Ajker Patrika

গ্রাহকের অর্থ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২: ০৫
গ্রাহকের অর্থ  ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই

সবার চোখের সামনেই ঘটেছে। ধামাকা অফারের বিজ্ঞাপন ফলাও প্রচার করেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের ফাঁদে পড়ে গ্রাহকেরা যে প্রতারিত হতে পারেন, তা গণমাধ্যমে তুলে ধরে সতর্কও করা হয়েছে। এরপরেও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম তদারকি করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণায় কয়েক হাজার মানুষ যখন নিঃস্ব হতে বসেছেন, তখন ই-কমার্সের সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজছে সরকার।

সরকার এখন ই-কমার্স ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফেরাতে রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ গঠন এবং ডিজিটাল কমার্স আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো তদারকি করবে বলে গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

সভা শেষে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ই-কমার্স ব্যবসা বন্ধ করছে না সরকার। ১০-১২টি প্রতিষ্ঠানের কারণে লাখ লাখ ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না। ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফেরাতে রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গঠন করা হবে ডিজিটাল কমার্স আইন। যারা প্রতারণা করেছে তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিবন্ধন ছাড়া কেউ ই-কমার্স ব্যবসা করতে পারবে না। বুধবার (গতকাল) থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে।’

তবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ করে প্রতারিত গ্রাহকেরা অর্থ ফেরত পাবেন কিনা, সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি সরকার। ইভ্যালির টাকা সরকার ফেরত দেবে কিনা, সেই প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টাকা সরকার নেয়নি। এটির লাভের ভাগীদারও সরকার না।’ অর্ধেক দামে পণ্য কিনতে অনেকে ইভ্যালিতে বিনিয়োগ করেছে জানিয়ে এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মানুষকে লোভ সংবরণ করতে হবে। ই-কমার্স নীতিমালা অনুযায়ী পণ্য না পেয়ে লেনদেন করা যাবে না।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতারণাকারী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় মামলার বিধান রয়েছে। এসব মামলা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মামলা হওয়ার পরেও ডেসটিনি, যুবকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকেরা টাকা ফেরত পায়নি। ইভ্যালির গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু—সেই প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যুবক, ডেসটিনি অনেক আগের ঘটনা। তাদের অনেক সম্পদ ছিল। ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিরা কারাগারে আছেন। করোনা মহামারির মধ্যে দেশের লাখ লাখ মানুষ ই-কমার্স ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেছে। ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারণে লাখ লাখ ব্যবসার ক্ষতি করার ইচ্ছা সরকারের নেই। যারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এই ব্যবসায় কেউ প্রতারণা করতে না পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

ই-কমার্স ব্যবসা কীভাবে পরিচালনা করা হবে সে বিষয়ে প্রচার চালাতে হবে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই লোভের বশবর্তী হয়ে এক টাকার পণ্য বারো আনায় কিনেছেন। অনেকে লোভের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

মন্ত্রী জানান, ইভ্যালির ৫০০ কোটি টাকা দায় রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞাপনে প্রচুর টাকা ব্যয় করেছে। ইভ্যালির রাসেলের কাছে বর্তমানে ৮০-৯০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে তাঁরা শুনেছেন। ইভ্যালির কী পরিমাণ সম্পদ আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়ার পর সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। গ্রাহকদের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে রাসেলের সঙ্গে আইনগত পথ অনুসরণ করে কথা বলতে হবে।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে গ্রাহকেরা ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ৪ হাজার ৯৩২টি অভিযোগ দিয়েছিলেন। তার মধ্যে ৮৪ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

দায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করায় এর দায় প্রাথমিকভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। গতকাল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত জানানোর সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান করার সময় কারও না কারও ছাড়পত্র নিয়েই করা হচ্ছে। এখানে ছাড়পত্র দিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব নিতে হবে। 

মালিকদের জেলে পাঠিয়ে লাভ নেই
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের জেলে পাঠালে গ্রাহকদের কোনো লাভ হবে না বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, কাউকে জেলখানায় পাঠিয়ে দিলে তো কোনো লাভ নেই। সে জেল খেটেই শেষ, এতে কোনো উপকার হবে না। আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করে একটা সমাধান বের করব।

টাকা ফেরত পেতে রিট
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচার বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে গতকাল হাইকোর্টে রিট করেছেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশনাও চেয়েছেন তাঁরা।

বাণিজ্য, অর্থ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ