Ajker Patrika

সম্পদে ফুলে-ফেঁপে উঠছে মিলেনিয়াল প্রজন্ম

আপডেট : ১২ মে ২০২৪, ১৮: ৫১
সম্পদে ফুলে-ফেঁপে উঠছে মিলেনিয়াল প্রজন্ম

কয়েক দশকের স্থবিরতার পর তরুণ আমেরিকানদের সম্পদ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই তরুণেরা মিলেনিয়াল (যাদের জন্ম ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে) প্রজন্মের। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজউইক এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। 

সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেসের (সিএপি) তথ্যমতে, ৪০ বছরের কম বয়সী আমেরিকানরা (মিলেনিয়াল) করোনাভাইরাস মহামারির পরে সঞ্চিত সম্পদ, কর্মসংস্থানের হার এবং মজুরি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্য প্রজন্মকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। চার বছরে তাঁদের পরিবারের গড় সম্পদ ২০১৯ সাল থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। 

ফেডারেল রিজার্ভের তথ্য পর্যালোচনা করে সিএপি দেখেছে, মূল্যস্ফীতি বিবেচনা সত্ত্বেও এসব পরিবারের গড় সম্পদ ২০২৩ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে ২ লাখ ৫৯ হাজার ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০১৯ সালের একই সময়ে ১ লাখ ৭৪ হাজার ডলার থেকে ৪৯ শতাংশ বা ৮৫ হাজার ডলার বেশি। এর মধ্যে ধরা হয়েছে গড় সম্পদ, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, স্টক এবং রিয়েল এস্টেট। 

মিলেনিয়ালদের এই সম্পদ অর্জন অন্যান্য প্রজন্মের তুলনায় যথেষ্ট বেশি। দেখা গেছে, এই সময়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি বাদেও ৪০ থেকে ৫৪ বছর বয়সী পরিবারের গড় সম্পদ সাত শতাংশ কমেছে। অন্যত্র ৫৫ থেকে ৬৯ বছর বয়সীদের জন্য চার শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ৭০ বছর বা তার বেশি বয়সী অভিজ্ঞ পরিবারগুলো সম্পদ আবার ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির পরও তরুণ পরিবারের সম্পদ এত দ্রুত বৃদ্ধি ১৯৮৯ সালের পর আর কখনোই ঘটেনি। মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয় করা সত্ত্বেও অনূর্ধ্ব ৪০ বছর বয়সীদের সম্পদ প্রায় ৯০ হাজার ডলারের ঘর থেকে ১ লাখ ৯০ হাজারে দাঁড়িয়েছে গত ৩০ বছরে। 

২০০৮ সালে অর্থনৈতিক মন্দার সময় এটি ১ লাখ ৮০ হাজার ডলার থেকে ৯০ হাজারে নেমে আসে এবং ২০১০ সালের শেষ প্রান্তিকে ধীরে ধীরে তা ১ লাখ ৭৪ হাজার ডলারে দাঁড়ায়। গত এপ্রিলের শেষের দিকে প্রকাশিত সিএপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তরুণ পরিবারের দ্রুততার সঙ্গে এই ঐতিহাসিক সম্পদ বৃদ্ধি আর্থিক নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক। 

প্রতিবেদনটি মিলেনিয়াল এবং তাদের চেয়ে কম বয়সীদের জন্য আর্থিক উন্নতির ইঙ্গিত দিলেও ক্রিমিনাল ট্রেডিংয়ের মালিক বাজার বিশ্লেষক কেভিন হাফম্যান সতর্ক করে বলেছেন, ‘এই সমস্ত নতুন সম্পদ চিরস্থায়ী নয়। 

তিনি নিউজউইককে বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান সুদহার এবং মন্দার ফলে বাড়ির দামে এবং শেয়ার বাজারে অবনতি দেখা দেবে। ফলে এই যে এত লাভে আছেন আপনি, এর কিছুই থাকবে না। অন্যদিকে, ঋণ নিয়ে পড়াশোনা করা অনেক তরুণ এখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠছেন, তাঁদের পক্ষে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’ 

হাফম্যান বলেছেন, ‘বহুল ব্যবহৃত কথন ‘আমেরিকান স্বপ্ন’ (যেখানে সন্তানরা মা-বাবার চেয়ে বেশি ধনী হবে) এখনো নড়বড়ে বেড়ার ওপর রয়েছে। মিলেনিয়ালরা তাঁদের পিতামাতা বা দাদা-দাদির মতো ধনী হবে কি না—তা এখনই বলার সময় নয়। তবে কিছু ভালো লক্ষণ রয়েছে। তরুণ প্রজন্মের আর্থিক সাক্ষরতা এবং জনবান্ধব বাজেট সম্পর্কে গুরুত্ব সহকারে কথা বলার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু কাঠামোগত সমস্যাগুলো—যেমন ক্রমবর্ধমান আবাসন ব্যয় এবং স্থবির মজুরি কাটিয়ে উঠতে বাধা এখনো রয়েই গেছে।’ 

ইয়েল্ড ইনভেস্টিংয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফ্র্যাঙ্ক কার্টরাইট নিউজউইককে বলেছেন, ইতিবাচক প্রতিবেদন সত্ত্বেও আগের প্রজন্মের মতো সম্পদশালী হতে মিলেনিয়ালদের এখনো অনেক প্রতিকূল পাড়ি দিতে হবে। কেননা আগে প্রজন্ম অনেক অনুকূল অর্থনৈতিক অবস্থায় ছিল এবং তাঁদের খরচও কম ছিল। 

অতীত-বর্তমান বিশ্লেষণ করে কার্টরাইট বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগের মুখোমুখি হবে। এসবের মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন, যা তাঁদের সম্পদ অর্জনের সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করবে। 

ক্ষীণ আশার কথা জানিয়ে হাফম্যান সতর্ক করে বলেন, শুধু ব্যবস্থাগত সমস্যা সমাধান, আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক মন্দার জন্য প্রস্তুতির মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে, এই সম্পদ পরবর্তী প্রজন্মের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য আশীর্বাদ হয়ে থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত