Ajker Patrika

বাণিজ্য বন্ধের হুমকি ত্রিপুরার

  • বাংলাদেশিদের চিকিৎসা না দেওয়ার ঘোষণা কলকাতার জেএন রয় হাসপাতালের।
  • জরুরি স্বাস্থ্যগত কারণ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দিচ্ছে না ভারত।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন চলছে অভিযোগ করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের কথা ভাবছে। একই অভিযোগ তুলে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ও ত্রিপুরার আগরতলার দুটি হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে, তারা আর বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেবে না।

ভারতের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক হারে কমে গেছে। এ জন্য তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করছে।

ভারতের আসাম থেকে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা দ্য আসাম ট্রিবিউনের অনলাইনে এক খবরে জানানো হয়েছে, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের বিষয়ে তাঁরা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছেন। আগরতলা প্রেসক্লাবে গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মানিক সাহা। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে।’

এর আগে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিরোধীদলীয় নেতা বিজেপির সুভেন্দু অধিকারী বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বলেন, ‘হিন্দু সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে হামলা-নিপীড়ন বন্ধের কোনো আভাস নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর খড়্গ নেমে এসেছে।’

বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে মানিক সাহা সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেদিনই বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়েছেন, সেদিনই আমরা সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছি। আমি বিএসএফ কর্মকর্তা ও পুলিশের মহাপরিচালকের সঙ্গে কয়েকবার বসে ব্যক্তিগতভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার সীমান্তের নিরাপত্তা।’

এদিকে ভারতের স্থলবন্দর সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য আসাম ট্রিবিউন জানিয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। কয়লা, মাছ ও অন্যান্য পণ্যের আমদানি-রপ্তানি ব্যাপক হারে কমেছে। এখন শুধু অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাণিজ্য চলছে।

ভারতের অভিবাসন দপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশিদের আর আগের মতো ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। কেবল স্বাস্থ্যগত জরুরি পরিস্থিতির ক্ষেত্রে ভিসা দেওয়া হচ্ছে।

চিকিৎসা দেবে না দুটি হাসপাতাল

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নিপড়ীন চলছে অভিযোগ তুলে কলকাতার জেএন রয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, তারা আর বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেবে না। একই ঘোষণা দিয়েছে আগরতলার মাল্টি-স্পেশালিটি হাসপাতাল আইএলএস হাসপাতালও। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে খ্যাতনামা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল সাহা ফেসবুকে ঘোষণা দেন, বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননার প্রতিবাদে তিনি বাংলাদেশি রোগী দেখা বন্ধ করেছেন।

জেএন রয় হাসপাতালের কর্মকর্তা সুব্রাংশু ভক্ত বার্তা সংস্থা পিটিআইকে গত শুক্রবার বলেন, ‘বাংলাদেশিরা ভারতের জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করেছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আজ (শুক্রবার) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আর কোনো বাংলাদেশি রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হাসপাতালে ভর্তি করব না। এ সিদ্ধান্তের অন্যতম কারণ, বাংলাদেশিরা ভারতকে অপমান করেছে।’

সুব্রাংশু ভক্ত এ সময় বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে কলকাতার অন্যান্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতিও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পতাকাকে অসম্মানিত হতে দেখে আমরা বাংলাদেশিদের চিকিৎসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভারত তাদের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এরপরও আমরা এখন তাদের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব দেখতে পাচ্ছি। আমরা প্রত্যাশা করি, অন্যান্য হাসপাতালও আমাদের মতো একই পদক্ষেপ নেবে।’

এদিকে আগরতলার আইএলএস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, বাংলাদেশিদের ‘ভারতবিরোধী মনোভাব’ এবং হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের প্রতিবাদে বাংলাদেশিদের আর চিকিৎসা দেবে না। স্থানীয় একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশি নাগরিকদের সেবা বন্ধের দাবি তুলে গতকাল শনিবার বিক্ষোভ করার পর এই সিদ্ধান্ত জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আইএলএস হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার গৌতম হাজরিকা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশিদের জন্য চিকিৎসাসেবা বন্ধের দাবিকে পুরোপুরি সমর্থন করছি। আজ (শনিবার) থেকে আমাদের আখাউড়া চেকপোস্ট ও আইএলএস হাসপাতালের হেল্পডেস্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত