Ajker Patrika

রাজশাহী কারাগারে বন্দীদের ৪০ শতাংশই মাদক মামলার আসামি

রিমন রহমান
আপডেট : ২৯ মে ২০২১, ১৬: ৪২
রাজশাহী কারাগারে বন্দীদের ৪০ শতাংশই মাদক মামলার আসামি

রাজশাহী: করোনাকালেও থেমে নেই মাদকের কারবার। সীমান্ত সংলগ্ন রাজশাহী জেলায় বরং মাদকের ব্যবসা বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিতই মাদক কারবারিদের আটক করছে। আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এখন বন্দীদের অন্তত ৪০ ভাগই মাদক মামলার আসামি। এদের মধ্যে অনেককে অবশ্য স্বজনরাই পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁদের দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বন্দী ২ হাজার ৫৭৫ জন। এর মধ্যে এক হাজার জনই মাদক মামলার আসামি। এ ছাড়া কারাগারে মাদকাসক্ত কারাবন্দী আছেন ৩২৪ জন। তাঁদের চিকিৎসা চালছে। কেউ কেউ সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে বেশির ভাগই চিকিৎসা সম্পন্ন হওয়ার আগেই জামিনে বেরিয়ে যান বলে জানা গেছে।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, সম্প্রতি আমি কারাগারের অন্তত ১০০ বন্দীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা জানিয়েছেন, করোনার মধ্যে যখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্যান্য কাজে ব্যস্ত, সেই সুযোগকে তাঁরা কাজে লাগিয়েছেন।

পুলিশ, র‍্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে ২০২০ সালের মে থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের নামে ৩ হাজার ৫৯৮টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ২ হাজার ১৪১ কেজি ১৭৪ গ্রাম গাঁজা, ৯৩ কেজি ৭৪১ গ্রাম হেরোইন, ২ লাখ ৪০ হাজার ৪৪২টি ইয়াবা, ৬০ হাজার ৪৮৪ বোতল ফেনসিডিল, ১৫০ বোতল এবং ১৩ লিটার অ্যালকোহল জব্দ করা হয়েছে।

এ ছাড়া নেশা জাতীয় ওষুধ জব্দ করা হয়েছে ১১ হাজার ৫১৩টি, দেশি মদ ৯ হাজার ৯৭৬ লিটার, চোলাই মদ ৩ হাজার ২৪৯ লিটার, বিদেশি মদ ৩৩৫ বোতল, বাংলা মদ ২৯৪ লিটার ও ১৭৯ বোতল, তালের গাঁজানো তাড়ি ৯০ লিটার, প্যাথেড্রিন ইনজেকশন ৮টি, বিয়ার ৩৫৪ বোতল ও টাপেন্টাডল ট্যাবলেট ২০৯টি জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে শুধু রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপির) অভিযানে এক বছরে ২ হাজার ৯০৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের নামে ২ হাজার ৪০৭টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে ৯৯ কেজি ৩৩৯ গ্রাম ও ২৬টি গাছ, হেরোইন ১৮ কেজি ১৯২ গ্রাম, ইয়াবা ২১ হাজার ৪০৮টি, ফেনসিডিল ২৬৩ বোতল ও ১০ লিটার, অ্যালকোহল ১৫০ বোতল ও ১ লিটার, নেশা জাতীয় ওষুধ ১১ হাজার ৩৬৩টি, দেশি মদ ১০ লিটার ও ১৬ বোতল, চোলাই মদ ১ হাজার ৩৯০ লিটারসহ অন্যান্য আরও কিছু মাদকদ্রব্য।

জেলা পুলিশের তথ্য মতে, এক বছরে জেলার আট থানায় ১ হাজার ৩৫৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের নামে ৭৬২টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে ১৪৯ কেজি ১৯০ গ্রাম, হেরোইন ৫ কেজি ৪৬৮ গ্রাম, ইয়াবা ৯ হাজার ৩০৬টি, ফেনসিডিল ৪ হাজার ২৬৩ বোতলসহ অন্যান্য আরও কিছু মাদকদ্রব্য।

র‍্যাব-৫ এর অভিযানে রাজশাহী থেকে এক বছরে ২ হাজার ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের নামে ৯২৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে ১ হাজার ৭৩৯ কেজি ১৯৫ গ্রাম, হেরোইন ৬৭ কেজি ৮৩৭ গ্রাম, ইয়াবা ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৫৭টি, ফেনসিডিল ৩৭ হাজার ৫৪৮ বোতল, দেশি মদ ৯ হাজার ৯৬৬ লিটার, বিদেশি মদ ৩৩৩ বোতল, বিয়ার ৩৪৯ বোতল ও আফিম ৩৬ কেজি।

বিজিবি অবশ্য মাদক ধরলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আসামি ধরতে পারেনি। বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের তথ্য মতে, এক বছরে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর মামলা দায়ের করেছে ২২৯ টি। এসব মামলায় গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে ১৫৩ কেজি ৪৫০ গ্রাম, হেরোইন ২ কেজি ২৪৪ গ্রাম, ইয়াবা ৩৩ হাজার ৭১টি, ফেনসিডিল ১৮ হাজার ৪১০ বোতল, নেশা জাতীয় ওষুধ ১৫০টি এবং মদ ১৭৯ বোতল।

আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, আমি আসার পরই মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করি। যার কারণে বিপুল পরিমাণ মাদক ধরেছি। চেষ্টা করছি যেন রাজশাহীতে মাদক না থাকে।

কমিশনার আরও বলেন, আমরা মাদক ব্যবসায়ীদের একটি ডাটাবেজ করছি। যাঁরা মাদকের সঙ্গে জড়িত এবং ব্যবসা করেন তাঁদের কীভাবে পুনর্বাসিত করা যায় সেটিও ভাবছি।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, উদ্বেগের বিষয় হলো প্রতিনিয়ত নারী মাদক বিক্রেতা বা বহনকারীর সংখ্যা কারাগারে বাড়ছে। মাদক মামলা নিয়ে কেউ কারাগারে এলে শুরুতেই তাকে কিছুক্ষণ মাদকবিরোধী লিফলেট পড়ে শোনানো হয়। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সেলিং সভা করা হয়। কয়েদিদের কারাগারের ভেতরেই নানারকম কাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। সাজাভোগ শেষ হলে সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে কাউকে কাউকে পুনর্বাসনও করা হয়।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সত্যিকার অর্থেই মাদক নির্মূল করতে হলে যাঁরা মূল হোতা, তাঁদের ধরতে হবে। শুধু চুনোপুঁটি ধরলে হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সমাজে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ ব্যাপারে কাজ করতে হবে। একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে মাদক কমিয়ে আনা সম্ভব, কিন্তু নির্মূল করা সম্ভব নয়। মাদক নির্মূল না হলে ভবিষ্যতে ভয়ংকর পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত