Ajker Patrika

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কি মাঠও থাকবে না?

হারুনুর রশিদ, জবি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কি মাঠও থাকবে না?

সম্পূর্ণ অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরই কলেজ আমলের হলগুলো বেদখল হয়ে যায়। এখন একমাত্র খেলার মাঠও চলে যাচ্ছে সিটি করপোরেশনের হাতে। শত পাওয়া না পাওয়ার ভিড়ে যেখানে একটি মাত্র মাঠ ছিল, সেটাও এখন থাকছে না। এদিকে মাঠ রক্ষার দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত আন্দোলন করলেও প্রশাসনিক কোনো অগ্রগতি নেই। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন—তাহলে কি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো খেলার মাঠও থাকবে না? 

গত জুনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গত ১৭ জুন এ নিয়ে ডিএসসিসিকে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সিটি মেয়রের সঙ্গে দেখা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করার আশ্বাস দেওয়া হয়। সে সময় খেলার মাঠ থেকে খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু গত রোববার গভীর রাতে আবার পুরো মাঠ ঘিরে ফেলা হয়। মাঠের গোলপোস্ট ও সীমানা প্রাচীরগুলো তুলে ফেলে সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, প্রথমে সিটি করপোরেশন থেকে মাঠে মার্কেট নির্মাণ না করার আশ্বাস দেওয়া হলেও এখন সে কথা রাখছেন না মেয়র। এখন মাঠ রক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হবে। এতেও সমাধান না হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

মাঠে স্থাপনা নির্মাণের প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মিছিলবিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য নিজস্ব কোনো মাঠ না থাকায় ধূপখোলা খেলার মাঠটি তিন ভাগ করে এক ভাগ তৎকালীন সরকারি জগন্নাথ কলেজকে (বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়) ব্যবহার করার জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি দেন। তখন থেকেই মাঠটিকে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনও এই মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়। 

মাঠ রক্ষার দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ: 
এদিক নিজেদের একমাত্র খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে সরব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান জাহিন।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রনেতারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ হাজার শিক্ষার্থীর একমাত্র খেলার মাঠটিও দখল হওয়ার পথে। আজকের এই পরিস্থিতির পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতাই দায়ী। ১৯৮৪ সালে এই মাঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ করা হলেও এখন পর্যন্ত তা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং সুরক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এত দিনেও বরাদ্দকৃত সম্পত্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেটের আওতাভুক্ত করতে না পারার দায় অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। 

বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে মাঠ রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান রাজুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সোমা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভলিবল প্রমীলা দলের খেলোয়াড় আনতাজ হেনা আঁখি, ফুটবল দলের খেলোয়াড় গাজি মো. শামসুল হুদা, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ফয়সাল, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী কিশোয়ার সাম্য, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস শাকিলসহ আরও অনেকে। 

এ সময় বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয় রাখার জন্য হলেও মাঠ পুনরুদ্ধার করতে হবে। মাঠ না থাকলে শিক্ষার্থীরা মাদকের দিকে ঝুঁকবে। যত দিন পর্যন্ত আমরা কেরানীগঞ্জের ক্যাম্পাসে না যাব, তত দিন পর্যন্ত আমরা ধূপখোলার মাঠ ব্যবহার করতে চাই। এ সময় শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, লুটপাট করার জন্য আপনাদের অনেক জায়গা রয়েছে। মশা মারার ওষুধের টাকাও আপনারা লুট করেন। শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ দখল করে বাণিজ্য করার অশুভ চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন। শিক্ষার্থীরা তাদের মাঠের কর্তৃত্ব রক্ষায় সমুচিত জবাব দেবে। 

কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেনমানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি পরে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক, লক্ষ্মীবাজার ও কাঠেরপুল হয়ে ধূপখোলা মাঠে প্রবেশ করে। সেখানে সিটি করপোরেশনের চলমান কাজ বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। 

শিক্ষার্থীরা ধূপখোলা মাঠে অবস্থানকালে সেখানে গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজু মিয়া পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা টহলে ছিলাম। খবর পেয়ে এখানে আসি। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত