Ajker Patrika

‘মানুষ প্রভাবশালীদের চেহারা চিনেছে, ওদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহসী হয়েছে’

সাবিত আল হাসান, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৩, ১৭: ০৯
‘মানুষ প্রভাবশালীদের চেহারা চিনেছে, ওদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহসী হয়েছে’

‘১০ বছর ধরে ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিটি জারি আছে। এইটা একজন প্রভাবশালী ঘাতকের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথার কারণ। সরকার প্রধানের কাছে বড় ধরনের একটি বার্তা। সারা দেশে এবং সারা বিশ্বের মানুষ এখন ত্বকীর খুনিকে চিনেছে। আন্দোলন চলমান থাকার কারণে প্রভাবশালী অপশক্তির বিরুদ্ধে যারা আগে মুখ খুলতে পারত না, তারাও সরব হয়েছে।’ কথাগুলো বলছিলেন নিহত কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বী।

দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আন্দোলন অব্যাহত রাখলেও এখন পর্যন্ত সন্তান হত্যার বিচার পায়নি ত্বকীর পরিবার। দীর্ঘ সময় ধরে বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে প্রাপ্তির হিসাবে এসব মন্তব্য করেন রফিউর রহমান।

সন্তান হত্যার বিচার না পেলেও নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বী বিশ্বাস করেন সন্ত্রাস নির্মূল রাতারাতি সম্ভব নয়। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সন্ত্রাস নির্মূল একটি চলমান প্রক্রিয়া। সন্ত্রাস বা দুঃশাসন নির্মূল হবে তখনই যখন সংস্কৃতির বিপ্লব ঘটবে। এটি রাতারাতি সম্ভব নয়। এর জন্য ধারাবাহিক কর্মসূচি বা ধাপ প্রয়োজন। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুঃশাসন, অপশক্তি, অনিয়মসহ যত আন্দোলন হচ্ছে, এগুলো সবই মূল স্রোতের মধ্যে মিশে যাবে। আমাদের এই সংগ্রামগুলোর কারণে যারা দুর্বল তারাও সাহস পায়।’

নিহত ত্বকীর বাবা আরও বলেন, ‘আমাদের হারাবার কিছু নেই আর। আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে এখন পর্যন্ত সফলতার মুখ দেখেছি। আমাদের এই আন্দোলন সংগ্রামের ফলে মানুষ প্রভাবশালীদের চেহারা চিনেছে, ওদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহসী হয়েছে। আগে যারা লাশের পর লাশ ফেলত, তারা এখন ভীত সন্ত্রস্ত। নারায়ণগঞ্জে রাতে থাকতে পারে না। যখন নারায়ণগঞ্জ আসে, তখন বহু ক্যাডার নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। তাঁরা নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি ভীত।’

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে ত্বকীকে অপহরণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পরে রাতেই তাঁর মরদেহ নগরের কালিবাজার চারারগোপ খালে ফেলে দেওয়া হয়। এর দুদিন পর ৮ মার্চ ওই খাল থেকে ত্বকীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের ১০ বছরে ত্বকীর কবর জিয়ারত করছেন পরিবারসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরাএ দিকে মামলার প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো আদালতে চার্জশিট জমা দেয়নি মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব। অথচ হত্যাকাণ্ডের বছরেই ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী হিসেবে পরিচিত সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের এক বছরের মাথায় ত্বকীর ঘাতক চিহ্নিত হয়েছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করে র‍্যাব। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে র‍্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান বলেছিলেন, ‘অভিযোগপত্র প্রস্তুত। শিগগিরই তা আদালতে দাখিল করা হবে।’

জিয়াউল আহসান আরও জানান, হত্যার পেছনে রফিউর রাব্বীর ওপর ওসমান পরিবারের ক্ষোভ ছিল। ২০১১ সালে আইভীর পক্ষে অবস্থান নেওয়া, বাস ভাড়া আন্দোলন করে ভাড়া কমাতে বাধ্য করাসহ বেশ কয়েকটি কারণে রাব্বির ওপর ক্ষুব্ধ ছিল প্রতিপক্ষরা। এরপরেই তাঁকে শায়েস্তা করতে ১১ জন মিলে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। যদিও এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন ওসমান পরিবারের সদস্যরা।

ত্বকী হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী প্রদীপ ঘোষ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলায় স্বীকারোক্তি প্রদান করা আসামিদের গ্রেপ্তার এবং তদন্তকারী সংস্থাকে দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিল করার জন্য আদালতকে একাধিকবার বলা হয়েছে। আদালতও আমাদের আবেদন গ্রহণ করে তদন্তকারী সংস্থাকে অভিযোগপত্র দাখিলের তাগিদ দিলেও এখন পর্যন্ত তা জমা দেওয়া হয়নি। মামলার পরবর্তী শুনানি ১৩ এপ্রিল ধার্য করা আছে।’

মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব ১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, চাঞ্চল্যকর ও সংবেদনশীল মামলা। এর তদন্তকাজ চলমান রয়েছে। ত্বকী হত্যার মামলাটি শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, পুরো দেশের ভেতর একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা হিসেবে পরিচিত। তদন্তকারী কর্মকর্তা আইনগতভাবে প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষে চার্জশিট প্রদান করবেন।’

অন্যদিকে ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ কর্মসূচি পালন করে আসছেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। দীর্ঘ ১০ বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সম্প্রতি দেশের ২৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি প্রদান করেছেন। পাশাপাশি মার্চ মাসের ২৩ দিনব্যাপী কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর জেলা সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১০ বছরে ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া এই দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতির একটি উদাহরণ। আমরা এই মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানিয়ে আসছি। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে কোনো অপরাধী অপরাধ ঘটিয়ে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াবে, এটা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জার। আমরা মনে করি, দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসবে সরকার।’

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহিন মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসে ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে আসছি। নিরবচ্ছিন্নভাবে আমাদের এই আন্দোলন প্রমাণ করে আমরা এই হত্যার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে পিছু হটব না। খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত