Ajker Patrika

সবুজ উন্নয়নে ব্যাংকগুলোর ঝোঁক

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
সবুজ উন্নয়নে ব্যাংকগুলোর ঝোঁক

একটা নীরব পরিবর্তন ঘটছে দেশের অর্থনীতিতে। এখন প্রবৃদ্ধির পথ তৈরি হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য আর টেকসই চিন্তার ওপর ভর করে। আর এই যাত্রায় সবুজ অর্থায়ন হয়ে উঠেছে নতুন চালিকাশক্তি। সরকার পরিবর্তনের পর এই খাতে বিনিয়োগের গতি অনেকটাই বেড়ে গেছে। মাত্র ছয় মাসেই এই খাতে এসেছে রেকর্ড ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা আগের তুলনায় প্রায় ৪৮ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সবুজ ও টেকসই খাতে মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ১১৫ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিনিয়োগ শুধু টাকার অঙ্ক নয়। এটা আসলে বদলে যাওয়া এক উন্নয়ন-ভাবনার ইঙ্গিত। যেখানে প্রবৃদ্ধি আর পরিবেশ একসঙ্গে এগোচ্ছে একটা নতুন ধারার দিকে।

এই বৃদ্ধি ঘটল কেন

সরকার পরিবর্তনের পর টেকসই খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগে নতুন আগ্রহ দেখা দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর নীতিমালা ও পুনঃ অর্থায়নের সুবিধা সেই আগ্রহকে আরও জোরদার করে। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক এই প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, ব্যাংকগুলো এখন সিএসআরের অর্থও এই খাতে ব্যবহার করছে, ফলে বিনিয়োগ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

এই বিনিয়োগ গেল কোথায়

সবচেয়ে বেশি অর্থ, ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এই টাকা মূলত টেকসই উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক খাতে খরচ হয়েছে। সবুজ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা, যা ব্যয় হয়েছে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো তৈরি, শিল্পকারখানার আধুনিকায়ন, কম কার্বন নির্গমন প্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর মতো প্রকল্পে।

এই প্রবণতা শুরু হলো কখন

সবুজ অর্থায়নের ভিত্তি গড়ে ওঠে মূলত ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন এবং নিরাপদ শিল্প গঠনে বাধ্য হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক একে একে নীতিমালা প্রণয়ন করে—২০১১ সালে পরিবেশগত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ২০১৪ সালে সবুজ অর্থায়নের ন্যূনতম লক্ষ্য, ২০১৬ সালে জলবায়ু তহবিল, ২০২৩ সালে সাসটেইনেবল ফিন্যান্স নীতি এবং রিপোর্টিং ফরম্যাট চালুর মধ্য দিয়ে এ খাতকে আরও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে তোলে।

ব্যাংক-ও-আর্থিক-প্রতিষ্ঠানের-জলবায়ু-ও-সবুজ-অর্থনীতিতে-বিনিয়োগ

কে করছে এই তদারকি

বাংলাদেশ ব্যাংক এই খাতের নিয়ম ও রূপরেখা ঠিক করে দিচ্ছে। তাদের নির্দেশনায় সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাসটেইনেবল ফিন্যান্স ইউনিট ও কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুনঃ অর্থায়ন, সিএসআরের অর্থ বরাদ্দ এবং প্রতিবেদন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এখন কী অবস্থা

ডিসেম্বরে এসে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ১১৫ কোটি টাকায়। অথচ গত জুনে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। এর আগে মার্চ প্রান্তিকে কিছুটা মন্দা দেখা গেলেও জুলাই থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে এই বিনিয়োগ। সেপ্টেম্বরে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ১২ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরের মধ্যে রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছায়।

কেন এই প্রবণতা গুরুত্বপূর্ণ

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) মতে, সবুজ অর্থনীতি কেবল দক্ষ নয়, ন্যায্যও হতে হবে। অর্থাৎ, কার্বন কমানো, সম্পদের দক্ষ ব্যবহার এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা অর্থনীতিই টেকসই বলে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি সেই লক্ষ্যেই এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত