Ajker Patrika

দেশের ব্যবসায়ীদের নজর এখন ওয়াশিংটনে

  • দুই দেশের ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক শুরু।
  • মার্কিন শুল্ক কমার প্রত্যাশা।
  • আলোচনায় রয়েছে শঙ্কার ছায়াও।
শাহ আলম খান, ঢাকা 
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯: ৪৮
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশাধিকার নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশের রপ্তানিখাত এক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। অর্থ–বাণিজ্য খাত ও রাজনীতিসহ অনেক মহলেরই চোখ এখন নিবদ্ধ ওয়াশিংটনের দিকে। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল বুধবার মার্কিন রাজধানীতে সেদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধি দফতরে (ইউএসটিআর) মুখোমুখি আলোচনা শুরু করেছেন দুদেশের কর্মকর্তারা। কয়েকদিন ধরে এ আলোচনা চলবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন—বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রশাসন। চিঠিতে ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, এ নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর অবস্থান থেকে সরতে হলে বাংলাদেশকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উন্নয়নে নমনীয় হওয়ার বার্তা দিতে হবে।

বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থানে অস্বস্তিতে পড়েছে বাংলাদেশ সরকার। দেশের ব্যবসায়ী মহলে দেখা দিয়েছে তীব্র উদ্বেগ। তৈরি পোশাকসহ প্রধান রপ্তানি খাতগুলোতে আশঙ্কা ছড়িয়েছে বৈদেশিক ক্রয়াদেশ হারানো, প্রতিযোগী সক্ষমতা এবং উৎপাদন হ্রাসের।

স্থানীয় অর্থনীতিবিদদের অনেকেই অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে অন্যায্য দাবি করে বলেছেন, এটা আসলে এক ধরনের চাপে রাখার কৌশল। এর মাধ্যমে একতরফা মার্কিন সুবিধা নেওয়ার পথ প্রশস্ত করে রাখা হয়েছে।

গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় বহুল প্রতীক্ষিত ‘সিঙ্গেল কান্ট্রি ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠকে মুখোমুখি বসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। এতে বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, যিনি আগে থেকেই ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকরাও আলোচনায় যুক্ত ছিলেন। গতকাল গিয়ে সেই দলে যোগ দেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।

দেশ থেকে ভার্চুয়ালি এ বৈঠকে যোগ দেন গত কিছুদিন ওয়াশিংটনে কাটানো জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও।

মনে করা হচ্ছে এই ‘ওয়ান টু ওয়ান বৈঠকের ফলাফল শুধু শুল্কের হার নয়, বরং অদূর ভবিষ্যতের জন্য হলেও বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে। বিশেষ করে এমন সময়ে, যখন বৈশ্বিক বাণিজ্য রাজনীতিতে নতুন শক্তির বিন্যাস শুরু হয়ে গেছে।

গতকাল রাতে এ খবর লেখা পর্যন্ত ওয়াশিংটনের একাধিক সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছে, ওয়ান টু ওয়ান বৈঠকটি তিন দিনে গড়াতে পারে। গতকাল প্রথম দিনের বৈঠকটি স্থানীয় সময় সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে বেলা ৪টা পর্যন্ত চলার কথা। দ্বিতীয় দিনের আলোচনাও দীর্ঘ হবে।

বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে চায়, ট্রাম্প প্রশাসনের এই শুল্ক আরোপ উদ্যোগ একতরফা, বৈষম্যমূলক এবং ‘বাণিজ্য প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা’-এর গণ্ডি পেরিয়ে অর্থনৈতিক নিপীড়নের পর্যায়ে পড়ে। সরকারের দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কয়েকটি বিষয় জোর দিয়ে তুলে ধরা হবে। সেখানে বলা হবে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতি মাত্র ৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভিয়েতনামের ঘাটতি ১২৫ বিলিয়ন—তবু তাদের শুল্ক কমেছে ২৬% পর্যন্ত। সেখানে বাংলাদেশের ৩৫% অতিরিক্ত শুল্ক অগ্রহণযোগ্য। এছাড়া বাংলাদেশ এখনো এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ)। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে বাড়তি ছাড় পাওয়া উচিত।

এই বাস্তবতায় সরকারের করণীয় কৌশল উল্লেখ করে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে সরকার আগে থেকেই রোডম্যাপ তৈরি করে রেখেছে। সেই অনুযায়ী ইতোমধ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি, গম, তুলা ,উড়োজাহাজ ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে—যা পারস্পরিক বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রতিনিধিত্ব করে। তাছাড়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বিদ্যমান শুল্ক-অশুল্ক বাঁধা আমরা আমাদের স্বার্থেই কমিয়ে আনার সমন্বিত পদক্ষেপে রয়েছি। যা অচিরেই দৃশ্যমান হবে। এর বাইরে দেশীয় উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উৎপাদন খরচ কমিয়ে রপ্তানিতে লিডটাইম কমিয়ে আনা হবে। এজন্য সামগ্রিক আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়াটি সিঙ্গেল উইন্ডোতে সারার কাজ ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত