Ajker Patrika

অবহেলায় ক্ষতিগ্রস্ত চামড়া হারাচ্ছে ব্যবহারযোগ্যতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৫ জুন ২০২৫, ০৭: ৪৬
অবহেলায় ক্ষতিগ্রস্ত চামড়া হারাচ্ছে ব্যবহারযোগ্যতা
ফাইল ছবি

গত কোরবানির ঈদে ঢাকার হেমায়েতপুরের ট্যানারিগুলো যে চামড়া সংগ্রহ করেছে, তার ৯৮ শতাংশেই ছিল দাগ, আর ৬৮ শতাংশে ছিল ছোট-বড় কাটা। এমনকি ১৮ শতাংশ চামড়া পচে গেছে সম্পূর্ণভাবে। চামড়ার গুণগত মানহীনতার এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণায়, যা দেশের চামড়াশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর শঙ্কার জন্ম দিচ্ছে।

‘বাংলাদেশের চামড়া সরবরাহ শৃঙ্খল: কাঁচা চামড়ার মান ও মূল্য নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক গবেষণা ফলাফল গত সোমবার রাতে ঢাকা ক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করে সিপিডি। আয়োজনে সহায়তা করে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান লেদার বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এলএসবিপিসি)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান।

গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, কোরবানির সময় জবাই করা পশুর ২৩ শতাংশ চামড়া গরমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ১৮ শতাংশ পচে গেছে। দেরিতে লবণ দেওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। অথচ সরকার ঈদ উপলক্ষে ২০ কোটি টাকামূল্যের প্রায় ১১ হাজার ৫৭১ টন লবণ এতিমখানা, মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে সরবরাহ করেছিল, যা সময়মতো ব্যবহৃত হয়নি।

চামড়ার মানহীনতার বড় একটি কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অদক্ষ কসাই ও অনুপযুক্ত স্থান ব্যবহারের জন্য। জরিপে দেখা যায়, ৫২ শতাংশ গরু জবাই করা হয়েছে রাস্তায়, ২৬ শতাংশ খোলা মাঠে, ৮.৫ শতাংশ বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গায় এবং ৯ শতাংশ বাগানে। স্লটারহাউস ও সরকারনির্ধারিত স্থানে জবাই করা হয়েছে মাত্র ৪.৮ শতাংশ। ঢাকায় প্রায় ২০ লাখ গরু কোরবানি হলেও প্রশিক্ষিত কসাই ছিলেন মাত্র ১১ হাজার ৬০০ জন। এ সংকটের কারণেই পশু জবাই করার সময় চামড়া কাটা পড়ে, ছিঁড়ে যায় কিংবা গঠনগত ক্ষতি হয়, যা চামড়াকে করে তোলে অকেজো।

চামড়া সংরক্ষণের চিত্র আরও হতাশাজনক। কোরবানিদাতাদের ৪৬ শতাংশ পশু জবাইয়ের পর চামড়া খোলা স্থানে ফেলে রেখেছিলেন। মাদ্রাসা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মধ্যে যথাক্রমে ৩৬ ও ১৪ শতাংশ চামড়া দীর্ঘ সময় খোলা জায়গায় রাখেন। এতে বৃষ্টি, তাপপ্রবাহ ও জীবাণুর কারণে চামড়ার ব্যাপক ক্ষতি হয়। চামড়ায় তখন আর শিল্পকার্য উপযোগী মান থাকে না।

গবেষণায় উঠে আসে, কোরবানিদাতাদের কেউ নিজের হাতে চামড়ায় লবণ দেননি। ৮৩ শতাংশ মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং ৩৭ শতাংশ মাদ্রাসা চামড়া লবণ না দিয়ে বিক্রি করেছে। অথচ চামড়ায় সময়মতো লবণ প্রয়োগই মান ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, লবণযুক্ত ও লবণবিহীন—উভয় ধরনের দাম নির্ধারণ করা হলে মানুষ চামড়ায় লবণ দেওয়ায় উৎসাহিত হবে। পাশাপাশি কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ অব্যাহত রাখা, চামড়া শিল্পনগরীতে বিদেশিদের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির আহ্বান জানান তিনি।

জরিপে দেখা যায়, ৮২ শতাংশ পশু কোরবানি হয়েছে মাদ্রাসা ও মসজিদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে, যাঁদের অধিকাংশই প্রশিক্ষণহীন। কোরবানিদাতারা নিজেরাই জবাই করেছেন ১৩ শতাংশের বেশি পশু। কেবল ৪.৮ শতাংশ পশুই জবাই হয়েছে পেশাদার কসাইয়ের মাধ্যমে। ফলে চামড়ার মানের অবনতির একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অবহেলা ও অযোগ্যতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত