Ajker Patrika

আতঙ্কে আবার এলাকাছাড়া তালতলীর সেই ১৩ হিন্দু পরিবার

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৪, ০০: ৫০
আতঙ্কে আবার এলাকাছাড়া তালতলীর সেই ১৩ হিন্দু পরিবার

বরগুনার তালতলী উপজেলার চন্দনতলা মগপাড়া এলাকার সেই ১৩ হিন্দু পরিবার আবার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। গত শুক্রবার থেকে পরিবারগুলোর কাউকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  উপজেলার চন্দনতলা গ্রামে ১৩টি হিন্দু পরিবারের বাস ওই এলাকার সন্ত্রাসী আব্দুর রশিদ তাদের ওপর নানাভাবে জুলুম নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। ওই হিন্দু পরিবারের মধ্যে যাদব চন্দ্রের স্কুলপড়ুয়া কন্যাকে উত্ত্যক্ত করেন রশিদ। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি স্থানীয়দের কাছে বিচার দেন। কিন্তু স্থানীয়দের বিচার মানতে নারাজ রশিদ। পরে বাধ্য হয়ে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রশিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগীর বাবা। ওই মামলায় রশিদ জেল খাটেন। জেল থেকে ফিরে রশিদ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে স্থানীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে বিচারের আশ্বাস পেয়ে মামলা তুলে নেন যাদব।

কিন্তু বিচার পাওয়া তো দূরের কথা, জেল থেকে ছাড়া পেয়ে রশিদ হিন্দু পরিবারগুলোর ওপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার শুরু করেন। অবশেষে আব্দুর রশিদের অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর এলাকা ছেড়ে চলে যান। পরে তাঁরা বরগুনাসহ বিভিন্ন স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন।

এ খবর দৈনিক জাতীয় দৈনিকে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বলে প্রশাসন। পরে রশিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় রশিদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তৎকালীন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বরগুনা পুলিশ সুপার, বরগুনা জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই হিন্দু পরিবার ভিটেমাটিতে ফিরে আসেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয় পুলিশ ফাঁড়ি।

১০ বছর ধরে তাঁরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তাঁদের ভিটামাটিতে বসবাস করছিলেন। কিন্তু গত বুধবার ফাঁড়ির পুলিশ চলে যায়। ওই সুযোগে আব্দুর রশিদ ওই হিন্দু পরিবারগুলোর এলাকায় আসা-যাওয়া শুরু করেন। এতে ভয় পান তাঁরা। শুক্রবার (৯ আগস্ট) ওই পরিবারগুলো ঘরবাড়ি ফেলে রেখে অন্যত্র চলে যায়।

শনিবার সরেজমিনে ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শূন্য ভিটেমাটি, আছে পুকুর, পাকা টয়লেট। পড়ে আছে দুদিন আগে রান্নার কাজে ব্যবহৃত চুলা। ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে মাটির সানকিসহ অসংখ্য অবশেষ। শুধু মানুষ নেই।

স্থানীয়রা বলেন, চন্দনতলা গ্রামে বসবাসরত যাদব সরকার, হরেন রায়, মাধব সরকার, সুভাষ চন্দ্র, রমেশ চন্দ্র, কমল চন্দ্র, শ্যামল হাওলাদার, রনজিত কুমার, রিমল চন্দ্র, রিপন রায়, সমীর সরকার, প্রশান্ত সরকার ও রিমল রায়। তাঁরা গত শুক্রবার বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে চলে গেছেন।

স্থানীয়রা বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৭ আগস্ট সেই সন্ত্রাসী আব্দুর রশিদ চন্দনতলা এলাকার হিন্দুপাড়ায় ঘোরাঘুরি শুরু করেন। হামলা ও লুটপাটের ভয়ে ওই হিন্দু পরিবারগুলো এলাকা থেকে চলে গেছে।

চন্দনতলা মগপাড়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়ির ফটকে ঝুলছে তালা। ছবি: আজকের পত্রিকাএলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া হিন্দু পরিবারগুলোর একাধিক সদস্যের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

পঞ্চাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, সন্ত্রাসী আব্দুর রশিদের আসা-যাওয়া দেখে ওই হিন্দু পরিবারগুলো ভয়ে পালিয়ে গেছে। ফাঁড়িতে পুলিশ সদস্য না থাকায় এ অবস্থা হয়েছে। ফাঁড়িতে পুলিশ এলে তাঁদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম খান বলেন, চন্দনতলার পুলিশ ফাঁড়িতে কয়েক দিন ধরে পুলিশ নেই। হিন্দু পরিবারগুলো এলাকা ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা আমাদের জানা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত