Ajker Patrika

ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি: জীববিজ্ঞান

মুবিন ইবনে মকবুল
ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি: জীববিজ্ঞান

তোমরা যারা ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছ, আজকের আলোচনা তাদের জন্য। আজ আমরা কথা বলব জীববিজ্ঞান নিয়ে। মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত জীববিজ্ঞান বিষয়টি। যার একটি হচ্ছে উদ্ভিদবিজ্ঞান, অপরটি প্রাণিবিজ্ঞান।

বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান থেকে আসবে ৩০ নম্বরের প্রশ্ন। এর মধ্যে উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞানের অংশ মিলিয়ে প্রশ্নগুলো হবে। কখনো কখনো দেখা যায়, শতকরা ৫০ ভাগ প্রশ্ন এসেছে উদ্ভিদবিজ্ঞান থেকে, বাকি ৫০ ভাগ প্রাণিবিজ্ঞান অংশ থেকে, মানে উদ্ভিদবিজ্ঞান থেকে ১৫ এবং প্রাণিবিজ্ঞান থেকে ১৫ নম্বরের প্রশ্ন। তবে কম-বেশিও হতে পারে। উদ্ভিদবিজ্ঞানের জন্য সবচেয়ে ভালো আবুল হাসান স্যারের লেখা বইটি এবং দ্বিতীয় লেখক হিসেবে পড়া যেতে পারে আজিবুর স্যারের লেখা বই। সেই সঙ্গে প্রাণিবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান পাঠ্যবই আজমল স্যারের লেখা ও দ্বিতীয় লেখক হিসেবে মাজেদা ম্যাডাম বা আবদুল আলিম স্যারের বই পড়তে পারি আমরা।

উদ্ভিদবিজ্ঞান
উদ্ভিদবিজ্ঞান বইয়ে অধ্যায় আছে ১২টি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যথাক্রমে প্রথম, তৃতীয়, চতুর্থ ও নবম অধ্যায়। কোষ ও এর গঠন অধ্যায়ে অনেক সাল ও বিজ্ঞানীর নাম আছে, যার সবগুলো পড়ার দরকার নেই। একান্তই গুরুত্বপূর্ণ যে সব বিজ্ঞানী আছেন, সেগুলো পড়লেই হবে, তবে সব অঙ্গানুর কাজ মনে রাখতে হবে অবশ্যই। অনেক সময় অঙ্গানুর গঠন থেকেও প্রশ্ন আসে। কোষ বিভাজন অধ্যায়টি থেকে সাধারণত মাইটোসিস বা মিয়োসিসের বিভিন্ন ধাপের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। কোষ রসায়ন অধ্যায়ে বিভিন্ন বায়োমলিকিউলস যেমন অ্যামাইনো অ্যাসিড, কার্বোহাইড্রেট, লিপিডের ব্যবহার থেকে অনেক প্রশ্ন এসেছে। এনজাইমের কার্যকারিতা থেকেও প্রশ্ন আসতে দেখা গেছে। অণুজীব অধ্যায়টি বেশ বড়, গুরুত্বপূর্ণও। এ অধ্যায় থেকে প্রতিবছরই এক বা একাধিক প্রশ্ন আসে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা রাখতে হবে; প্রতিটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব, জীবনচক্র, জননপ্রক্রিয়া, প্রকারভেদও পড়া জরুরি। এবার আসছে পঞ্চম অধ্যায় শৈবাল ও ছত্রাকের পালা। এ অধ্যায়ে আমরা প্রতিটি শৈবাল ও ছত্রাকের সঞ্চিত খাদ্য কী, এখান থেকে মেডিকেল-ডেন্টাল পরীক্ষায় একাধিক প্রশ্ন এসেছে। এ ছাড়া তাদের গঠন, প্রকারভেদ, জনন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্রায়োফাইটা ও টেরিডোফাইটা অধ্যায় থেকে আমাদের প্রধানত যেটা পড়তে হবে জনুক্রম এবং তার বৈশিষ্ট্য। নগ্নবীজী ও আবৃতবীজী অধ্যায় থেকে মূলত আবৃতবীজী উদ্ভিদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের প্রকারভেদগুলোও জানতে হবে। টিস্যু ও টিস্যুতন্ত্র অধ্যায় থেকে ভাজক টিস্যুর প্রকারভেদ, কাজ এবং মূল ও কাণ্ডের প্রস্থচ্ছেদগুলো ভালোভাবে শেখা চাই। নবম অধ্যায় উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব যে খুব গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা আগেই বলেছি। এ অধ্যায় থেকে শোষণ, সালোকসংশ্লেষণ, প্রস্বেদন, খনিজ লবণ সবকিছুই কমবেশি জরুরি এবং এখান থেকে ATP এর হিসাব, কোন আলোয় সালোকসংশ্লেষণ ভালো হয়, কত তাপমাত্রায় সালোকসংশ্লেষণ ভালো হয়, সালোকসংশ্লেষণের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রবাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভিদের প্রজনন অধ্যায়ের উদাহরণগুলো মোটামুটি সবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবপ্রযুক্তি অধ্যায় থেকে পড়তে হবে জীবপ্রযুক্তির প্রয়োগ, টিস্যু কালচার, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বর্তমানে কী কী কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে তার উদাহরণ। জীবের পরিবেশ, বিস্তার ও সংরক্ষণ অধ্যায়টি অনেকে ভয় পেলেও, আদতে ভয় পাওয়ার কিন্তু কোনো কারণ নেই; এখান থেকে জলজ উদ্ভিদ, মরুজ উদ্ভিদ, লবণাক্ত পরিবেশের উদ্ভিদ, এদের অভিযোজন, উদাহরণ, বায়োম, কোন বায়োমে কী কী প্রাণী থাকে তার উদাহরণ, ইন-সিটু, এক্স-সিটু কনজারভেশনের উপায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোও আসতে পারে।  

 প্রাণিবিজ্ঞান
প্রাণিবিজ্ঞানে আমাদের অধ্যায় আছে মোট ১২টি। এর মধ্যে প্রথম অধ্যায়ের নাম প্রাণীর বিভিন্নতা ও শ্রেণিবিন্যাস। এ অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসে মূলত বিভিন্ন পর্ব ও শ্রেণির বৈশিষ্ট্য নিয়ে, এখানকার সব উদাহরণ পড়ার দরকার নেই; গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণগুলো পড়লেই যথেষ্ট। দ্বিতীয় অধ্যায়ের নাম প্রাণীর পরিচিতি; যেখানে হাইড্রা, ঘাসফড়িং, রুই মাছ নিয়ে প্রশ্ন এসেছে। এ অধ্যায়টি যেহেতু বড়, দেখা গেছে এক বা একাধিক প্রশ্ন এসেছে এখান থেকে; সে ক্ষেত্রে এদের প্রত্যেকের জীবনচক্র, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক বিভিন্ন তন্ত্র, যেমন রেচনতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র, শোষণতন্ত্র ইত্যাদি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয় অধ্যায়টি হচ্ছে পরিপাক ও শোষণ। বলে রাখা ভালো, কেবলমাত্র এ অধ্যায়ই নয়; বরং মানবদেহের সব অধ্যায়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ। যাহোক, তৃতীয় অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সব এনজাইম, পরিপাকনালির দৈর্ঘ্য, পরিপাকগ্রন্থির কাজ। এ ছাড়া রক্ত ও সঞ্চালন অধ্যায়টিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর এখান থেকে অনেক প্রশ্ন আসে; বলা যেতে পারে, প্রাণিবিজ্ঞানের বেশির ভাগ প্রশ্নই আসে এ অধ্যায় থেকে আর এ অধ্যায়ের রক্তকণিকাগুলোর আকার, কাজ, আয়ুষ্কাল মনে রাখতে হবে বিশেষভাবে। হৃৎপিণ্ডের গঠন, কার্ডিয়াক চক্রের সময়কালসহ বর্তমান সময়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের যেসব নতুন উন্নতি ঘটেছে, সেগুলো সম্পর্কেও জানতে হবে; যেমন এনজিওপ্লাস্টি, বাইপাস সার্জারির মতো বিষয়গুলোর মধ্য থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। পঞ্চম অধ্যায় শ্বসন ও শ্বাসক্রিয়া থেকে মূলত পড়তে হয় শ্বসনতন্ত্রের গঠন, বিভিন্ন অঞ্চল ও এগুলোর শ্রেণিবিভাগ। এ ছাড়া মনে রাখতে হবে সাইনুসাইটিসের সময়কাল (অ্যাকিউট ও ক্রনিক) এবং ওটিটিস মিডিয়ার সময়কাল (অ্যাকিউট ও ক্রনিক)। পরের অধ্যায় হচ্ছে বর্জ্য ও নিষ্কাশন। এ অধ্যায় থেকে তুলনামূলকভাবে কম প্রশ্ন আসে, তবু মূত্র সৃষ্টি ও এর বিভিন্ন উপায়, রেচনতন্ত্রের কাজ আমাদের আয়ত্তে রাখা উচিত। সপ্তম অধ্যায় চলন ও অঙ্গচালনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ অধ্যায় থেকে অনেক প্রশ্নই আসতে দেখা গেছে। যার জন্য সব অস্থির নাম মুখস্থ রাখতে হবে। তরুণাস্থি ও এর প্রকারভেদ এবং কোন তরুণাস্থি কোথায় দেখা যায়, লিভারের শ্রেণিবিভাগ বিষয়েও প্রশ্ন আসতে পারে। সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ বা অষ্টম অধ্যায়টি ভালোই বড়। এ অধ্যায়ের স্নায়ুতন্ত্র, চোখ, কান, হরমোনসহ বেশ কিছু বিষয় থেকেই এক বা একাধিক প্রশ্ন এসে থাকে এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের কাজ কিংবা করোটিক স্নায়ু থেকে শুরু করে অষ্টম অধ্যায়ের প্রতিটি লাইনই বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলা যেতে পারে। মানবজীবনের ধারাবাহিকতা অধ্যায় থেকে সচরাচর পুরুষ প্রজননতন্ত্র ও স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ নিয়ে প্রশ্ন আসতে দেখা যায়, IVF থেকেও প্রশ্ন আসতে পারে। দশম অধ্যায়ের নাম মানবদেহের প্রতিরক্ষা। এ অধ্যায় থেকে সবগুলো শ্বেত কণিকার কাজ জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেই সঙ্গে অ্যান্টিবডির গঠন ও এর কাজ এবং বিভিন্ন প্রতিরক্ষার স্তরগুলো জানাও আবশ্যক। জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন হচ্ছে একাদশ অধ্যায়। এ অধ্যায়ের প্রতিটি অনুপাতই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছরই অনুপাতগুলো থেকে প্রশ্ন আসতে দেখা যায়; কাজেই অনুপাতের পাশাপাশি কিছু গাণিতিক সমস্যা নিয়েও অনুশীলন করা যেতে পারে। বর্ণান্ধতা, হিমোফিলিয়ার মতো গাণিতিক প্রশ্ন আসার যে সম্ভাবনা রয়েছে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। দ্বাদশ অধ্যায়ের নাম প্রাণীর আচরণ। এ অধ্যায় থেকে বিভিন্ন আচরণের প্রকারভেদ, ট্যাক্সেসের প্রকারভেদ, মৌমাছির জীবনচক্র বিষয়গুলো জেনে রাখতে হবে। ওপরের উল্লিখিত বিষয়গুলো আয়ত্তে থাকলে এবং শেষ সময়ে রিভিশন দিলে জীববিজ্ঞান বিষয়ে ডেন্টাল পরীক্ষায় ভালো একটি নম্বর পাওয়া সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক: মেধাতালিকায় প্রথম, ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) এবং এমবিবিএস শিক্ষার্থী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত