Ajker Patrika

কৃষ্ণসাগরে শস্যের জাহাজে রুশ হামলা, গমের বাজার গরম 

আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৩, ২০: ৫৩
কৃষ্ণসাগরে শস্যের জাহাজে রুশ হামলা, গমের বাজার গরম 

কৃষ্ণসাগরে শস্যবহনকারী একটি কার্গো জাহাজে রুশ বাহিনী গুলি চালানোর আগাম বাজারে গমের দাম বেড়েছে। গত রোববার ইউক্রেনে যাওয়ার পথে ওই জাহাজ ঘিরে এই ঘটনা ওই অঞ্চলের শস্য সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে বলে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে এক প্রতিবেদনে ব্লুমবার্গ বলেছে, শুকনো শস্যবাহী জাহাজটি ইউক্রেনের ইজমাইল বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। তখন রুশ নৌটহল পরিদর্শনের জন্য জাহাজটিকে থামতে বলে। ক্রুরা নির্দেশ না মানায় তাদের রুশ নৌবাহিনী গুলি চালায়। পরে জাহাজটিকে গন্তব্যে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। 

তবে ওই জাহাজে কী ছিল বা আদৌ কিছু ছিল কিনা সেবিষয়ে তিনি কোনো কিছু বলেননি।
 
ইউক্রেনের বন্দরের পথে থাকা যে কোনো জাহাজকে ‘সম্ভাব্য সামরিক কার্গো’ হিসেবে নিয়ে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে রাশিয়া গত সপ্তাহেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। এই অঞ্চলে চলমান যুদ্ধের মধ্যে এই রুশ হুমকি নৌপরিবহনের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে বলে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

আজ সোমবার এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া যে কৃষ্ণসাগরে নৌপথের স্বাধীনতা ও বাণিজ্যক নৌপরিবহনের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে নাছোড়বান্দা, এ পদক্ষেপগুলো তার উদাহরণ।

ইউক্রেন বলছে, যে জাহাজটিতে গুলি চালানো হয়েছিল, সেটি ছিলো–দ্য সুকরু ওকান। এটি তুরস্কের মার্সিনভিত্তিক ওজি শিপিং লিমিটেড মালিকানাধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন বলে দেশটির শিপিং ডেটাবেজ ইকুয়াসিসে তালিকাভুক্ত।

এ ঘটনার বিষয়ে অবহিত একজন বলেন, আগের দিনই গ্রীসে ভূট্টা খালাস করে জাহাজটি শস্য নিতে ইজমাইলের দিকে যাচ্ছিল। এটি এখন রোমানিয়ার বন্দরে ভেড়ানো আছে।  
 
এদিকে শস্যের জাহাজের উপর গুলির ঘটনায় বিশ্ববাজারে গমের দামে বড় প্রভাব পড়েছে। আগাম বাজারে গমের দাম সর্বোচ্চ ১ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। একপর্যায়ে সেখান থেকে কমে ০ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হয়। অর্থাৎ এক বুশেল (প্রায় ৩৬ লিটার সমপরিমাণ শস্য) ৬ দশমিক ৫৫ ডলারে কেনাবেচার জন্য চুক্তি হয়।

জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্ততায় ইউক্রেনের খাদ্যশস্যবাহী জাহাজগুলোকে নিরাপদে চলাচলের অনুমতির বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনের সমুদ্র বন্দরগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যশস্য রপ্তানির জন্য ইজমাইলের মতো দানিয়ুব নদীর ছোট ছোট বন্দরগুলোও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।  
 
রোমানিয়ার অ্যাভালন শিপিংয়ের অপারেশনস ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ক্যাটেরিনা কোনোনেনকো। সুলিনা চ্যানেল দিয়ে এই কোম্পানির যেসব জাহাজ চলাচল করে, সেগুলো দেখভালের দায়িত্ব তাঁর। তিনি ব্লুমবার্গকে বলেন, জাহাজে গুলির ঘটনার পর ওই নৌপথে সোমবার নৌযান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। 

সপ্তাহখানেক আগে রুশ তেলের ট্যাংকারে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালায়। এর ফলে রুশ বন্দর থেকে পণ্য আসা নিয়ে আশংকা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও এবার গমের আগাম বাজার দর আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ কম। এর কারণ, এবার এই শস্যের বাম্পার ফলন হয়েছে।

রাবোব্যাংক বিশ্লেষক কার্লোস মেরা বলেন, ‘প্রায় দুই সপ্তাহ আগে হামলার পরও দুই পক্ষ থেকেই শস্য সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। রুশ রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার কারণে স্পট মার্কেট বা নিয়মিত বাজারে পণ্য সহজলভ্য হয়ে দাম কমে গেছে বলেও তিনি জানান।

২০২৩–২৪ মৌসুমে রাশিয়ার গম রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে বলে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ আভাস দিয়েছে। এর প্রাক্বলন অনুযায়ী, এবার রুশ রপ্তানি ৪ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন হবে। অর্থাৎ বিশ্বের গমের চাহিদার চার ভাগের একভাগ রাশিয়া থেকে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ