Ajker Patrika

২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতিসহ বাজেট পাস, বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪, ১১: ৪৪
Thumbnail image

অর্থনৈতিক নানা সংকটের মধ্যেই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। গতকাল রোববার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে কণ্ঠভোটে এই বাজেট পাস হয়। নতুন বাজেট আজ থেকেই কার্যকর হচ্ছে।

বাজেট বাস্তবায়নে দেশি-বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতার মধ্যেও মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ অর্জন করার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে মুদ্রা ও রাজস্বনীতিতে সমন্বয় রেখে মূল্যস্ফীতি কমানো এবং  উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনই এই বাজেটের মূল লক্ষ্য।

বাজেট নিয়ে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন বাজেট বাস্তবায়নে মনোযোগ দিতে হবে। আমদানি নমনীয় করতে হবে। সুদের হারও আর বাড়তে দেওয়া ঠিক হবে না। প্রকল্পের মেয়াদ যেন পাঁচ-সাত বছর না বাড়ে। করনীতিকে আয়মুখী না রেখে উন্নয়নমুখী করতে হবে।’

নতুন বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আগেই অনুমোদিত হয়েছে। ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।

জাতীয় সংসদে গত ৬ জুন ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ স্লোগানে নতুন বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। মাসব্যাপী নানা আলোচনা-সমালোচনার পর সামান্য কিছু সংশোধনীর মধ্য দিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটটি পাস হয় গতকাল। এর আগে গত শনিবার পাস হয় অর্থবিল।

এবারের বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মোট ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন। এই মঞ্জুরি দাবিগুলো গতকাল সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়। এসব মঞ্জুরি দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে বিরোধী দলের ছয়জন সংসদ সদস্য মোট ২৫১টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়। এরপর সংসদ সদস্যরা হ্যাঁ সূচক কণ্ঠভোটে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২৪ পাসের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও অর্থমন্ত্রীসহ ২৩৬ এমপি বক্তব্য রাখেন। গত ১১ জুন থেকে আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা।

পাস হওয়া বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। ধনীদের করের প্রস্তাবিত হার ৩০ শতাংশ কার্যকর না করে আগের ২৫ শতাংশে বহাল রাখা হয়েছে। এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগও বহাল রাখা হয়েছে। অনেক দাবি সত্ত্বেও ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি। পুঁজিবাজারে ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা হলে গেইন ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। দাবি সত্ত্বেও তা বাতিল হয়নি। তবে হাই-টেক পার্ক ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে শুল্ক-করের প্রস্তাব থাকলেও তা আগের মতোই ছাড় দেওয়া হয়েছে।

নতুন বাজেটে আজ থেকে স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য ‘প্রত্যয়’ পেনশন স্কিম চালু করা হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে আরেকটি নতুন পেনশন কর্মসূচি চালু হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত