত্যাশাও তাঁদের। কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারী সাগর বলেন, ঢাবির অধীনে থেকেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পরিচয় সংকটের মধ্যে ছিল। ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল ঘোষণার পর থেকে সাত কলেজ এখন অভিভাবকহীন অবস্থায় চলছে। এমন অবস্থায় ইউজিসি সাত কলেজের জন্য একটি পরিচালনা কমিটির সুপারিশ করেছে। এ কমিটির অধীনে যেন সাত কলেজ পরিচালনায় কোনো সমন্বয়হীনতা না থাকে। একই সঙ্গে এ পরিচালনা কমিটি কত দিন দায়িত্ব পালন করবে, সক্ষমতা কতটুকু থাকবে—এসব বিষয়গুলোর পরিষ্কার করতে হবে।
সাত কলেজের স্বতন্ত্র পরিচয় প্রতিষ্ঠায় গত ৩০ ডিসেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে সভাপতি করে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির সদস্যরা হলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ ও ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান। এ কমিটিকে আগামী এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। এ কমিটি তাদের সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সাময়িক ব্যবস্থার সুপারিশ করে।
প্রস্তাবিত পরিচালনা কমিটির মেয়াদ কতদিন
ইউজিসির প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে, একটি সনদপ্রাপ্ত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়/সমকক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতাভুক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই সাময়িক কাঠামো সাতটি কলেজ বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবে।
চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেহেতু সাত কলেজকে পৃথকীকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে এ কলেজগুলোর প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম স্থিতিশীল রাখতে একটা পরিচালনা কাঠামোর প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় সেটার অনুমোদন দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে। এখন এটা ঢাবির সিন্ডিকেট ও কাউন্সিলে পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ঢাবির অনুমোদনের পর এ কমিটি নতুন সেশনের ভর্তি কার্যক্রমসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ কমিটি ইউজিসির নজরদারিতে কাজ করবে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো, আইন ও ঘোষণা হওয়া আগপর্যন্ত এ কমিটির কার্যকারিতা বলবৎ থাকবে।
সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, অধিভুক্তি বাতিল করে এসব কলেজগুলোর সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার। অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। সে অনুযায়ী কাজও চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, আট বছর আগে একটি সরকার বিবেচনাহীনভাবে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে। যার ফলে জটিল সমস্যা তৈরি হয়েছে। এই সাত কলেজ নিয়ে নতুন একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ কতদূর
ইউজিসি চেয়ারম্যান ও উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ফায়েজ বলেন, সাত কলেজের সমন্বয়ে নতুন যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা কাজ করছি, সেটার বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এখন কাজ প্রায় শেষের দিকে রয়েছে। আমরা শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, সাত কলেজের অধ্যক্ষ, ঢাবি কর্তৃপক্ষ—সবার সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেছি। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চেয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। এসবগুলো কাজ এখন আমাদের ফিল্টারিং করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইউজিসির নেতৃত্বে আমরা প্রায় সবগুলো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখেছি। এর মাধ্যমে আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা ও দুর্বলতার দিকগুলো নির্ণয়ের চেষ্টা করছি। কিছু প্রতিষ্ঠানে সন্তোষজনক অবস্থা দেখা গেছে। কয়েকটির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। আমরা এখন ক্যাম্পাসগুলোর সরেজমিন পর্যবেক্ষণ মূল্যায়নের চেষ্টা করছি। একইসঙ্গে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেলের কাজও দ্রুত গতিতে চলছে। আশা করছি, আমাদের যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে তার আগেই কাজ শেষ করতে পারব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ‘কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের’ স্নাতক প্রোগ্রামে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে মোট পরীক্ষার্থীর ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ উত্তীর্ণ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগেবার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট ও বিজেএস পরীক্ষার ফি কমানো এবং নন-ক্যাডার চালুর দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
৯ ঘণ্টা আগেইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) তিন দপ্তরে নতুন দপ্তর প্রধান নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর স্বাক্ষরিত পৃথক পৃথক অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
১২ ঘণ্টা আগেইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নতুন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
১৩ ঘণ্টা আগে