Ajker Patrika

১৩ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের অপসারণের নির্দেশ

  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা, নীতিমালা আরও স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত করার দাবি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর
  • তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া সম্ভব ছিল না: বাংলাদেশ ব্যাংক
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ১১
Thumbnail image

ডলারের বাজারে কারসাজির অভিযোগে সংশ্লিষ্ট ১৩ ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া তদন্ত দলের সুপারিশ অনুযায়ী, এসব ব্যাংককে তাদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী জরিমানা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে আমদানির জন্য অতিরিক্ত ঋণপত্র (এলসি) খোলা এবং বকেয়া বিল পরিশোধের অজুহাতে এসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে ডলার কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অভিযুক্ত ব্যাংকগুলো ডলারের নির্ধারিত সর্বোচ্চ সীমা ১২০ টাকার পরিবর্তে ১২৯ টাকায় অনৈতিক লেনদেন করেছে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ডলারের দাম নিয়ে এমন কারসাজির দায়ে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) কড়া সতর্ক করেছেন এবং একই ধরনের অপরাধ পুনরায় ঘটলে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।

সূত্র অনুযায়ী, কিছু ব্যাংক ডলারের সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলে ঘোষিত ১২০ টাকার চেয়ে অন্তত ৮ টাকা বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনছে। এর ফলে খোলাবাজারে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করেছে। একটি অসাধু চক্র এ সুযোগ নিয়ে ১২১ টাকার পরিবর্তে ১২৯ টাকায় ডলার বিক্রি করছে। যার ফলে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সন্দেহভাজন অন্তত ১৩টি ব্যাংকের কাছে ডলার বেচাকেনার তথ্য তলব করেছে এবং তা যাচাই-বাছাই করে ডলারের বাড়তি দামের প্রমাণ পেয়েছে। এ ছাড়া বাজারের অস্থিরতা তদন্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিং দল এসব ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছে। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় জরিমানা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে এসব ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের অপসারণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশে ডলার-সংকট অনেকটা কমে এসেছে এবং বর্তমানে আমদানি বিল পরিশোধ ও নতুন এলসি খোলার হারও স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ডলারের চাহিদা বাড়ানোর যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কিছু ব্যাংক একযোগে ৮-৯ টাকা অতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে ডলার বিক্রি করছে, যা যৌক্তিক নয়। এটি মূলত একটি ‘চরম অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে কিছু ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং ট্রেজারি বিভাগের প্রধানেরা বিশেষ স্বার্থ হাসিলের জন্য ডলারের দাম বাড়িয়ে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এ ধরনের আচরণ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া সম্ভব ছিল না।

শাস্তির মুখোমুখি হওয়া একটি ব্যাংকের এমডি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ক্রলিং পে পদ্ধতিতে ডলারের রেটের কোনো বাধা থাকার কথা নয়; তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি মিড রেট ঘোষণার মাধ্যমে রেট স্থির করেছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর ডলার কেনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ পড়েছে, যা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ওই এমডি আরও উল্লেখ করেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেমিট্যান্সের জন্য ডলার কিনতে যে নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে অতিরিক্ত দামে ডলার কেনা হয়েছে। যখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তখন ব্যাংকগুলোর ওপর জরিমানা চাপানো হচ্ছে। এ পরিস্থিতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বিমুখী আচরণকে ইঙ্গিত করছে, যেখানে একদিকে একটি নিয়ম করা হচ্ছে, অন্যদিকে সেটি বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর ট্রেজারিপ্রধানরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ডলারের রেট বাড়ানোর কাজ করেন না। তাঁরা শুধু বৈশ্বিক বাজারের অবস্থান ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করেন। সুতরাং যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব নির্দেশনা দেয়, তখন এটি অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে, যেখানে ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হয় এবং সমাধান খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

ওই এমডি আরও জানান, এ সমস্যার সমাধান একটিই হতে পারে—কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি তাদের নির্দেশনা ও নীতিমালা আরও স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত করে; তবে ব্যাংকগুলো সুবিধা পাবে এবং বাজারের স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় থাকবে। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি পরিবর্তনের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর কার্যক্রমের প্রতি আরও সহানুভূতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, এক্সচেঞ্জ কোম্পানিগুলো ১২৪ থেকে ১২৫ টাকা ৬০ পয়সায় ডলার কিনছে। ফলে ব্যাংকগুলোকে তাদের কাছ থেকে স্বাভাবিকভাবে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, ডিসেম্বর মাসে প্রতিবারের মতো এবারও বেশি আমদানি বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে, যার কারণে ডলারের চাহিদা ও দাম বেড়েছে।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধান দাবি করেন, ব্যাংকের এমডিকে জরিমানা না করে ব্যক্তিগতভাবে শাস্তি দেওয়া উচিত। কারণ, এমডির অনুমতি ছাড়া ডলারের দাম বাড়ানো সম্ভব নয়। তাঁর মতে, ডলার ব্যবসার মাধ্যমে লাভ করা এবং বোর্ডের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য এমডি দায়ী। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জানিয়েছেন, ডলারের বাজারে অস্থিরতা নিয়ে তদন্তের জন্য বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে এবং ১৩ সন্দেহভাজন ব্যাংকের তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে শাস্তি বা জরিমানা সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত