Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করছে

ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

১৯৯২ সালে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। তিন দশক ধরে এসব বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষায় অনন্য অবদান রাখছে। এ অগ্রগতি নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আজকের পত্রিকার সহ সম্পাদক ইলিয়াস শান্ত

ইলিয়াস শান্ত
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ৩০

আপনাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে? বিশেষ করে শিক্ষার মান, গবেষণা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে।

উচ্চশিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশে দারুণ এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আগে আমাদের অনেক ছেলেমেয়ে দেশের বাইরে চলে যেত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতের ফলে শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে যাওয়ার হার কমে আসতে শুরু করেছে। শুধু এটিই নয়, অন্য যেকোনো বিচারে দেশের উচ্চশিক্ষা খাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। প্রথম সারির প্রায় ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, তারা প্রতিবছর আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে জায়গা করে নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ধারাবাহিক কার্যক্রমকে আমরা এগিয়ে নিচ্ছি। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা ও গবেষণার কিছু কিছু ক্ষেত্র আমরা ঢেলে সাজাচ্ছি। আমাদের দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শতভাগ প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে কাজ করেছি। ২০১০ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, বাজেটের অর্থ ব্যয় নিয়ে ইউজিসির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যোগাযোগে একটা গ্যাপ ছিল। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সেটাও কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

ইউজিসির নির্দেশনা বাস্তবায়নে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া পেয়ে থাকেন?

আমরা প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পাচ্ছি। আইন অনুযায়ী নির্দেশনা মানার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত অসহযোগিতা পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের থেকেও সহযোগিতা পাচ্ছি। গতকালও একজন উপাচার্য ফোনে জানালেন, আমাদের ভিজিট রিপোর্টের রিকমেন্ডেশন তাদের জন্য খুব কাজে দিয়েছে। তারা সেটা অনুসরণ করে ইতিবাচক ফল পাচ্ছেন। সম্প্রতি অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে আমাদের ভিজিট রিপোর্টে ১৩টি গাইডলাইন পয়েন্ট দিয়েছি। গত ৩ মাসের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ৮টি ফুলফিল করেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সবগুলো পূর্ণ করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটা একটা ভালো উদাহরণ। একইভাবে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রেও আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশোধিত আইনটি কেমন হতে যাচ্ছে?

আইন আসলে কোনো স্পেসিফিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে নয়, এটা দেশের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মাঝে শৃঙ্খলা ও দেশপ্রেম নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সীমাবদ্ধতা দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেমন: কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল ‘ফ্রাইডে ইউনিভার্সিটি’। এখন অবশ্য এমন পরিবেশ নেই। এই যে সমস্যাগুলো, এগুলোকে কোনো না কোনো ফর্মে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। আর এটা যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে আমরা যে কোয়ালিটি এডুকেশনের কথা বলছি, সেটা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে আমরা বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক-গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও সিভিল সোসাইটির ভাবনাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা এমন একটা অ্যাক্ট তৈরি করতে যাচ্ছি, যেটা কারো জন্য কোনো নেতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। বরং আমাদের যে সীমাবদ্ধতাগুলো আছে, নতুন আইনে সেগুলোও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬-৪ মাসের সেমিস্টার শেষ করা নিয়ে একটা আলোচনা ছিল। সেটার সমাধান হয়েছে কি?

২০২৪ সালে দায়িত্বগ্রহণের পর আমরা দেখেছি, সেমিস্টারের সংখ্যা নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটা অস্থিরতা ছিল। এ ক্ষেত্রে ইউজিসি নমনীয়তার নীতি অনুসরণ করেছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয় বছরে দুটি সেমিস্টার রান করবে নাকি ৩ টি—এটা সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে। বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি সেমিস্টারের খুব বেশি প্রচলন দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ইউজিসি কারও ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেবে না। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করতে চাই। আমরা একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাই।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অগ্রগতি নজরকাড়ার মতো। এই অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে ইউজিসি কী ধরনের উদ্যোগ নেবে?

আমরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য গভর্নেন্স ফ্রেমওয়ার্কটা তৈরি করে দিতে চাই। এখনো আমাদের যেসব সীমাবদ্ধতা গুণগত শিক্ষার অন্তরায়—যেমন ধরুন, একটা বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই বা সিনিয়র শিক্ষক নেই বা গবেষণা নেই বা ল্যাব নেই অথবা দেখা যায়, একজন শিক্ষক একাধারে একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করছেন—এগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। র‍্যাঙ্কিংয়ে আসতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দিষ্ট কিছু ক্রাইটেরিয়া ফিলআপ করতে হয়। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ঘাটতি দেখা যায়, আমরা তাদের ঘাটতি পূরণে গুরুত্বারোপ করে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের গাইডলাইন ফলো করে র‍্যাঙ্কিংয়ে ধারাবাহিক সাফল্য পাচ্ছে। একই সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান র‍্যাঙ্কিং প্রকাশ করছে, তাদের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগটা বাড়াচ্ছি। র‍্যাঙ্কিংয়ে আরও ভালো করতে তাদের যেসব নির্দেশনা, সেগুলোও আমরা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

বিভাগগুলোতে শিক্ষকদের বৈচিত্র্য কেমন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে শিক্ষক নিয়োগ হয়ে থাকে?

২০১০ সালের যে আইন রয়েছে, সেই আইনে উল্লেখিত শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালার আওতায় এটি হচ্ছে। নতুন একটি বিভাগ যখন কার্যক্রম শুরু করে, সেখানে কমপক্ষে ৪ জন শিক্ষক রাখতে হয়। একজন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, বাকি তিন লেকচারার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পর্যায়ের। বিভাগটি স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের জন্য প্রস্তুত হলে আমরা সেখানে ৮ জন শিক্ষক রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকি। ওই বিভাগে একসঙ্গে দুইটি ডিগ্রি চলমান থাকলে সেখানে একজন প্রফেসর থাকা প্রচণ্ডরকম জরুরি। কারণ, বিভাগে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়লে সিনিয়র শিক্ষক না থাকলে কোয়ালিটি পাঠদান কাভার করা কঠিন হয়ে পড়বে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে চাকরির বাজার কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ?

এই জায়গায় আমাদের বড় ধরনের একটা গ্যাপ রয়েছে। যেমন ধরেন, যেসব সাবজেক্টের বিপরীতে চাকরির বাজার প্রচণ্ডরকম সীমিত, সেগুলো সম্পর্কে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। বর্তমানে উদীয়মান যেসব চাকরির বাজার, সে সম্পর্কে আমাদের একটা স্টাডি করা দরকার। আমরা ইউজিসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করেছি। এখন যে জব মার্কেট—যেমন প্লাম্বিং, কার্পেন্টার অথবা ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট—এ রকম বহুবিধ জব তৈরি হয়ে গেছে। এর পাশাপাশি আরও বিশেষ কিছু চাকরিও রয়েছে—যেমন: ডেটা সায়েন্স, রোবটিক্স বা এআই-রিলেটেড। এখন আমাদের সাবজেক্টগুলো এই চাকরির বাজারের বাস্তবতায় কতটুকু প্রাসঙ্গিক, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। আজ থেকে ৩০ বছর পর চাকরির বাজার কোন দিকে যাবে? এই স্টাডিগুলো আমাদের থাকা দরকার।

বিদেশি শ্রমিকরা আমাদের দেশে এসে প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে বিশাল সংখ্যক গ্র্যাজুয়েট বেকার পড়ে থাকছে। ইউনিভার্সিটি এডুকেশনের কোয়ালিটি পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা এই ব্যবধানকে গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

ন্যাশনাল লেভেলে আমাদের আরেকটা বড় সংকট রয়ে গেছে। বর্তমানে আমাদের ১৭১টা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। দেখা গেছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবলতা কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার চাইতে অনেক বেশি। কিন্তু আমাদের সমাজে—আমি প্রকৃতিকেও সংযুক্ত করছি—এখানে যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এড্রেস করতে পারছে না। আমরা দেখছি নদী দূষণ, বায়ু দূষণ, সামাজিক অসমতা, নারীর প্রতি সহিংসতা, একে অন্যের প্রতি ট্রাস্ট কমে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি আলোকিত মানুষ তৈরি করে, তাহলে এগুলোর তো উন্নতি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অবনতি হচ্ছে কেন?

আমি যে সমস্যাগুলোর কথা বললাম, এগুলো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে এড্রেস করার কথা ছিল। এগুলো কেন আমরা নিয়ে আসতে পারছি না? শুধু প্রাইভেট নয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সবাই মিলে সমস্যাগুলোকে এড্রেস করতে হবে। এটা ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি নিড বলে আমি মনে করি।

আরেকটা বিষয় হলো, আমাদের যে গ্র্যাজুয়েটরা প্রতি বছর বের হচ্ছেন...ধরেন একটা ছেলে ২০২০ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করলো। তিনি কি এখনো বেকার? বা ২০২০ সালে পাস করার কত মাস পর চাকরি পেয়েছেন? কী চাকরি পেয়েছেন? সেটা কি তার সাবজেক্টের স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে ম্যাচ করে, নাকি তিনি একটা লোয়ার-লেভেলের জব করেন? এটাকে বলে ক্যারিয়ার ট্র্যাকিং। এই ক্যারিয়ার ট্র্যাকিংটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ট্র্যাকিংটা ন্যাশনাল লেভেল থেকেও হতে পারে। দেখা যায়, গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার অনেক বছর পরও একজন চাকরি পাচ্ছেন না। ফলে তিনি হতাশায় থাকেন। আমাদের কাছে যদি এই ডাটাটা ক্লিয়ার থাকে, তাহলে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।

শিক্ষার্থী ভর্তি-সংক্রান্ত কোনো নির্দেশিকা ইউজিসি থেকে রয়েছে কি, থাকলে তা কীভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে?

শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা মিনিমাম গ্রেড প্রয়োজন হয়। এ জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটা স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করছে। শিক্ষার্থীদের ভর্তি যোগ্যতার বিষয়ে ইউজিসির একটা গাইডলাইন রয়েছে। সেটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী করা হচ্ছে।

স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর ইউজিসির যে চাপ ছিল, তার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে? এখন কতগুলো ক্যাম্পাস বাকি রয়েছে?

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়াটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে প্রতিষ্ঠা না হলেও তাকে নির্দিষ্ট সময়ের পরে স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরতে হয়। সেটা ১২ বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়। গত ২–৩ মাসের মধ্যে ৩–৪টা বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসের অনুমোদন পেয়েছে। ১২ বছর হওয়ার পরও যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরতে পারেনি, তাদের সঙ্গে আমরা আইন অনুযায়ী ডিল করছি। এখন পর্যন্ত ১৫–২০টি বিশ্ববিদ্যালয় হবে, যেগুলো ১২ বছর পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরতে পারেনি।

২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি ও শিক্ষার ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

দেখুন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোতে সাড়ে ৩ লাখের মতো শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও ৫০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি হবে। ফলে এখনো প্রায় ৩ লাখ শিক্ষার্থী বাকি রয়েছে। সেই সেন্সে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের প্রভাব পড়ার কথা নয়। আমি শুরুতে যে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বললাম, সেগুলোর মধ্যে অনেক ইউনিভার্সিটি আছে, তারা চাইলেও আবেদন করা একটা বড় অংশের শিক্ষার্থীর ভর্তি নিতে পারছে না। কারণ, তাদের যে পরিমাণ আসন রয়েছে, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আবেদন জমা পড়ে। এখানে শিক্ষার্থীদের আগ্রহের একটা জায়গা স্পষ্ট। কারণ এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে পারছে।

উচ্চশিক্ষা খাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতে ইউজিসির কী পরামর্শ থাকবে?

প্রথমে আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত, গুণগত শিক্ষাটা আসলে কী? জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতে আমাদের কী করা উচিত? অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু আমরা যে কোয়ালিটি এডুকেশনের কথা বলি, সেটা নিশ্চিতে তারা সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করছে। কারণ, আমরা তাদের এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি, আইন মানলে তাদেরই লাভ। ভালো শিক্ষক, ভালো গবেষণা বা মিনিমাম সুযোগ-সুবিধা—এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দাঁড়িয়ে যাবে। এটা প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষের জন্য যেমন ভালো, একইভাবে দেশের জন্যও ভালো। বিশেষ করে আমাদের যেসব ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করতে যাবে, তাদের জন্যও ভালো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা: লিখিত অংশে চাই বাড়তি গুরুত্ব

সামিহা সিরাজী লাজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের দেওয়া ‘কনসেশন’ হিসেবে। ফাইল ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের দেওয়া ‘কনসেশন’ হিসেবে। ফাইল ছবি

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নতুনদের কলতানে মুখর হবে ঢাবি। প্রিয় ক্যাম্পাসে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে ভর্তি-ইচ্ছুকদের প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি রাখা চলবে না। তবে যার যতটুকুই প্রস্তুতি হয়েছে, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিটা সবার জন্যই ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অন্যান্য অংশের পাশাপাশি লিখিত অংশে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে।

বাংলা

পাঠ্যবইয়ের ওপরে বিশেষ গুরুত্ব দাও (বিশেষত, কবি পরিচিতি, সাল, জন্মতারিখ, শব্দের অর্থ, লেখকের নাটক, উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ)। বাংলায় মুখস্থ অংশের ওপর নজর দাও। সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, এক কথায় প্রকাশ, বাগধারা—এগুলোয় বহুনির্বাচনী প্রশ্ন সলভ করো বেশি পরিমাণে। দৈনিক রুটিন মেনে পড়ার পাশাপাশি বিগত বছরের বাংলা প্রশ্নমালা এবং টপিকগুলো যাচাই করে নিতে পার।

বহুনির্বাচনী প্রশ্নের পাশাপাশি লিখিত বাংলা অংশে ভালো করতে বাসায় লেখার এবং সময়মাফিক লেখা শেষ করার গুরুত্ব অপরিসীম, যা তোমাকে ভর্তিযুদ্ধে বাকিদের থেকে বহুগুণ এগিয়ে রাখবে। প্রচলিত গাইডবই থেকে বেরিয়ে সৃজশীলতা কাজে লাগাও। প্রতিদিন লেখার চর্চা অব্যাহত রাখতে পার; অনলাইন-অফলাইন বিভিন্ন কোচিংয়ে শেষ সময়ের পরীক্ষা এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

ইংরেজি

পাঠ্যবইয়ে প্রতি চ্যাপ্টারের সব টপিকের ওপর গুরুত্ব দাও। সাম্প্রতিক সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাঠ্যবই ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে থাকে। গ্রামার অংশের জন্য ভালো মানের বই থেকে প্রশ্ন সলভ করো। মুখস্থ অংশের রিভিশন প্রতিদিন দিতে হবে। এ ছাড়াও, সামারি রাইটিং, থিম রাইটিং, কবিতার ভাবার্থ—এগুলো লেখার অনুশীলন করা গুরুত্বপূর্ণ।

লিখিত ইংরেজি অংশের জন্য ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকীয় পার্ট বরাবরই বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতিদিন সময় মেনে ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং প্র্যাকটিস করা জরুরি। সমসাময়িক যেকোনো বিষয়ের ওপর প্যারাগ্রাফ, বাক্যগঠন শিখতে হবে। সময়মতো লেখা শেষ করা এবং সহজ-সাবলীল লেখা পরীক্ষার খাতায় মার্ক বেশি পাওয়ার হাতিয়ার।

সাধারণ জ্ঞান

সাধারণ জ্ঞানের (ইতিহাস, পৌরনীতি, অর্থনীতি, ভূগোল, রাজনীতি, খেলাধুলা, সমসাময়িক, নোবেল পুরস্কার, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, দেশ-বিদেশের অ্যাওয়ার্ড, জুলাই অভ্যুত্থান) বিভিন্ন টপিকের মধ্যে এ বছরের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর ওপর পূর্ণ মনোযোগ দাও। দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, জনপদ, পটভূমি থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠন, কার্যাবলি, চুক্তি, প্রণালি, সভ্যতা, মহাদেশ, নদ-নদী—এগুলো শেষ সময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সর্বোপরি এটুকু মনে রাখতে হবে, সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরীক্ষার হলে সময় ব্যবস্থাপনাই পারে তোমাদেরকে আকাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিতে। সামান্য ভুল তোমাকে নিয়ে যেতে পারে শত শত পরীক্ষার্থীদের পেছনে। তাই সময় নিয়ে পরীক্ষার জন্য বের হও, আগের রাতে প্রবেশপত্রসহ দরকারি সবকিছু গুছিয়ে রাখ, নিজেকে সুস্থ রাখ এবং শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিকে করো আরও শাণিত ও সুশৃঙ্খল। নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলে পূর্ণ উদ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে যাও।

এক্সাম হলে ঘড়ির দিকে লক্ষ রেখ, সঠিক বিষয়ে প্রশ্নের বৃত্ত ভরাট করো। বিজয়ের গৌরবে তোমাদের সবার সঙ্গে দেখা হোক ঢাবির এই বিশাল ক্যাম্পাসে—শুভকামনা রইল তোমাদের জন্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ অর্থায়িত বৃত্তি

শিক্ষা ডেস্ক
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫১
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ অর্থায়িত বৃত্তি

কাতার বিশ্ববিদ্যালয় বৃত্তির আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীরা বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা বৃত্তির আওতায় স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কোর্স ইংরেজি ভাষায় পাঠদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বৃত্তিটি ২০২৬ সালের জন্য প্রযোজ্য।

কাতার বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যা কাতারের রাজধানী দোহার উত্তরাংশে অবস্থিত। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ গবেষণা, উদ্ভাবন ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আধুনিক গবেষণাগার, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষক এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাতার বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুতই বিশ্বের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

সুযোগ-সুবিধা

বৃত্তির আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা কোর্সের সম্পূর্ণ টিউশন ফি থেকে অব্যাহতি, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সুবিধা, পাঠ্যবইয়ের ফি মওকুফ এবং বছরে একবার দেশে যাতায়াতের রাউন্ড-ট্রিপ বিমান টিকিটের সুবিধা পাবেন। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক বৃত্তি চালু রয়েছে। পাশাপাশি নন-কম্পিটিটিভ বৃত্তির আওতায় রয়েছে জিসিসি রাষ্ট্রগুলোর দূতাবাস বৃত্তি, জিসিসি কাতারি সার্টিফিকেট স্কলারশিপ।

আবেদনের যোগ্যতা

আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত যোগ্যতার শর্ত তুলনামূলকভাবে সহজ। এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে জাতীয়তার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আবেদনকারীর অবশ্যই স্বীকৃত কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। এমন যোগ্যতাসম্পন্ন বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার দরজা উন্মুক্ত।

পিএইচডিতে আবেদনের যোগ্যতা

পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য কাতার বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট ও মানসম্পন্ন ভর্তির যোগ্যতা নির্ধারণ করেছে। আবেদনকারীকে অবশ্যই স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর বা তার ঊর্ধ্বতন ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। ন্যূনতম সিজিপিএ-৩ থাকতে হবে। পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমে পরিচালিত সব পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য জিআরই, জিম্যাটের মতো আন্তর্জাতিক মানের মানসম্মত টেস্ট স্কোর বাধ্যতামূলক।

স্নাতকোত্তরে আবেদনের যোগ্যতা

স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে ভর্তির ক্ষেত্রেও কাতার বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করেছে সুস্পষ্ট ও প্রতিযোগিতামূলক কিছু শর্ত। আবেদনকারীকে অবশ্যই স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক বা তার ঊর্ধ্বতন ডিগ্রি অর্জন করতে হবে এবং ন্যূনতম সিজিপিএ-২.৮ থাকতে হবে। তবে বিভাগ ও কলেজভেদে ভিন্ন ভিন্ন অতিরিক্ত যোগ্যতা ও শর্ত থাকতে পারে, যা প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট অনুষদ বা বিভাগের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে বিস্তারিতভাবে যাচাই করে নিতে হবে।

অধ্যয়নের ক্ষেত্রগুলো

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার পরিসর বিস্তৃত ও বহুমাত্রিক। এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস, কলেজ অব এডুকেশন, কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং, কলেজ অব ল, কলেজ অব মেডিসিন, কলেজ অব ফার্মেসি, কলেজ অব শরিয়া অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ এবং কলেজ অব হেলথ সায়েন্সেসের মতো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একাধিক অনুষদ।

আবেদনের পদ্ধতি

আগ্রহী শিক্ষার্থীরা এই লিংকে গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনের শেষ সময়

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরকারের ‘বদলি কৌশলে’ পিছু হটলেন শিক্ষকেরা

  • ৩ নেতাসহ ৪৩ শিক্ষককে নিজ জেলার বাইরে বদলি
  • এগুলো হয়রানিমূলক বদলি বলে অভিযোগ শিক্ষক নেতাদের
  • কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা, বার্ষিক পরীক্ষা কাল থেকে
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা। পাশাপাশি তাঁরা আগামীকাল রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর দুটি মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ ও ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ নেতারা এক যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতা এবং সন্তানতুল্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে’ রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। রোববার থেকে সব শ্রেণির তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) চলবে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের হয়রানিমূলক বদলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শিক্ষক নেতারা জানান, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় তিন নেতাসহ ৪৩ সহকারী শিক্ষককে নিজ জেলার বাইরে অন্য জেলায় বদলি করা হয়েছে। এসব বদলিকে তাঁরা হয়রানিমূলক বলে অভিযোগ করেন। তাঁরা বলেন, রেওয়াজ না থাকলেও হয়রানি করতে নিজ জেলার বাইরে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ জানিয়েছেন, তাঁকে নোয়াখালী সদর উপজেলার কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আরেক আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি জানিয়েছেন, তিনিসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত অন্তত ৪৩ সহকারী শিক্ষককে অন্য জেলায় প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

খায়রুন নাহার বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রথমে শোকজ (কারণ দর্শানো) ও পরে বদলি করা হলো। এটি হয়রানিমূলক বদলি, আমাদের শাস্তি দিয়েছে। কারণ আমরা শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই করেছি। কিন্তু অনেক শিক্ষক যাঁরা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন না, তাঁদেরও বদলি করা হয়েছে।’

দাবি বাস্তবায়নে সরকারের দেওয়া আশ্বাসে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অনুসারীরা গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। এর আগে সোমবার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশ কিছু স্কুলে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা তা বর্জন করে কর্মবিরতি চালিয়ে যান।

কয়েক দিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষকেরা আন্দোলন শুরু করেন। পরে ১১ তম গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন।

গত ৮ নভেম্বর শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে সেদিন বিকেলে তাঁরা ‘কলম বিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস প্রয়োগ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। সে সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকেরা পরদিন থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন।

১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা, যেখানে একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ এবং উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির জটিলতা নিরসনে সরকার আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

পরীক্ষা নিয়ে স্কুলে মুখোমুখি শিক্ষক-অভিভাবকেরা

  • পিরোজপুর, পাবনায় শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের সংঘর্ষ।
  • অনেক জায়গায় স্কুলের তালা ভেঙে পরীক্ষা নেন অভিভাবকেরা।
  • শিক্ষকনেতাদের বদলি। প্রতিবাদে আরও কঠোর কর্মসূচির হুমকি।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৫
তিন দফা দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলনের জেরে সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। গতকাল পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার নেছারাবাদে। ছবি: আজকের পত্রিকা
তিন দফা দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলনের জেরে সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। গতকাল পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার নেছারাবাদে। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিন দফা দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন সহকারী শিক্ষকেরা। পরীক্ষা বন্ধ রাখায় শিক্ষকদের ওপর ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে তালা দিয়ে আন্দোলন করায় পিরোজপুর, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা ও সংঘর্ষে জড়িয়েছেন অভিভাবকেরা। এ ছাড়া মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জামালপুর সদর, শেরপুরের শ্রীবরদী, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ, পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ বেশ কিছু জায়গায় বিদ্যালয়ের তালা ভেঙে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েছেন তাঁরা।

এদিকে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়ার পরও কোনো কাজ না হওয়ায় গতকাল শিক্ষকনেতা মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, খাইরুন নাহার লিপিসহ একাধিক শিক্ষককে বদলি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এ নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ও আন্দোলনের গতিপথ ঠিক করতে বৈঠকে বসেছেন শিক্ষকনেতারা। গতকাল রাত ৯টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাঁদের বৈঠক চলছিল।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি রাত ৯টার দিকে বলেন, ‘আমরা যাঁরা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছি, তাঁদের হয়রানি করার জন্য ঢালাওভাবে বদলি করা হচ্ছে। আমরা সার্বিক বিষয়ে বৈঠক করছি। আরও কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে।’

এদিকে চতুর্থ দিনের মতো গতকাল বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে বিদ্যালয়ে তালা দিয়ে কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। তিন দফা দাবি আদায়ে লাগাতার কর্মবিরতির কারণে দেশের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন অভিভাবকেরা।

পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় পরীক্ষা না নেওয়ায় বিক্ষুব্ধ অভিভাবকদের ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন এক শিক্ষক। এ ছাড়াও অনেক জায়গায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে পরীক্ষার দায়িত্ব নিলেন অভিভাবকেরা।

বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে গতকাল পিরোজপুরের নেছারাবাদে উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে শিক্ষকেরা আন্দোলন করতে গেলে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে দুই দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও তালা ঝুলিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি করার জেরে পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় এক অভিভাবকের ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন এক সহকারী শিক্ষক। রাজিব সরকার নামের ওই শিক্ষক বনওয়ারিনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মু. মাহবুবর রহমান জানান, যৌক্তিক দাবিতে চলমান আন্দোলনে পরীক্ষা বর্জন করেছিলেন রাজিব ও তাঁর সহকর্মীরা। অভিভাবক পরিচয়ের কিছু ব্যক্তি সেখানে গিয়ে শিক্ষকদের মারধর করেন। এতে সহকারী শিক্ষক রাজিবের মাথা ফেটে গেছে। তাঁর মাথায় চারটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন।

এ ছাড়াও কোনো কোনো জায়গায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা তালা ভেঙে স্কুলে ঢুকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়েছেন। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় উপজেলার ১৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র দু-তিনটি ছাড়া কোনোটিতেই হয়নি পরীক্ষা। গতকাল সকালে সহকারী শিক্ষকেরা প্রধান শিক্ষকদের পরীক্ষা নিতে বাধা দেন এবং শিক্ষার্থীদের স্কুলের ফটক থেকে ফিরিয়ে দেন। পরে বিভিন্ন স্কুলের কক্ষে তালা মেরে তাঁরা উপজেলা চত্বরে সমাবেশে যোগ দেন। উপজেলার ষাটমা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের তালা ভেঙে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেন অভিভাবকেরা।

একইভাবে কুষ্টিয়া শহরতলির ১৮ নম্বর লাহিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিভাবকেরা শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে নিজ উদ্যোগে পরীক্ষার আয়োজন করেন। প্রশ্ন বিতরণ, খাতা সংগ্রহ, শৃঙ্খলা রক্ষা সবকিছুই সামলান তাঁরা। একপর্যায়ে অভিভাবকদের তীব্র চাপ ও বিক্ষোভের মুখে প্রায় এক ঘণ্টা পর বার্ষিক পরীক্ষা নিতে বাধ্য হন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

জামালপুর সদর উপজেলার গুয়াবাড়ীয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার শ্রীবরদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক বিদ্যালয়ে তালা ভেঙে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েছেন অভিভাবকেরা। কোনো কোনো জায়গায় উপজেলা প্রশাসন এ কাজে সহযোগিতা করে।

জামালপুরের গুয়াবাড়ীয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক রেনুকা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। সারা বছরের পর এই বার্ষিক পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকি। যখন বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে, তখন সহকারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এটা কোনো শিক্ষকের কাজ হতে পারে? তাঁদের এই কর্মবিরতি অন্য সময়ও করতে পারতেন। তাই আমরা সব অভিভাবক মিলে প্রধান শিক্ষককে নিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু করেছি।’

সার্বিক বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পে-কমিশনের সুপারিশ লাগবে। সেটিও চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের অপেক্ষা করা দরকার ছিল।’

দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকেরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন গত ৮ নভেম্বর। এই আন্দোলনে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন শিক্ষকেরা। পরদিন ৯ নভেম্বর থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি সারা দেশে সহকারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। আন্দোলনের তৃতীয় দিন (১০ নভেম্বর) সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড নির্ধারণের আশ্বাসে অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন শিক্ষকেরা।

সরকারের এই আশ্বাসের পর নভেম্বরের শেষ নাগাদ সহকারী শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় নতুন করে গত ৩০ নভেম্বর আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত