রেজাউর রহিম

রপ্তানি শুরুর পর চার দশক কেটে গেলেও এখনো বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কাঠামোগত দিক থেকে দৃঢ় ভিত তৈরি করতে পারেনি। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত হলেও কাঁচামালের জন্য এ শিল্পকে বহুলাংশেই অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আর এই নির্ভরতা মুখ্যত চীনকেন্দ্রিক। পোশাক রপ্তানির বাজারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এ দেশই কাঁচামাল আমদানির প্রধান উৎস হওয়ায় এ খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এ ক্ষেত্রে কাঁচামালের নিজস্ব উৎস তৈরি করা না গেলে সামনে বিপদে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত শতকের আশির দশকে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হয়। বর্তমানে এই তৈরি পোশাক শিল্পই দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস। মোট বার্ষিক রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশই আসছে পোশাক রপ্তানি থেকে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে আয় করেছে ৩ হাজার ৮৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগে বছরের তুলনায় প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বা সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সারা বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান।
রপ্তানি বাজারের এই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সূত্রে জানা গেছে, দেশের পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য থেকে শুরু করে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, এমনকি নিত্যব্যবহার্য নানা পণ্যের বড় আমদানি উৎস চীন। দেশের পোশাক শিল্পের ওভেন খাতের প্রায় ৮০ শতাংশ বস্ত্র চীন থেকে আমদানি করা হয়। আর নিট পোশাকের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচামাল এবং প্রায় ৮০ শতাংশ রাসায়নিক ও এক্সেসরিজ চীন থেকে আমদানি হয়।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে এককভাবে চীন থেকেই এসেছে ১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যার বেশির ভাগই পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি।
এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার কাঁচামাল আমদানির জন্য বাংলাদেশ যে চীনের বিকল্প খুঁজবে, স্বল্প মেয়াদে সে সুযোগও কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বল্প সময়ে এবং অপেক্ষাকৃত কম দামে চীনের মতো বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা বেশির ভাগ দেশের নেই। কিন্তু এই অতিনির্ভরতার কারণে যেকোনো কারণে তুলা, সুতাসহ বিভিন্ন মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি ব্যাহত হলে দেশের তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে উভয়সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে হলে কাঁচামালে অন্তত একটা মাত্রা পর্যন্ত স্বয়ংসম্পূর্ণতা জরুরি। কিন্তু চার দশকেও সেই অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ইত্যাদি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ থেকে এখনো পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। এই নির্ভরশীলতা ভবিষ্যতে এ খাতকে সংকটের মুখে ফেলতে পারে।
পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় টিকতে এবং উৎপাদন খরচ কমাতে চীনের ওপর নির্ভরশীলতার বড় কারণ সাশ্রয়ী মূল্য। চীন ছাড়া অন্য যেকোনো দেশ থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক বেশি হয়। আর রপ্তানি বাজার ধরতে হলে উৎপাদন ব্যয় কমানোর কোনো বিকল্প নেই। ফলে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকেরা চীন থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আনতে অনেকটা বাধ্য হন।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য রেখে জমি স্বল্পতার কারণে শিল্প খাতের জন্য তুলা উৎপাদন সম্ভব নয়। এটিই সুতা ও বস্ত্রের জন্য আমদানি নির্ভরতার কারণ। পোশাক রপ্তানিতে প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভারতের ওপর নির্ভরশীলতার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতের রপ্তানিকারকেরা তাদের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে দেশ থেকে কম দামে কাঁচামাল আনতে পারবে, সে দেশের দিকেই ঝুঁকবে—এটাই স্বাভাবিক। তবে শিল্পের কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকার কাজ করছে।’
এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ
রয়েছে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি। স্বল্পোন্নত বা এলডিসি দেশের তালিকা থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বেরিয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে। যদিও এই তালিকা থেকে পুরোপুরি বের হতে বাংলাদেশের ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই উত্তরণ বেশ কিছু সুবিধাও হারানোর শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষত এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, তা আর পাওয়া যাবে না। যদিও ইইউ ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়ার কথা বলছে। তবে তা তারা দেবে বিদ্যমান জিএসপি সুবিধার আওতায়। ২০২৩ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় ঢুকতে না পারলে আর মাত্র ৭ বছর এই সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।
জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে বেশ কয়েকটি শর্ত পরিপালন করতে হবে। শর্তের শুরুতেই রয়েছে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক পূরণের বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি বাংলাদেশকে ভাবাচ্ছে, তা হলো ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানি ধরে রাখতে স্থানীয় উৎস থেকে সংগৃহীত সুতা ও কাঁচামাল থেকে বস্ত্র তৈরি এবং তা দিয়ে পোশাক তৈরি করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ ব্যাপারে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে এবং সামনের দিনগুলোতে বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পণ্য উৎপাদনে আমাদের অতি দ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। এ জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের জন্য চীনসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। না হলে বিশ্ববাজারে আমাদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণই হতে না পারি, তাহলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে কীভাবে আমরা উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হব? আর শিল্পের কাঁচামালের জন্য নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নও করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে সরকারি নীতি সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকও একই মত দিলেন। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিকল্প নেই। ইইউ ও যুক্তরাজ্যের বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানির ক্ষেত্রে জিএসপি প্লাসের অন্য শর্তের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরির মতো শর্ত থাকছে। এ জন্য রপ্তানি পণ্যের কাঁচামালের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। আর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতা দেশের অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক নয়। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হলেও বর্তমান সক্ষমতা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে চীনেও বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব।
দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ওপর জোর
অর্থনৈতিক গতিশীলতা, কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরালো করার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, নতুন রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে এ উদ্যোগ গ্রহণ এই মুহূর্তে জরুরি। এ জন্য ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, চিলির মতো লাতিন আমেরিকার দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি ইউরোপের আরেক বড় দেশ রাশিয়ার বাজারে পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে চীনের বাজারের দিকেও তাকানো যেতে পারে। চীন থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ আমদানি হয়, সে পরিমাণে রপ্তানি হয় না। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তালিকায় চীন রয়েছে ১৫ তম অবস্থানে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া গেলে চীনের বাজারেও ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। চীন ২০২০ সালের জুলাই থেকে ট্যারিফ লাইনের আওতায় ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা দিয়েছে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, চীনে বিনা শুল্কে রপ্তানির এই সুযোগ দেশটির সঙ্গে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিরও সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, চীন ক্রমেই কম দামের পোশাক তৈরির চেয়ে বেশি দামের পোশাক তৈরি ও রপ্তানির দিকে ঝুঁকছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, রপ্তানির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির প্রচেষ্টার পাশাপাশি এসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ওপরও আমাদের জোর দিতে হবে।
এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তীকালে বৈদেশিক বাণিজ্যে অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বিষয়টিও বিবেচনা করছে সরকার। এ ছাড়া চীন এরই মধ্যে এফটিএ করার বিষয়ে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই) এ বিষয়ে পর্যালোচনা করছে।
এরই মধ্যে এফটিএর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু দেশ ও বাণিজ্য জোটের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এসব দেশের মধ্যে চীন ছাড়াও রয়েছে নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ আসিয়ান জোটভুক্ত দেশ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ও দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য জোট মার্কাসুর। এফটিএর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) বিষয়টি নিয়েও কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী বিশ্ব বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রপ্তানি শুরুর পর চার দশক কেটে গেলেও এখনো বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কাঠামোগত দিক থেকে দৃঢ় ভিত তৈরি করতে পারেনি। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত হলেও কাঁচামালের জন্য এ শিল্পকে বহুলাংশেই অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আর এই নির্ভরতা মুখ্যত চীনকেন্দ্রিক। পোশাক রপ্তানির বাজারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এ দেশই কাঁচামাল আমদানির প্রধান উৎস হওয়ায় এ খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এ ক্ষেত্রে কাঁচামালের নিজস্ব উৎস তৈরি করা না গেলে সামনে বিপদে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত শতকের আশির দশকে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হয়। বর্তমানে এই তৈরি পোশাক শিল্পই দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস। মোট বার্ষিক রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশই আসছে পোশাক রপ্তানি থেকে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে আয় করেছে ৩ হাজার ৮৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগে বছরের তুলনায় প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বা সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সারা বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান।
রপ্তানি বাজারের এই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সূত্রে জানা গেছে, দেশের পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য থেকে শুরু করে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, এমনকি নিত্যব্যবহার্য নানা পণ্যের বড় আমদানি উৎস চীন। দেশের পোশাক শিল্পের ওভেন খাতের প্রায় ৮০ শতাংশ বস্ত্র চীন থেকে আমদানি করা হয়। আর নিট পোশাকের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচামাল এবং প্রায় ৮০ শতাংশ রাসায়নিক ও এক্সেসরিজ চীন থেকে আমদানি হয়।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে এককভাবে চীন থেকেই এসেছে ১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যার বেশির ভাগই পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি।
এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার কাঁচামাল আমদানির জন্য বাংলাদেশ যে চীনের বিকল্প খুঁজবে, স্বল্প মেয়াদে সে সুযোগও কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বল্প সময়ে এবং অপেক্ষাকৃত কম দামে চীনের মতো বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা বেশির ভাগ দেশের নেই। কিন্তু এই অতিনির্ভরতার কারণে যেকোনো কারণে তুলা, সুতাসহ বিভিন্ন মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি ব্যাহত হলে দেশের তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে উভয়সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে হলে কাঁচামালে অন্তত একটা মাত্রা পর্যন্ত স্বয়ংসম্পূর্ণতা জরুরি। কিন্তু চার দশকেও সেই অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ইত্যাদি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ থেকে এখনো পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। এই নির্ভরশীলতা ভবিষ্যতে এ খাতকে সংকটের মুখে ফেলতে পারে।
পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় টিকতে এবং উৎপাদন খরচ কমাতে চীনের ওপর নির্ভরশীলতার বড় কারণ সাশ্রয়ী মূল্য। চীন ছাড়া অন্য যেকোনো দেশ থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক বেশি হয়। আর রপ্তানি বাজার ধরতে হলে উৎপাদন ব্যয় কমানোর কোনো বিকল্প নেই। ফলে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকেরা চীন থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আনতে অনেকটা বাধ্য হন।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য রেখে জমি স্বল্পতার কারণে শিল্প খাতের জন্য তুলা উৎপাদন সম্ভব নয়। এটিই সুতা ও বস্ত্রের জন্য আমদানি নির্ভরতার কারণ। পোশাক রপ্তানিতে প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভারতের ওপর নির্ভরশীলতার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতের রপ্তানিকারকেরা তাদের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে দেশ থেকে কম দামে কাঁচামাল আনতে পারবে, সে দেশের দিকেই ঝুঁকবে—এটাই স্বাভাবিক। তবে শিল্পের কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকার কাজ করছে।’
এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ
রয়েছে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি। স্বল্পোন্নত বা এলডিসি দেশের তালিকা থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বেরিয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে। যদিও এই তালিকা থেকে পুরোপুরি বের হতে বাংলাদেশের ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই উত্তরণ বেশ কিছু সুবিধাও হারানোর শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষত এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, তা আর পাওয়া যাবে না। যদিও ইইউ ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়ার কথা বলছে। তবে তা তারা দেবে বিদ্যমান জিএসপি সুবিধার আওতায়। ২০২৩ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় ঢুকতে না পারলে আর মাত্র ৭ বছর এই সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।
জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে বেশ কয়েকটি শর্ত পরিপালন করতে হবে। শর্তের শুরুতেই রয়েছে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক পূরণের বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি বাংলাদেশকে ভাবাচ্ছে, তা হলো ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানি ধরে রাখতে স্থানীয় উৎস থেকে সংগৃহীত সুতা ও কাঁচামাল থেকে বস্ত্র তৈরি এবং তা দিয়ে পোশাক তৈরি করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ ব্যাপারে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে এবং সামনের দিনগুলোতে বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পণ্য উৎপাদনে আমাদের অতি দ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। এ জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের জন্য চীনসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। না হলে বিশ্ববাজারে আমাদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণই হতে না পারি, তাহলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে কীভাবে আমরা উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হব? আর শিল্পের কাঁচামালের জন্য নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নও করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে সরকারি নীতি সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকও একই মত দিলেন। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিকল্প নেই। ইইউ ও যুক্তরাজ্যের বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানির ক্ষেত্রে জিএসপি প্লাসের অন্য শর্তের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরির মতো শর্ত থাকছে। এ জন্য রপ্তানি পণ্যের কাঁচামালের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। আর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতা দেশের অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক নয়। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হলেও বর্তমান সক্ষমতা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে চীনেও বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব।
দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ওপর জোর
অর্থনৈতিক গতিশীলতা, কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরালো করার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, নতুন রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে এ উদ্যোগ গ্রহণ এই মুহূর্তে জরুরি। এ জন্য ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, চিলির মতো লাতিন আমেরিকার দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি ইউরোপের আরেক বড় দেশ রাশিয়ার বাজারে পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে চীনের বাজারের দিকেও তাকানো যেতে পারে। চীন থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ আমদানি হয়, সে পরিমাণে রপ্তানি হয় না। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তালিকায় চীন রয়েছে ১৫ তম অবস্থানে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া গেলে চীনের বাজারেও ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। চীন ২০২০ সালের জুলাই থেকে ট্যারিফ লাইনের আওতায় ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা দিয়েছে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, চীনে বিনা শুল্কে রপ্তানির এই সুযোগ দেশটির সঙ্গে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিরও সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, চীন ক্রমেই কম দামের পোশাক তৈরির চেয়ে বেশি দামের পোশাক তৈরি ও রপ্তানির দিকে ঝুঁকছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, রপ্তানির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির প্রচেষ্টার পাশাপাশি এসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ওপরও আমাদের জোর দিতে হবে।
এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তীকালে বৈদেশিক বাণিজ্যে অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বিষয়টিও বিবেচনা করছে সরকার। এ ছাড়া চীন এরই মধ্যে এফটিএ করার বিষয়ে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই) এ বিষয়ে পর্যালোচনা করছে।
এরই মধ্যে এফটিএর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু দেশ ও বাণিজ্য জোটের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এসব দেশের মধ্যে চীন ছাড়াও রয়েছে নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ আসিয়ান জোটভুক্ত দেশ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ও দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য জোট মার্কাসুর। এফটিএর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) বিষয়টি নিয়েও কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী বিশ্ব বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রেজাউর রহিম

রপ্তানি শুরুর পর চার দশক কেটে গেলেও এখনো বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কাঠামোগত দিক থেকে দৃঢ় ভিত তৈরি করতে পারেনি। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত হলেও কাঁচামালের জন্য এ শিল্পকে বহুলাংশেই অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আর এই নির্ভরতা মুখ্যত চীনকেন্দ্রিক। পোশাক রপ্তানির বাজারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এ দেশই কাঁচামাল আমদানির প্রধান উৎস হওয়ায় এ খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এ ক্ষেত্রে কাঁচামালের নিজস্ব উৎস তৈরি করা না গেলে সামনে বিপদে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত শতকের আশির দশকে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হয়। বর্তমানে এই তৈরি পোশাক শিল্পই দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস। মোট বার্ষিক রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশই আসছে পোশাক রপ্তানি থেকে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে আয় করেছে ৩ হাজার ৮৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগে বছরের তুলনায় প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বা সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সারা বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান।
রপ্তানি বাজারের এই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সূত্রে জানা গেছে, দেশের পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য থেকে শুরু করে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, এমনকি নিত্যব্যবহার্য নানা পণ্যের বড় আমদানি উৎস চীন। দেশের পোশাক শিল্পের ওভেন খাতের প্রায় ৮০ শতাংশ বস্ত্র চীন থেকে আমদানি করা হয়। আর নিট পোশাকের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচামাল এবং প্রায় ৮০ শতাংশ রাসায়নিক ও এক্সেসরিজ চীন থেকে আমদানি হয়।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে এককভাবে চীন থেকেই এসেছে ১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যার বেশির ভাগই পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি।
এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার কাঁচামাল আমদানির জন্য বাংলাদেশ যে চীনের বিকল্প খুঁজবে, স্বল্প মেয়াদে সে সুযোগও কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বল্প সময়ে এবং অপেক্ষাকৃত কম দামে চীনের মতো বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা বেশির ভাগ দেশের নেই। কিন্তু এই অতিনির্ভরতার কারণে যেকোনো কারণে তুলা, সুতাসহ বিভিন্ন মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি ব্যাহত হলে দেশের তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে উভয়সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে হলে কাঁচামালে অন্তত একটা মাত্রা পর্যন্ত স্বয়ংসম্পূর্ণতা জরুরি। কিন্তু চার দশকেও সেই অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ইত্যাদি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ থেকে এখনো পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। এই নির্ভরশীলতা ভবিষ্যতে এ খাতকে সংকটের মুখে ফেলতে পারে।
পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় টিকতে এবং উৎপাদন খরচ কমাতে চীনের ওপর নির্ভরশীলতার বড় কারণ সাশ্রয়ী মূল্য। চীন ছাড়া অন্য যেকোনো দেশ থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক বেশি হয়। আর রপ্তানি বাজার ধরতে হলে উৎপাদন ব্যয় কমানোর কোনো বিকল্প নেই। ফলে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকেরা চীন থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আনতে অনেকটা বাধ্য হন।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য রেখে জমি স্বল্পতার কারণে শিল্প খাতের জন্য তুলা উৎপাদন সম্ভব নয়। এটিই সুতা ও বস্ত্রের জন্য আমদানি নির্ভরতার কারণ। পোশাক রপ্তানিতে প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভারতের ওপর নির্ভরশীলতার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতের রপ্তানিকারকেরা তাদের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে দেশ থেকে কম দামে কাঁচামাল আনতে পারবে, সে দেশের দিকেই ঝুঁকবে—এটাই স্বাভাবিক। তবে শিল্পের কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকার কাজ করছে।’
এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ
রয়েছে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি। স্বল্পোন্নত বা এলডিসি দেশের তালিকা থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বেরিয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে। যদিও এই তালিকা থেকে পুরোপুরি বের হতে বাংলাদেশের ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই উত্তরণ বেশ কিছু সুবিধাও হারানোর শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষত এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, তা আর পাওয়া যাবে না। যদিও ইইউ ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়ার কথা বলছে। তবে তা তারা দেবে বিদ্যমান জিএসপি সুবিধার আওতায়। ২০২৩ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় ঢুকতে না পারলে আর মাত্র ৭ বছর এই সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।
জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে বেশ কয়েকটি শর্ত পরিপালন করতে হবে। শর্তের শুরুতেই রয়েছে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক পূরণের বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি বাংলাদেশকে ভাবাচ্ছে, তা হলো ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানি ধরে রাখতে স্থানীয় উৎস থেকে সংগৃহীত সুতা ও কাঁচামাল থেকে বস্ত্র তৈরি এবং তা দিয়ে পোশাক তৈরি করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ ব্যাপারে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে এবং সামনের দিনগুলোতে বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পণ্য উৎপাদনে আমাদের অতি দ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। এ জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের জন্য চীনসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। না হলে বিশ্ববাজারে আমাদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণই হতে না পারি, তাহলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে কীভাবে আমরা উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হব? আর শিল্পের কাঁচামালের জন্য নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নও করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে সরকারি নীতি সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকও একই মত দিলেন। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিকল্প নেই। ইইউ ও যুক্তরাজ্যের বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানির ক্ষেত্রে জিএসপি প্লাসের অন্য শর্তের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরির মতো শর্ত থাকছে। এ জন্য রপ্তানি পণ্যের কাঁচামালের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। আর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতা দেশের অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক নয়। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হলেও বর্তমান সক্ষমতা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে চীনেও বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব।
দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ওপর জোর
অর্থনৈতিক গতিশীলতা, কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরালো করার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, নতুন রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে এ উদ্যোগ গ্রহণ এই মুহূর্তে জরুরি। এ জন্য ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, চিলির মতো লাতিন আমেরিকার দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি ইউরোপের আরেক বড় দেশ রাশিয়ার বাজারে পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে চীনের বাজারের দিকেও তাকানো যেতে পারে। চীন থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ আমদানি হয়, সে পরিমাণে রপ্তানি হয় না। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তালিকায় চীন রয়েছে ১৫ তম অবস্থানে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া গেলে চীনের বাজারেও ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। চীন ২০২০ সালের জুলাই থেকে ট্যারিফ লাইনের আওতায় ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা দিয়েছে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, চীনে বিনা শুল্কে রপ্তানির এই সুযোগ দেশটির সঙ্গে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিরও সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, চীন ক্রমেই কম দামের পোশাক তৈরির চেয়ে বেশি দামের পোশাক তৈরি ও রপ্তানির দিকে ঝুঁকছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, রপ্তানির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির প্রচেষ্টার পাশাপাশি এসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ওপরও আমাদের জোর দিতে হবে।
এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তীকালে বৈদেশিক বাণিজ্যে অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বিষয়টিও বিবেচনা করছে সরকার। এ ছাড়া চীন এরই মধ্যে এফটিএ করার বিষয়ে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই) এ বিষয়ে পর্যালোচনা করছে।
এরই মধ্যে এফটিএর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু দেশ ও বাণিজ্য জোটের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এসব দেশের মধ্যে চীন ছাড়াও রয়েছে নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ আসিয়ান জোটভুক্ত দেশ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ও দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য জোট মার্কাসুর। এফটিএর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) বিষয়টি নিয়েও কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী বিশ্ব বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রপ্তানি শুরুর পর চার দশক কেটে গেলেও এখনো বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কাঠামোগত দিক থেকে দৃঢ় ভিত তৈরি করতে পারেনি। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত হলেও কাঁচামালের জন্য এ শিল্পকে বহুলাংশেই অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আর এই নির্ভরতা মুখ্যত চীনকেন্দ্রিক। পোশাক রপ্তানির বাজারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এ দেশই কাঁচামাল আমদানির প্রধান উৎস হওয়ায় এ খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এ ক্ষেত্রে কাঁচামালের নিজস্ব উৎস তৈরি করা না গেলে সামনে বিপদে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত শতকের আশির দশকে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হয়। বর্তমানে এই তৈরি পোশাক শিল্পই দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস। মোট বার্ষিক রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশই আসছে পোশাক রপ্তানি থেকে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে আয় করেছে ৩ হাজার ৮৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগে বছরের তুলনায় প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বা সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সারা বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান।
রপ্তানি বাজারের এই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সূত্রে জানা গেছে, দেশের পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য থেকে শুরু করে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, এমনকি নিত্যব্যবহার্য নানা পণ্যের বড় আমদানি উৎস চীন। দেশের পোশাক শিল্পের ওভেন খাতের প্রায় ৮০ শতাংশ বস্ত্র চীন থেকে আমদানি করা হয়। আর নিট পোশাকের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচামাল এবং প্রায় ৮০ শতাংশ রাসায়নিক ও এক্সেসরিজ চীন থেকে আমদানি হয়।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে এককভাবে চীন থেকেই এসেছে ১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যার বেশির ভাগই পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি।
এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার কাঁচামাল আমদানির জন্য বাংলাদেশ যে চীনের বিকল্প খুঁজবে, স্বল্প মেয়াদে সে সুযোগও কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বল্প সময়ে এবং অপেক্ষাকৃত কম দামে চীনের মতো বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা বেশির ভাগ দেশের নেই। কিন্তু এই অতিনির্ভরতার কারণে যেকোনো কারণে তুলা, সুতাসহ বিভিন্ন মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি ব্যাহত হলে দেশের তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে উভয়সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে হলে কাঁচামালে অন্তত একটা মাত্রা পর্যন্ত স্বয়ংসম্পূর্ণতা জরুরি। কিন্তু চার দশকেও সেই অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ইত্যাদি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ থেকে এখনো পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। এই নির্ভরশীলতা ভবিষ্যতে এ খাতকে সংকটের মুখে ফেলতে পারে।
পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় টিকতে এবং উৎপাদন খরচ কমাতে চীনের ওপর নির্ভরশীলতার বড় কারণ সাশ্রয়ী মূল্য। চীন ছাড়া অন্য যেকোনো দেশ থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক বেশি হয়। আর রপ্তানি বাজার ধরতে হলে উৎপাদন ব্যয় কমানোর কোনো বিকল্প নেই। ফলে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকেরা চীন থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আনতে অনেকটা বাধ্য হন।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য রেখে জমি স্বল্পতার কারণে শিল্প খাতের জন্য তুলা উৎপাদন সম্ভব নয়। এটিই সুতা ও বস্ত্রের জন্য আমদানি নির্ভরতার কারণ। পোশাক রপ্তানিতে প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভারতের ওপর নির্ভরশীলতার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতের রপ্তানিকারকেরা তাদের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে দেশ থেকে কম দামে কাঁচামাল আনতে পারবে, সে দেশের দিকেই ঝুঁকবে—এটাই স্বাভাবিক। তবে শিল্পের কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকার কাজ করছে।’
এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ
রয়েছে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি। স্বল্পোন্নত বা এলডিসি দেশের তালিকা থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বেরিয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে। যদিও এই তালিকা থেকে পুরোপুরি বের হতে বাংলাদেশের ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই উত্তরণ বেশ কিছু সুবিধাও হারানোর শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষত এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, তা আর পাওয়া যাবে না। যদিও ইইউ ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়ার কথা বলছে। তবে তা তারা দেবে বিদ্যমান জিএসপি সুবিধার আওতায়। ২০২৩ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় ঢুকতে না পারলে আর মাত্র ৭ বছর এই সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।
জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে বেশ কয়েকটি শর্ত পরিপালন করতে হবে। শর্তের শুরুতেই রয়েছে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক পূরণের বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি বাংলাদেশকে ভাবাচ্ছে, তা হলো ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানি ধরে রাখতে স্থানীয় উৎস থেকে সংগৃহীত সুতা ও কাঁচামাল থেকে বস্ত্র তৈরি এবং তা দিয়ে পোশাক তৈরি করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ ব্যাপারে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে এবং সামনের দিনগুলোতে বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পণ্য উৎপাদনে আমাদের অতি দ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। এ জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের জন্য চীনসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। না হলে বিশ্ববাজারে আমাদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণই হতে না পারি, তাহলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে কীভাবে আমরা উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হব? আর শিল্পের কাঁচামালের জন্য নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নও করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে সরকারি নীতি সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকও একই মত দিলেন। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিকল্প নেই। ইইউ ও যুক্তরাজ্যের বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানির ক্ষেত্রে জিএসপি প্লাসের অন্য শর্তের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরির মতো শর্ত থাকছে। এ জন্য রপ্তানি পণ্যের কাঁচামালের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। আর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতা দেশের অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক নয়। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হলেও বর্তমান সক্ষমতা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে চীনেও বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব।
দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ওপর জোর
অর্থনৈতিক গতিশীলতা, কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরালো করার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, নতুন রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে এ উদ্যোগ গ্রহণ এই মুহূর্তে জরুরি। এ জন্য ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, চিলির মতো লাতিন আমেরিকার দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি ইউরোপের আরেক বড় দেশ রাশিয়ার বাজারে পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে চীনের বাজারের দিকেও তাকানো যেতে পারে। চীন থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ আমদানি হয়, সে পরিমাণে রপ্তানি হয় না। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তালিকায় চীন রয়েছে ১৫ তম অবস্থানে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া গেলে চীনের বাজারেও ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। চীন ২০২০ সালের জুলাই থেকে ট্যারিফ লাইনের আওতায় ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা দিয়েছে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, চীনে বিনা শুল্কে রপ্তানির এই সুযোগ দেশটির সঙ্গে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিরও সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, চীন ক্রমেই কম দামের পোশাক তৈরির চেয়ে বেশি দামের পোশাক তৈরি ও রপ্তানির দিকে ঝুঁকছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, রপ্তানির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির প্রচেষ্টার পাশাপাশি এসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ওপরও আমাদের জোর দিতে হবে।
এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তীকালে বৈদেশিক বাণিজ্যে অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বিষয়টিও বিবেচনা করছে সরকার। এ ছাড়া চীন এরই মধ্যে এফটিএ করার বিষয়ে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই) এ বিষয়ে পর্যালোচনা করছে।
এরই মধ্যে এফটিএর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু দেশ ও বাণিজ্য জোটের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এসব দেশের মধ্যে চীন ছাড়াও রয়েছে নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ আসিয়ান জোটভুক্ত দেশ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ও দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য জোট মার্কাসুর। এফটিএর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) বিষয়টি নিয়েও কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী বিশ্ব বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আইটি পেশাজীবীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটির (বিসিএস) বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২৩ ও ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অডিটরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
২০ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে লাইভ বেকারি নামের তাৎক্ষণিক খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রির দোকান। কিন্তু এগুলোতে মানের বালাই নেই। টাটকা মনে করে ভোক্তা পাউরুটি, বিস্কুট, টোস্ট, কেকসহ যেসব পণ্য কিনে খাচ্ছে, তা স্বাস্থ্যগতভাবে কতটা নিরাপদ, তার কোনো তদারকি নেই।
২ দিন আগে
ব্যাংক খাত এক ভয়ংকর সংকটের মুখে। খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে চার ধরনের নেতিবাচক চক্র তৈরি হয়েছে। যেখানে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, সুদহার ঊর্ধ্বমুখী, বিনিয়োগ কমছে এবং প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে পড়েছে। মূলত আমানত সঠিক বিনিয়োগে রূপান্তর না হওয়া, ঋণখেলাপির পুনর্বহাল...
২ দিন আগে
সাধারণত শীতের সময় বাজারে আগাম নতুন আলু উঠলে তার দাম কয়েক সপ্তাহ ধরে শতকের ওপরে থাকে। কিন্তু এবার সবজি বিক্রেতারা কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন আলুর দাম ৫০ টাকা কেজিতে নামাতে বাধ্য হয়েছেন। চলতি সপ্তাহে আরও কমে ছোট আকারের আলুর দাম ৩৫ টাকা কেজি পর্যন্ত হয়েছে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

আইটি পেশাজীবীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটির (বিসিএস) বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২৩ ও ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অডিটরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন। বার্ষিক কার্যক্রম ও সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরেন সেক্রেটারি জেনারেল এলিন ববি। ট্রেজারার মোহাম্মদ শাহরিয়ার হোসেন খান ২০২৩ ও ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিসিএসের ভাইস প্রেসিডেন্ট (অ্যাডমিন) রেজাউল করীম, ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল বাছেত, ভাইস প্রেসিডেন্ট (একাডেমিক) জয়নাল আবেদীন, জয়েন্ট সেক্রেটারি (অ্যাডমিন) শরিফুল আনোয়ার, জয়েন্ট সেক্রেটারি (ফিন্যান্স) মো. জারাফাত ইসলাম, জয়েন্ট সেক্রেটারি (একাডেমিক) প্রকৌশলী মো. নাজমুল হুদা মাসুদ।
সভা সঞ্চালনা করেন কাউন্সিলর মুহাম্মদ ওমর সিদ্দিক ও মোহাম্মদ হেদায়েতুল হাসান এবং পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মো. আলমগীর। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর মো. মেহেদী হাসান, মো. মোজাহারুল ইসলাম, মো. আসাদ-উজ-জামান, এস এম পারভেজ রানা, মো. ওয়াহিদ মুরাদ, এস এম সাজ্জাদ হোসেন, নিমাই চন্দ্র মণ্ডল, আমিমুল ইহসান, মো. মানিরুল ইসলাম, মো. মারুফ হোসেইন, বায়েজীদ হাসান ভূঞাঁ, মো. তানভিদুল ইসলাম, এস কে হুমায়ন কবীর, মো. মাহফুজ ইসলাম, হাসান আল মনসুর, মোহাম্মদ শফিউদ্দিন প্রমুখ। এ ছাড়া সোসাইটির নিয়মিত সদস্যরাও সভায় অংশ নেন।
সভার আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে ছিল—
১. ২০২৩ ও ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন ও অনুমোদন।
২. ২০২৫ সালের হিসাব নিরীক্ষার জন্য অডিটর নিয়োগ ও নিরীক্ষা ফি নির্ধারণ।
৩. বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটির সংবিধান পরিবর্তন বিষয়ে আলোচনা।
এই সভার মাধ্যমে সোসাইটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আইটি পেশাজীবীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটির (বিসিএস) বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২৩ ও ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অডিটরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন। বার্ষিক কার্যক্রম ও সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরেন সেক্রেটারি জেনারেল এলিন ববি। ট্রেজারার মোহাম্মদ শাহরিয়ার হোসেন খান ২০২৩ ও ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিসিএসের ভাইস প্রেসিডেন্ট (অ্যাডমিন) রেজাউল করীম, ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল বাছেত, ভাইস প্রেসিডেন্ট (একাডেমিক) জয়নাল আবেদীন, জয়েন্ট সেক্রেটারি (অ্যাডমিন) শরিফুল আনোয়ার, জয়েন্ট সেক্রেটারি (ফিন্যান্স) মো. জারাফাত ইসলাম, জয়েন্ট সেক্রেটারি (একাডেমিক) প্রকৌশলী মো. নাজমুল হুদা মাসুদ।
সভা সঞ্চালনা করেন কাউন্সিলর মুহাম্মদ ওমর সিদ্দিক ও মোহাম্মদ হেদায়েতুল হাসান এবং পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মো. আলমগীর। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর মো. মেহেদী হাসান, মো. মোজাহারুল ইসলাম, মো. আসাদ-উজ-জামান, এস এম পারভেজ রানা, মো. ওয়াহিদ মুরাদ, এস এম সাজ্জাদ হোসেন, নিমাই চন্দ্র মণ্ডল, আমিমুল ইহসান, মো. মানিরুল ইসলাম, মো. মারুফ হোসেইন, বায়েজীদ হাসান ভূঞাঁ, মো. তানভিদুল ইসলাম, এস কে হুমায়ন কবীর, মো. মাহফুজ ইসলাম, হাসান আল মনসুর, মোহাম্মদ শফিউদ্দিন প্রমুখ। এ ছাড়া সোসাইটির নিয়মিত সদস্যরাও সভায় অংশ নেন।
সভার আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে ছিল—
১. ২০২৩ ও ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন ও অনুমোদন।
২. ২০২৫ সালের হিসাব নিরীক্ষার জন্য অডিটর নিয়োগ ও নিরীক্ষা ফি নির্ধারণ।
৩. বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটির সংবিধান পরিবর্তন বিষয়ে আলোচনা।
এই সভার মাধ্যমে সোসাইটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রপ্তানি বাজারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
০৯ নভেম্বর ২০২১
রাজধানীর অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে লাইভ বেকারি নামের তাৎক্ষণিক খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রির দোকান। কিন্তু এগুলোতে মানের বালাই নেই। টাটকা মনে করে ভোক্তা পাউরুটি, বিস্কুট, টোস্ট, কেকসহ যেসব পণ্য কিনে খাচ্ছে, তা স্বাস্থ্যগতভাবে কতটা নিরাপদ, তার কোনো তদারকি নেই।
২ দিন আগে
ব্যাংক খাত এক ভয়ংকর সংকটের মুখে। খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে চার ধরনের নেতিবাচক চক্র তৈরি হয়েছে। যেখানে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, সুদহার ঊর্ধ্বমুখী, বিনিয়োগ কমছে এবং প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে পড়েছে। মূলত আমানত সঠিক বিনিয়োগে রূপান্তর না হওয়া, ঋণখেলাপির পুনর্বহাল...
২ দিন আগে
সাধারণত শীতের সময় বাজারে আগাম নতুন আলু উঠলে তার দাম কয়েক সপ্তাহ ধরে শতকের ওপরে থাকে। কিন্তু এবার সবজি বিক্রেতারা কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন আলুর দাম ৫০ টাকা কেজিতে নামাতে বাধ্য হয়েছেন। চলতি সপ্তাহে আরও কমে ছোট আকারের আলুর দাম ৩৫ টাকা কেজি পর্যন্ত হয়েছে।
২ দিন আগেরোকন উদ্দীন, ঢাকা

রাজধানীর অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে লাইভ বেকারি নামের তাৎক্ষণিক খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রির দোকান। কিন্তু এগুলোতে মানের বালাই নেই। টাটকা মনে করে ভোক্তা পাউরুটি, বিস্কুট, টোস্ট, কেকসহ যেসব পণ্য কিনে খাচ্ছে, তা স্বাস্থ্যগতভাবে কতটা নিরাপদ, তার কোনো তদারকি নেই।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম (সার্টিফিকেশন মার্কস উইং) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাইভ বেকারির সংখ্যা এত দ্রুত বাড়ছে যে আমরা এগুলোর হিসাব রাখতে পারছি না। কোনোরকম একটা ট্রেড লাইসেন্স জোগাড় করেই উৎপাদন শুরু করছে এগুলো। আমরা তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। এতগুলো প্রতিষ্ঠান তো বন্ধ করে দিতে পারি না। আমাদের লোকবলের সংকট থাকায় যতটা কাজ করার দরকার, তা করতে পারছি না।’
অল্প জায়গায় স্বল্প পুঁজিতে গড়া যায় বলে রাজধানীতে লাইভ বেকারির সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। মুগদা থানাধীন পূর্ব মানিকনগরে ঢোকার মুখ থেকে খালপাড় নতুন রাস্তার মোড় পর্যন্ত সাড়ে ৮০০ মিটারের মধ্যে ৫টি লাইভ বেকারি দেখা যায়। শুধু মানিকনগর নয়; রাজধানীর কমলাপুর, মতিঝিল, খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, বনশ্রী, মোহাম্মদপুরসহ প্রায় সব এলাকার বাজার, পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠছে শত শত লাইভ বেকারি।
ছোট একটি দোকানে ওভেন, মিক্সচার মেশিন, ট্রে টেবিল ও কিছু আসবাব বসিয়ে এসব বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে কেক, বিস্কুট, পাউরুটি, পেটিস, টোস্ট, মিষ্টিসহ নানা খাদ্যপণ্য।
ঝিগাতলার সোনালী ব্যাংকসংলগ্ন ‘বেকার্স বে’ লাইভ বেকারি থেকে দুটি চিজ রোল ও একটি চিকেন রোল কিনে ফিরছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পলাশ মাহমুদ। কীভাবে মান যাচাই করবেন, তা জানা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় খাদ্যপণ্য কিনি স্বাদ দেখে। আর যে চিজ রোল আমি ৪০ টাকায় কিনলাম, এটি ভালো কোনো দোকানে গেলে ৭০-৮০ টাকা লাগবে।’
পূর্ব মানিকনগরের খালিস বেকারির স্বত্বাধিকারী মো. জুবায়ের বলেন, ‘ভালো লাভের আশা দিয়ে আরেক বেকারির মালিক আমারে এই ব্যবসায় নামিয়েছে। কিছু টাকা দিয়ে সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স করেছি। দেড় বছর আগে যখন শুরু করেছিলাম, তখন কিছু কিছু লাভ হতো। কয়েক মাসের মধ্যে আশপাশে বেকারির সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। এখন লোকসানে আছি।’
লাইসেন্স নেই অনেকেরই
প্রথমে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কারখানা স্থাপন করতে হয়। তারপর নমুনা পণ্য উৎপাদন করে মান সনদের জন্য বিএসটিআইতে জমা দিতে হয়। এর জন্য হাল নাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, শিল্প-নকশা বা ট্রেড মার্ক রেজিস্ট্রেশনের সত্যায়িত ফটোকপি, ভ্যাট সনদ, প্রিমিসেস লাইসেন্স, কর্মচারীর স্বাস্থ্য সনদ, পণ্যের মোড়কের নকশার কাগজসহ বেশ কিছু নথি দরকার হয়। জানাতে হয় কালার, ফ্লেভার, প্রিজারভেটিভ, আর্টিফিশিয়াল সুইটনারসহ পণ্যের উপকরণ। পরীক্ষণের যন্ত্রপাতির তালিকা, কারখানার যন্ত্রপাতির তালিকা, কারখানার লে-আউট ও প্রসেস ফ্লো-চার্ট। এরপর পরিদর্শকেরা কারখানা পরিদর্শন করে সন্তুষ্ট হলে মেলে মান সনদ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই প্রক্রিয়া মানা হচ্ছে না। অনেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই ব্যবসায় নেমে পড়েন। কারও কারও তা-ও নেই। মানসনদ নেই সিংহভাগের। কারিগরদের নেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ, স্যানিটেশন সনদ।
বুয়েটের উদ্যোগে ২০২১ সালে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরের ৬৭ শতাংশ পাউরুটির নমুনায় নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি পটাশিয়াম ব্রোমেট রয়েছে। পাউরুটি ফোলাতে এই রাসায়নিকট ব্যবহার হয়। এ ছাড়া বেকারি পণ্যে কাঁচামাল আটার সঙ্গে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট, কৃত্রিম রং ও সোডিয়াম সাইক্লোমেট ব্যবহৃত হচ্ছে বলেও ওই গবেষণায় বলা হয়।
রাজধানীতে কতটি লাইভ বেকারি রয়েছে, তার কোনো তথ্য নেই সিটি করপোরেশন, বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছেই। বিএসটিআইয়ের তথ্য বলছে, শত শত বেকারির মধ্যে মাত্র ২৭টির মান সনদ রয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপসচিব) মুহাম্মদ হাবিবুল আলম বলেন, ‘এসব ট্রেড লাইসেন্স করপোরেশনের জোনগুলো থেকে দেওয়া হয়। কতটি লাইসেন্স হয়েছে, আমাদের কাছে সে তথ্য নেই।’
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি শফিকুজ্জামান বলেন, মানহীন এসব পণ্যে সাধারণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। যারা আইন মেনে উৎপাদন করবে না, তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। দু-একটি বন্ধ করলে বাকিগুলো ঠিক হয়ে যেত।

রাজধানীর অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে লাইভ বেকারি নামের তাৎক্ষণিক খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রির দোকান। কিন্তু এগুলোতে মানের বালাই নেই। টাটকা মনে করে ভোক্তা পাউরুটি, বিস্কুট, টোস্ট, কেকসহ যেসব পণ্য কিনে খাচ্ছে, তা স্বাস্থ্যগতভাবে কতটা নিরাপদ, তার কোনো তদারকি নেই।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম (সার্টিফিকেশন মার্কস উইং) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাইভ বেকারির সংখ্যা এত দ্রুত বাড়ছে যে আমরা এগুলোর হিসাব রাখতে পারছি না। কোনোরকম একটা ট্রেড লাইসেন্স জোগাড় করেই উৎপাদন শুরু করছে এগুলো। আমরা তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। এতগুলো প্রতিষ্ঠান তো বন্ধ করে দিতে পারি না। আমাদের লোকবলের সংকট থাকায় যতটা কাজ করার দরকার, তা করতে পারছি না।’
অল্প জায়গায় স্বল্প পুঁজিতে গড়া যায় বলে রাজধানীতে লাইভ বেকারির সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। মুগদা থানাধীন পূর্ব মানিকনগরে ঢোকার মুখ থেকে খালপাড় নতুন রাস্তার মোড় পর্যন্ত সাড়ে ৮০০ মিটারের মধ্যে ৫টি লাইভ বেকারি দেখা যায়। শুধু মানিকনগর নয়; রাজধানীর কমলাপুর, মতিঝিল, খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, বনশ্রী, মোহাম্মদপুরসহ প্রায় সব এলাকার বাজার, পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠছে শত শত লাইভ বেকারি।
ছোট একটি দোকানে ওভেন, মিক্সচার মেশিন, ট্রে টেবিল ও কিছু আসবাব বসিয়ে এসব বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে কেক, বিস্কুট, পাউরুটি, পেটিস, টোস্ট, মিষ্টিসহ নানা খাদ্যপণ্য।
ঝিগাতলার সোনালী ব্যাংকসংলগ্ন ‘বেকার্স বে’ লাইভ বেকারি থেকে দুটি চিজ রোল ও একটি চিকেন রোল কিনে ফিরছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পলাশ মাহমুদ। কীভাবে মান যাচাই করবেন, তা জানা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় খাদ্যপণ্য কিনি স্বাদ দেখে। আর যে চিজ রোল আমি ৪০ টাকায় কিনলাম, এটি ভালো কোনো দোকানে গেলে ৭০-৮০ টাকা লাগবে।’
পূর্ব মানিকনগরের খালিস বেকারির স্বত্বাধিকারী মো. জুবায়ের বলেন, ‘ভালো লাভের আশা দিয়ে আরেক বেকারির মালিক আমারে এই ব্যবসায় নামিয়েছে। কিছু টাকা দিয়ে সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স করেছি। দেড় বছর আগে যখন শুরু করেছিলাম, তখন কিছু কিছু লাভ হতো। কয়েক মাসের মধ্যে আশপাশে বেকারির সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। এখন লোকসানে আছি।’
লাইসেন্স নেই অনেকেরই
প্রথমে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কারখানা স্থাপন করতে হয়। তারপর নমুনা পণ্য উৎপাদন করে মান সনদের জন্য বিএসটিআইতে জমা দিতে হয়। এর জন্য হাল নাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, শিল্প-নকশা বা ট্রেড মার্ক রেজিস্ট্রেশনের সত্যায়িত ফটোকপি, ভ্যাট সনদ, প্রিমিসেস লাইসেন্স, কর্মচারীর স্বাস্থ্য সনদ, পণ্যের মোড়কের নকশার কাগজসহ বেশ কিছু নথি দরকার হয়। জানাতে হয় কালার, ফ্লেভার, প্রিজারভেটিভ, আর্টিফিশিয়াল সুইটনারসহ পণ্যের উপকরণ। পরীক্ষণের যন্ত্রপাতির তালিকা, কারখানার যন্ত্রপাতির তালিকা, কারখানার লে-আউট ও প্রসেস ফ্লো-চার্ট। এরপর পরিদর্শকেরা কারখানা পরিদর্শন করে সন্তুষ্ট হলে মেলে মান সনদ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই প্রক্রিয়া মানা হচ্ছে না। অনেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই ব্যবসায় নেমে পড়েন। কারও কারও তা-ও নেই। মানসনদ নেই সিংহভাগের। কারিগরদের নেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ, স্যানিটেশন সনদ।
বুয়েটের উদ্যোগে ২০২১ সালে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরের ৬৭ শতাংশ পাউরুটির নমুনায় নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি পটাশিয়াম ব্রোমেট রয়েছে। পাউরুটি ফোলাতে এই রাসায়নিকট ব্যবহার হয়। এ ছাড়া বেকারি পণ্যে কাঁচামাল আটার সঙ্গে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট, কৃত্রিম রং ও সোডিয়াম সাইক্লোমেট ব্যবহৃত হচ্ছে বলেও ওই গবেষণায় বলা হয়।
রাজধানীতে কতটি লাইভ বেকারি রয়েছে, তার কোনো তথ্য নেই সিটি করপোরেশন, বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছেই। বিএসটিআইয়ের তথ্য বলছে, শত শত বেকারির মধ্যে মাত্র ২৭টির মান সনদ রয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপসচিব) মুহাম্মদ হাবিবুল আলম বলেন, ‘এসব ট্রেড লাইসেন্স করপোরেশনের জোনগুলো থেকে দেওয়া হয়। কতটি লাইসেন্স হয়েছে, আমাদের কাছে সে তথ্য নেই।’
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি শফিকুজ্জামান বলেন, মানহীন এসব পণ্যে সাধারণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। যারা আইন মেনে উৎপাদন করবে না, তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। দু-একটি বন্ধ করলে বাকিগুলো ঠিক হয়ে যেত।

রপ্তানি বাজারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
০৯ নভেম্বর ২০২১
আইটি পেশাজীবীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটির (বিসিএস) বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২৩ ও ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অডিটরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
২০ ঘণ্টা আগে
ব্যাংক খাত এক ভয়ংকর সংকটের মুখে। খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে চার ধরনের নেতিবাচক চক্র তৈরি হয়েছে। যেখানে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, সুদহার ঊর্ধ্বমুখী, বিনিয়োগ কমছে এবং প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে পড়েছে। মূলত আমানত সঠিক বিনিয়োগে রূপান্তর না হওয়া, ঋণখেলাপির পুনর্বহাল...
২ দিন আগে
সাধারণত শীতের সময় বাজারে আগাম নতুন আলু উঠলে তার দাম কয়েক সপ্তাহ ধরে শতকের ওপরে থাকে। কিন্তু এবার সবজি বিক্রেতারা কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন আলুর দাম ৫০ টাকা কেজিতে নামাতে বাধ্য হয়েছেন। চলতি সপ্তাহে আরও কমে ছোট আকারের আলুর দাম ৩৫ টাকা কেজি পর্যন্ত হয়েছে।
২ দিন আগেব্যাংক খাত নিয়ে পিআরআইয়ের আলোচনা
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ব্যাংক খাত এক ভয়ংকর সংকটের মুখে। খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে চার ধরনের নেতিবাচক চক্র তৈরি হয়েছে। যেখানে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, সুদহার ঊর্ধ্বমুখী, বিনিয়োগ কমছে এবং প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে পড়েছে। মূলত আমানত সঠিক বিনিয়োগে রূপান্তর না হওয়া, ঋণখেলাপির পুনর্বহাল এবং সুশাসনের ঘাটতি ব্যাংক ও আর্থিক খাতের আর্থিক স্থিতিশীলতা নষ্ট ও বিনিয়োগ পরিবেশের ওপর ঝুঁকি বাড়িয়েছে। আর এসবের নেপথ্যে শুধু অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাই নয়, বরং রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্বল গভর্ন্যান্সও দায়ী। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এখন সময় এসেছে ধাপে ধাপে সুশাসনভিত্তিক ও আস্থানির্ভর সংস্কারের।
গতকাল রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের বর্তমান সংকট কোনো একক কারণে হয়নি। এটি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, স্থানীয় বাস্তবতা এবং অতীতের অনিয়মের মিলিত ফল। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট, পরবর্তী সুদহার পরিবর্তন এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব দেশের ব্যবসায়িক মডেলকে বদলে দিয়েছে। ব্যাংকিং খাতও নতুন বাস্তবতায় খাপ খাওয়াতে বাধ্য হয়েছে।
লুৎফে সিদ্দিকী আরও বলেন, ব্যাংকের পরিচালনা ও পুনর্গঠনে রাজনৈতিক প্রভাব মোকাবিলা এখন অপরিহার্য। অনেক ক্ষেত্রে ঋণখেলাপিদের পুনর্বহাল করা হয়, বিশেষ করে যদি ব্যাংকের চেয়ারম্যান রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তির পরিবারের সদস্য হন। এতে গভর্ন্যান্স সংকট তীব্র হচ্ছে। তাই খেলাপি ঋণ ও আর্থিক অপরাধের কৌশল বিশ্লেষণে একটি ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি। মনোবিজ্ঞানী ও আচরণ বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করে পেশাদার প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার ওপরও জোর দেন, যাতে ব্যাংকিং ব্যবস্থার আচরণগত ও শৃঙ্খলাগত উন্নয়ন সম্ভব হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আখতার হোসেন সতর্ক করে বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ঋণ বিতরণ, দুর্বল তদারকি এবং প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতাদের চাপ মিলিয়ে ব্যাংক খাত ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, মূলধন ঘাটতি এবং বড় খেলাপিদের প্রতি নরম মনোভাব সংকটকে আরও গভীর করেছে। এখন সাহসী কাঠামোগত পদক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে পতনের দিকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। উদীয়মান অর্থনীতিতে একটি ব্যাংকের ধস পুরো ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করতে পারে। তিনি মূল কারণ হিসেবে ব্যাংকের পর্ষদে অনিয়ম এবং ঋণ প্রদানে অস্বচ্ছতার কথা তুলে ধরেন। দেশের পাঁচটি বড় ব্যাংক এখন সংকটে, আরও ৫-১০টি একই পথে রয়েছে। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে ব্যাংকগুলো দ্রুত পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।
পিআরআইয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান প্রতারণাজনিত ও সাধারণ খেলাপি ঋণ আলাদা করে পরিচালনার জন্য একটি পেশাদার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি (এএমসি) গঠনের পরামর্শ দেন। তিনি স্ট্রেস টেস্টিং, রিকভারি প্ল্যান, ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স এবং রেজল্যুশন ফান্ডকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন।
পিআরআই প্রেসিডেন্ট ড. জায়েদী সাত্তার সতর্ক করে বলেন, উন্নত অর্থনীতিতে ‘টু বিগ টু ফেইল’ ধারণা প্রচলিত হলেও বাংলাদেশে কিছু ব্যাংক এখন ‘টু টক্সিক টু ফেইল’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই ব্যাংকের পতন সামগ্রিক অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের ৫ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে আর্থিক খাতে সুশাসন, জবাবদিহি ও শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা অপরিহার্য।

ব্যাংক খাত এক ভয়ংকর সংকটের মুখে। খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে চার ধরনের নেতিবাচক চক্র তৈরি হয়েছে। যেখানে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, সুদহার ঊর্ধ্বমুখী, বিনিয়োগ কমছে এবং প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে পড়েছে। মূলত আমানত সঠিক বিনিয়োগে রূপান্তর না হওয়া, ঋণখেলাপির পুনর্বহাল এবং সুশাসনের ঘাটতি ব্যাংক ও আর্থিক খাতের আর্থিক স্থিতিশীলতা নষ্ট ও বিনিয়োগ পরিবেশের ওপর ঝুঁকি বাড়িয়েছে। আর এসবের নেপথ্যে শুধু অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাই নয়, বরং রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্বল গভর্ন্যান্সও দায়ী। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এখন সময় এসেছে ধাপে ধাপে সুশাসনভিত্তিক ও আস্থানির্ভর সংস্কারের।
গতকাল রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের বর্তমান সংকট কোনো একক কারণে হয়নি। এটি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, স্থানীয় বাস্তবতা এবং অতীতের অনিয়মের মিলিত ফল। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট, পরবর্তী সুদহার পরিবর্তন এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব দেশের ব্যবসায়িক মডেলকে বদলে দিয়েছে। ব্যাংকিং খাতও নতুন বাস্তবতায় খাপ খাওয়াতে বাধ্য হয়েছে।
লুৎফে সিদ্দিকী আরও বলেন, ব্যাংকের পরিচালনা ও পুনর্গঠনে রাজনৈতিক প্রভাব মোকাবিলা এখন অপরিহার্য। অনেক ক্ষেত্রে ঋণখেলাপিদের পুনর্বহাল করা হয়, বিশেষ করে যদি ব্যাংকের চেয়ারম্যান রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তির পরিবারের সদস্য হন। এতে গভর্ন্যান্স সংকট তীব্র হচ্ছে। তাই খেলাপি ঋণ ও আর্থিক অপরাধের কৌশল বিশ্লেষণে একটি ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি। মনোবিজ্ঞানী ও আচরণ বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করে পেশাদার প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার ওপরও জোর দেন, যাতে ব্যাংকিং ব্যবস্থার আচরণগত ও শৃঙ্খলাগত উন্নয়ন সম্ভব হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আখতার হোসেন সতর্ক করে বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ঋণ বিতরণ, দুর্বল তদারকি এবং প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতাদের চাপ মিলিয়ে ব্যাংক খাত ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, মূলধন ঘাটতি এবং বড় খেলাপিদের প্রতি নরম মনোভাব সংকটকে আরও গভীর করেছে। এখন সাহসী কাঠামোগত পদক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে পতনের দিকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। উদীয়মান অর্থনীতিতে একটি ব্যাংকের ধস পুরো ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করতে পারে। তিনি মূল কারণ হিসেবে ব্যাংকের পর্ষদে অনিয়ম এবং ঋণ প্রদানে অস্বচ্ছতার কথা তুলে ধরেন। দেশের পাঁচটি বড় ব্যাংক এখন সংকটে, আরও ৫-১০টি একই পথে রয়েছে। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে ব্যাংকগুলো দ্রুত পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।
পিআরআইয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান প্রতারণাজনিত ও সাধারণ খেলাপি ঋণ আলাদা করে পরিচালনার জন্য একটি পেশাদার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি (এএমসি) গঠনের পরামর্শ দেন। তিনি স্ট্রেস টেস্টিং, রিকভারি প্ল্যান, ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স এবং রেজল্যুশন ফান্ডকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন।
পিআরআই প্রেসিডেন্ট ড. জায়েদী সাত্তার সতর্ক করে বলেন, উন্নত অর্থনীতিতে ‘টু বিগ টু ফেইল’ ধারণা প্রচলিত হলেও বাংলাদেশে কিছু ব্যাংক এখন ‘টু টক্সিক টু ফেইল’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই ব্যাংকের পতন সামগ্রিক অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের ৫ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে আর্থিক খাতে সুশাসন, জবাবদিহি ও শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা অপরিহার্য।

রপ্তানি বাজারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
০৯ নভেম্বর ২০২১
আইটি পেশাজীবীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটির (বিসিএস) বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২৩ ও ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অডিটরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
২০ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে লাইভ বেকারি নামের তাৎক্ষণিক খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রির দোকান। কিন্তু এগুলোতে মানের বালাই নেই। টাটকা মনে করে ভোক্তা পাউরুটি, বিস্কুট, টোস্ট, কেকসহ যেসব পণ্য কিনে খাচ্ছে, তা স্বাস্থ্যগতভাবে কতটা নিরাপদ, তার কোনো তদারকি নেই।
২ দিন আগে
সাধারণত শীতের সময় বাজারে আগাম নতুন আলু উঠলে তার দাম কয়েক সপ্তাহ ধরে শতকের ওপরে থাকে। কিন্তু এবার সবজি বিক্রেতারা কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন আলুর দাম ৫০ টাকা কেজিতে নামাতে বাধ্য হয়েছেন। চলতি সপ্তাহে আরও কমে ছোট আকারের আলুর দাম ৩৫ টাকা কেজি পর্যন্ত হয়েছে।
২ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সাধারণত শীতের সময় বাজারে আগাম নতুন আলু উঠলে তার দাম কয়েক সপ্তাহ ধরে শতকের ওপরে থাকে। কিন্তু এবার সবজি বিক্রেতারা কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন আলুর দাম ৫০ টাকা কেজিতে নামাতে বাধ্য হয়েছেন। চলতি সপ্তাহে আরও কমে ছোট আকারের আলুর দাম ৩৫ টাকা কেজি পর্যন্ত হয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, অতিরিক্ত মজুতের কারণে পুরোনো আলুর দাম এখন ২৫ টাকার মধ্যেই। তাই বেশি দামের আশায় যাঁরা অপরিপক্ব অবস্থায়ই আগাম আলু বাজারে এনেছেন, তাঁরা হতাশ।
আলুর দাম আশানুরূপ না হলেও সবজিচাষি ও ব্যবসায়ীরা নতুন পেঁয়াজের ভালো দাম পাচ্ছেন। বাজারে খুচরায় নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজির ওপরে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে।
বাজারে আমনের নতুন চালও আসতে শুরু করেছে। এতে চালের দাম এক-দুই টাকা কমেছে চলতি সপ্তাহে। এ ছাড়া সবজি, ডিম, মুরগিসহ অন্যান্য পণ্যের বাজারেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।
রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, মানিকনগরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগাম নতুন আলুর সরবরাহ বেশ বেড়েছে। পাশাপাশি পুরোনো আলুও বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলু মান অনুসারে ৩৫-৪০ টাকা কেজি আর পুরোনো আলু আগের মতোই ২৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
সেগুনবাগিচা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মিন্টু বলেন, নতুন আলুর বিক্রি শুরু হয় ১০০-১২০ টাকা কেজিতে। কিন্তু সেই দামে মাত্র কয়েক দিন বিক্রি করা গেছে। এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে দাম কমে ৫০-৬০ টাকায় নেমে আসে। এ সপ্তাহে আরও কমেছে। এবার আলু বিক্রি করে কৃষক, ব্যবসায়ী কেউ খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি।
বাজারে এখন তিন ধরনের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে—দেশি নতুন ও পুরোনো এবং আমদানির পেঁয়াজ। বাজারে নতুন আসা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১৩০ টাকা কেজি। তবে পুরোনো দেশি পেঁয়াজ আগের মতোই ১৩০-১৪০ টাকা কেজি। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ আরও বাড়বে। তখন দাম ১০০ টাকার নিচে নেমে আসবে।
আমদানির পরও পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার ওপরে থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ক্রেতারা। মালিবাগ বাজারে আসা ক্রেতা আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম কমাতে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভারতে পেঁয়াজের দাম শুনেছি ১০-১২ রুপিতে নেমেছে। সেই পেঁয়াজ দেশে এনে ১২০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা; যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। যাঁদের আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তাঁদের নজরদারিতে রাখা উচিত সরকারের।’
ভোজ্যতেলের দাম গত সপ্তাহেই লিটারপ্রতি ৬-৭ টাকা বেড়েছে। বহুল ব্যবহৃত সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকা লিটার। চিনি, আটা, ময়দা, মসুর ডালসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের দামেই।
এদিকে চালের দাম কিছুটা কমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, আমনের দু-একটি জাতের চাল বাজারে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে গুটি স্বর্ণা ও পাইজাম। তাতে অন্য চালের দামও কিছুটা নিম্নমুখী। আমদানির চালের সরবরাহও রয়েছে বাজারে।
বিভিন্ন খুচরা বাজারে নাজিরশাইল, শম্পা কাটারি, জিরাশাইল, মিনিকেটসহ সরু চালগুলোর দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা পর্যন্ত কমে বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭৮ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৭০-৮০ টাকা।
নতুন চালে গুটি স্বর্ণার দাম নেমেছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫২-৫৬ টাকা কেজি। এ ছাড়া পাইজাম, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৫৬-৬৩ টাকা ছিল।
মানিকনগর বাজারের চাল বিক্রেতা মরিয়ম স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ বলেন, ‘চালের সরবরাহ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এতে দাম অনেকটাই কমতির দিকে। এ সপ্তাহে এক-দুই টাকা কমেছে অনেক আইটেমে। আশা করছি, সামনের সপ্তাহে আরও কমবে।’
ভোক্তার স্বস্তি ফিরছে সবজিতেও। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দাম কমতে শুরু করেছে পণ্যটির। খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়। গত সপ্তাহে তা ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা কমে বরবটি, বেগুন ও করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। ঢ্যাঁড়স ও পটোল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজিতে। ফুল ও বাঁধাকপির দাম আরও কমেছে। মাঝারি আকারের ফুল ও বাঁধাকপি প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।
ডিম ও মুরগির বাজারও স্থিতিশীল। ফার্মের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। কমেছে মুরগির মাংসের দাম। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকার মধ্যে। আর সোনালি মুরগির দাম এখন প্রতি কেজি ২৫০-২৭০ টাকার মধ্যে।
পোলট্রি খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতে সবজির প্রচুর সরবরাহ থাকলে মুরগি ও ডিমের চাহিদা কিছুটা কমে যায়। এ কারণেই দাম কমেছে।

সাধারণত শীতের সময় বাজারে আগাম নতুন আলু উঠলে তার দাম কয়েক সপ্তাহ ধরে শতকের ওপরে থাকে। কিন্তু এবার সবজি বিক্রেতারা কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন আলুর দাম ৫০ টাকা কেজিতে নামাতে বাধ্য হয়েছেন। চলতি সপ্তাহে আরও কমে ছোট আকারের আলুর দাম ৩৫ টাকা কেজি পর্যন্ত হয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, অতিরিক্ত মজুতের কারণে পুরোনো আলুর দাম এখন ২৫ টাকার মধ্যেই। তাই বেশি দামের আশায় যাঁরা অপরিপক্ব অবস্থায়ই আগাম আলু বাজারে এনেছেন, তাঁরা হতাশ।
আলুর দাম আশানুরূপ না হলেও সবজিচাষি ও ব্যবসায়ীরা নতুন পেঁয়াজের ভালো দাম পাচ্ছেন। বাজারে খুচরায় নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজির ওপরে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে।
বাজারে আমনের নতুন চালও আসতে শুরু করেছে। এতে চালের দাম এক-দুই টাকা কমেছে চলতি সপ্তাহে। এ ছাড়া সবজি, ডিম, মুরগিসহ অন্যান্য পণ্যের বাজারেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।
রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, মানিকনগরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগাম নতুন আলুর সরবরাহ বেশ বেড়েছে। পাশাপাশি পুরোনো আলুও বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলু মান অনুসারে ৩৫-৪০ টাকা কেজি আর পুরোনো আলু আগের মতোই ২৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
সেগুনবাগিচা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মিন্টু বলেন, নতুন আলুর বিক্রি শুরু হয় ১০০-১২০ টাকা কেজিতে। কিন্তু সেই দামে মাত্র কয়েক দিন বিক্রি করা গেছে। এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে দাম কমে ৫০-৬০ টাকায় নেমে আসে। এ সপ্তাহে আরও কমেছে। এবার আলু বিক্রি করে কৃষক, ব্যবসায়ী কেউ খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি।
বাজারে এখন তিন ধরনের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে—দেশি নতুন ও পুরোনো এবং আমদানির পেঁয়াজ। বাজারে নতুন আসা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১৩০ টাকা কেজি। তবে পুরোনো দেশি পেঁয়াজ আগের মতোই ১৩০-১৪০ টাকা কেজি। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ আরও বাড়বে। তখন দাম ১০০ টাকার নিচে নেমে আসবে।
আমদানির পরও পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার ওপরে থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ক্রেতারা। মালিবাগ বাজারে আসা ক্রেতা আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম কমাতে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভারতে পেঁয়াজের দাম শুনেছি ১০-১২ রুপিতে নেমেছে। সেই পেঁয়াজ দেশে এনে ১২০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা; যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। যাঁদের আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তাঁদের নজরদারিতে রাখা উচিত সরকারের।’
ভোজ্যতেলের দাম গত সপ্তাহেই লিটারপ্রতি ৬-৭ টাকা বেড়েছে। বহুল ব্যবহৃত সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকা লিটার। চিনি, আটা, ময়দা, মসুর ডালসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের দামেই।
এদিকে চালের দাম কিছুটা কমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, আমনের দু-একটি জাতের চাল বাজারে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে গুটি স্বর্ণা ও পাইজাম। তাতে অন্য চালের দামও কিছুটা নিম্নমুখী। আমদানির চালের সরবরাহও রয়েছে বাজারে।
বিভিন্ন খুচরা বাজারে নাজিরশাইল, শম্পা কাটারি, জিরাশাইল, মিনিকেটসহ সরু চালগুলোর দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা পর্যন্ত কমে বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭৮ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৭০-৮০ টাকা।
নতুন চালে গুটি স্বর্ণার দাম নেমেছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫২-৫৬ টাকা কেজি। এ ছাড়া পাইজাম, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৫৬-৬৩ টাকা ছিল।
মানিকনগর বাজারের চাল বিক্রেতা মরিয়ম স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ বলেন, ‘চালের সরবরাহ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এতে দাম অনেকটাই কমতির দিকে। এ সপ্তাহে এক-দুই টাকা কমেছে অনেক আইটেমে। আশা করছি, সামনের সপ্তাহে আরও কমবে।’
ভোক্তার স্বস্তি ফিরছে সবজিতেও। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দাম কমতে শুরু করেছে পণ্যটির। খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়। গত সপ্তাহে তা ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা কমে বরবটি, বেগুন ও করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। ঢ্যাঁড়স ও পটোল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজিতে। ফুল ও বাঁধাকপির দাম আরও কমেছে। মাঝারি আকারের ফুল ও বাঁধাকপি প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।
ডিম ও মুরগির বাজারও স্থিতিশীল। ফার্মের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। কমেছে মুরগির মাংসের দাম। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকার মধ্যে। আর সোনালি মুরগির দাম এখন প্রতি কেজি ২৫০-২৭০ টাকার মধ্যে।
পোলট্রি খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতে সবজির প্রচুর সরবরাহ থাকলে মুরগি ও ডিমের চাহিদা কিছুটা কমে যায়। এ কারণেই দাম কমেছে।

রপ্তানি বাজারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
০৯ নভেম্বর ২০২১
আইটি পেশাজীবীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটির (বিসিএস) বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২৩ ও ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অডিটরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
২০ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে লাইভ বেকারি নামের তাৎক্ষণিক খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রির দোকান। কিন্তু এগুলোতে মানের বালাই নেই। টাটকা মনে করে ভোক্তা পাউরুটি, বিস্কুট, টোস্ট, কেকসহ যেসব পণ্য কিনে খাচ্ছে, তা স্বাস্থ্যগতভাবে কতটা নিরাপদ, তার কোনো তদারকি নেই।
২ দিন আগে
ব্যাংক খাত এক ভয়ংকর সংকটের মুখে। খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে চার ধরনের নেতিবাচক চক্র তৈরি হয়েছে। যেখানে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, সুদহার ঊর্ধ্বমুখী, বিনিয়োগ কমছে এবং প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে পড়েছে। মূলত আমানত সঠিক বিনিয়োগে রূপান্তর না হওয়া, ঋণখেলাপির পুনর্বহাল...
২ দিন আগে