Ajker Patrika

বিশ্ববিদ্যালয়ে খুমি সম্প্রদায়ের প্রথম নারী শিক্ষার্থী

মুসাররাত আবির
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৬: ৫২
Thumbnail image
তংসই খুমি। ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম তারাছা ইউনিয়নের মংঞোপাড়া গ্রাম। শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের এ গ্রামে নেই সুপেয় পানির স্থায়ী ব্যবস্থা। নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। নেই বিদ্যুৎ। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক খুঁজতে হয় উঁচু গাছে ওঠে। নেই ইন্টারনেট সংযোগ। সে গ্রামেই জন্ম ও বেড়ে ওঠেন তংসই খুমি। তিনি খুমি সম্প্রদায়ের প্রথম সদস্য হিসেবে পড়াশোনা করতে এসেছেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে।

যেমন ছিল যাত্রা

এমন কঠিন পরিবেশে তংসইয়ের উচ্চশিক্ষার যাত্রাটা মোটেই সহজ ছিল না। দেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের মধ্যে খুমি সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা কম। যোগাযোগব্যবস্থা আর আর্থসামাজিক অবস্থান—সবখানেই পিছিয়ে রয়েছে তারা। দুর্গম এলাকায় বসবাসের কারণে এ সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা বেশি দূর পড়ালেখার সুযোগ পায় না।

চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় তংসইয়ের বাবা মারা যান। সেই বিরুদ্ধ পরিবেশে তাঁর মা লিংসাই খুমি অন্য মানুষের কথা শুনে মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ তো করেননি, বরং সঙ্গে দুই ছেলেকেও পড়াশোনা শিখিয়েছেন। তংসই জানান, তাঁর বাবা মারা যাওয়ায় পর মা ঘরে তাঁতের কাপড় বুনে বিক্রি করে তাঁদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করেছেন। তার ফলেই তিনি পেয়েছেন উচ্চশিক্ষার সুযোগ।

পরিবারের অভাব-অনটনের মধ্যেই তংসই বান্দরবান সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাস করেন। তারপর ভর্তি হন ঢাকার হলি ক্রস কলেজে। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে।

হাল না ছাড়া

অর্থনৈতিক সংকট আর অচেনা পৃথিবী—এ দুইয়ের মধ্য থেকে মাঝেমধ্যেই তাঁর মনে হতো, আদৌ নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন তো? তংসই বলেন, ‘প্রায়ই মনে হতো, আমি যদি পড়াশোনা না করতাম, তাহলে হয়তো আমার বড় দুই ভাই আরও ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারত। কিন্তু আমার মা কখনোই আমাকে এমন ভাবতে দেননি। যত কষ্টই হোক না কেন, তিনি আমাদের পড়াশোনার খরচটা চালিয়ে গিয়েছেন।’

তংসইয়ের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সংকট ছাড়াও আরেকটা বড় সংকট ছিল ভাষাগত দক্ষতা। খুমি সম্প্রদায়ের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও বর্ণমালা। বাংলা তাদের দ্বিতীয় ও ইংরেজি তৃতীয় ভাষা। তাই এই ভাষাগুলো নিজের আয়ত্তে আনতে তাঁকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

তংসই লেখাপড়া শেষ করে ফিরে যেতে চান নিজের এলাকায়। নিজের সম্প্রদায়সহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে চান। বললেন, ‘বিশেষ করে নারী শিক্ষার উন্নয়ন, নারীদের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং তাদের কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত