Ajker Patrika

ভোটে উৎসব, ফলে উত্তেজনা

  • আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ।
  • ভোট পড়েছে ৭৮.৩৩ শতাংশ।
  • সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে সূর্য সেন হলে, ৮৮ শতাংশ।
  • আরও ১২টি হলে ৮০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১: ৪৮
ডাকসু নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডাকসু নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কোনো ছাত্রসংগঠনের একক আধিপত্য নেই, ক্ষমতাসীন দলের দাপটও নেই। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী এমন এক ভিন্ন পরিবেশে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা দিনভর একে অপরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুললেও ভোটে বড় কোনো অনিয়মের খবর পাওয়া যায়নি। উৎসব ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, এবারের ডাকসু নির্বাচনে ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে।

১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে, প্রতিবছর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন পর্যন্ত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে ৩৮ বার। এর মধ্যে ২৯ বারই হয়েছে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের ৫০ বছরে।

স্বাধীন দেশে ৫৫ বছরে নবমবারের মতো গতকাল ভোট দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে প্রায় এক মাস ধরেই উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গতকাল ছিল চূড়ান্ত উৎসবের দিন। এ দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ করা হয়। প্রতিনিধি নির্বাচনে ছয় পৃষ্ঠার ওএমআর শিটের ব্যালট পেপারে রায় দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

ভোটকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। নির্বাচনের ভোট গণনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতে কেন্দ্রগুলোর সামনে লাগানো হয় এলইডি স্ক্রিন। এতে দেখানো হয় ভোট গণনা। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে কেন্দ্রগুলোর বাইরে থাকা এলইডি স্ক্রিন একে একে চালু করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। রাত সাড়ে ৮টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।

ডাকসুতে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ জন আর ১৩টি ছাত্র হলে ভোটার রয়েছেন ২০ হাজার ৯১৫ জন। এবারের নির্বাচনে ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন পদে ছাত্রী রয়েছেন ৬২ জন। এ ছাড়া প্রতি হল সংসদে ১৩টি করে ১৮টি হলে মোট পদের সংখ্যা ২৩৪টি। এসব পদে ভোটে লড়ছেন ১ হাজার ৩৫ জন।

ভোট পড়েছে ৭৮.৩৩ শতাংশ

ডাকসু নির্বাচনে ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়েছেন সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থীরা। এ হলের ৮৮ শতাংশ ভোটারই নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এ ছাড়া আরও ১২টি হলের শিক্ষার্থীরা ৮০ শতাংশের ওপরে ভোট দিয়েছেন।

সন্ধ্যায় ডাকসুর চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হলগুলোর মধ্যে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ৮০ দশমিক ২৪ শতাংশ, অমর একুশে হলে ৮৩ দশমিক ৩০ শতাংশ, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৮১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, জগন্নাথ হলে ৮২ দশমিক ৪৪ শতাংশ, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৮৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৮৩ শতাংশ, স্যার এ এফ রহমান হলে ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

এ ছাড়া হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৮৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ, বিজয় একাত্তর হলে ৮৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, সূর্যসেন হলে ৮৮ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৭৫ শতাংশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৮৭ শতাংশ ও কবি জসীমউদ্‌দীন হলের ৮৬ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।

ছাত্রীদের হলে তুলনামূলক কম ভোট পড়েছে। ছাত্রীদের বেগম রোকেয়া হলে ৬৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ৬৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে ৬৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৬৪ শতাংশ ও শামসুন নাহার হলের ৬৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিশ্বের ৫০ তরুণের একজন আমিমুল

আব্দুর রাজ্জাক খান
বিশ্বের ৫০ তরুণের একজন আমিমুল

বিশ্বের নানা প্রান্তের তরুণেরা যখন পরিবর্তনের স্বপ্নে ভবিষ্যৎ গড়ছেন, তখন সেই স্বপ্নবাজদের সারিতে বাংলাদেশের তরুণ আমিমুল এহসান খান যোগ করেছেন এক অনন্য অধ্যায়। সম্প্রতি তিনি নির্বাচিত হয়েছেন ‘গ্লোবাল চেঞ্জমেকার ২০২৫’ হিসেবে। বিশ্বের ৫০ জন তরুণের মধ্য থেকে এই মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি অর্জন করেছেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ইয়ুথ সামিট ২০২৫-এ অংশ নেন আমিমুল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৫০ তরুণ নেতাকে নিয়ে আয়োজিত এই সামিটে আলোচনা হয় নেতৃত্ব, টেকসই উন্নয়ন, সামাজিক পরিবর্তন ও বৈশ্বিক সহযোগিতা নিয়ে। এই সম্মেলন ছিল ফুল ফান্ডেড। সামিটে অংশগ্রহণ করা তরুণদের সব ব্যয় বহন করেছে আয়োজক সংস্থা।

টোকিও থেকে বিশ্বমঞ্চে

আমিমুলের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে জাপানের টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পেয়েছেন ৮০ শতাংশ স্কলারশিপ, পাশাপাশি জাপান সরকারের এক বছরের বৃত্তিও পেয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন অ্যাওয়ারনেস ৩৬০ নামের একটি বৈশ্বিক তরুণ নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট লিড হিসেবে। পাশাপাশি জাপানের এশিয়ান বিজনেস নেটওয়ার্কে তিনি মার্কেটিং ম্যানেজার পদেও কর্মরত।

পরিবর্তনের পথে নেতৃত্ব

নিজের যাত্রা নিয়ে আমিমুল বলেন, ‘আমি এই সুযোগ পেয়েছি যুব ক্ষমতায়নমূলক কাজের জন্য, যা আমি অ্যাওয়ারনেস ৩৬০-এর সঙ্গে করে আসছি। আমি একা পৃথিবী বদলাতে পারব না জানি, তাই আমি অন্যদের অনুপ্রাণিত করছি, যাতে তারাও পরিবর্তনের পথে এগিয়ে আসে।’

39f00df0-২

তাঁর নেতৃত্বে প্রতিবছর আয়োজিত হয় অ্যাওয়ারনেস ৩৬০ ফেলোশিপ প্রোগ্রাম। যেখানে তরুণদের শেখানো হয় নেতৃত্ব, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও সামাজিক প্রভাব তৈরির দক্ষতা। পাঁচ বছর ধরে প্রতিবছর এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছেন বিশ্বের ৭০টির বেশি দেশের প্রায় ৫০০ তরুণ।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

যুবসমাজের জন্য নিরলস পরিশ্রমের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে আমিমুল পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘দ্য ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড’। এটি ছিল তরুণ নেতৃত্ব এবং সামাজিক প্রভাব তৈরির অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার।

অনুপ্রেরণার বার্তা

দক্ষিণ আফ্রিকার সামিটে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও দৃঢ় করেছে। তিনি বলেন, ‘এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে বুঝেছি, পৃথিবীর প্রত্যেক তরুণই পরিবর্তনের বাহক হতে পারে। আমাদের চিন্তা, কাজ আর সহযোগিতার মাধ্যমে গড়ে উঠতে পারে এক সুন্দর, টেকসই ভবিষ্যৎ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাইবার সুরক্ষায় শিক্ষার্থীদের পাশে আরাফাত চৌধুরী

নওসাদ আল সাইম
আরাফাত চৌধুরী।
আরাফাত চৌধুরী।

দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে সাইবার অপরাধের ঝুঁকি। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, ভুয়া আইডি থেকে অপপ্রচার, অনলাইন প্রতারণা কিংবা ডিপফেক ভিডিও—সবকিছু মিলিয়ে এখন সাইবার অপরাধ এক বড় সামাজিক সংকটে পরিণত হয়েছে।

সাইবার এইড বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, ডিপফেক ও এআইনির্ভর অপরাধের হার এখন ২৩ শতাংশের বেশি। সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাকিং ২১ শতাংশ, ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে অপপ্রচার ১৫ শতাংশ, ই-কমার্স প্রতারণা ১৫ শতাংশ এবং অনলাইন হুমকি ১১ শতাংশ। ভুক্তভোগীদের প্রায় ৭৯ শতাংশের বয়স ১৮-৩০ বছরের মধ্যে, তাঁদের ৫৯ শতাংশই নারী।

অধিকাংশ ভুক্তভোগী জানেন না, কোথায় অভিযোগ করতে হবে। জরিপে দেখা গেছে, ৪২ শতাংশ অভিযোগ দাখিলের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞ এবং যাঁরা অভিযোগ করেন, তাঁদের মাত্র ১২ শতাংশ আইনি প্রতিকার পান। ফলে সচেতনতার অভাব ও আইনি কাঠামোর সীমাবদ্ধতায় সাইবার নিরাপত্তা এখন দেশের বড় এক চ্যালেঞ্জ।

এই বাস্তবতায় এগিয়ে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত চৌধুরী। ২০২২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘সাইবার এইড বাংলাদেশ’, যা সাইবার অপরাধের শিকার মানুষের আইনি সহায়তা এবং মানসিক সাপোর্ট দেয়। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে সংগঠনটি দেশে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে।

আরাফাত বলেন, ‘সাইবার অপরাধ শুধু মানসিক যন্ত্রণা নয়, সামাজিক মর্যাদাহানির কারণও। কিন্তু বেশির ভাগ ভুক্তভোগী ভয় বা লজ্জায় মুখ খুলতে চান না।’ সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ১ হাজার ৭৬১ জন এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রায়

৪ হাজার মানুষ সাইবার এইডের সহায়তা পেয়েছেন। সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে ৭৬ শতাংশই নারী। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে ব্ল্যাকমেল ও ই-কমার্স প্রতারণা-সংক্রান্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান সুমনা বলেন, ‘একজন আমার ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেল করতে থাকে। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তখন সাইবার এইডে যোগাযোগ করি। শুধু আইনি সহায়তাই নয়; মানসিকভাবেও তারা পাশে দাঁড়ায়।’

অন্যদিকে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘অনলাইনে একটি পেজ থেকে আইফোন কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছিলাম। সাইবার এইডের সহায়তায় পুলিশে অভিযোগ করতে পারি। এখন অন্তত জানি, প্রতারণার শিকার হলে চুপ করে না থেকে লড়াই করা যায়।’

শুধু আইনি সহায়তা নয়, সচেতনতা সৃষ্টিতেও কাজ করছে সংগঠনটি। এ পর্যন্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইবার সচেতনতা ক্যাম্পেইন এবং বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৫৬টির বেশি সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেছে তারা। অনলাইনে ‘বেসিক সাইবার লিটারেসি’, ‘সাইবার স্পেস সিকিউরিটি’ ও ‘ডিজিটাল ফরেনসিক’ কোর্স চালু করেছে। ভবিষ্যতে চালু হবে একটি মোবাইল অ্যাপ, যেখানে থাকবে লাইভ চ্যাট সাপোর্ট, এআইনির্ভর নিরাপত্তা নির্দেশনা এবং দ্রুত অভিযোগ দাখিলের সুবিধা।

ভুক্তভোগীরা হটলাইন, ফেসবুক পেজ বা গ্রুপের মাধ্যমে অভিযোগ করলে সাইবার এইড বাংলাদেশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন ও সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।

সাইবার অপরাধ বাড়ার পেছনে আরাফাত দুটি বড় কারণ দেখছেন। সেগুলো হলো সচেতনতার অভাব এবং আইনগত সীমাবদ্ধতা। তাঁর মতে, বেশির ভাগ সাইবার অপরাধ জামিনযোগ্য হওয়ায় অপরাধীদের ভয় কম। আবার ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতায়ও ঘাটতি রয়েছে।

আরাফাতের বিশ্বাস, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সাইবার ঝুঁকিও বাড়ছে। তাই প্রয়োজন আগাম প্রস্তুতি ও সচেতনতা। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা চাই তরুণেরা শুধু প্রযুক্তির ব্যবহারকারী নয়, বরং প্রযুক্তির নিরাপত্তা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুক।’

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট আল মামুন রাসেল বলেন, সাইবার এইড বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে সাইবার ক্রাইম ভিকটিমদের আইনি সহযোগিতা করে যাচ্ছে। পাশাপাশি সাইবার‌ ক্রাইম প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সাইবার ক্রাইম ভুক্তভোগীদের আইনি সহযোগিতা প্রদানে এটি অনন্য ও কার্যকরী উদ্যোগ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব

জাককানইবি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র

আশরাফুল আলম
জাককানইবি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ প্রতিষ্ঠিত স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব (এসডিসি) অন্যতম। এটি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি এবং ক্যারিয়ার গঠনের কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রশংসা অর্জন করেছে।

এসডিসির লক্ষ্য ও ভিশন হলো শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা এবং একটি দক্ষতানির্ভর তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলা। এসব তরুণ জাতীয় এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখবে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এসডিসি শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত ওয়ার্কশপ, সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতা আয়োজন করে আসছে। যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্ব, নেটওয়ার্ক তৈরি, ক্যারিয়ার পরিকল্পনা ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

সম্প্রতি এসডিসি আয়োজন করেছে জাতীয় পর্যায়ের বিজনেস কেস প্রতিযোগিতা ‘বিস কেইস ২০২৫’। তিন ধাপে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ২৮৫টির বেশি দল, যার পুরস্কারমূল্য ছিল ১ লাখ টাকা। এতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়। ইভেন্টের টাইটেল স্পনসর ছিল এসআর ড্রিম আইটি এবং সহ-স্পনসর ছিল ২৫টির বেশি প্রতিষ্ঠান।

ক্লাবটির অন্যতম সিগনেচার আয়োজন ‘ফ্রেশারস চয়েস’। এখানে নবীন শিক্ষার্থীরা মঞ্চে কথা বলার আত্মবিশ্বাস অর্জন এবং পাবলিক স্পিকিং দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ পায়। এটি শুধু প্রতিযোগিতা নয়; বরং নবীনদের আত্মপ্রকাশের সাহস জোগানো এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।

শিক্ষার্থীদের চাকরির প্রস্তুতিতে সহায়তার জন্য এসডিসি আয়োজন করে ‘জব ফেয়ার ২০২৫’। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী সিভি জমা দেন এবং অনেকে ইন্টারভিউ কল পান। এই আয়োজন ক্যারিয়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি নেটওয়ার্কিং এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখে।

বর্তমানে ক্লাবটির ষষ্ঠ কার্যনির্বাহী কমিটি দায়িত্ব পালন করছে। সভাপতি মো. মোস্তাকিম, সাধারণ সম্পাদক বেলাল হাসান শাওন, মরিয়ম আক্তার তানিয়াসহ নির্বাহী সদস্যরা দলগতভাবে নানা সৃজনশীল উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছেন।

এসডিসি আগামী দিনে উদ্যোক্তা উন্নয়ন, প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ ও গবেষণামূলক কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে আরও বিস্তৃত পরিসরে দক্ষতা উন্নয়নমূলক উদ্যোগ নিতে চান তাঁরা।

সভাপতি মো. মোস্তাকিম বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য শুধু প্রশিক্ষণ নয়, শিক্ষার্থীদের এমনভাবে গড়ে তোলা, যেন তারা প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে নিজেদের দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে।’

ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘এসডিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কার্যকর সংগঠন। শিক্ষার্থীরা এখানে যোগ দিয়ে তাদের ইন্টারপারসোনাল স্কিল উন্নয়নের সুযোগ পাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে অত্যন্ত সহায়ক।’

দক্ষতা ও শিক্ষার মেলবন্ধনে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী এবং দক্ষ ভবিষ্যতের সহযাত্রী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উপকূলে আলো ছড়াচ্ছে রাজাখালী উন্মুক্ত পাঠাগার

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 
উপকূলে আলো ছড়াচ্ছে রাজাখালী
উন্মুক্ত পাঠাগার

বই মানুষকে আলোকিত করে, চিন্তার জগতের প্রসার ঘটায়। কিন্তু গ্যাজেটের আসক্তিতে আজকের প্রজন্ম বই থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। এই বাস্তবতায় কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের কিছু তরুণ নেন ভিন্ন উদ্যোগ। তাঁরা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সামাজিক বিপ্লব’-এর সহযোগিতায় ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি রাজাখালীর সবুজবাজারের দক্ষিণে কৃষ্ণচূড়া মোড়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘রাজাখালী উন্মুক্ত পাঠাগার’।

শুরু থেকে এটি শুধু বই পড়ার স্থান নয়, বরং তরুণদের আড্ডা, জ্ঞানচর্চা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তাঁদের মতে ‘প্রযুক্তির বাইরে বইয়ের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে যুক্ত করাই আমাদের লক্ষ্য।’ পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছেন মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, লায়ন আরিফ চৌধুরী, আনোয়ারুল ইসলাম মামুন, মিসবাহ উদ্দিন, হুমায়ুন কবির খোকন, মোহাম্মদ আলমগীর, অ্যাডভোকেট কামরুল কবির আজাদ, হেফাজ উদ্দিন, মোস্তাক আহমেদ, মিশকাত উদ্দিন সিকো প্রমুখ।

বর্তমানে পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২০০। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ২০০টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই। এগুলোর মধ্যে আছে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র’ গ্রন্থের ১৫ খণ্ড। প্রতিদিন একটি জাতীয় দৈনিক ও মাসিক কয়েকটি পত্রিকা-ম্যাগাজিনও রাখা হয়।

পাঠকেরা রেজিস্টারে স্বাক্ষর করে বই বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। এলাকার সব বয়সী মানুষের জন্য উন্মুক্ত হলেও স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন পাঠক নিয়মিত বই পড়তে আসেন। পাঠাগারের সার্বিক পরিচালনায় রয়েছেন গ্রন্থাগারিক সাইমনুল ইসলাম। ব্যয়ভার বহন করে উপদেষ্টা পরিষদ এবং ২১ সদস্যের কার্যনির্বাহী পরিষদ।

স্থানীয় এক শিক্ষার্থী মেহজাবিন মুনা বলেন, ‘আগে অবসর সময় মোবাইল চালাতাম, এখন বই পড়ি। চাইলে বই বাড়িতেও নিতে পারি।’ প্রতিদিন এখানে পত্রিকা পড়তে আসেন প্রবীণ মুনাফ মুন্সি। তাঁর ভাষায়, ‘এই পাঠাগার জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে।’

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী উন্মুক্ত পাঠাগারে বেশ কয়েকজন পাঠক। ছবি: সংগৃহীত
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী উন্মুক্ত পাঠাগারে বেশ কয়েকজন পাঠক। ছবি: সংগৃহীত

তবে শুরুটা সহজ ছিল না। পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক মিজাহাজুল ইসলাম বলেন, ‘রাজাখালীর মানুষ শিক্ষাদীক্ষায় কিছুটা পিছিয়ে। তাঁদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।’

একটি পাঠাগার কেবল বই পড়ার স্থানই নয়; এটি হতে পারে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জাগরণের কেন্দ্র। রাজাখালী উন্মুক্ত পাঠাগারটি সেই উদাহরণ স্থাপন করেছে। বই পাঠের পাশাপাশি এখানে নিয়মিত আয়োজন করা হয় সাহিত্য আড্ডা, পাঠচক্র, বুক রিভিউ, কুইজ, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন, সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী, হিমু উৎসব, ক্যারিয়ার গাইডলাইন কর্মশালা ও ক্যারিয়ার অলিম্পিয়াড।

এ ছাড়া পাঠাগার নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, সাইবার নিরাপত্তা, কৃষি প্রশিক্ষণ, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং আইনি সহায়তা বিষয়েও নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মশালা আয়োজন করে।

রাজাখালীর তরুণেরা বইয়ের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। পাঠাগারের উদ্যোগে ‘পরিবেশ রক্ষায় তারুণ্যের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ১০ হাজার ৯৫০টি গাছের চারা বিতরণ ও রোপণ এবং ৭৬টি পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণে পাঠাগারটি নিয়েছে সামাজিক উদ্যোগও। এলজি ইলেকট্রনিকস বাংলাদেশের সহায়তায় ৪০টি পরিবারে ১২০টি ভেড়া এবং ১৫টি পরিবারে লবণ মাঠের সেচপাম্প বিতরণ করা হয়েছে।

রাজাখালী উন্মুক্ত পাঠাগার খুব কম সময়ে মধ্যে সুধী সমাজের দৃষ্টি কেড়েছে। পাঠাগারটি পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব সাব্বির ইকবাল সুমন; বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীন শিশির; অধ্যাপক আবদুর রহিম; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল আজিম এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রাসেলুল কাদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত