Ajker Patrika

বদরগঞ্জের যমুনেশ্বরী ও চিকলী নদীর ২৫ স্থানে বালু লুট

আশরাফুল আলম আপন, বদরগঞ্জ (রংপুর)
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪, ১০: ৫৭
বদরগঞ্জের যমুনেশ্বরী ও চিকলী নদীর ২৫ স্থানে বালু লুট

রংপুরের বদরগঞ্জে যমুনেশ্বরী ও চিকলী নদী থেকে বালু উত্তোলনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা। উপজেলার নাগের হাট থেকে মাদারগঞ্জ হাট পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এলাকায় নদীর চরের অন্তত ২৫টি স্থানে বালু লুট করা হচ্ছে। বালুবাহী ট্রাক্টরের কারণে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। ধুলায় টিকতে পারছে না স্থানীয় বাসিন্দারা।

নাগের হাটের পাশ দিয়ে বয়ে চলা যমুনেশ্বরী পারাপারের জন্য রয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকার একটি সেতু। বালুখেকোরা হাট ও সেতু এলাকার পাশের চর থেকে বালু লুটে নিচ্ছে। এতে নাগের হাট, মাদাই খাবার, সোনাপাড়াসহ সেতুটি হুমকির মুখে রয়েছে। এ ছাড়া হুমকির মুখে আছে কৃষকের আবাদি জমি।

সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতুর দুই পাশের নিচ থেকে ৮-১০টি ট্রাক্টরে করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ সময় এক ট্রাক্টরের চালক আলামিন জানান, এখান থেকে ২০০ টাকা গাড়ি দরে বালু কেনা হয়েছে। কার কাছ থেকে কিনছেন, জানতে চাইলে তিনি চেনেন না বলে জানান। টাকা কাকে দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘টাকা আমি দিইনি। আমার গাড়ির মালিক দেন।’ একই কথা বলেন আরেক গাড়ির চালক মেডিসিন মিয়া।

এখানে বালু উত্তোলনের কারণে সেতু ও আবাদি জমি হুমকির মুখে পড়ছে উল্লেখ করে কুতুবপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত ভূমি কর্মকর্তা আনারুল ইসলাম গত জানুয়ারি মাসে ১৩ বালু ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করে বদরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। তবে এ নিয়ে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মধুপুর ইউনিয়নের রাজরামপুর নাওপাড়া এলাকায় প্রতিদিন কয়েক শ ট্রাক্টর বালু ও মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় মোয়াজ্জেমসহ কয়েকজন। এই বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে নাওপাড়া গ্রাম, মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও আবাদি জমি। তবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমি আগে বালু তুলেছি, এখন তুলছি না। এখানে প্রায় ২৫টি ইটভাটা রয়েছে। সেই ভাটার মালিকেরা নদীর পাশের জমি কিনে মাটি ও বালু তুলছেন।’

এ ছাড়া বালু উত্তোলন করা হচ্ছে চিকলী নদীর ডাঙ্গাপাড়া, জেলেপাড়া, হাটখোলাপাড়া, চম্পাতলী, কালিরহাট, বালাপাড়া ও মাদারগঞ্জহাট এলাকার কয়েকটি জায়গায়।

এদিকে বালুবাহী ট্রাক্টর চলাচলে এলাকার রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে। ধুলার কারণে রাস্তায় বের হতে পারছে না এলাকার মানুষ। সম্প্রতি জোটবদ্ধ হয়ে নাওপাড়ার রাস্তায় খুঁটি দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয় মানুষ। তবে দুই দিন পর তা খুলে দেওয়া হয়। এলাকার বাসিন্দা রুবেল ও রিয়াজুল জানান, আগেও রাস্তা বন্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু বালুখেকোরা প্রশাসনের মাধ্যমে রাস্তা থেকে খুঁটি তোলার ব্যবস্থা করে।
মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আলম বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দিয়ে বালুর গাড়িগুলো চলাচল করছে। গাড়ির শব্দে পরিষদে থাকা যায় না।’

যোগাযোগ করা হলে বদরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলন হচ্ছে। প্রতিদিনই এমন খবর পাচ্ছি। সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশিক্ষণে থাকায় এত দিন অভিযান পরিচালনা করা যায়নি। সম্প্রতি তিনি এসেছেন। এখন বালুর পয়েন্টগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’

জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাশপিয়া তাসরিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা অভিযানে গেলে ঘটনাস্থলে কাউকে পাই না। এলাকাবাসী কেউ মুখও খোলেন না। এ কারণে বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি না। আপনারা (সাংবাদিক) সহযোগিতা করেন। আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ৪ বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর যা বলল ইইউ

আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না, বিস্ফোরক তামিম

কাগজে-কলমে মেয়র হওয়ায় দায়িত্ব পালন করলাম: জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শন শেষে ইশরাক

এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণায় বিএনপি ও জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত