Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা: মাসুম যেভাবে বৃত্তি পেলেন

Thumbnail image

মো. মাহবুবুর রহমান মাসুম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার জন্য ফুল ফান্ডেড বৃত্তি পেয়েছেন তিনি। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন মো. সৈয়দুর রহমান

তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় মাসুম। বাবার সামরিক বাহিনীর চাকরির সুবাদে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েতে হয়েছে তাঁকে। প্রথমে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। হতে চেয়েছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারও। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। 

বিদেশের স্বপ্ন বোনা
পড়াশোনা ও সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই কেটেছে শিক্ষাজীবন। এর মধ্যে হঠাৎ করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়। মাসুম ফিরে যান সুনামগঞ্জে। তখন দেশের ইতিহাস ও রাজনীতি নিয়ে ঘাঁটতে থাকেন এবং এসব নিয়ে গবেষণা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন তখন থেকেই।

স্বপ্নপূরণের পথে যাত্রা
যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে যারা পড়তেন, তাঁদের সম্পর্কে জানতে শুরু করেন মাসুম। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট ঘুরে দেখেন। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কোন দিকগুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং তাদের চাহিদা কী, সে সম্পর্কে ধারণা নেন। এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জাহিদ উল আরেফিন চৌধুরীর সঙ্গে একটি গবেষণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ পান মাসুম। এভাবে তিনি গবেষণাপত্র পর্যালোচনা, গবেষণার প্রশ্নপত্র তৈরি এবং মাঠপর্যায়ে কাজ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। পাশাপাশি ইংরেজি শেখেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। এতে যুক্তিশীল চিন্তা, গঠনমূলক আলোচনাসহ বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করেন মাসুম।

যেভাবে আবেদন করেন
যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফল’ এবং ‘উইন্টার’—এই দুটি সেমিস্টারে আবেদন করা যায়। মাসুম একসঙ্গে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন। ২০২৩ সালের শুরুতে তিনি রাইটিং স্যাম্পল লেখা শুরু করেন। রাইটিং স্যাম্পল তৈরির জন্য তাঁকে ৬-৭ বার আইডিয়া রিফর্ম করতে হয়েছে। কারণ, আন্ডারগ্রেডে থিসিস বা মনোগ্রাফ করার সুযোগ ছিল না ডিপার্টমেন্টের কারিকুলামে। ৬-৭ বার আইডিয়া রিফর্ম করতে গিয়ে প্রায় ৪০-৪৫ হাজার শব্দ লিখতে হয়েছে। জুন মাসে লেখা শুরু করেন এসওপি বা স্ট্যাটমেন্ট অব পারপাস। দুই থেকে তিন মাস নিরলস পরিশ্রম করে এসওপি লেখা সম্পন্ন করেন। জিআরই ছাড়াই আবেদন করেছিলেন মাসুম। তবে টোয়েফল দিয়েছিলেন।

আবেদনে খরচ কতটা
মাসুমের টোয়েফল দিতে ২০৫ ডলারের মতো খরচ হয়েছিল। প্রতিটি আবেদনের জন্য গড়ে ৬০ থেকে ৮০ ডলার খরচ করতে হয়েছে মাসুমের। ভিসা প্রসেসিং ফি ১৮৫ ডলার, সিভিজ বা নিরাপত্তা ফি ৩৫০ ডলার খরচ করেছেন। মনে রাখা ভালো, ফুল ফান্ডেড বৃত্তি হলেও প্রথম মাসের সব খরচ এবং বিমান ভাড়া নিজেকে বহন করতে হয়। যদিও পরে বৃত্তির টাকা পেলে সমন্বয় করে নেওয়া যায়। 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রধানত স্নাতকের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট লাগে। এ ছাড়া পাসপোর্ট করতে নাগরিক সনদ, জন্মনিবন্ধনসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র লাগবে। 

আগ্রহীদের জন্য পরামর্শ
যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চান, তাঁদের আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেকে সর্বনিম্ন টোয়েফল বা জিআরই স্কোর খুঁজতে থাকেন। মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়ার জন্য হাজার হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করে থাকে। সেখানে আপনি সর্বনিম্ন স্কোর টার্গেট করে প্রস্তুতি নিলে সুযোগ নাও পেতে পারেন। এসওপি, রাইটিং স্যাম্পল—যথেষ্ট সময় নিয়ে লিখুন। পাশাপাশি অভিজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সংশোধন করুন। মানসম্মত ও কার্যকরী লেখা জমা দিন। যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার পাশাপাশি কেউই চাকরি করতে পারবে না, এটা আইনত অবৈধ। আবেদন করার আগে এসব মাথায় রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত