Ajker Patrika

বিজেএস পরীক্ষা

সম্পত্তি-সংক্রান্ত আইনে যেভাবে ভালো করবেন

সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় সফল হতে হলে সম্পত্তি-সংক্রান্ত আইনগুলোতে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। চুক্তি আইন থেকে শুরু করে দলিল নিবন্ধন, ভূমি অধিগ্রহণ কিংবা সম্পত্তি হস্তান্তর—প্রতিটি আইনেই রয়েছে সূক্ষ্ম অথচ গুরুত্বপূর্ণ ধারা ও নীতিমালা। সম্পত্তি-সংক্রান্ত আইন নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ দিয়েছেন ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় ষষ্ঠ স্থান অর্জন করা মোছা. মারুফা ইয়াসমিন। তাঁর পরামর্শ শুনেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
ওই ব্যক্তির ও তার সন্তানের নাগরিকত্ব বাতিলের ব্যবস্থা নিচ্ছে কুয়েত। ছবি: পিক্সাবে
ওই ব্যক্তির ও তার সন্তানের নাগরিকত্ব বাতিলের ব্যবস্থা নিচ্ছে কুয়েত। ছবি: পিক্সাবে

বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ

সম্পত্তি-সংক্রান্ত আইন বলতে মোট পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ আইনকে বোঝায়। বিচার বিভাগীয় পরীক্ষার প্রস্তুতিতে এগুলোর প্রতিটিই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই বিষয়গুলো শুরুতে জটিল মনে হয়। তবে একটু পরিকল্পিত ও গোছানোভাবে পড়াশোনা করলে প্রিলিমিনারি ও লিখিত—দুই পরীক্ষাতেই এখানে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

১. চুক্তি আইন, ১৮৭২

চুক্তি আইন (Contract Act, 1872) এমন একটি বিষয়, যার নাম শুনলে অনেকেই ভয় পান। অনেক শিক্ষার্থীর ধারণা এটা অগোছালো এবং কঠিন। কিন্তু বাস্তবে লিখিত পরীক্ষায় দেখা যায়, প্রশ্নগুলো বেশ সাধারণ ও মৌলিক ধারণাভিত্তিক হয়। তাই এই আইনটি বাদ না দিয়ে গুছিয়ে পড়লে প্রিলি ও লিখিত—দুই পরীক্ষাতেই ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। প্রিলি পরীক্ষার জন্য সব ধারা মুখস্থ না করে গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলোতে ফোকাস করা উচিত। আর লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিতে মনোযোগ দিতে হবে গুরুত্বপূর্ণ ডকট্রিনগুলো বোঝায়, দু-একটি ল্যান্ডমার্ক কেস অধ্যয়ন, প্রবলেমেটিক প্রশ্ন অনুশীলন, চুক্তির পক্ষদের অধিকার ও দায়দায়িত্ব এবং বিভিন্ন ধরনের চুক্তির বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য বুঝে নেওয়ায়। খাতার মান বাড়াতে দু-একটি ল্যাটিন টার্ম বা ম্যাক্সিম যোগ করা যেতে পারে, এতে উত্তরের উপস্থাপনা আরও আকর্ষণীয় হয়। গুরুত্বপূর্ণ ধারা: (2, 4, 5-7, 10, 11-36, 53-56, 58, 68-75, 124-126, 129, 130, 137, 138, 148-150, 151-169, 170-176, 179, 169-176, 182-191, 195, 197, 201-207, 211, 213, 214, 216, 218, 220, 223-225, 227-228, 235, 237)।

২. The Registration Act, 1908

এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইন। প্রিলি পরীক্ষায় এই আইন থেকে প্রশ্ন আসে সরাসরি বেয়ার অ্যাক্ট থেকে, তাই বেয়ার অ্যাক্ট ভালোভাবে পড়াই মূল কৌশল। বিশেষ করে ডেফিনেশনের ধারা ও এর উপধারাগুলো, কোন দলিল রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক আর কোনটি নয়, কত দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশনের জন্য জমা দিতে হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না করলে তার ফলাফল কী—এসব অংশে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ফি ও শাস্তিসম্পর্কিত ধারাগুলোও ভালোভাবে পড়া জরুরি। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য টপিকভিত্তিক পড়াশোনা সবচেয়ে কার্যকর। যেমন রেজিস্ট্রেশনের উদ্দেশ্য, কোন দলিলগুলো বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, প্রবলেমেটিক প্রশ্ন (যেমন: একাধিক দলিলের মধ্যে কোনটি আগে প্রাধান্য পাবে), দলিল প্রেজেন্ট করার সময়সীমা, জমি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে হলে রেজিস্ট্রেশনের পদ্ধতি, Power of Attorney, Will-সম্পর্কিত ধারা, রেজিস্ট্রেশন না করার ফলাফল এবং Registering Officer-এর

দায়িত্ব ও ক্ষমতা।

৩. The State Acquisition and Tenancy Act, 1950

সম্পত্তি আইন প্রস্তুতিতে The State Acquisition and Tenancy Act, 1950 একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কিছুটা জটিল আইন। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি একসঙ্গে নিলে এখানে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। লিখিত পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন আসে ধারা ২ থেকে। বিশেষ করে ২ (২, ৬, ৯, ৯ ক, ১১, ১২, ১৪, ১৬, ২০, ২২, ২৭, ৩০)। ধারা ২০ ভালোভাবে বুঝে পড়া জরুরি। ল্যান্ড সিলিং (এই অংশে Land Reforms Act ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনের রেফারেন্সসহ পড়া উচিত), সাব-লেটিং (৭৫ ক, ৮১ ক, ৯৩ ধারা), সিকস্তি-পয়স্তি (ল্যান্ডমার্ক কেসসহ), রেকর্ড অব রাইটস, খাজনা ও খাজনার হার, রায়তের অধিকার ও বিলুপ্তি, মর্টগেজ, অগ্রক্রয়, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল ও ল্যান্ড সার্ভে আপিলেট ট্রাইব্যুনাল, আপিল-রিভিশন, আদিবাসীদের দ্বারা ভূমি হস্তান্তর, অ্যামালগামেশন, সাবডিভিশন, কনসলিডেশন ও নামজারি—এসব বিষয় মনোযোগ দিয়ে পড়া প্রয়োজন। প্রিলি পরীক্ষায় ফোকাস করতে হবে আপিল ও রিভিশনের সময়সীমা, ফোরাম, বিভিন্ন অথরিটির ক্ষমতা, দরখাস্তের প্রক্রিয়া, খাজনা নির্ধারণ ও মওকুফের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কারা, অগ্রক্রয়ের সময়সীমা, কোর্ট ফিসহ ৯৬ ধারার উপধারাগুলো ভালোভাবে পড়ে ফেলতে হবে।

৪. The Non-Agricultural Tenancy Act, 1949

এটি সম্পত্তি আইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আইন। প্রিলির জন্য বিশেষভাবে ধারা ৩, ৬, ১০, ২০, ২১, ২৩, ২৪, ২৬, ২৬ ক, ৬৪-৬৬, ৭০, ৭১, ৭৫-৭৭, ৮৫, ৮৫ক ও ৮৭-এর ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত। অন্যদিকে লিখিত পরীক্ষায় দেখা যায়, প্রশ্ন প্রায় একই টপিক ঘিরে আসে। বিশেষ করে অগ্রক্রয়-সম্পর্কিত অধ্যায়টি থেকে প্রবলেমেটিক প্রশ্ন আসার প্রবণতা বেশি।

তাই অগ্রক্রয় টপিক-সম্পর্কিত সব আইনের তুলনামূলক আলোচনাগুলো অধ্যয়ন করা

জরুরি। লিখিত পরীক্ষায় ধারা ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ২০, ২৩, ২৬ ক, ৭০, ৭৭ ও ৮৫ এগুলোর ওপর ভালো ধারণা রাখতে হবে। এ ছাড়া ডেফিনেশন ও উন্নয়ন-সম্পর্কিত বিষয়গুলো থেকে নিয়মিতভাবে প্রশ্ন আসে।

৫. The Transfer of Property Act, 1882

এটি ডকট্রিনভিত্তিক একটি আইন। এই আইনটিতে প্রিলি ও রিটেন পরীক্ষার প্রস্তুতি একসঙ্গে নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রথমে বেয়ার অ্যাক্টের ধারাগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে, বিশেষ করে যেখানে উদাহরণ দেওয়া আছে। কারণ প্রবলেমেটিক প্রশ্ন সাধারণত সেই উদাহরণ থেকেই আসে। এই আইনের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ডকট্রিনভিত্তিক পড়াশোনা। কোন ধারায় কোন ডকট্রিন প্রতিফলিত হয়েছে, তা উদাহরণসহ বুঝে পড়া জরুরি। বিক্রয়, রেহেন, ইজারা, চার্জ ও অ্যাকশনেবল ক্লেইমের সৃষ্টি, বৈশিষ্ট্য, পক্ষদের দায়দায়িত্ব ও পার্থক্য ভালোভাবে আয়ত্তে আনতে হবে। ধারা ৩ থেকে প্রায়ই প্রশ্ন আসে, তাই এটি বিশেষভাবে পড়তে হবে।

পরীক্ষায় ভালো করতে ৫ করণীয়

■ বেয়ার অ্যাক্ট পড়ুন: প্রিলি পরীক্ষার জন্য অবশ্যই বেয়ার অ্যাক্ট পড়া উচিত। ধারাগুলো, সংজ্ঞা এবং মূল ধারা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রিলি পরীক্ষার প্রশ্ন প্রায়ই সরাসরি

আইন থেকে আসে।

■ বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ: লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রথমে বিগত বছরের প্রশ্ন পড়া উচিত। এতে বোঝা যাবে কোন টপিক থেকে বারবার প্রশ্ন আসছে এবং আপনার প্রস্তুতি সেই অনুযায়ী সাজানো সম্ভব হবে। এটি আপনার সময় এবং পরিশ্রম সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।

■ খাতার সৌন্দর্য বৃদ্ধি: লিখিত পরীক্ষায় খাতার সৌন্দর্য এবং প্রেজেন্টেশন গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য ল্যাটিন টার্ম বা ম্যাক্সিম, প্রয়োজনীয় ডকট্রিন উল্লেখ ও দু-তিনটি উদাহরণ খাতায় লিখুন। এ পদ্ধতি ছাড়া খাতার সৌন্দর্য ও প্রভাব বাড়ানো সম্ভব নয়।

■ প্রবলেমেটিক প্রশ্নে গুরুত্ব দিন: প্রবলেমেটিক প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলে লিখিত পরীক্ষায় উচ্চ মার্কস পাওয়া যায়। তাই এ ধরনের প্রশ্নগুলোর প্রস্তুতিতে বিশেষ গুরুত্ব দিন।

■ সাজানো ও গোছানো প্রস্তুতি: আপনার প্রস্তুতি যা-ই হোক, তা সাজানো ও গোছানো রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এলোমেলো পড়াশোনা থেকে ভালো লিখতে পারা কঠিন। তাই এখন থেকেই পড়াশোনার সবকিছু গুছিয়ে রাখা শুরু করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...