Ajker Patrika

সাপের জন্য ভালোবাসা

ক্যাম্পাস ডেস্ক
সাপের জন্য ভালোবাসা

১১ ফুট লম্বা অজগর! সেটি উদ্ধার করার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল গল্প। তারপর ছোট-বড় মিলিয়ে তিন শর বেশি সাপ উদ্ধার করেছেন তিনি। এ ছাড়া অসংখ্য টিয়া পাখি, শালিক, ঘুঘু, বনমোরগ, কচ্ছপ, গন্ধগোকুল, মেছো বিড়াল, চশমা হনুমান, বানর ইত্যাদি রেসকিউ করেছেন। সাপপ্রেমী এই তরুণের নাম মেহেরাজ হোসেন রাকিব। বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশে। পটিয়া সরকারি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন তিনি। বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান। 

যেভাবে শুরু
স্নেক রেসকিউ টিমের জ্যেষ্ঠ সদস্য এমদাদ হোসেন নান্নু। তাঁর সাপ ধরা ও অবমুক্ত করা দেখে রাকিবের মনে ইচ্ছা জাগে, তিনিও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সাপ রেসকিউ করবেন। স্নেক রেসকিউ টিমের প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান রাব্বী এবং জ্যেষ্ঠ উদ্ধারকারী এমদাদ হোসেন নান্নুর কাছ থেকে হাতেকলমে সাপ উদ্ধার শিখেছেন রাকিব। তাঁদের সঙ্গে অনেক উদ্ধার অভিযানে সঙ্গী ছিলেন তিনি। ফেনী, কক্সবাজার, চকরিয়া, বান্দরবান, পেকুয়া, বাঁশখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় সাপ উদ্ধারের কাজে গিয়েছেন রাকিব। যথাযথ সতর্কতা মেনে উদ্ধারকাজ করেন তিনি। হাতে গ্লাভস আর পায়ে গামবুট পরে নেন। এরপরও জীবনে বহুবার নির্বিষ সাপের কামড় খেয়েছেন রাকিব। 

২০২২ সালে নান্নুর সঙ্গে গাছের ওপর থেকে ১১ ফুট লম্বা একটি অজগর উদ্ধার করেন রাকিব। এরপর আর থেমে থাকেননি। তাঁর উদ্ধার করা সাপের মধ্যে আছে অজগর, দাঁড়াশ, ঘরগিন্নী, দুধরাজ, জলঢোঁড়া, হেলে, লাউডগা, নোনাবোড়া, পদ্ম গোখরো, গ্রিন পিট ভাইপার, শঙ্খিনী, কিং কোবরা ইত্যাদি। বাংলাদেশে হাতে গোনা যে কজন কিং কোবরা রেসকিউ করেছেন, রাকিব তাঁদের অন্যতম। রাকিবের দাবি, তাঁর উদ্ধার করা সাপের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে।

ঘটনা ভয়ংকর
গত বছরের একটি ঘটনা রাকিবের মনে বেশ দাগ কেটে আছে। পটিয়ার এক বাড়ি থেকে সাপ উদ্ধারের জন্য সংবাদ এল। যথারীতি সেটি উদ্ধার করতে এলেন তিনি। কিন্তু ঘরে ঢুকে আর সাপ খুঁজে পাচ্ছেন না রাকিব। একপর্যায়ে মেঝে খুঁড়ে একে একে ২২টি পদ্ম গোখরোর বাচ্চাসহ ওই বাড়ি থেকে অন্য একটি সাপও উদ্ধার করেন তিনি। 

রাকিব গত বছর বাঁশখালী উপজেলার প্রেমাশিয়া গ্রামে সকাল আটটার দিকে উপস্থিত হন সাপ উদ্ধার করতে। সারা দিন পুরো বাড়ির অনেক জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি করা হয় সাপের দেখা পেতে। কিন্তু সাপ নেই। এদিকে সবাই ক্লান্ত। বাড়ির মালিক শতভাগ নিশ্চিত, সাপ বাড়িতেই আছে। অবশেষে সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিষধর পদ্ম গোখরো রেসকিউ করতে সফল হন রাকিব।

সাপ নিয়ে আতঙ্ক নয়
সাপ নিয়ে ভয় বা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। রাকিব জানান, বাংলাদেশে মাত্র কয়েকটি প্রজাতি বাদে প্রায় সব সাপ বিষধর নয়। এদের মধ্যে কালনাগিনী, লাউডগা, হেলে, দাঁড়াশ হাতে নিয়ে খেললেও ছোবল দেয় না। আবার পদ্ম গোখরোর মতো বিষধর সাপ অনেক সময় ছোবল দিয়ে বিষ ঢালে না; যেটাকে বলে ড্রাই বাইট। এ রকমই একটি ড্রাই বাইটের ঘটনা ঘটেছিল রাকিবের মামাতো ভাইয়ের জীবনে।

জাল, মাছ ধরার ফাঁদ ইত্যাদিতে সাপ আটকা পড়ে। তখন তাদের গায়ের চামড়া ছিঁড়ে যায় বা কেটে যায়। এই রকম ৫০টির বেশি সাপ অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেন রাকিব। তারপর চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে ছেড়ে দেন। একবার একটি দাঁড়াশ প্রায় মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন তিনি। সেটিকে তিন মাস নিজের কাছে রেখে সুস্থ করে ছেড়ে দেন। এ বিষয়ে তাঁকে সর্বাত্মক সাহায্য করেন বিখ্যাত রেসকিউয়ার ও সাপ বিষয়ে অভিজ্ঞ সিদ্দিকুর রহমান। পড়াশোনার পাশাপাশি বন্য প্রাণী উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন—এটিই আপাতত রাকিবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

বৃদ্ধের চার বিয়ে, থানায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জেরার মুখে হাসির রোল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত