Ajker Patrika

বদল সামান্য, সবই আগের মতো

  • বাজেটের আকার (কোটি টাকায়) ৭,৯০,০০০
  • রাজস্ব আয় ৫,৬৪,০০০
  • বাজেটে ঘাটতি ২,২৬,০০০
শাহ আলম খান, ঢাকা 
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৫, ০৯: ৫৫
বদল সামান্য, সবই আগের মতো

দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতি সামলাতে মাত্র কয়েক মাস সময় পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দু-একটি খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। গন্তব্য তাই এখনো অনেক দূর। কঠিন কাজটি করতে সামনে আছে নানা চ্যালেঞ্জ।

সেই বাস্তবতা মেনে নিয়ে আর মনে করিয়ে দিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেট দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল সোমবার তিনি ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আমরা এগোচ্ছি।’

এই একটি মন্তব্যেই যেন উঠে আসে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় চিত্র—কীভাবে এক গভীর সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই চলছে, আর কেন এই যাত্রাপথ এখনো দীর্ঘ।

তবে এই কঠিন বাস্তবতা মোকাবিলায় অর্থ উপদেষ্টা বাজেট যেভাবে সাজালেন, তার খুব প্রশংসা করতে পারছেন না অর্থনীতিবিদ, বিশ্লেষক এবং রাজনৈতিক দলগুলো। তারা বলছে, এই বাজেট যেন আগের সরকারেরই ধারাবাহিকতা। এতে সেই অর্থে পরিবর্তন আছে খুবই সামান্য। শুধু এই খাতে কিছু কম, ওই খাতে কিছু বেশি।

তবে বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, সংকটের দিকগুলোতে সরকারের চোখ খোলা আছে। তিনি জানান, সরকার কাজ করছে তিনটি ‘শূন্য’ লক্ষ্য নিয়ে—শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বন। লক্ষ্য—এমন একটি সমাজ গড়া, যেখানে সবাই সুন্দর জীবন পাবে এবং বৈষম্য থেকে মুক্ত থাকবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

তবে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাজেটের রাজস্ব পদক্ষেপকে ‘সাহসী’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, এবার আয়কর অব্যাহতির ক্ষেত্রে যাদের সাধারণত ধরা যায় না, তাদেরও করের আওতায় আনার চেষ্টা করা হয়েছে। ভ্যাট অব্যাহতিও ব্যাপকভাবে কমানো হয়েছে। অন্যদিকে, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমদানি প্রতিযোগিতা মোকাবিলায় যেভাবে উদ্যোক্তারা আগে শুল্ক-ভ্যাটের মাধ্যমে সুরক্ষা পেতেন, তা-ও কমানো হয়েছে। ফলে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সরকার কিছু কঠিন কিন্তু স্পষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, দেশের উদ্যোক্তারা এসব পরিবর্তনে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান।

সবকিছু মিলিয়ে এখনো পক্ষাঘাতগ্রস্তই বলা যায় দেশের অর্থনীতিকে। সরকারের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার জায়গা এখনো মূল্যস্ফীতি; যা কিছুটা কমলেও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক চাপ আর বাজারভিত্তিক ডলার বিনিময় হারের প্রভাব নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন অনিশ্চয়তা।

রেমিট্যান্স ছাড়া প্রায় সব অর্থনৈতিক সূচকই দুর্বল। কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না, বিনিয়োগে নেই আস্থা। আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতিও অনুকূল নয়। সাধারণ মানুষের আয় বাড়ছে না, অথচ ব্যয় লাগামহীন। দেশের ৮০ শতাংশ সম্পদ মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের হাতে। ফলে প্রবৃদ্ধির সুফলও পৌঁছায় না সবার কাছে। আর এখন তো সেই প্রবৃদ্ধিও নিম্নমুখী।

চলমান বাস্তবতার প্রতিফলনেই এবারের বাজেট কিছুটা ভিন্ন ধাঁচের। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রস্তাবিত বাজেট আগের বছরের তুলনায় ছোট; এবং প্রবৃদ্ধি নয়, এবার জোর দেওয়া হয়েছে মানুষের সামগ্রিক কল্যাণে। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব—জীবিকার নিরাপত্তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, সুশাসন, কর্মসংস্থান ও নাগরিক সুবিধা—এই বাজেটের কেন্দ্রে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ-সুযোগ সামাল দেওয়ার প্রস্তুতির কথাও এসেছে বাজেটে। পাশাপাশি জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ভেঙে পড়া নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারকেই দেওয়া হয়েছে অগ্রাধিকার।

তাই এবারের বাজেট শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, বরং এটি সরকারের জন্য একধরনের কৌশলগত রূপরেখা। মূল লক্ষ্য—সংযমী ব্যয়, কাঠামোগত সংস্কার এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। সরকার চাইছে সাম্প্রতিক চাপ মোকাবিলা করে, আইএমএফের প্রতিশ্রুতি পালন করে এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার চালিয়ে একটি টেকসই ও স্থিতিশীল ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরি করতে।

এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম এবং দেশের ৫৫তম বাজেট। ৮৮ পৃষ্ঠার বক্তব্যে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ব্যয় পরিকল্পনার মাধ্যমে সংকটময় অর্থনীতি থেকে উত্তরণ এবং জনজীবনে স্বস্তি ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে তিনি ব্যবসা এবং সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি চাপের ইঙ্গিতও দিয়েছেন। মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য থাকলেও তার বাস্তবায়ন কৌশল ছিল খুবই সাধারণ ও পুরোনো ধারার। আয় বাড়াতে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের কথা বলা হলেও সার্বিক কর্মসংস্থান বা বিনিয়োগে গতি আনতে বড় কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। করমুক্ত আয়সীমাও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে ভবিষ্যৎ সরকারের বিবেচনায় ছেড়ে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মাদ আবদুল মজিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিশেষ সময়ে বিশেষ সরকার বিশেষ বাজেট দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নিজস্ব কোনো অ্যাজেন্ডা নেই। এ জন্য তারা অসুস্থ অর্থনীতিকে সুস্থ ধারায় ফেরাতে বাজেট দিয়েছে।

কালোটাকা ও অপ্রদর্শিত অর্থের বিষয়ে হঠাৎ কড়া অবস্থানের আভাস মিললেও বাজেটে আগের মতোই আবাসনসহ কয়েকটি খাতে এসব অর্থ ব্যবহারের সুযোগ বহাল রাখা হয়েছে। স্বচ্ছতা নিশ্চিতে জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধন বাজারমূল্য অনুযায়ী নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হলেও এতে করহার কমানোর কথা বলা হয়েছে, যা খাতটিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং কালোটাকার প্রবাহ বাড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে, বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা বা জিডিপির ৩.৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যার বড় অংশ ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা—তোলা হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকেই নেওয়া হবে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। এতে বিনিয়োগ সংকোচন ও সুদহার বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা অব্যাহত থাকায় বছরে সুদ-আসলে সরকারের ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা।

বাজেট ছোট করা হলেও সরকারের পরিচালন ব্যয় আগের তুলনায় বেড়েছে। পরিচালন ব্যয়ের ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সামাজিক সুরক্ষা ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, সুদ পরিশোধ খাতে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি, ভর্তুকি ৮৯ হাজার ১৬২ কোটি, বেতন-ভাতায় ৯৭ হাজার কোটি এবং অন্যান্য খাতে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।

বাজেটে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সফল যুব উদ্যোক্তাদের ঋণসীমা বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, পাশাপাশি তরুণদের জন্য প্রথমবারের মতো ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব এসেছে। একই উদ্দেশ্যে ‘তারুণ্যের উৎসব’ আয়োজনে আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্পসহ ৪০৫ কোটি টাকার আলাদা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিজ্ঞানভিত্তিক ও কর্মমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষায় ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি, মাধ্যমিক-উচ্চশিক্ষায় ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসাশিক্ষায় ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি এবং কৃষি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা, টিকাদান ও সামাজিক সুরক্ষা জোরদারেও বরাদ্দ বেড়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় ভাতার পরিমাণ এবং উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ বিভিন্ন ভাতা মাসিক ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে মাথাপিছু সহায়তা বাড়ানো হয়েছে। স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় ৫৭ লাখ পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মেয়াদ ছয় মাসে উন্নীত করারও প্রস্তাব রয়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগে গতি আনতে বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি থেকে প্রকৃত বিনিয়োগে রূপান্তরের জন্য একটি ট্র্যাকিং সিস্টেম চালুর কথা বলা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া শুল্ককাঠামোয় পরিবর্তন এনে স্থানীয় শিল্প সুরক্ষা ও আমদানিনির্ভর পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ থাকলেও এতে কিছু গোষ্ঠীর সুবিধা এবং বাজারে মূল্য অস্থিরতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিপিডির মতে, বাজেটটি অন্তর্বর্তী এবং সংযত ধারায় প্রণয়ন করা হলেও বাস্তবায়ন নির্ভর করবে অর্থনীতির গতি ও প্রবৃদ্ধির বাস্তবতায়।

যেসব খাতে করের চাপ বাড়ছে

কর আদায়ে চাপ বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন খাতে। ‘এম এস প্রোডাক্ট’ উৎপাদনে সুনির্দিষ্ট কর প্রায় ২০% বাড়ানো হয়েছে। নির্মাণসেবায় ভ্যাট ৭.৫% থেকে বাড়িয়ে ১০%, অনলাইন পণ্য বিক্রয়ের কমিশনে ভ্যাট ৫% থেকে ১৫%, কটন সুতা ও কৃত্রিম আঁশের ইয়ার্ন উৎপাদনে সুনির্দিষ্ট কর ৩ টাকা থেকে ৫ টাকা, প্লাস্টিক টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, টয়লেট্রিজে ভ্যাট ৭.৫% থেকে ১৫%, ব্লেড উৎপাদনে ভ্যাট ৫% থেকে ৭.৫% সেলফ কপি ও ডুপ্লেক্স বোর্ডে ভ্যাট ৭.৫% থেকে ১৫% করা হয়েছে। এ ছাড়া ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ১০% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

ভ্যাট অব্যাহতি: কিছু স্বস্তি, কিছু ধাক্কা

ভোক্তাদের স্বস্তির জন্য কিছু পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যেমন ব্যাংকে ১ লাখ টাকার স্থলে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক থাকবে না। এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি, স্যানিটারি ন্যাপকিন, তরল দুধ, বলপয়েন্ট, ২২ ইঞ্চির বদলে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটরের উৎপাদন ও ব্যবসা, আইসক্রিমের সম্পূরক শুল্ক ১০% থেকে কমিয়ে ৫% করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লীবলিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বুধবার সিইসির তফসিল ঘোষণা রেকর্ড হবে, বিটিভি–বেতারকে ইসির চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

একীভূত ৫ ব্যাংকের গ্রাহকদের অর্থ ফেরত: নির্দেশনা না থাকায় অনিশ্চয়তা

  • প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়নি, দুই লাখ টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহক।
  • কোন মানদণ্ডে টাকা দেবে, সেই নির্দেশনা প্রস্তুত করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
  • গ্রাহকপ্রতি দুই লাখ ফেরত দিতেই লাগবে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
একীভূত ৫ ব্যাংকের গ্রাহকদের অর্থ ফেরত: নির্দেশনা না থাকায় অনিশ্চয়তা

আগাম ঘোষণা দিয়েও একীভূত প্রক্রিয়ায় থাকা কোনো ব্যাংকই আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকও এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় গ্রাহকের সুদসহ সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া গত সোমবার পর্যন্ত শুরু করা সম্ভব হয়নি। চলতি সপ্তাহের বাকি কার্যদিবসেও এ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক আগে থেকেই শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত পাঁচ দুর্বল ব্যাংক নিয়ে গঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকদের ৭ ডিসেম্বর থেকে নির্দিষ্ট সিলিং অনুযায়ী টাকা তোলার অনুমতি দেওয়া হবে বলে প্রচারণা চালিয়েছিল। একই তথ্য ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকও তাদের গ্রাহকদের জানায়। কিন্তু ঘোষিত সময় পেরিয়ে গেলেও ব্যাংকগুলো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি; কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাপত্র এখনো প্রস্তুত হয়নি। এই নির্দেশনা ছাড়া ব্যাংকগুলোর পক্ষে আমানতের টাকা ছাড় করার সুযোগ নেই।

দায়িত্বশীলরা জানান, যেসব গ্রাহকের হিসাবে সুদসহ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত রয়েছে, তাঁরা পুরো টাকা তুলতে পারবেন। দুই লাখ টাকার বেশি আমানত থাকলেও সর্বোচ্চ দুই লাখ তোলার সুযোগ থাকবে। তবে একজন গ্রাহকের একাধিক হিসাব থাকলেও শুধু একটি হিসাবের বিপরীতে টাকা তোলা যাবে এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে হিসাব বৈধভাবে খোলা থাকতে হবে। যাঁদের আমানতের বিপরীতে ঋণ রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে আগে ঋণ সমন্বয় করতে হবে; সুদের হারও নতুনভাবে যোগ হবে।

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য গ্রাহকদের দুই লাখ টাকা ফেরত দিতে প্রয়োজন হবে প্রায় ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা গভর্নরের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে নির্দেশনা দিতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে। তবে শুধু দুই লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার ঘোষণায় ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা।

এদিকে ঘোষণা শোনার পর ৭ ডিসেম্বর থেকেই গ্রাহকেরা বিভিন্ন শাখায় ভিড় করলেও কেউ টাকা পাননি। শাহজাহানপুরের শিক্ষক শেফালী আক্তার জানান, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইউনিয়ন ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় গিয়ে এক টাকাও পাননি; এর আগে তাঁর মাত্র ৫ হাজার টাকার চেকও বারবার বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ব্যবসায়ী মনির হোসেনও দীর্ঘদিন ধরে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে সঞ্চয়ের টাকা তুলতে ব্যর্থ। একই অভিজ্ঞতার কথা জানান এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক ও টিকাটুলির বাসিন্দা আফিয়া মিমি।

মতিঝিলের সেনা কল্যাণ ভবনে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে সরকার দিয়েছে ২০ হাজার কোটি এবং আমানত বিমা তহবিল থেকে আসবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। ইতিমধ্যে সরকারি অংশ ছাড় করা হয়েছে।

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া বলেন, নতুন ব্যাংকের লক্ষ্য আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, দুই লাখ টাকা ফেরত শিগগির শুরু হবে; ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ালে সবার টাকাও পরিশোধ করা হবে, তবে এতে সময় লাগবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লীবলিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বুধবার সিইসির তফসিল ঘোষণা রেকর্ড হবে, বিটিভি–বেতারকে ইসির চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকের টাকা ফেরতে নতুন আশা দিলেন গভর্নর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ফাইল ছবি

একীভূত হওয়া পাঁচ ব্যাংক নিয়ে গঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতি’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এই নতুন বার্তা দেন।

গভর্নর বলেন, একীভূত পাঁচ ব্যাংকের সংযুক্তির কাজ এগোচ্ছে এবং ডিপোজিট গ্যারান্টির আওতায় সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা প্রথম ধাপে ফেরত দেওয়া হবে। প্রাথমিক মূল্যায়ন অনুযায়ী নবগঠিত ব্যাংকগুলো প্রথম বা দ্বিতীয় বছরের মধ্যেই লাভজনক অবস্থানে ফিরতে সক্ষম হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এর আগে গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে টাকা ফেরত না পাওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেন সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকেরা।

তাঁরা জানান, এক মাস থেকে দুই মাস, তারপর ছয় মাস—এভাবে প্রতিশ্রুতির মেয়াদ বাড়তে বাড়তে দেড় বছর পার হয়ে গেছে; কিন্তু ব্যাংক থেকে জমা রাখা অর্থের ১ টাকাও তাঁরা তুলতে পারেননি। এখন গভর্নর ‘এক সপ্তাহের’ নতুন প্রতিশ্রুতি দিলেও সেটি কবে বাস্তবে কার্যকর হবে—তা নিয়েও তাঁরা গভীর অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেন। গ্রাহকদের দাবি, অবিলম্বে আমানত ফেরত দেওয়ার নির্ভরযোগ্য ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লীবলিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বুধবার সিইসির তফসিল ঘোষণা রেকর্ড হবে, বিটিভি–বেতারকে ইসির চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংক পরিচালনা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংক পরিচালনা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংক পরিচালনা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম জুবায়দুর রহমান সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, এফসিএ, এফসিএস; রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম মাসুদ রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আবদুল জলিল, ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. ওমর ফারুক খান, শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদ এবং কোম্পানি সেক্রেটারি মো. হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লীবলিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বুধবার সিইসির তফসিল ঘোষণা রেকর্ড হবে, বিটিভি–বেতারকে ইসির চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রিজার্ভ চুরি: ৯১ বারের মতো পেছাল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২৪
রিজার্ভ চুরি: ৯১ বারের মতো পেছাল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ৯১ বারের মতো পিছিয়েছে। নতুন তারিখ আগামী ১৩ জানুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন দিন ধার্য করেন।

আজ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রতিবেদন দাখিল না করায় আদালত নতুন তারিখ ধার্য করেন।

২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। পরে ওই টাকা ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকে পাঠানো হয়। দেশের অভ্যন্তরে কোনো একটি চক্রের সহায়তায় হ্যাকার গ্রুপ রিজার্ভের অর্থ পাচার করেছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রিজার্ভের অর্থ চুরির ওই ঘটনায় একই বছরের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মামলা করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪-সহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন-২০০৬-এর ৫৪ ও ৩৭৯ ধারায় মামলাটি করা হয়। কিন্তু নয় বছরেও রিজার্ভে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লীবলিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বুধবার সিইসির তফসিল ঘোষণা রেকর্ড হবে, বিটিভি–বেতারকে ইসির চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত